![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন উন্নয়ন কর্মী। জীবনের খসড়া পৃষ্ঠাগুলি থেকে মূল্যবান বিষয়গুলি আলাদা করে পাকা একটি খাতা তৈরী করার আপ্রাণ চেষ্ঠা থাকবে।
হজ্বের মাসগুলি নির্দিষ্ট, অতএব যে কেউ এ মাসগুলোতে হজ্বের নিয়ত করলো তখন হজ্বের মধ্যে না সে যৌন সম্ভোগ করবে, না সে অন্যায় আচরণ করবে এবং না কলহ বিবাদ করবে, আর তোমরা যে ভাল কাজ কর আল্লাহ তা জানেন, তোমরা পাথেয় সাথে নাও তবে নিশ্চয় উত্তম পাথেয় আল্লাহভীতি, ওহে জ্ঞানীগণ তোমরা আমাকে ভয় কর। সুরা আল-বাকারাহ, ১৯৭ নম্বর আয়া’ত।
এই আয়া’ত থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, হজ্বের জন্য সময় নির্দিষ্ট রয়েছে। সে সময় হচ্ছে কয়েকটি সুপরিচিত মাস। মাসগুলো হলো শওয়াল, যিলকদ ও যিলহজ্ব। সকল ইবাদতই হচ্ছে গুনাহ থেকে বিরত রাখা। হজ্বে অনেক নারী পুরুষের সমাগম ঘটবে, বেশকিছু গুনাহ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই আল্লাহ তা’য়ালা প্রথমেই উল্লেখ করলেন সে যৌন সম্ভোগ করবে না। আয়া’তে যে আরবী শব্দ ব্যবহার হয়েছে তা রফাছ। রফাছ হলো মহিলাদের উপস্থিতিতে কিংবা অনুপস্থিতিতে যৌন সংগমের বিষয় অথবা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন বিষয়ে আলোচনা বা এরুপ কোন কাজ করা, নারীদের উত্যাক্ত করা। এসময় মক্কায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের, বিভিন্ন ভাষার, বিভিন্ন ধরনের মানুষের জমায়েত হবে, তাই আচরণগত ও ভাষা প্রয়োগের মাধমে অনেক গুনাহ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিধায় আল্লাহ তা’য়ালা উল্লেখ করলেন হজ্বের সময় না সে অন্যায় আচরণ করবে এবং না কলহ বিবাদ করবে।
এই গুনাহগুলো থেকে বেচে থাকার জন্য রমজান মাসে আমরা কঠর প্রশিক্ষণ করি। এই প্রশিক্ষণের পরীক্ষা হলো হজ্বের মওসুম। অর্থাৎ যৌনতা, অন্যায় আচরণ ও কলহবিবাদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য আমরা রমজানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবো, আর হজ্বে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অপরিচিত মানুষের মধ্যে যৌনতা, অন্যায় আচরণ ও কলহবিবাদ থেকে মুক্ত থাকার অভ্যাসের বাস্তব চর্চা করে পাপ থেকে বেচে থাকার পূর্ণতা অজন করবো। এপর হজ্ব সম্পূণ করে নিজের আবাস্থলে পরিচিত মানুষগুলোর মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে জীবনযাপন করে একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরী করবো। এইভাবে ইবাদতের মাধ্যমে সুন্দার পৃথিবী গড়ে তোলা মহান আল্লাহ তা’য়ালার বাস্তব রোডম্যাপ। গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি ভাল কাজের জন্য আল্লাহ তা’য়ালা এই আয়াতের মধ্যে উৎসাহ দিয়েছেন। এছাড়া হজ্বে গিয়ে চুরি করা বা ভিক্ষাবৃত্তি না করার জন্য নির্দেশনা দিয় মহান আল্লাহ বলেন- আর তোমরা পাথেয় (হজ্বের) সঙ্গে নাও, নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহ ভয়।
পাথেয় দুই রকম, ১টি পথের পাথেয় অন্যটি কর্মের পাথেয়। পথের পাথেয় হচ্ছে জীবনধারণের জন্য খরচ। এই পথের পাথেয় নগদ অর্থ হতে পারে আবার কোন দ্রব্যসামগ্রীও হতে পারে, যা মক্কায় বিক্রয় করে খরচ মিটানো যাবে। যার তথ্য আল্লাহ তা’য়ালা পরের আয়াতাংশে (সুরা আল-বাকারাহ এর ১৯৮ নম্বর) দিয়েছেন। সেখানে মহান আল্লাহ বলছেন- “তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই”। যদি আমরা সুরা আল-বাকারাহ এর ১৯৭ নম্বর আয়াতের শেষ অংশ এবং ১৯৮ নম্বর আয়াতের প্রথম অংশ গভীরভাবে লক্ষ্য করি তাহলে একটি সুক্ষ বিষয় চিহ্নি হবে। সূরা আল-বাকারাহ এর ১৯৭ নম্বর আয়াতের শেষ উল্লেখ রয়েছে যে, “আর আমাকে ভয় করতে থাক; হে বুদ্ধিমান গণ। আর ১৯৮ আয়া’তের প্রথমে উল্লেখ রয়েছে যে, “তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই”। দুই অংশ একত্র করলে হবে “আর আমাকে ভয় করতে থাক; হে বুদ্ধিমান গণ। তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই”। যদি আমরা এভাবে দেখি “আর আমাকে ভয় করতে থাক। হে বুদ্ধিমান গণ তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই”। এখানে বুদ্ধিমান দুই অংশেই ব্যবহার করা যাবে। বুদ্ধিমান লোকেরা আল্লাহকে ভয় করবে পাশাপাশি বুদ্ধিমান লোকেরা আল্লাহর অনুগ্রহও অন্বেষণ করবে।
বুদ্ধিমান লোকেরা জানে মক্কা হচ্ছে মরুভুমি অঞ্চল। সেখানকার অধিবাসিগণ খাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ ও অন্যান্য সামগ্রী বিভিন্ন দেশ হতে সংগ্রহ করে থাকে। যদি কোন হাজী কিছু দ্রব্যসামগ্রী মক্কায় নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করে তাহলে সেখানকার লোকের কিছু উপকার হবে, আবার ঐ হাজ্বিরও উপকার হবে। কেননা যে দ্রব্যসামগ্রী নিজ এলাকায় বিক্রয় করে হজ্বে খরচের জন্য যে অর্থ পাবে তা মক্কায় নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করলে তার চেয়ে বেশী অর্থ পাবে। উপরে উল্লেখিত দুটি আয়াতাংশ এ নির্দেশই দিচ্ছে যে, বুদ্ধিমান লোকেরা আল্লাহকে ভয় করার পাশাপাশি আল্লাহর অনুগ্রহও অনুসন্ধান করবে।
কর্মের পাথেয় হচ্ছে নিয়মানুযায়ী সঠিকভাবে হজ্বের কার্যাদি সম্পন্ন করার জ্ঞান থাকা। তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) হচ্ছে হজ্বের উল্লেখযোগ্য পাথেয়।
রমজানে রোজার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে তাকওয়ার সৃষ্টি হয়, হজ্বে এই তাকওয়ার বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ পাপমুক্ত হয়। কেননা সহীহ্ বুখারী শরীফের হজ্ব অধ্যাইয়ে হজ্বের ফযীলত সংক্রান্ত যে হাদীসটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এমুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে। চলবে------
হজ্বঃ (ভাগ-১)
©somewhere in net ltd.