নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্ব-
মামাবাড়ী, ইশকুল ... ১৭
জমি চাষ, মই
তখন সাপ্তাহিক ছুটি ছিলো এক দিন। রবিবার। শনিবার সন্ধ্যায় আব্বা বাড়ী আসতেন। সোমবার ভোরে চলে যেতেন। ধানের মৌসুমে আব্বা রবিবারের সাথে দু'একদিন ছুটি নিতেন। মাঠের বেশিরভাগ জমি বর্গা দিতেন। বাড়ির সামনে পেছনের ভিটি জমিগুলো আর বাড়ির পাশের জমিগুলো আব্বা নিজেই চাষ করতেন। এটা ছিলো তাঁর শখের কাজ। এক জোড়া বিশালাকৃতির ষাঁঢ় ছিলো হালের জন্য। দু'টোই টকটকে লাল। দৈহিক আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে মেজাজও ছিলো সেই রকম। কাউকে পছন্দ না হলে তাড়া করতো শিং নামিয়ে। আমরা রীতিমতো সমঝে চলতাম তাদেরকে। ষাঢ়, গাভী, বাছুর সবমিলে ছয়/সাতটি গরু ছিলো আমাদের। তারজন্য ছিলো একজন বছর-চুক্তির রাখাল। জমিজমার জন্য ছিলো আরো একজন। ওরা থাকতো বাড়ির সামনের কাচারি ঘরে। সেই কাচারির দুটি অংশ। একটায় খাট, টেবিল, চেয়ার দিয়ে সাজানো ছিলো বিশিষ্ট মেহমানদের জন্য। আরেকটা অংশে বাড়ির কাজের লোকেরা থাকতো।
আব্বা যেদিন জমি চাষ করতেন আমরা ভাইবোনের দল ক্ষেতের কাছে দাঁড়িয়ে মজা দেখতাম। সেই ভাইবোন বাহিনীতে আমি বড়ো ছিলাম বলে আমার একটা বাড়তি দায়িত্ব ছিলো। কাঠের হাতলওয়ালা একটা ছোট কোদাল ছিলো। সেটা দিয়ে চাষের ফলে উল্টে আসা মাটির বড়ো টুকরাগুলো ভেঙে ছোট করে দেওয়া। এই কাজ করার সময় বেখেয়ালে একটু দেরি করে ফেলেছিলাম। আব্বা ততক্ষণে লাঙল নিয়ে ঘুরে চলে এসেছেন। আমি পড়ে গেলাম হালের সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ষাঁঢ় আমাকে পেটের নীচ দিয়ে শিংয়ের মাথায় তুলে দূরে ছুঁড়ে ফেললো। ব্যথা যতোটা না পেলাম তার চেয়ে ভয়ে প্রায় অজ্ঞান হবার দশা। হাল ফেলে আব্বা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। এর পরে কিছু দিন হালের কাছে ঘেঁষা আমার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গেলো।
হালের পরে মই দেবার জন্য আমরা পিচ্চিরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষ করে থাকতাম। কারণ মই দেবার সময় আমরা দল বেঁধে মইয়ের ওপর বসে পড়তাম মইয়ের দড়ি ধরে। গাড়ি তো ছিলো না। ওটাই আমাদের কাছে গাড়ির বিকল্প ছিলো।
এসব জমিতে তখন বছরে তিন ফসল হতো। দুই বার ধান (আউশ, আমন) আর শীতকালে রবি শস্য। জমিতে ভাগ ভাগ করে পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ফেলন পাল, মটর, খেসারী, মূলা, লাল শাক, ধনিয়া পাতা, পালং শাক, ফুল কপি, বাঁধা কপি, শালগম এসব চাষ করা হতো। আর করা হতো আলু চাষ। দেশি আলু। শুধু শীতকালে পাওয়া যেতো। এখনকার মতো বড়ো আলুও চাষ করা হতো। ষাটের দশকে আউব খান ইপিএডিসির (বর্তমান বিএডিসি) মাধ্যমে উচ্চফলনশীল পালং শাক, ফুল কপি, বাঁধা কপি, শালগম এসব চাষ চালু করেন। আমাদের পরিবার প্রথম থেকেই এইসব চাষ করতে শুরু করে।
আমার দাদা খুব সৃজনশীল চাষী ছিলেন। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছিলেন। ফসল এবং গাছগাছালির খুব যত্ন করতেন। সন্তানদেরও। সব ছেলে মেয়েকে পড়িয়েছেন। বড়ো জ্যেঠা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছেন বৃটিশ আমলে। দাদা সব ভিটি জমির চারপাশে সারবেঁধে খেজুর গাছ লাগিয়েছিলেন। খেজুর গাছের গোড়ায় লাগাতেন সীম বরবটি গাছ। খেজুরগাছে বেয়ে উঠতো সেগুলো। জমির আইলে বুনে দিতেন মাসকলাই।
(চলবে)
২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৩
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:১৩
মনিরা সুলতানা বলেছেন: সময় নিয়ে প্রথম পর্ব থেকে আপনার এই সিরিজ পড়তে বসলাম !
ধন্যবাদ সময় কে লেখায় তুলে আনার জন্য ; আপনার সময় টা আমাদের চেয়ে আলাদা তাই আগ্রহ ও একটু বেশি।
২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৮
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আমাদের এক জীবনে যে পরিবর্তন দেখেছি সেটা অকল্পনীয়। আমাদের জীবনের সত্য ঘটনাগুলো আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে রূপকথার মতো মনে হবে। সে কারণেই মনে হলো আমাদের দেখা জীবনটা শেয়ার করে যাই। আমি সাধারণ মানুষ বলে তৃণমূলের জীবনের কাছাকাছি ছিলাম। আমরা মধ্যবিত্ত। নিজেরটার পাশাপাশি নিম্নবিত্তের জীবনও কিছুটা দেখেছি।
সাথে থাকার জন্য আবারো ধন্যবাদ।
৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩১
চাঁদগাজী বলেছেন:
হালের বদল যখন আপনাকে গুতো দিয়েছিলো, সেই সময় আপনি কোন ক্লাশে ছিলেন?
২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৯
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ক্লাস ওয়ানে। ১৯৭০ সালে।
আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: সৃতি কথা পড়তে ভালো লাগে।
আমার খুব শখ ছিলো চাষবাস করার। কিন্তু হলো না।
২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫১
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: স্মৃতিকথা আসলেই আকর্ষণ করে অনেককেই। চাষবাস হলো না কেন ?
৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: বেশ , ভালোবাসা ও শুভ কামনা আপনার জন্য।
২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫১
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্যও শুভ কামনা।
৬| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৩
সমুদ্রনীল বলেছেন: মজার স্মৃতি। আমি ও চাষ করতাম আমাদের চাষীদের সাথে শীতকালের সব্জি । বাবা সমবায়ে চাকুরী করতেন।মাসে/২মাসে একবার বাড়ি আসতেন। বাড়ি আসলে আমাকে সাথে নিয়ে কলা গাছ লাগাতেন, সব্জি লাগাতেন। আমাদের ৭ টি পুকুর ছিল। দলবেধে মাছ ধরতাম। কতই না মধুর শৈশব ছিল। এখনকার শিশুরা এইসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৪০
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: মাছ ধরার কথাও লেখার পরিকল্পনা আছে। আল্লাহ ভরসা। ভালো থাকবেন।
৭| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:১৩
মা.হাসান বলেছেন: মইতে চড়ার স্মৃতি আমারো আছে। অত্যন্ত আনন্দের। তবে ছোট ছিলাম, ভয় লাগছিলো বলে বসে ছিলাম।
গরুর ঢিশ কম বেশি খেয়েছি। পরিচিত একজনের পেট ফুটো করে দিয়েছিলো। সে সময় সিন্ধি গাই বলে এক রকমের গরু ছিলো, দুধের জন্য ভালো। লালচে দুধ। আমি অনেক সময়ই কাঁচা ফেনা ওঠা দুধ খেয়েছি।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: হা হা হা ! আমরাও বসেই থাকতাম। দাঁড়িয়ে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার বুদ্ধিতো তখনো হয় নাই। পাকিস্তানে ৭/৮ রকমের উন্নত গাভী পাওয়া যায়। যেমন- জেবু, শাহীওয়াল, লাল সিন্ধি, লোহানী, শিবি ইত্যাদি। তখন বেশি দুধের জন্য কেউ কেউ লাল সিন্ধি গাভী কিনতেন। আমরা বলতাম সিন্ধি। ১০/১২ সের দুধ দিত প্রতিদিন। এর আরেকটা সুবিধা ছিলো বাছুর এক বছরের মধ্যেই বড়ো হয়ে যেতো। এটা অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ান গরুর সাথে ক্রসব্রীড করা।
ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ ! চমৎকার স্মৃতিকথা !