নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন সুন্দর করে সাজাও । আমি নারী তাই কথাও বলি নারীদের নিয়ে।

কামরুননাহার কলি

আমার নাম কামরুননাহার কলি, আমি একজন ভার্সিটির ছাত্রী। আমার সখ লেখালেখি আর বই পড়া। আমি দেশকে ভালোবাসি, ভালোবাসি দেশের মানুষদের।

কামরুননাহার কলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট্ট একটি স্বপ্ন

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৪

কামরুননাহার কলি
হালকা মৃদু বাতাসে ঢাকার শহরের পরিবেশটা একে বারে ভিন্ন রকমের। তাছাড়াও বছরের দুই ঈদে ঢাকার শহরের পরিবেশটাই হয়ে যায় অন্য রকম। মনে মনে খুব অনুসুচনা হয় ইস, সারা বছরই যদি এমন হতো, আজব এই ঢাকার শহরটি। বেশি একটা জনমানব নেই, রাস্তায় গাড়ীর সংখ্যাও একেবারেই কম। এই সময়টা সকাল হলে একেবারে চমৎকার একটি শহরে পরিণত হয়। দিনটি ছিলো সোমবার ০৪-০৯-২০১৭ তারিখ। আমাদের বাসার থেকে একটু হাটলেই মেইন রাস্তা মিরপুর-১১ নং এর এভিনিয় ফাইভ। সেই দিন সকালবেলা বাসা থেকে একটু বের হয়েছি একটা ব্যাক্তিগত কাজে। বোন আসার অপেক্ষায় দাড়িয়ে ছিলাম ফুটপাতের উপরেই। হঠাৎ চোখ পরলো একটি ১০/১১ বছরের ছেলে শুয়ে আছে ফুটপাতের উপর। একেবারেই মারার মতো শুয়ে আছে। কে জানে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছে নাকি না খেয়েই এভাবে ঘুমিযে পরে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

এক/দুই মিনিট পর নড়াচড়া দিয়ে উঠে বসলো। আমি আস্তে আস্তে ওর পাশে যেয়ে দাড়ালাম ছেলেটিও ঘুম ঘুম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে। কিছু বোঝার আগেই বলে ফেললাম, এই ছেলে তুমি এখানে এভাবে শুয়ে আছো কেনো। এখানে তো অনেক ধুলোবালি, ময়লা-আর্বজ্যজা দেখো না। তোমার বাসা-বাড়ি নেই কোনো, দেখলাম ছেলেটি হেসে দিলো। ওর হাসিটা খুব সুন্দর এবং ওকে দেখতেও বেশ সুন্দর দেখায়। ধনি পরিবারের ছেলে হলো সবাই উপাধি দিয়ে দিতো রাজপূত্র বলে। ওর ময়লা শার্ট, ময়লা প্যান্টের আর শরিরের ময়লার উপর দিয়ে ওর সাদা চামড়াটা দেখা যায়। তাতেই বোঝা যায় ছেলেটি দেখতে বেশ সুন্দর। কিন্তু ওর হাসিটা আমার কাছে রহস্য মনে হলো। ছেলেটি বলল আপা যার কোনো পরিচয়ই নাই তার আবার বাসা-বাড়ি আর ময়লা-আর্বজ্যনা। তখন আমার আর বুঝতে বাকি নেই ও একজন টোকাই। এই টোকাই নাম ছাড়া ওদের আর কি বলার আছে আমাদের। কারণ ওদের মতো সব ছেলে-মেয়েদের টোকাই বলেই উপাধি দেওয়া হয়েছে। আমি ভয়ে ভয়ে ওকে জিজ্ঞেসা করলা তুমি কি ঈদ করোনি, তোমার বাব-মা তারা কোথায় ? জানি না আপা তারা কোথায়, আমার বাবা-মা কোনো দিনকা আছিলে কি না আমি জানিনা আপা। তখনি আমার জানতে ইচ্ছে করলো ওর সম্পর্কে, তাই আটসাট হয়ে দাড়ালাম।

কি নাম তোমার ভাই? ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। সিডর আমার নাম সিডর, আমি তো অবাক, ও মা এই ছেলেটা এটা কি বলে। হেসে দিলাম ওর কথা শুনে, ভেবেছি দুষ্টুমি করে আমার সাথো হাসিটা থামিয়ে বলি এই নাম কে রেখেছে, তোমার বাবা-মা। না আপা, আমিই রেখেছি আমার নাম। তারপরও আবারও হাসলাম তুমি রেখেছো, তার আগে তোমার কি নাম ছিলো, জানি না আপা। আর্চয্য, তুমি তোমার নাম জানো না, কইলাম তো আপা আমার নাম সিডর। এরে এবার বুঝি রেগে যাবে ছেলেটা, বাবা যদি কিছু বলে আমাকে, তাই থেমে গেলাম। শান্ত হয়ে সিডরকে বললাম, তোমার কেউ নেই?। সিডর মন খারাপ করে বলে, আপা আমার কেউ নাই, আছে কি না তাও জানিনা। তাহলে তুমি বড় হলে কি করে, একজনের কাছে থাইক্যা। তার লগে এহন আর থাকিনা, যহন জানতে পারছি ঐ বেটি আমার মা না তহন আর কুনো চিন্তা করলাম না। আইয়া পরছি তার কাছ থ্যাইকা। খালি মারে, আর খাওয়ন দেয়না। তাহলে তুমি তার কাছ থেকে জানলেনা তোমাকে সে কোথায় পেয়েছে। না আপা তা কয়না তয় হুনছি, আমারে নাকি কোন রাস্তায় পাইছে, হেইয়া কইয়াই ঐ বেটি আমারে বকতো, খুব বাজে বাজে বকতো আপা। এই লাইগে আইয়া পরছি। তাহলে তুমি এখন কি করো, কোথায় থাকো, কার সাথে থাকো, কি খাও। আপা আমি এহন পেপার বেচি, এই টাকা দিয়াই খাই আর রাত হলে যেহানে জাগা পাই হেয়ানেই ঘুমাইয়া পড়ি। আইজকা ঈদের বন্ধ হেইয়ার লাইগা ঘুমাইয়া আছি।

সিডরের সাথে আবার ও হাসি দিযে বললাম আমি। আচ্ছা সিডর তোমাকে একটা কথা বলবো। হু বলেন আপা, তুমি যে এই নাম রেখেছো কেনো রেখেছো এই নামটা। আপা আপনের কাছে কই আমি কেনো এই নাম রেখেছি শুনবেন। হা বলো, সাকিব খানেরে চিনেন আপা? কোন সাকিব খান! ঐ যে আপা টিভিতে ছবি করে হেই সাকিব খান। ও.. তাহলে তার জন্য কিভাবে নাম রাখলে তুমি। আপা সে একটা মায়েরে নিয়ে ছবি করছিলো, তয় ছবির নাম জানিনা আপা। সাকিব খান হেই ছবির মধ্যে টোকাই ছিলো তারপর অন্য টোকাই তার নাম দিয়েছে সিডর। তারপর বড় হইয়া তার মায়েরে খুছছিলো পাইছিলো হের মায়রে। আমিও হের মতো করে আমার মায়রে খুজবো। আমিও যদি সাকিব খানের মতো আমার মায়েরে পাই। তাইলে তো কতাই নাই আপা। খুব খারাপ লেগেছিলো সিডরের জন্য। ইস ওদের কত অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন। আচ্ছা সিডর তুমি যদি তোমার মায়েরে না পাও তখন কি করবা। সিডর আমার দিকে চেয়ে রইলো, কিছুক্ষণ পর বলল আপা সাকিব খান যহন পাইছে আমিও পামু। কুনো দিন না কুনো দিন আমি তারে খুইজা বাইর করুম, তহন তারে একটা কথাই জিগাইমু। কি কথা জিগাইবা সিডর, আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপা কি কইমু জানেন, বলুম আমারে কেন ফালাইয়া গেছেলি। তুই আমার মা হইয়া আমারে ক্যান রাস্তায় থুইয়া গেছিলি। কাদো কাদো চোখে সিডর আমার দিকে তাকিয়ে বলল। আপা আমার এই স্বপ্নটা পূরন করতেই হইবো। আমি যেমনে পারি পুরণ করুমই, আমার এই ছোট্ট একটা স্বপ্নও আল্লাহ পুরণ করবোনা। সত্যিই কি পারবে সিডরের এই ছোট্ট একটি স্বপ্ন পুরণ করতে. নাকি পারবে না! নাকি হেরে যাবে স্বপ্নের কাছে সিডর।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.