নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নচারী মানুষ আমি, স্বপ্নডানায় ভর দিয়ে কল্পনার আকাশে উড়তে পছন্দ করি।\nজীবনের রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্ক কম, তাই পদে পদে হোঁচট খাই…।\nস্বপ্ন দেখি….....! আদিগন্ত আকাশ, অনন্ত সবুজ আর ভালোবাসায় ঘেরা পৃথিবী, অকৃত্রিম অনুভব, মুঠো মুঠো আনন্দ, অ

কাব্য প্রেমী

কাব্য প্রেমী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেচে থাকুক ভালোবাসা

২৩ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:১০

মেয়েরা একটু কম কথা বলবে , একটু লাজুক হবে , আর ঠাণ্ডা স্মিত হাসি হাসবে; এটাই স্বাভাবিক । তবে যারা বেশী কথা বলে আর কথায় কথায় হাসতে পারে ; তারা যে অস্বাভাবিক, তা নয় । তাদের জীবনী শক্তি বেশী হয় । তানিমের অবশ্য এই ক্ষেত্রে কোনো বাছ-বিচার নেই , সবার সাথেই অ মানিয়ে চলতে পারে । তাই বলে কেউ একদম কম কথা বলবে , এটা ও মেনে নিতে পারে না ।
সুস্মিতা’র নামের সাথে ওর নিজের খুব মিল । ঠোঁটের দুই কোণে সব সময় একটা ভুবন ভোলানো হাসি আঁটা । যে হাসিতে বেলী ফুলের শুভ্রতা ঝরে পরে । যে হাসির প্রেমে যে কোন বেরসিক ও সহজেই কুপোকাৎ হবে । আর, এ হাসি নিয়েই তানিমের যত সমস্যা । ‘মেয়েটা সারাদিন হাসে , কথা বলতে কী সমস্যা ?’ । কথা যে একদমই বলেনা তা কিন্তু না । যাকে বলে মিতভাষী।
ক্লাসের আর আট দশ মেয়ে যখন অফ –পিরিয়ডে বন্ধুদের সাথে আড্ডা জমায় তখন ও শান্ত চোখে আকাশ দেখে। উদাস হয়ে ভাবে। কি যেন ভাবে ! তানিমের শঙ্কা, বোধহয় মেয়টা বিশাল রকমের ছ্যাকা খেয়েছিল কোনকালে । তা না হলে এই যুগের কোনো মেয়ে এমন হয়না । এই শঙ্কা অবশ্য সত্যি না, অন্য মেয়েদের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানতে পেরেছিল সে।
ভারসিটির এই একটি মেয়েকেই তার অন্য রকম ভালো লাগে । না প্রেম নয় ; তবে ভালোলাগার চাইতেও বেশি কিছু । সুস্মিতা যে আহামরি সুন্দরী তা নয় । তবে তানিমের কাছে এই সৌন্দর্যের সংজ্ঞা অন্নরকম।
এই ভালোলাগা একদিনে গড়ে ওঠেনি । প্রথমে একদম অসহ্যই লাগতো । ঠিক অসহ্য না, অস্বস্তি বলা চলে । প্রথম ক’মাসেই যখন ক্লাসের সব ছেলে-মেয়ের সাথে ভালো ভাব হয়ে গেল; তখনো সুস্মিতার সাথে তার ঠিক মতো কথাই হয়ে ওঠেনি। তানিম জিজ্ঞেস করত, “কেমন আছো?”, সুস্মিতা একটু হেসে বলতো, ”ভাল” । এর বেশী কোনদিনও হয়নি । যেন শব্দভাণ্ডারে শব্দের মঙ্গা দেখা দিবে আর একটি শব্দ বললে । সে বলে ,”আজকে তোকে সুন্দর লাগছেনা, শ্যাওড়া গাছের পেত্নীর মতো লাগছে” । অন্য কোনো মেয়ে হলে ওর পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিতো । অথচ এই মেয়েটির শুধুই হাসি আর পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া।
তানিম পড়ালেখা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না । পড়ালেখা শেষে চাকরী করে কিছু টাকা উপার্জন করবে; তারপর বউ বাচ্চা নিয়ে সুখী পরিবার । স্বপ্ন এইটুকুই । সুস্মিতার স্বপ্ন কি? সে জানে না । তার খুব ইচ্ছে করে ঐ অজানা স্বপ্ন রাজ্যে একবার ডুব দিয়ে আসতে । যদি কিছু জানা যেতো !
পড়ালেখা নিয়ে মাথা না ঘামালেও সুস্মিতাকে নিয়ে ভেবে তার কপাল থেকে ঘাম ঝরে । মেয়েটা যদি অন্য আর আট- দশটা মেয়ের মতো হতো তাহলে হয়ত এইসব নিয়ে মাথা ঘামানো হতোনা । সে যে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পারে না । সুস্মিতার কথা কম বলাটা, আর অপলক উদাসী দৃষ্টি, তার কাছে অস্বাভাবিক-ই বটে।
সেইদিন খুব বৃষ্টি পড়ছিলো; সুস্মিতা দাঁড়িয়ে ছিলো কখন বৃষ্টি থামবে । হল-এ জলদি ফিরতে হবে তার । তানিম দেখে ভাবল, এইত সুযোগ । এক বন্ধুর কাছ থেকে জোড় করে ছাতা নিয়ে এসে বলল,”চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি”। কিছু না বলে ছাতার নীচে দাড়িয়ে ছিলো মেয়েটি। তানিমও কেন জানি আর কিছু বলতে পারেনি সেদিন।
সুস্মিতা অবশ্য তানিমের ভালোলাগার বেপারটা জানে। তার বন্ধুরা এ নিয়ে যতবার ফাজলামো করেছে,একজন যতই উদাস থাকুক না কেন,কানে গেলে বুঝবেই। আর , প্রথম লেখা কয়েক লাইন এর কবিতাটাও কিভাবে যেন সুস্মিতার হাতে গিয়েই পড়েছিলো। কবিতায় লেখা ছিলো-
“তুমি আকাশের ঐ চাঁদ নও
নও তার উপমা,
তুমি শুভ্র হাসির রহস্য
পরিচিত অপরিচিতা ।।
তুমি আমার পাজরের হৃদপিণ্ড
আমার সুস্মিতা। ”
এ নিয়ে সুস্মিতা অবশ্য কিছুই বলেনি। কিন্তু এরপর থেকে তানিমের দিকে একটু বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকে,কথায় একটু বেশী হাসে; আর চোখে চোখ পড়লে চোখ নামিয়ে নেয়। এই পরিবর্তনগুলো কি ভালোবাসা? সে বোঝেনা । ও যে কিছুই বলেনা!
বন্ধুরা কতবার বলেছে বলে ফেল, যা হবার হবে। পরে যখন হাতছাড়া হয়ে যাবে , কষ্ট পাবি। যদি ফিরিয়ে দেয়? তখন তো আরো বেশী কষ্ট পাবে। চারটি ভালোবাসা দিবস পেরিয়ে গেছে ভার্সিটিতে আসার পরে। চারটি লাল গলাপ খয়েরি হয়ে গেছে। দিতে সাহস হয়নি সেই নাজুক হাতে। সুস্মিতা সুন্দরী হওয়াতে ভার্সিটির অনেকেই তাকে প্রেম নিবেদন করেছে। কাউকেই সে গ্রহন করেনি। তানিমও তো আলাদা-অসাধারন কিছু নয়, তাকে কেন গ্রহন করবে!
ভার্সিটির শেষ দিনগুলোতে এসে সব ভালোলাগার কথা বলে ফেলতে ইচ্ছে করেছে তানিমের । কিন্তু পারেনি। হৃদয়ের লাল রক্তগুলোও হয়তো ধীরে ধীরে খয়েরী হয়ে গেছে!
চতুর্থ বর্ষের সব পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ফলাফল প্রকাশিত হয়। সুস্মিতা তার পাশে দাঁড়িয়েই ফলাফল দেখছিলো। সবার যখন চিন্তা ফলাফল নিয়ে ; তানিম তখন ভাবে, হয়তো আর দেখা হবে না, আর কখনো এই হাসি দেখে প্রেমে পড়া হবে না। এখন হারিয়ে গেলে আর কখনো হয়তো ফিরে পাওয়া হবেনা। শুরু হবে নতুন জীবন। সে আর কিছু ভাবতে পারছিলনা । এইত পাশেই তো সুস্মিতা,এখনি বলে ফেলা উচিৎ। মুখ ফিরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে সেই হাসি। তাকে বলল,” খুব ভালো রেজাল্ট করেছিস, কনগ্র্যাচুলেশন.” । তানিম তখন, “থ্যাংকস” বলে সেখান থেকে হল-এ চলে গেল।
সারারাত ঘুম হলোনা তার। পরদিন সকাল নয়টার বাসেই চলে যাবে সুস্মিতা। প্রতিবারই চলে যাওয়ার সময় আড়াল থেকে সুস্মিতার দিকে তাকিয়ে থাকতো সে। কয়েকবার অবশ্য ধরাও পরেছে তার চোখে।
না , আর আড়াল করা যাবে না। খুব যত্ন করে একটি চিরকুট লিখে ফেলে তানিম।
পরদিন বাসের সামনে দাঁড়িয়ে কাকে যেন খুঁজছিল সুস্মিতা। কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক চেয়ে হতাশ হয়ে বাসে উঠে বসলো সে। বাসের জানালা দিয়েও কাকে যেন খুঁজেছে সে । কই??? কেউতো নেই !! তার চোখে কেউ ধরা পড়েনি। বাস ছেড়ে গেলো তার গন্তব্যে ।
তানিমের সেদিন আড়াল থেকে সুস্মিতাকে দেখা হয়নি। যতনে লেখা চিরকুটটিও দেয়া হয়নি তাকে।
তিন মাসে কিছুটা স্বস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে তানিমের জীবন । সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা’র মৃত্যুর পর, সবার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে সে। মোবাইল নাম্বারও পরিবর্তন করেছে, ফেসবুক এও বসেনি। বাসা পরিবর্তন করেছে যাতে কেউ খুঁজে না পায় । নিজেও নেয়নি কারো খোঁজ ।
সংসারে এখন সে আর তার ছোট ভাই; সংসার চালাতে হলে চাকরী ছাড়া উপায় নাই । কয়েকটা ইন্টার্ভিউ দেয়ার পড় চাকরী পেয়ে যায় । ভালই চলতে থাকে দিন।
সেদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরার সময় যখন সে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো, তখন কে যেন তার নাম ধরে ডাক দেয়। পরিচিত কণ্ঠ! এ যে সুস্মিতা! তানিম নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা। সেদিন সন্ধ্যায় এক ক্যাফেতে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলো তারা । সুস্মিতার ভালোই পরিবর্তন হয়েছে এই ক’মাসে। কথা বলতে শিখেছে সে!
“তুই নাম্বার পাল্টাইসিস কেন?? কতভাবে তোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি তুই জানিস?”, সুস্মিতা বলে। শুনেই অবাক হয় তানিম। “তুই আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিস!!” । “হ্যাঁ”, একটু ইতস্তত হয়ে জবাব দেয় সুস্মিতা। দুজন দুজনার নাম্বার বিনিময় করে সেদিন ।
বাসায় ফিরে গিয়ে মানিব্যাগে রাখা চিরকুটটি বের করে তানিম। মনে মনে ভাবে , পরদিন দেখা হলেই ধরিয়ে দেবে এই চিরকুট । মুখে বলার সাহস যে তার নেই।
এর মাঝে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে দু’জনার। সে খেয়াল করেছে, সুস্মিতার কথায় অন্যরকম একটা আবেগ প্রকাশ পায়,যেটা আগে ছিলোনা।
দু’সপ্তাহ পরে এক শুক্রবারে দু’জন সেই ক্যাফেতেই দেখা করে আবার । কথা বলার ফাঁকে মানিব্যাগ থেকে চিরকুটটি বের করে সুস্মিতার হাতে গুঁজে দেয় তানিম । সুস্মিতা ওখানে বসেই পড়ে-“ এই অনুভুতির নাম কি আমার জানা নেই। কিন্তু যতবার তোর ঐ হাসি দেখেছি, যতবার চোখে চোখ পড়েছে; ততবার হৃদয়ের মাঝে এক হিম স্রোত বয়ে গেছে। ততবার মনে হয়েছে , তোকে আমার চাই ; তোকেই আমার চাই। ” পড়া শেষে চিরচেনা হাসি ফুটে ওঠে তার ঠোঁটে। কিন্তু কিছুই বলেনি সে।
রাতে তানিমের ঘুম আসছিলোনা । কি করে আসবে? আবার সেই হাসি!! বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে ভাবে সুস্মিতাকে কল করবে। ভেবে মুঠোফোনটি হাতে নিয়ে দেখে , একটি বার্তা এসেছে সুস্মিতার নাম্বার থেকে। বার্তায় লেখা, “আমি সবসময়-ই এমন কারো জন্য অপেক্ষা করছি , যে আমাকে সারাজীবন ভালোবাসবে। যে আমাকে কখনো ভুলে যাবে না। আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম তুই আমাকে পচ্ছন্দ করিস। কিন্তু, কখনও কিছু বলিনি। তুইও আগ বারিয়ে কিছু বলিসনি। যেদিন ভার্সিটি থেকে চলে আসছিলাম, সেইদিনো অপেক্ষা করেছি, ভেবেছিলাম তুই আসবি, আমাকে সব কথা বলবি তুই। আসিসনি………। আর আজ যখন তর চিরকুটটি পড়লাম, আমার মনে হল আমি পেয়ে গেছি সেই মানুষটিকে; যার জন্য আমি অপেক্ষা করে আছি। কাল বিকেলে ৫:০০ টায় , রমনায়। চলে আসিস।
আজ তানিম তার সুস্মিতার জন্য পাঁচ নাম্বার গোলাপ টি কিনলো । যে গোলাপ খয়েরী হবেনা । ভালোবাসায় সিক্ত হবে। লাল থাকবে, ভালবাসার রঙে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.