নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালপুরুষ

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

কালপুরুষ

জন্মঃ নারিন্দা, ঢাকা। পেশাঃ নগর গবেষক। শখঃ আড্ডা, বিতর্ক, লেখালেখি, ফটোগ্রাফী, রান্না, বই পড়া, গান শোনা ও ছবি আঁকা। এক সময় রাশিফল ও হস্তরেখা বিদ্যা চর্চায় যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। বিশ্বাসঃ মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মৃত্যুর মুখোমুখি হতে আমার ভীষণ ভয়।

কালপুরুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীরবতা

০৯ ই মার্চ, ২০০৬ রাত ১২:০৭

আমার কাছে নীরবতা (সাইলেন্স) এক অমূল্য সম্পদ এবং শান্তির স্বরূপ। আদিকাল থেকেই মানুষ নীরবতার সাথে সখ্যতা করে আসছে। নীরবতা চলমান জীবন প্রবাহের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। দেহ, মন ও মস্তিষ্কের বিশ্রামের জন্য নীরবতার কোন বিকল্প নেই। নিজের মন ও ইন্দ্রিয়ের শান্তির জন্য তা অবশ্যই প্রয়োজন। শব্দমুখর পরিবেশ মানুষকে বেশীণ স্বস্তি দিতে পারে না। নীরবতার উন্নত ও পরিশীলিত রূপ হচ্ছে ধ্যান । ধ্যানের আরেকটি আধুনিক সংষ্করণ হচ্ছে মেডিটেশনে। ধ্যান, মেডিটেশন, নীরবতা ও মৌনতা সবকিছুই মানুষের মনোসংযোগ ও আত্মনিয়ন্ত্রনের এক একটা কৌশল। এগুলোর চর্চা, বোধ, অনুশীলন ও প্রায়োগিক দিক ভিন্ন মাত্রাযুক্ত এবং ব্যপক আলোচনার বিষয়। প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি মানুষ আত্মাসচেতনতা ও মনোসংযোগ বৃদ্ধির জন্য ধ্যান, মেডিটেশন, মৌনতা ও নীরবতা পালনকে একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ইদানিংকালে মেডিটেশন মন ও মস্তিষ্কের বি িক্ষপ্ত চিন্তা ও চেতনাকে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনকে আরও সুসংহত ও সুশৃঙ্খল করার এবং আত্ম উন্নয়নের স্বীকৃত, পরীতি ও বিজ্ঞানসম্মত পথ।



অনেক মহাসাধক ও মহাপুরুষ ঐশ্বরিক জ্ঞানলাভ ও ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের জন্য ধ্যান করতেন। মুনি-ঋষি, সাধূ-ফকির, আউলিয়া-দরবেশ, পীরপয়গম্বর অনেকেই নিজের গোত্রের ও আপামর মানুষের মঙ্গলের জন্য বনে-জঙ্গলে, পাহাড়-পর্বতের গুহায় কিংবা নির্জন স্থানে ধ্যানমগ্ন হতেন। আত্মার মুক্তি, ঈশ্বর চিন্তা ও মানব কল্যাণই ছিল তাঁদের ধ্যানের মূল লক্ষ্য। কেউ কেউ আপন উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্যেও এই পথ বেছে নিয়েছিলেন।



ধ্যানে মগ্ন থাকা উচ্চ পর্যায়ের নীরবতা, মৌনতা বা মেডিটেশন। ধ্যনের উদ্দেশ্য মন ও মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রন। অনেকে আবার সৃষ্টি ও জীবনের রহস্য খুঁজতে ধ্যানে বসেন। যদিও ধ্যান, নীরবতা, মৌনতা ও মেডিটেশন সম্পূর্ণ এক জিনিষ নয় এবং এদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ আরও বেশী গবেষনা ও আলোচনা দাবী করে। তাই আমি আমার লেখা নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করতে চাই। তাছাড়া এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞানের দৈনতাও আমি স্বীকার করে নিচ্ছি।



ধ্যান এক প্রকার মানবিক শক্তি যা ইন্দ্রিয়কে জয় করার মতা রাখে। ধ্যান মন ও মস্তিষ্কের সকল চিন্তাও চেতনাকে দেহগত অবস্থান থেকে মনোজাগতিক বা কাল্পনিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। একপর্যায়ে সেখানে দেহের যাবতীয় অনুভূতি সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়। প্রকৃত ধ্যানমগ্ন মানুষ সকল আহার, নিদ্রা, কাম, রিপু সবকিছুর উর্দ্ধে চলে যায়। পান্তরে নীরবতা মানুষের ইন্দ্রিয়গত ও মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। মস্তিষ্কের চিন্তা-চেতনা ও কল্পনার বিপ্তি বিচরণকে নিয়ন্ত্রন করে। দীর্ঘ নীরবতা দেহ, মন ও আত্মার উপলদ্ধিগত শুদ্ধতা আনে, কান্তি দূর করে।



নীরবতা নিঃসন্দেহে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যকীয় উপাদান যেমন বাতাস, পানি ও সূর্যের আলো। নীরবতা অদৃশ্যমান এক নিরেট বাস্তব যা সত্যিকার অর্থে পাশ কাটিয়ে যাওয়া অসম্ভব। নীরবতা আমাদের জীবনের সাথে এমনভাবে মিশে আছে যে সেটাকে আলাদা করে দেখার বা ভাববার বিষয় মাথাতেই আসেনা। নীরবতা এমন এক সূণ আর স্পর্শকাতর বিষয় যাকে বাদ দিয়ে আমাদের জীবন কখনও পূর্ণতা পায় না।



প্রতিনিয়ত আমরা শব্দদূষণের শিকার। নীরবতা আমাদের চারিপাশের শব্দদূষণ কমাতে সাহায্য করে। কথা বলার সময় যে এর মূল্য কত তা আমরা খুব ভাল করে বুঝতে পারি। আমরা সবাই যখন কথা বলি তখন কেউ কারও কথা শুনতে পারলেও বুঝতে পারি না। তাই কারও কথা বুঝতে হলে অন্য সবার নীরব থাকা প্রয়োজন। নীরবতা আমাদের শিা দেয় কিভাবে কথা বলতে হয়, কখন থামতে হয়। কিভাবে কথা শুরু করতে হয়, শুরুর আগে কথা কিভাবে গোছাতে হয়। নীরবতা কথার ব্যাংক, প্রয়োজনে কথার যোগান দেয়। নীরবতা মানুষকে কথার গভীরে যেতে সাহায্য করে। সাহায্য করে অন্যের কথা বুঝতে এবং সেই কথার সঠিক জবাব দিতে। একজন গানের ওস্তাদ রসিকতা করে তাঁর শিাথর্ীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, "গলা সাধার আগে জানতে হবে কোথায় গলা ছাড়তে হবে। শুধু গান গাইলেই চলবে না, গানের কোথায় থামতে হবে সেটাও জানা দরকার, নইলে গান হবেনা"। শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ মানুষের চিরন্তন কাম্য। এমন নয় যে চারিদিকে পিন পতন শব্দের নীরবতা থাকতে হবে। তবে শান্ত শীতল দিঘীর জলের মতো নীরব নিথর পরিবেশ বিরাজ করুক এটা সকলেই চাইবে।



শুধু শব্দের বিচারে নীরবতাকে মূল্যায়ন করলে এর প্রকৃত ভাব বা ব্যঞ্জনাকে তাচ্ছিল্য করা হবে। নীরবতার নিজস্ব একটা আবেদন বা স্বত্ত্বা আছে আর তা হলো কথা বা বচনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে বক্তৃতা বা বর্ণনাকে শ্রুতিমধুর করা। কথার মাঝে দম নেয়া এক ধরনের নীরবতা। হঠাৎ আচমকা কিছু একটা ঘটে গেলে নীরবতা আসে। কোন আপনজনের দুঃসংবাদ মানুষকে হঠাৎ নির্বাক বা নীরব করে দিতে পারে। গল্পে, গানে, চলচিত্রে, প্রামান্যচিত্রে, নাটকে, আবৃত্তিতে, ছড়া, কবিতায় সর্বত্রই নীরবতার সরব উপস্থিতি। মূকাভিনয় বা 'মাইম' নীরবতার নান্দনিক উপস্থাপন। আলোকচিত্রে আলো-ছায়ার নীরব খেলা, চিত্রকলায় রং-তুলির নীরব ছোঁয়া সবই নীরবতার বিমূর্ত উপস্থিতি। প্রকৃতি আর মানুষের মাঝেও অদৃশ্য এক নীরবতার নিবিড় বন্ধন ওয়েছে যাকে আমরা বলি 'ন্যাচারাল ইকো সিস্টেম'। বিশ্বব্রহ্মান্ড আর মহাকাশ জুড়েও রয়েছে অসীম নীরবতা। চন্দ্র, সূর্য ও নত্রের মাঝেও রয়েছে নীরব পালাবদলের খেলা। মেঘের গর্জনেও আছে নীরবতা। জোনাকির আলোতেও নীরব বিরতি। কোকিলের ডাকেও রয়েছে দুপুরের নির্জন নীরবতা।



নীরবতাকে একটা দীঘির প্রাত্যহিক পর্যবেণ কেন্দ্রভাবতে পারি। খুব ভোরে ঐ দীঘির জল দেখতে স্ফটিকের ন্যয় স্বচ্ছ, তলদেশ পর্যন্ত দেখা সম্ভব। রাতভর দীঘি তার জলে এই সাম্য শক্তিটুকু জমা করে। সময় বাড়ার সাথে সাথে মানুষ আসে- গোছল করে, কাপড় কাচে, মাছ ধরে। পশু পাখী আসে- জল খায়, জলকেলি করে। দল বেঁধে ছেলেরা আসে- জলে দাপাদাপি করে, পাথড় ছুঁড়ে মারে। আস্তে আস্তে দিনের কোলাহল বাড়তে থাকে, দীঘির শান্ত রূপ পাল্টে যায়। পুরো এলাকার পরিবেশ এলোমেলো হয়ে যায়। দীঘির জল কাদা মাটিতে ঘোলা হয়। দীঘির নীরবতা ভঙ্গ হয়। দীঘির কিছুই করার থাকে না।



ঠিক একই ভাবে সকালে যখন আমাদের ঘুম ভাঙ্গে মস্তিষ্ক ও মন তখন শান্ত থাকে। সময়ের নিমিত্তে ও প্রয়োজনের তাগিদে মস্তিষ্ক যখন মনকে নির্দেশ দিতে থাকে এটা কর, ওটা কর- এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে তখন মনের রূপ বদলাতে থাকে। তার উপর সংসারের নানা ঝামেলা, অফিসের কাজ, পরিবারিক চাহিদা অন্যান্য সবকিছু মিলিয়ে মনটা স্বাভাবিক কারণেই অশান্ত হয়ে ওঠে। মনের মধ্যে এক ধরনের বিরক্তির উদ্রেক হয়। তখন অবশ্যই মস্তিষ্ক ও মনের নীরবতা ভঙ্গ হয়।



তাহলে কি বলা যায় ঐ দীঘিতে গোছল করা অন্যায়, মাছ ধরা অপরাধ। কিংবা আমরা প্রতিদিন যা যা করছি তা করা অনুচিত। মোটেও না। আসল কথা হলো সবকিছুর মধ্যেই একটা নীরবতা বা বিরতি থাকা দরকার। আর এই নীরবতাই অন্য সব কাজের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক লয়ে নিয়ে আসে। ঐক্যতান রচনা করে। মস্তিষ্ক ও মনের অতিরিক্ত পীড়া থেকে অব্যাহতি দেয়। আত্মা ও মনের প্রশান্তি এনে দেয়। মানুষ ইচ্ছা করে নীরবতা না ভাঙ্গলেও প্রয়োজন ও তাগিদ নিরন্তন তা ভেঙ্গে দেয়। ফলে পরিবেশ ও পারিপার্শি্বক অবস্থা অস্থির ও অশান্ত হয়ে ওঠে।



কানের যেমন শব্দদূষন থেকে রেহাই দরকার তেমন মন ও মস্তিষ্কেরও অহেতুক উত্তেজনা ও বিরক্ত থেকে বিশ্রাম দরকার। দুটোর জন্যই প্রয়োজন নীরবতা। নীরবতা সম্পূর্ন উপলব্ধির ব্যাপার। সকালের সেই দীঘির শান্ত জলের মতো প্রতিটি মানুষের মন ও মস্তিষ্ক নীরবতার আবেশে অটুট থাকতে চায়। চীৎকার চেচামেচি করে নয়, নীরবতা দিয়েই নিজের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। অন্যের ও নিজের কথা বলা বা শোনার জন্য নীরবতার চেয়ে ভাল মাধ্যম আর আছে কিনা জানা নেই। সবাই সবাইকে উপলব্ধি করার জন্য একটু নীরবতা ভীষণ প্রয়োজন। কেউ নীরব না থাকলে কারও কথা শুনবো কি করে। আমার আপনার নীরবতা মানেই অন্যকে বলতে সুযোগ দেয়া। অন্যকে বুঝতে পারা। নীরবতা আমাদের পরম মিত্র।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০০৬ ভোর ৬:০৩

শুভ বলেছেন: কালপুরুষ, ভাই, আপনার

২| ০৯ ই মার্চ, ২০০৬ সকাল ৭:০৩

কালপুরুষ বলেছেন: শুভ, লিখে। নীরব ভাবে লিখে যাওয়া যায়। আপনি আপনার কাজে সরব, কথায় নীরব। সরবতা নেতাদের কাজ। আমাদের কাজ নীরবে লেখা। জনতাকে সরব করা, নেতাদের নীরব হতে বাধ্য করা।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০০৬ সকাল ৮:০৩

শাহানা বলেছেন: আমি যদিও কথা কম বলতে পছন্দ করি, তারপরও একেবারে নিরব থাকতে ভালো লাগেনা। আর অন্যের কথা শুনতেও আমি পছন্দ করি (যদি না গলার স্বর বিকট হয়, অথবা বিরক্তিকর কথা বলে)।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০০৬ সকাল ৮:০৩

শাহানা বলেছেন: তবে আমার কলিগের উৎসাহে মেডিটেশন করবো ভাবছি। এতে যদি নিজের উন্নতি করতে পারি...

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০০৬ সকাল ১০:০৩

কালপুরুষ বলেছেন: শাহানা, অবশ্যই করবেন। আমি করেছি। বুঝেছি এর উপকারিতা।

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০০৬ সকাল ১০:০৩

অতিথি বলেছেন: তীর্থক নীরবে তীর্থপানে যাত্রা করিল । নিরবে ।
ভাল লেগেছে আপনার নীরবতার গুনোগান ।

৭| ১০ ই মার্চ, ২০০৬ বিকাল ৩:০৩

কালপুরুষ বলেছেন: তীর্থক কিছুদিন যাবত বিদু্যৎ বিভ্রাটের কারণে করও মন্তব্য দিতে পারছিনা। আপনাদের লেখাও পড়তে পারছি না। নিজের লেখা কোনরকম পোষ্ট করেই তড়িতাচ্ছিন্নহয়ে যাচ্ছি । তাই ভাববেন না আমি মন্তব্য থেকে বিরত আছি।

৮| ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৪২

মাহবুবুল আলম লীংকন বলেছেন: এই লেখাটা কেউ রেটিং করেনি!! ইন্টারেস্টিং!! চমৎকার লেখা।

৯| ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৭

কালপুরুষ বলেছেন: ধন্যবাদ। এই লেখাটা পরে আরেকটু সংশোধন করে পুনরায় পোস্ট করা হয়েছে। লিংকটা দিলাম।

Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.