![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কামরুল হাসান, সাধারন সুখী জীবনের আপাদমস্তক এক বাঙ্গালী, আপাতত প্রবাসী। জীবিকার তাগিদে কাজ করি আর জীবনের তাগিদে ব্লগ লেখি, বইপড়ি, নন টুরিস্টিক ঘোরাঘুরি করি ও মানুষের সাথে মিশি। বাংলাদেশ থেকে গ্রাজুয়েশনের পর ইন্ডিয়া ও জার্মানিতে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করে এখন সুইডেনে বহুজাতিক এক টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি।
নাম বদনাম যাই বলি না কেন, পশ্চিমা কিছু দেশের কিছু লোক সুবিধা পেলেই যত্রতত্র বস্ত্রত্যাগ করে অর্থাৎ তথাকথিত লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে সুযোগ পেলেই এরা কাপড়চোপড় খুলে দিগম্বর হয়! অনেক দেশেই আবার ‘প্রকৃত প্রকৃতিবাদী’ সংগঠন আছে, আছে এদের জন্য নির্ধারিত মাঠ, পার্ক ও সৈকত।
সুইডেনে শীতকাল বেশ ঠাণ্ডা, দীর্ঘ ও অন্ধকারাছন্ন। বেশ কয়েকমাস এভাবে থাকার পর নিজেকে কেন যেন জেলের দাগী আসামী বলে মনে হচ্ছিল। আর তাই ‘একটু উষ্ণতার জন্য’ খুঁজে ফিরে আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে রৌদ্রজ্জ্বল এক দ্বীপে যাওয়ার সিন্ধান্ত নেই যেখানে আবহাওয়া তুলনামূলক গরম। ট্রেন, বিমানের টিকেট ও হোটেল বন্দোবস্ত করি। ঘোরাঘুরির এক লিস্টও তৈরি করি যাতে ওখানে যেয়ে ভবঘুরে না হতে হয়।
স্পেনের অন্তর্গত হলেও দ্বীপের অবস্থান আফ্রিকা মহাদেশ ও সাহারা মরুভূমির বেশ কাছে, আর এটা ইউরোপিয়ানদের কাছে বেশ জনপ্রিয় গন্তব্য। ওখানে যাওয়ার পর একদিন জনপ্রিয় এক সৈকত, যার পাশেই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া স্যান্ড ডিউন অর্থাৎ বালির পাহাড় আছে এমন জায়গায় ঘুরতে যাই। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে সৈকত ও পাশে বালির পাহাড় যা দেখতে অনেকটা আসল মরুভূমির বালির পাহাড়ের মতোই। হাঁটতে-হাঁটতে একসময় জনসমাগম ও সৈকত ছেড়ে বালির পাহাড়ের বেশ ভিতরে চলে যাই, উদ্দেশ্য কিছু ছবি তোলা ও ভিডিও ফুটেজ নেয়া।
ছোট এক বালির পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছি, হটাৎ নিচে তাকিয়েই চক্ষু চড়কগাছ! নিচে অর্থাৎ আমার অবস্থান থেকে ৫০ মিটারের মতো দূরত্বে কমবয়সী এক যুগল বালির ওপর চাদর বিছিয়ে নিজ-নিজ জন্মদিনের পোশাক পরে চিৎ হয়ে শুয়ে বই পড়ছে। আসে-পাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখি একটু দূরে মধ্য-বয়সী আরেক যুগলেরও একই অবস্থা।
সামনের পাহাড়েও হটাৎ এক বিশালদেহী বয়স্ক দিগম্বরের আবির্ভাব, যার একহাতে স্ক্রাচ ও অন্য হাতে দূরবীন। সমুদ্রের দিকে মুখ করে মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে কি যেন দেখছে। মূর্তিকে দেখে আমার মনে একটা প্রশ্নই আসে, বালির ওপর স্ক্রাচে ভর করে উনি এতদুর এলেন কি করে, আর ফিরবেনই বা কি করে?
আবহাওয়া ১৮ ডিগ্রি হলেও মহাসাগর থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসের জন্য আমি পোলো সার্টের ওপর উইন্ড জ্যাকেট পড়া, মাথায় কাপড়, বুকে স্টিল ও হাতে ছোট ভিডিও ক্যামেরা, ও পিঠে ব্যাগ। নিজেকে এবার বেশ ‘অতি-প্রস্তুত’ মনে হতে লাগে। যাহোক, ক্যামেরা ব্যাগে ভরে, জ্যাকেট খুলে, খালি পা, পোলো শার্ট ও সর্ট প্যান্ট পড়া আমি এবার ওদের মতো ‘সর্ব’ না হলেও কিছু ত্যাগ করে “ইত্থাক তুকে মানাইছে না রে, ইক্কেবারে মানাইছে না রে…” গানটা গাইতে গাইতে ফেরার পথ ধরি।
চোখকান খোলা থাকায় ফেরার পথেও কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে যা আমার কাছে খুব একটা মনোরম বলে মনে হয় নাই। বন্যেরা বনেই সুন্দর, আর কিছু সৌন্দর্য হয়তো আবরণ ও আভরণেও।
©somewhere in net ltd.