আমি তোমায় পেয়েছি!

২০ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

স্প্যানিশ কবি গারসিয়া লোরকার স্মরণে বাঙালী কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘কবির মৃত্যু’ নামে একটা কবিতা লেখেন। ‘লোরকা’ চরিত্রের বলে নাকি ‘সুনীল’ কবির বলে এমন অসাধারন কবিতার জন্ম হয়েছে সেটা নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে তবে এটা মানতে কারোই আপত্তি থাকার কথা না যে, একজন প্রকৃত কবির পক্ষেই আরেকজন কবিকে নিয়ে এভাবে স্মরণ করা সম্ভব। পাঠক ‘পাঠ’ ছাড়া কিই বা আর করতে পারে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই নিউইয়র্ক থেকে ইংলিশ ও আমেরিকান বিখ্যাত কবিদের কিছু কবিতা নিয়ে এক কবিতার সংকলন বের হয় যা কোনো এক সহৃদয় তার এক কবিতাপ্রেমী প্রিয়জনকে উপহার দেয়, সেটাও ১৯৪৭ সালের কথা। কবিতাপ্রেমী সেই পাঠক বেশ যত্ন (!) করেই বইটা নিয়মিত পড়েছে কেননা বইয়ের অনেক পাতাতেই পাঠকের ভালোলাগা লাইনগুলো আন্ডারলাইন করা।

ঢাকার নীলক্ষেত ও কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের মতো দোকানকেন্দ্রিক না হলেও এখানে অনলাইনে পুরনো বই বেশ কেনাবেচা হয়। আমিও এই বইটা কিনে পড়তে গিয়েই পাতায়-পাতায় পাঠের চিহ্ন ও কয়েক জায়গায় ভাঁজ করা পেপার কাটিং পাই। পেপার কাটিংগুলো কবির মৃত্যুর পর সুইডেনের পত্রিকায় ছাপা হওয়া মৃত্যু-সংবাদ। আর এগুলো রাখাও হয়েছে ঠিক মৃত কবির কবিতার পাতাতেই!
এই লেখার ছবিতে যেমন, আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট-এর মৃত্যুর পরদিন অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে সুইডেনের পত্রিকায় প্রকাশিত কবির মৃত্যু-সংবাদের পেপার কাটিং। বিখ্যাত কবির মৃত্যুকে স্মরণীয় করে রাখতে এটাই হয়তো কোনো এক অখ্যাত পাঠকের পরম শ্রদ্ধার নিবেদন।

কাজী নজরুল ‘যদি আর বাশীঁ না বাজে’ অভিভাষণে যেমন বলেছেন;
“... যেদিন আমি চলে যাব সেদিন হয়তোবা বড় বড় সভা হবে, কত প্রশংসা কত কবিতা হয়ত বেরুবে আমার নামে, দেশপ্রেমিক-ত্যাগীবীর-বিদ্রোহী বিশেষনের পর বিশেষন, টেবিল ভেঙ্গে ফেলবে থাপ্পর মেরে বক্তার পর বক্তা। এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রাদ্ধ দিনে বন্ধু তুমি যেন যেওনা। যদি পার চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরণ করো, তোমার আঙ্গিনায় বা আশেপাশে যদি একটা ঝরা পায়ে পেষা ফুল পাও সেইটিকে বুকে চেপে বলো, বন্ধু আমি তোমায় পেয়েছি”

২ টি +১/-০