![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ । আমি বলি অতি সাধারণ কথা । কারো মনে আঘাত দিতে চাইনা। সত্য কথা বলতে ভালবাসি। পরে সময় হলে আরও কিছু জানবো।
আমি শুনেছি আমাদের সবার পূর্ব পুরুষরা মা-মাটির জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলেন অনেকে শহীদ হয়েছেন। মা আর ফিরে পাইনি তার আদরের সন্তানকে। আজ আবার আমি নিজের চোখে দেখার সু্যোগ পেলাম আর একটি যুদ্ধ । আজ সারা বাংলা আবার উত্তাল হয়ে হাতে হাত রেখে রাজপথে নেমে এসেছে। যখন আমার সমবয়সের তরুণরা রাজাকারদের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে গর্বে আমার বুক ভরে উঠে। আমার ও স্বাদ জাগে আমিও জাগরনের জন্য সবার সাথে রাজপথে নেমে যাবো। কিন্তু আমি শাহাবাগের রাজপথে যেতে পারছিনা কারণ আমি সেখান থেকে অনেক দূরে আছি। আমার অনেক বন্ধু ঢাকা থাকে তারা নিয়মিত শাহাবাগে যাই। রাতে যখন তারা আমার কাছে ফোন করে আন্দলনের কথা জানায় তখন মনে মনে আমার অনেক হিংসা হয়। ইস আমি যদি ওদের সাথে থাকতে পারতাম। কিন্তু কি আর করার আমি থাকতে পারিনি পরিস্থিতির কারণে। ভাবলাম আমি সাইবার জগতে আন্দলনে যোগ দিবো কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি সাইবার জগত ছেড়ে দিয়েছি। এখন বর্তমানে আমি নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি নিহাত পেটের দায়ে। আমি শাহাবাগের তরুণদের উত্তাল কন্ঠে “জয় বাংলা জয়” স্লোগান শুনে আভিহিত।
শাহাবাগের তরুণদের আন্দলনের প্রতি আমি সন্মান জানাই যদি সেই আন্দোলন কোন নিদৃষ্ট রাজনৈতিক দলের না হয়। শাহাবাগের আন্দোলনের শুরু হয় রাজাকারদের ফাঁসির দাবি নিয়ে। কিন্তু দিন যতই যায় দাবি তত বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৬ দফা দাবি নিয়ে তরুণেরা আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমি নিজেও এই আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন করছি। তাদের একটা দাবি আছে জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। আসলে রাজাকারদের দল অবশ্যই নিষিদ্ধ করা উচিত।
একদিন আমার এক বন্ধুর কাছে শিবির সম্পর্কে শুনেছিলাম। সে শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ সে শিবির করে। তাদের কাজ কর্ম তাদের আদর্শ সম্পর্কে শুনলাম, আমার ভালই লাগলো। আমি তাদের ভাল কাজ গুলো কে সন্মান করলাম। আসলে ভাল কাজ যেই করুক না কেন তার ভাল কাজকে সন্মান করতে হবে এটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। কিন্তু কিছুদিন পর জানলাম জামাত এবং শিবির যুদ্ধাপরাধীদের দল। আসলে যুদ্ধের সময় আমার জন্ম হয়নি বা আমি যুদ্ধ দেখিনি। তাই প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্ট হল যে, শিবিরে কাজ কর্ম আদর্শ শুনে আমি তাদের প্রশংসা করলাম আজ সেই শিবির আর জামাত নাকি যুদ্ধাপরাধীদের দল!! অনেক প্রমাণ সাপেক্ষে বিশ্বাস করলাম ওরা যুদ্ধাপরাধীদের দল। কিন্তু যারা শিবির করে তারাতো যুদ্ধাপরাধী না কারণ যুদ্ধের সময় শিবির কর্মীদের জন্মই হয়নি ।
কিন্তু তারা তো জেনে শুনে যুদ্ধাপরাধীদেরকে সাপোর্ট করবে না। অনেক ভেবে চিন্তে বের করলাম, আসলে শিবির কিংবা জামাতের সবাই যুদ্ধাপরাধী না বা তাদের সাপোর্ট করে না। কিছু কিছু মানুষ এই জঘন্য কাজটার সাথে জড়িত ছিল এবং এখনও আছে। তারপর ভাবলাম তাহলে যদি প্রমাণ থাকে যে, তারা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত তবে কেন তাদের এত দিন (স্বাধীনতার ৪০ বছরে) বিচার করা হল না! বাংলাদেশের জনগন কেন এই মানুষ নামক পশুদের বিচার চেয়ে আন্দোলন করল না? নানান প্রশ্ন আসতে থাকে আমার মনে একজন সচেতন মানুষ হিসাবে। আমি আমার বাবা বা তাদের প্রজন্মের কাছে প্রশ্ন রেখে যেতে চাই, আপনারা কেন এর আগে আমাদের মতো রাজপথে নেমে আসেননি? আবার শোনা যায়, বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাজাকার আছে। এই কথা আমি বিভিন্ন মিডিয়া এবং মানুষের মুখে শুনেছি। তাহলে বাংলার মানুষ কেন এত দিন ধরে তাদের বিচার চাইল না? তারা দাপটের সাথে আমাদের সমাজের একজন হয়ে উঠেছে!
কিছুদিন আগে আমার সেই শিবির কর্মী বন্ধুটির সাথে দেখা হল। তার কাছ থেকে তাদের দলের খবর জানতে চাইলাম। সে বলল, “দোস্ত আমি শিবির আর করি না কারণ সবাই এটাকে যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরাধিকারী বলে। আমার শুনতে খুব খারাপ লাগে।” অথচ আমার সেই বন্ধুটি মূলত ইসলামের প্রচার এবং ইসলামের আইনি শাসন প্রতিষ্টার জন্য, ইসলামের আদর্শে জীবন গড়ে তোলার জন্যই কেবল মাত্র শিবিরে যোগ দিয়েছিল। আমি তার কাছে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল, “যুদ্ধাপরাধী যদি আমার নিজের বাবাও হতো তাহলে তাকে আমি ক্ষমা করতাম না।” আমি তার কথা শুনে চমকে উঠলাম, আসলেই আমার সেই বন্ধুটির ভিতরে দেশ প্রেম আছে। আমি আরও শুনলাম তার সাথে তার কিছু বন্ধুও শিবির ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে সাধারণ জীবন যাপনের জন্য। তারা বুঝতে পেরেছে তারা যে জিহাদ করছে তা মানুষ এবং ইসলামের কল্যাণের জন্য নয়।
তাই আমি বলতে পারি শিবিরের সকল ছেলেরা খারাপ না, তাদের কে সকল দোষ দেয়া উচিত নয়। ভালো মন্দ সব দলেই আছে কেউ ধোয়া তুলশি পাতা নয়। আমি আর একটা উদাহরণ দেই, আমার এক প্রতিবেশী কাকু মানুষের বিপদে আপদে এগিয়ে আসেন। তারা কিছু বন্ধু মিলে একটা সেচ্ছায় রক্তদান কমিটি গঠন করেছিলেন অনেক আগে, তারা মানুষের প্রয়োজনে রক্তের চাহিদা মিটিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরে। তাদের মাধ্যমে অনেকে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। আমার দেখা অবস্থায় তিনি আমাদের এলাকার প্রতিটি মানুষের সাথে দল-মত সব ভুলে সুসম্পর্ক রেখেছেন। আমার তাকে খুব ভাল লাগতো। এই কিছুদিন আগে (২৫/০১/১৩) তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সে জামাত করে!! আমি অবাক হলাম সে জামাত করে!!
আমি কাকুকে বললাম, কাকু জামাতের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা যুদ্ধাপরাধী তাও আপনি জামাত করেন কেন?
কাকু হেসে বললেন, “আমি তো যুদ্ধাপরাধী না কিন্তু জামাত করলে অসুবিধা কথায়? ৭১-এ বাঙ্গালির মাঝে রাজাকার ছিল তেমনি জামাতের ভিতরও থাকতে পারে। প্রতিটা রাজনৈতিক দলের ভিতরেই রাজাকার আছে। তাই বলে সেই দলের সবাই তো রাজাকার হতে পারেনা।”
কাকুর কথা শুনে আমি আবার প্রশ্ন করলাম আপনি জামাত করেন কেন?
কাকু বলল, “আমি জামায়েত করি শুধু মাত্র ইসলাম মেনে চলার জন্য, মানুষের সেবা করার জন্য তাছাড়া আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।”
আমি বললাম, আপনি কি জামাতের পক্ষ থেকে ভোটে দাড়াবেন?
কাকু বলল, তোমরা যদি চাও দাঁড়াতে পারি।
আমি বললাম আপনাকে তো পুলিশ মামারা ধরবেন!
কাকু বললেন, “পুলিশতো মহান নেতা জাতির পিতা শেখ মুজিবর কেও ধরে ছিলেন, তাই বলে কি স্বাধীনতা যুদ্ধ থেমে ছিল?”
কাকু কি বুঝাতে চাইলেন তা আমি বুঝে নিলাম। এর কিছুদিন পরে কাকুকে জঙ্গী সন্দেহে পুলিশে ধরে নিয়ে যায়, অথচ তার নামে সমাজে কথাও কোন অভিযোগ নেই। সে জামাত করে অধিকাংশ মানুষ সেটা জানেই না। তারপরও তার অপরাধ সে জামাত করে, আসলে যারা খারাপ তারা এখনও সমাজে মুক্ত। আমি দেখেছি বিভিন্ন দলের মানুষেরা রক্তের প্রয়োজনে তার কাছে ছুটে গেছে, আমি নিজেও গেছি সে তার সাধ্যমতো সবাইকে সাহায্য করেছেন। কিন্তু আজ সে জেলে গেল শুধু মাত্র সন্দেহের কারণে। আমার মনে পড়ছে সেই ঘটনাটি, কোন এক দেশে এক ঈমাম সাহেব কে সন্ত্রাসী মনে করে গুলি করা হয়েছিল শুধু মাত্র সন্দেহের কারণে। পরে প্রমাণ পাওয়া যায় তিনি মসজিদের ঈমাম ছিলেন।
আমার মতে আমি বলতে পারি, যে জামাত বা শিবির করে তাদের কোন দোষ নাই কারণ তারা ইসলামের জন্য, ইসলামের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জামাত-শিবিরে যোগদান করেছে। কারা যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকার তা না জেনেই জামাত-শিবিরে যোগদান করেছেন তারা।
দোষ তাদের যারা এই সব সাধারণ ইসলাম প্রেমী মানুষ গুলোকে নিয়ে সঠিক ইসলামের পথে নয় বরং ভুল পথে পরিচালিত করছে। যারা এই মানুষ গুলোকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কালের-ইতিহাস ক্ষমা করবে না।
আমি নিজে রাজনীতি করিনা তবুও সকল রাজনৈতিক দলের নীতিমালা বা মূল কথা বা আদর্শ সম্পর্কে কিছুটা লেখাপড়া করেছি। আমি এটা দেখেছি প্রতিটা রাজনৈতিক দল যদি তাদের মূল নীতিমালা বা আদর্শ অনুযায়ী চলে তাহলে আমাদের সোনার বাংলাদেশ অল্প সময়ের ভিতরেই উন্নত হয়ে যাবে। কিন্তু হাসির কথা এই যে কোন রাজনৈতিক দল তাদের মূল আদর্শ মেনে চলতে পারে না।
এখন আমি দেখছি অনেক জামাত-শিবির কর্মী বিবেকের তাড়নায় জামাত-শিবির ত্যাগ করছে। কারণ তারা স্বাধীনচেতা, তারা ইসলামের জন্য জামাত-শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু তারা যখন জানতে পারলো, এটা আসলে যুদ্ধাপরাধীদের দল তখন তারা জামাত-শিবিরের সঙ্গ ত্যাগ করছে। এখন তারাও দাবি করছে, যুদ্ধাপরাধী যে বা যারাই হোক না কেন তাদের বিচার করতে হবে।
আমি চাই দেশের যুদ্ধাপরাধী তথা জাতির কলঙ্ক-দের চির তরে মুছে ফেলা হোক। আমি শাহাবাগের সকল তরুণদের কে জানাই, তোমরা আন্দোলন করে যাও কোন যুদ্ধাপরাধীদের এই দেশের মাটিতে ঠাই দিও না। তাদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত তোমরা ঘরে ফিরবেনা। মনে রেখও তোমরা ঘরে ফিরলেই যুদ্ধাপরাধীরা আইনের ফাক দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
পরিশেষে বলব, মানুষ মাত্রই ভুল করে তাকে ক্ষমা করা যায়। কিন্তু যে জেনে শুনে ভুল করে তাকে কখনো ক্ষমা করা যায় না। আর তাদের ক্ষমা করলে শহীদ ভাইয়েরা আমাদের কোনদিন ক্ষমা করবেন না। সকল রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের উদ্দেশে বলতে চাই “তুই রাজাকার- তুই রাজাকার, তোর ফাঁসি চাই- তোর ফাঁসি চাই”
©somewhere in net ltd.