নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শালীনতা বজায় রাখুন

ফাজলামো

কিছুই না.........

ফাজলামো › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায় হায়..... যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে তেহরান রেডিওকে একি বললেন শফিক রেহমান ?

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৩

একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কেলেঙ্কারি সংলাপ ফাঁস, সরকারের ভূমিকা নিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিক্রিয়া এবং ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেখতে তুরস্কের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর নিয়ে বাংলাদেশে আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। এসব নিয়ে রেডিও তেহরান গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক শফিক রেহমানের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সাক্ষাৎকারটি নিম্নে দেয়া হল:



রেডিও তেহরান : ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং বেলজিয়ামে বসবাসকারী আইনজীবী ড. আহমদ জিয়াউদ্দিন অশোভন ও নীতিবিবর্জিত কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক)। সেইসঙ্গে তারা এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে। ঘাদানিকের এই দাবির মূল কারণ কি?



শফিক রেহমান : দেখুন! সরকারের প্রতি ঘাদানিকের এই দাবির মূল কারণটা কী সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়টি বাইরে থেকে অনুমান করাটা ঠিক হবে না। তবে ঘাদানিককে আমরা প্রশ্ন করতে পারি, গতবার যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন কেন এই মামলাটি করা হয়নি? প্রথম থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম এই মামলার নামের মধ্যেই একটা ভন্ডামি বা মিথ্যা জড়িত আছে। যেমন International Crimes Tribunal. কিন্তু এটা যে কিভাবে International’ হলো তা আমি অনেককেই বুঝাতে পারিনি। আমি জানি যুদ্ধাপরাধের বিচারে অভিযুক্তদের পক্ষে বৃটেন থেকে একজন আইনজীবী আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে আসতে দেয়া হয়নি। যদি তাকে আসতে দেয়া হতো সেক্ষেত্রেও হয়ত বলতে পারতাম এটা একটা International Tribunal.



আপনাদের হয়তো মনে থাকবে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার হচ্ছিল তখন পাকিস্তান সরকার টমাস উইলিয়ামসনকে লন্ডন থেকে আসতে দিয়েছিল। সে রকম কোনো চিত্র কিন্তু এবার আমরা দেখতে পেলাম না। ফলে কী করে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল ‘আন্তর্জাতিক' হলো এটা তো আমরা বুঝি না! সুতরাং ঘাদানিকের এই বিবৃতির কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে নিজেরাই অভিযুক্ত হতে যাচ্ছে কারণ আওয়ামী লীগ সরকার দু'বার ক্ষমতায় থেকেও যুদ্ধাপরাধের বিচার করেনি। সেজন্য তারা অবশ্যই অভিযুক্ত হবে। দেশের মানুষ তাদেরকে অভিযুক্ত করবে। সবাই যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় কিন্তু identify করতে হবে কারা সত্যিকার অপরাধী ছিল এবং তা দ্রুত নিত্তি করতে হবে।



এখানে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, কিউবায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো যখন বিপ্লব করেন তার দু'মাসের মধ্যে বিচারের রায় এবং তা কার্যকর করা হয়েছিল। তবে আমার মনে হয়, আজকে ঘাদানিকের যেটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হচ্ছে- তারা বুঝতে পারছে যে, এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকবে না। আর সেজন্যেই তারা এখন থেকেই সরকারকে দায়ী করছে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা বলছে। আমি এ ব্যাপারে ঘাদানিককেও দায়ী করছি।



রেডিও তেহরান : যুদ্ধাপরাধের বিচারের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার এ বিচারের পরিসমাপ্তি টানতে পারবে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। এ সংশয় প্রকাশ করাটা কি যৌক্তিক নাকি সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে? কারণ বিচার প্রক্রিয়া তো সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী চলবে না, এটা চলবে আইনের নিজস্ব গতিতে।



শফিক রেহমান : আইনের নির্দেশনায় চলতে হবে এবং এটা স্বচ্ছভাবে হতে হবে, জবাবদিহিতা থাকতে হবে। দেশের মানুষের কাছে যাতে এটা গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে মানুষ মনে করছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বিচার করা হচ্ছে, দেশের কারণে নয়। রাজনৈতিক কারণে বিচার হচ্ছে বলেই মানুষ মনে করে। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দলীয ফায়দা লোটার জন্য এই বিচারের আয়োজন করেছে।



আপনি একটি বিষয় শুনলে হাসবেন। বিষয়টি এ রকম- কিছু দিন আগে বাংলাদেশে একটা ভূমিকম্প হয়ে গেল। তখন দেশের মানুষ বললো- নিশ্চয়ই এখন আওয়ামী লীগ বলবে যে, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে এই ভূমিকম্প হয়েছে।' আজকেই আমি আরেকটি বেশ হাস্যকর কথা শুনতে পেলাম। কথাটি এ রকম আপনি জানেন যে ঢাকায় অনেক ট্রাফিক জ্যাম হয়। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে পুরো এয়ারপোর্ট রোড পর্যন্ত ভীষণ জ্যাম ছিল। ওই সময় বাসের মধ্যে এক ভদ্রলাক চিৎকার ও চিল্লা-পাল্লা শুরু করে বললেন, এইসব জ্যামের কারণ কি জানেন? এই যে বাস, ট্রাক, বেবিট্যাক্সি, সিনএনজি বা ট্যাক্সির যত ড্রাইভার আছে তাদের কারণে এই জ্যাম হচ্ছে। এ সব ড্রাইভারের কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না বলেই জ্যাম হচ্ছে। দেখুন! দেশে এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গটি নিয়ে এ রকম জোকস তৈরি হয়েছে। আজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে একটি হাস্যকার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য, জোকসে পরিণত করার জন্য সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী এবং তারা জানে মুক্তিযুদ্ধের নামে ব্যবসা করে তাদেরকে এভাবে ক্ষমতায় থাকতে হবে। তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করছে।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মুক্তিযুদ্ধে যাননি। আমার প্রশ্ন- তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন? তার বাবার কথা নাইবা জিজ্ঞাসা করলাম। তার স্বামীও মুক্তিযুদ্ধে যাননি। সবচেয়ে হাস্যকর কথা হচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করছে যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। আওযামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল তাদেরকে ‘পাকিস্তানের চর' বলা হচ্ছে। তো এই যে দলীয়করণ, মিথ্যাচার ও অসভ্য ভাষায় কথাবার্তা তারা বলছেন- আমি রেডিও তেহরানের মাধ্যমে এসবের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।



রেডিও তেহরান : আচ্ছা, সম্প্রতি তুরস্কের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে এবং এর সদস্যরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের বিষয়ে নানা খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তাদের এ তৎপরতাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? তুরস্কের প্রতিনিধিদলের সফরের মূল কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?



শফিক রেহমান : দেখুন, এখানে ইকোনমিস্ট বলেছে যে, কেন তারা স্কাইপের কথোপকথন প্রকাশ করেছে। ইকোনমিস্ট বলেছে, এই বিচারে জুরিরা নেই-এটা একটি বিষয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, এই বিচারের ওপর কিছু লোকের জীবন-মৃত্যু নির্ভর করছে। অর্থাৎ কিছু লোকের প্রাণদন্ড হতে পারে এবং তা কার্যকরও হতে পারে। সুতরাং এখানে মানবতার প্রশ্নটি খুব বড় একটি বিষয়। আর সে জন্যেই ইকোনমিস্ট মনে করছে, মানবতার স্বার্থেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা উচিত। আর সেইভাবেই আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি বলতে চাচ্ছি- তুরস্ক থেকে যে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে- তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করতে গিয়ে মানবতার বিষয়টি ঠিকমতো রক্ষিত হচ্ছে কি না তা দেখা। আর এ বিচারের বিষয়টি তো অবশ্যই স্বচ্ছ হওয়া উচিত।



তুরস্কের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে কিভাবে এসেছে সেটা বড় কথা নয়, তারা কেন এসেছেন সেটা বড় কথা। তুরস্কের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর থেকে On-arrival Visa নিয়ে এসেছেন সেটা তো তাদের কোন ক্রটি নয়, তারা নিয়ম মেনেই এসেছেন। তারা যেটা পর্যবেক্ষণ করেছেন বা যা দেখেছেন তার ভিত্তিতে যদি তারা বলেন, ‘হ্যাঁ সবকিছু ঠিকভাবে হচ্ছে' তাহলে সেটা তো ভালো কথা। এতে ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই। তবে তারা ভয় পাচ্ছে এই জন্যে যে, ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এবং ব্রাসেলসের আইনজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দীন স্কাইপে যে কথাগুলো বলেছেন তাতে সবকিছু ফাঁস হয়ে গেছে।



এ প্রসঙ্গে আমি আরো বলতে চাই, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম স্কাইপে যে কথাগুলো বললেন সে ভাষাগুলো আপনারা একটু খেয়াল করে দেখুন তারা তো আসলে কথাই বলতে পারেন না, শুদ্ধ করে বাংলা বলতে পারেন না, বরিশালের দেহাতি বাংলয় তারা হা-হা, হি-হি করে হাসছেন। এই তো তাদের যোগ্যতা। এদের লজ্জা করা উচিত। তুরস্কের প্রতিনিধিদল যদি বিষয়টি দেখে থাকে তাহলে তারা বুঝে যাবেন, আসলে এখানে কি হচ্ছে! আজকে আমি রেডিও তেহরানের মাধ্যমে দেশের তরুণ সমাজকে বলতে চাই- যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে তোমাদেরকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধের বিচার ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই বিএনপি করবে বলে আমি আশা করি। কেননা বিএনপি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের দল। আর তার নেতা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা। তিনি নয় মাস যুদ্ধ করেছেন। আমি তরুণ সমাজকে অনুরোধ করব তারা যেন এ ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে।



রেডিও তেহরান : এ বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ আছে বলে কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়। অবশ্য, প্রকাশ্য কোনো বক্তব্য নেই। এখন তুর্কি প্রতিনিধিদলের সফরকে কি এ চাপের অংশ মনে করা যায়?



শফিক রেহমান : দেখুন, যখন ১/১১ হয়েছিল তখন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক চাপ পছন্দ করেছিল। যখন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তখন বৃটেনসহ বহু দেশের এমনকি আমেরিকারও সাহায্য ছাড়া আমরা হয়তো স্বাধীনতা লাভ করতে পারতাম না। কেননা তারা আমাদের স্বাধীনতার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রভাব সৃষ্টি করেছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সাধারণত সহযোগিতা ছাড়া সফল হয় না। আয়ারল্যান্ডেও এ ধরনের আন্দোলন সফল হয়নি। সুতরাং আন্তর্জাতিক একটা প্রভাব থাকবেই কারণ বিশ্ব এখন খুব ছোট হয়ে গেছে। সব খবর সবাই পড়ছে, জানছে। সেক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশও জানছে আমাদের দেশে কি হচ্ছে। এর মধ্যে তো দোষের কিছু নেই বরং এটা ভালো একটা দিক। আর এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ইরান হোক, বৃটেন হোক, আমেরিকা হোক বা ইউরোপের অন্য কোনো দেশ হোক তারা তো কাজ করতে চায়। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী এখন আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করছে। যদি ওইসব দেশ থেকে কোনো প্রতিনিধিদল এসে বাংলাদেশে কি হচ্ছে জানতে চায় সেটাকে তো আমাদের আনন্দের সঙ্গে বরণ করে নেয়া উচিত। তাদেরকে বলতে হবে, দেখো আমরা কি করছি এবং তোমরা দেখো এর মধ্যে কোনো ভুল-ক্রটি পাও কিনা। যদি ভুল-ক্রটি থেকে থাকে এবং তোমরা দেখে থাক তাহলে সেটা বল আমরা সংশোধন করব। এই মনোভাব আমাদের থাকতে হবে। কিন্তু সেটা আওয়ামী লীগ সরকার বলতে পারবে না। আমি আগেই বলেছি যে, একটা দলীয় প্রক্রিয়ায় এই বিচার চলছে।



রেডিও তেহরান : বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেছেন...



শফিক রেহমান : না, তিনি বিচারকের পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। তিনি ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছেন কিন্তু তিনি হাইকোর্টের চাকরি ঠিকই বজায় রেখেছেন। এই দেশে খুব কম লোকই পদত্যাগ করে। তারা বাড়ি, গাড়ি, এয়ারকন্ডিশন এগুলো চায়। তাদের নিজেদের কোনো যোগ্যতা নেই।



রেডিও তেহরান : জি, আমি সে কথাই বলছিলাম যে, বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ হওয়ার পর তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাব দেখেন?



শফিক রেহমান : দেখুন, লন্ডনের ইকোনমিস্ট এবং আমেরিকার ফরেন অ্যাফেয়ার্স এ প্রশ্ন তুলেছে যে, এই বিচার প্রক্রিয়া প্রথম থেকে আবার শুরু হওয়া উচিত কারণ এটা স্বচ্ছ হয়নি। প্রথম থেকেই বিচার প্রক্রিয়া গোলমেলে এবং দলীয় স্বার্থপ্রণোদিত ছিল এবং দেশে ও বিদেশে কিছু অজ্ঞলোক দ্বারা এই বিচার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছিল। সুতরাং যদি আন্তর্জাতিকভাবে এখন দাবি ওঠে আমি সেটাকে শুভ দাবি বলব।



আমার কথা হচ্ছে, দেশকে আর কতকাল বিভক্ত করে রাখা হবে? আমি চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিচার প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হোক যাতে সবাই একাত্ম হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারে। আমি এখানে একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটেন এবং জার্মানি পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। আর ১৯৬৬ তে লন্ডনে যখন বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা হচ্ছিল আমি তখন সেখানে ছিলাম। আমি দেখলাম বৃটিশ ও জার্মান দর্শক একাত্ম হয়ে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা উপভোগ করছে। সেখানে কোনো ভেদাভেদ বা গালিগালাজ ছিল না। তো যুদ্ধাপরাধের ইস্যু নিয়ে আমাদের দেশে এই যে বিভাজন প্রক্রিয়া চলছে সেটাই কিন্তু আওয়ামী লীগের একমাত্র সম্বল। কারণ তাদেরতো কোনো অবদান নেই, এইসব নিয়েই তো তাদের বেঁচে থাকতে হবে। তারা দ্বিতীয় আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কার বিরুদ্ধে তারা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে! আমার মনে হচ্ছে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ রকম একটি ঘোষণা দিয়েছে।



রেডিও তেহরান : গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে অঙ্গীকার করেছিল- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। অর্থাৎ এটা ছিল একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা এবং সে অনুযায়ী বিচার চলছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। এ অভিযোগকে আপনি কিভাবে দেখবেন? এছাড়া, এমন একটি আইনী প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিণত করা কতটা যৌক্তিক?



শফিক রেহমান : না, এটাকে রাজনৈতিক বলাটা ঠিক হবে না। দেখুন, সেই সময় যার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন মারা গিয়েছিল তাদের মনে কিন্তু একটা ক্ষোভ থাকবেই। কারণ তাদের মনে হবে আমার মা মারা গেলেন, বাবা মারা গেলেন কিন্তু তার কোনো বিচার হলো না। সুতরাং এটাকে দেশের দাবি বলে মনে করতে হবে। তবে দেশের দাবি মেটানোর জন্য দলীয়করণ করাটা উচিত হয়নি বলে আমি মনে করি। সুতরাং আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোতে যাই থাকুক না কেন, এটা দেশের একটা দাবি ছিল এবং এখনও আছে। আমরা আশা করি বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে দ্রুত এ বিষয়ের বিচার করবে এবং নিত্তি হবে। তা না হলে দেশ চিরকাল বিভক্ত থেকেই যাবে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৯

...ধরলা পারের ছেলে বলেছেন: সময়... মানুষ ফিরে আসছে, নিজেদের বিবেকে

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৫০

মাসরুর প্রধান বলেছেন: বিএনপি আগে করে নাই কেন?

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০১

ফাগুল বলেছেন: শফিক রেহমানরে একটা লাল গোলাপ হাতে দেউল্লা সাইদীর কারাগারের সেলে একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য পাঠানো হোক... তীব্র মেশিন চলাচলির পরে আবার তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হোক... :)

৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২২

এস বাসার বলেছেন: ফাগুল বলেছেন: শফিক রেহমানরে একটা লাল গোলাপ হাতে দেউল্লা সাইদীর কারাগারের সেলে একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য পাঠানো হোক... তীব্র মেশিন চলাচলির পরে আবার তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হোক... :-P সাথে লইট্টা ফ্রাই আর পান চলবে........ :-/

৫| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৩

মোহাম্মদ আনোয়ার বলেছেন: শফিক রেহমান রাজাকার, শফিক রেহমান আল-বদর, শফিক রেহমান মৌলবাদী, শফিক রেহমান জঙ্গী, শফিক রেহমান যুদ্ধ............... আর কি কি নামে তারে ফাঁসানো যায় ????????????!!!!!!!!!!! :) :D B-) ;) :P :#) B-)) :-B :P =p~ =p~ =p~ =p~

৬| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

মুফতি বাবা বলেছেন:
এস বাসার:

আওয়ামীলীগ সমর্থন করলেই কি আবালের মত কমেন্ট করতে হবে?? শফিক রেহমান কে, কি তার যোগ্যতা এবং সে কি বলেছে এই সব বিজার ঘিলু না থাকলেই অন্যের কমেন্ট কপি মাইরা দেওন যায়|

মুক্তিযুদ্ব আর যুদ্বাপরাধ নিয়া ব্যবসা আর কড় করবেন?? ধরা পইরা গেছেন এইবার, ইলেকশনের দিন দেশের মানুষ খবর কইরা ছাইরা দিব|

৭| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৬

িবদ্রহী বলেছেন: এই এক ভেনর ভেনর শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছি। আমার কথা হইলো বুইড়া গুলারে মাইরা যদি দেশের লাভ হয় মারনা ... বইয়া রইছস কিল্লাই।


মাইরা সাফা কইরা ফালা ।

বিচার বিচার বিচার .।সকালে পত্রিকা খুল্লেই হয় বিচার আর না হয় লাশ । আর ভালো লাগেনা মামু

৮| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৭

এম . এম ওবায়দুর রহমান বলেছেন: শফিক রেহমান দারুন সব কথা বলেছেন। তার কথা গুলো চমৎকার যুক্তিপূর্ন।
আশা করবো সত্যিকারের বিচার করবে সরকার লোক দেখানো ছেলে ভুলানো কোন বিচার আমরা চাইনা।
তবে সরকারের যেই অবস্থা তাদের থেকে ভাল কিছু আশা করতে পারছি না।
বরিশাইল্লা এক আনস্মাট লোককে দিয়ে কি বিচার হইবো? ওানতো কথাই বলতে পারেন না।

একটি প্রশ্ন দারুন করেছেন হাসিনা বা তার স্বামী কোথায় ছিল ৭১ এ?

৯| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৬

াহো বলেছেন:

গত শতকে বিশ্বের প্রথম গণহত্যা ঘটিয়েছিল তুরস্ক। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তুরস্ক প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করেছে—এখন পর্যন্ত যার বিচার হয়নি। আর্মেনিয়ার মানুষ প্রায় ১০০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিচার দাবি করে আসছে। এখনো তুরস্ক নির্বিচারে কুর্দিদের হত্যা করছে।

১০| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৮

াহো বলেছেন: হাসিনা বা তার স্বামী বন্দি




এদিকে একদিন সকালে বন্দিনী মা আবিষ্কার করলেন জামাল উধাও। বেগম মুজিব পাকিস্তানিদের দায়ী করলেন শেখ জামালকে অপহরণ করার অভিযোগ এনে। সারা বিশ্বে আলোড়ন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো পাকিস্তানিরা শেখ মুজিবের মেজ সন্তানকে গায়েব করেছে। সেই জামালকে আমি আবিষ্কার করলাম বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ নম্বর সেক্টরে। পরবর্তী ঘটনা বিবৃত করার আগে বলে নিই, জামালকে আমার বরাবরই মনে হতো মুখচোরা ও নিরীহ চরিত্রের অন্তর্মুখী চাপা স্বভাবের কিশোর। কোনো দিন সকালে ৩২ নম্বরে গেলে, খাবারঘরের পশ্চিম কোণে একটি কামরায় তাকে দূর থেকে দেখতাম লেখাপড়া করছে। মুখচোরা, লাজুক তরুণটি, সদ্য আইএ তথা এইচএসসি পাস করা অন্য চরিত্রের এক অসম সাহসী জামালের দেখা পেলাম যুদ্ধক্ষেত্রে একটি পরিখায় অস্ত্র হাতে। সাংবাদিকেরা যাকে বলে ‘স্কুপ’, সেই সুযোগ ছাড়তে আছে? আমি তখন মুজিবনগরে বিবিসি, লন্ডনের দি টাইমস ও সানডে টাইমস-এর জন্য খবর সংগ্রহ করছি। একটি চমক লাগানো খবর আবিষ্কার অথবা স্কুপের সুযোগ ছাড়ে কে? আমার ক্যানন এসএলআর ক্যামেরায় জামালের ছবি তুলে পাঠালাম লন্ডনের সানডে টাইমস-এ। সেই খবর আর ছবি মুজিবনগর সরকারকে মহা ক্ষিপ্ত করল। ভারত সরকারের গোয়েন্দা দপ্তর এল খোঁজ করতে। তাদের রুষ্ট হওয়ার কারণ জামালের নিখোঁজের খবর পাকিস্তান সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছিল। আমার অপরাধ আবিষ্কৃত জামাল পাকিস্তানিদের একটি গুরুতর অভিযোগের হাত থেকে রেহাই দিল।


এবিএম মূসা
prothom-alo
১২-০৮-২০১০
http://www.prothom-alo.com/detail/news/85832

১১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৯

াহো বলেছেন: জামাল-কামাল- দুজনই মুক্তিযোদ্ধা। শেখ কামাল ওসমানীর এডিসি ছিলেন। শেখ মণি মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন






প্রথমেই শেখ কামালের কথা বলি। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট অফিসারদের একজন। ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর এদের পাসিং আউট হয়। এরপর সেকেন্ড
লেফট্যানেন্ট শেখ কামাল প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ জামাল পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গৃহবন্দী ছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুজিব বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেছেন। ২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের যেসব আলোকচিত্র আসে তার একটিতে সীমান্তের ১০ মাইল ভেতরে একটি রণাঙ্গনে সাবমেশিনগানধারীদের একজন হিসেবে ছবি ওঠে জামালের। শেখ কামালের ছবি আছে অজস্র, তার পাসআউটের, ওসমানীর সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধাঞ্চলের।


শেখ জামাল পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গৃহবন্দী ছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুজিব বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেছেন। ২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের যেসব আলোকচিত্র আসে তার একটিতে সীমান্তের ১০ মাইল ভেতরে একটি রণাঙ্গনে সাবমেশিনগানধারীদের একজন হিসেবে ছবি ওঠে জামালের।





১>http://www.prothom-alo.com/detail/news/85832
২>ফেসবুকে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ নামে একটা এলবাম আছে আমার। সেখানে গুতালেও কিছু চমকপ্রদ খবর চোখে পড়বে আপনাদের
Click This Link
৩>কামাল-জামালের মুক্তিযুদ্ধ---অমি রহমান পিয়াল
http://www.amarblog.com/omipial/posts/116278

১২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২০

রাসেল ভাই বলেছেন: ফাগুল , এস বাসার দেল্যা রাজাকার আপনাদের এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলো :( তিব্র মেশিন চালাইছে বুঝি :P । বেশি রাতে গেলেতো এমনিতেই সময় কম পাইবো আজকে একটু তাড়াতাড়ি যাবেন বেশি সময় পাবেন ;)

পরিশেষে, হাতে গোলাফ থাকার পরও দেইল্লা রাজাকার দুইজনরে একসাথে তিব্র মেশিন চালিয়ে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়ায় তেব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি :-*

১৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২২

াহো বলেছেন:



যেভাবে গ্রেফতার হলেন বঙ্গবন্ধু ---------------পাকিস্তান কমান্ডো ব্রিগেডিয়ার জহির আলম খান



ব্রিগেডিয়ার জহির আলম খান ১৯৭০ সালের মে মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসাবে কুমিল্লা সেনানিবাসে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন চৌকস সেনা অফিসার এবং নিজ দেশের বাইরে লেবাননে সেনা কর্মকর্তার দায়িত্বপালন করেছিলেন। সত্তরের নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রিগেডিয়ার জহিরের মতো অনেক চৌকস পাকিস্তানী সামরিক অফিসারকে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন সেনানিবাসে নিয়ে আসা হয়। তিনি ১৯৭১-এর মাঝামাঝি সময় পর্যনত্ম পূর্ব পাকিস্তানে তার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১-এর মার্চ মাসের ২৩ তারিখ তাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় 'অপারেশন সার্চ লাইট' শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গন্ধুকে গ্রেফতার করার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে। ২০০৮ সালে তার সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতা সম্বলিত "The Way It-Was" নামক একটি আত্নজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। বইটি তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসকে দিয়েছিলেন প্রকাশের জন্য। তারা তা প্রকাশ না করে তাকে ফেরত দেয় কারণ তাদের মতে বইতে কিছু স্পর্শকাতর বিষয় আছে। ১৯৯৮ সালে তিনি বইটি করাচীর 'ডাইনাভিস' প্রকাশনা সংস্থা হতে প্রকাশ করেন। তাঁর বইয়ে তিনি বাঙালীদের প্রতি তার তাচ্ছিল্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গোপন করেননি। বাঙালীদের সম্পর্কে তার ধারণা তারা বাংলায় লেখাপড়া করে, ইংরেজীতে খুবই দুর্বল এবং সেনাবাহিনীতে যে কয়েকজন চাকরি নিয়ে আসত ইংরেজী না জানার কারণে তাদের সমস্যা হতো এবং শারীরিকভাবেও তারা বেশ দুর্বল ছিল।
ব্রিগেডিয়ার খান ২০০২ সালে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানান তার পিতা সরকারী চাকরি সূত্রে ১৯৫২ হতে ১৯৫৪ সন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে কাটিয়েছিলেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত গিয়ে তাদের বলেছিলেন একদিন পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে যাবে। ১৯৫৫ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনেটারও একই কথা বলেছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। তবে তা তার বিশ্বাস হয়নি। তার ছোট ভাই শোয়েব পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে সে তার দায়িত্ব পালন শেষে ফেরত গিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেন এবং বলেন আলাদা হওয়ায় অন্যতম কারণ হবে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য। ব্রিগেডিয়ার খান তার সাক্ষাতকারে আরও বলেন, পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে আসলে ধর্ম ছাড়া আর কোন কিছুরই মিল নেই। তার মতে পূর্ব পাকিস্তান প্রথম থেকেই আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়া উচিত ছিল। তিনি তার বইতে উল্লেখ করছেন ১৯৭০-এর শেষের দিকে 'জয় বাংলা' স্লোগানটি এতই জনপ্রিয় ছিল যে তার আড়াই বছর বয়সী ছোট মেয়েটিও কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসায় সারাদিন 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে বাড়ি সরগরম করে রাখত এমনকি তার বড় মেয়ে অনেক চেষ্টা করেও তা থামাতে ব্যর্থ হতো ।



ব্রিগেডিয়ার জহির ১৯৭১-এর ২৩ মার্চ অপরাহ্নে একটি সি-১৩০ কার্গো বিমানে করে কুমিল্লা হতে জেনারেল নিয়াজির আদেশ পেয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি দেখতে পান সারা ঢাকা শহর বাংলাদেশের পতাকায় ছেয়ে গেছে। তাকে বলা হলো একমাত্র পাকিস্তানী পতাকাটি উড়ছিল মোহাম্মদপুরের বিহারি কলোনিতে। বিমানবন্দর হতে তাকে সরাসরি সামরিক আইন প্রশাসকের সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে প্রথমবারের মতো কর্নেল এসডি আহমদ বলেন পর দিন অথবা তার একদিন পর শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করার জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং তিনি যেন সে মতে তার পরিকল্পনা তৈরি করেন। সেই সন্ধ্যায় তিনি মেজর বিল্লাল, ক্যাপ্টেন হুমায়ূন, ক্যাপ্টেন সাঈদকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়ির আশপাশ এলাকা রেকি করেন। তারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের সড়কে প্রচুর জনসমাগম দেখতে পান। পরদিন সকালে তারা ধানমন্ডির সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে সেগুলোর অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেন।
২৪ মার্চ সকালে নির্দেশ মতো ব্রিগেডিয়ার জহির জেনারেল রাও ফরমান আলীর সাথে সাক্ষাত করেন। ফরমান আলী তাকে বলেন ২৫ তারিখ রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে হবে। জেনারেল তাকে আরও বলেন, শুধু একজন অফিসারকে সাথে নিয়ে একটি বেসামরিক গাড়িতে শেখ মুজিবের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে। জবাবে ব্রিগেডিয়ার জহির বলেন, শেখ মুজিবের বাড়ির চারপাশে সর্বক্ষণ এত মানুষের ভিড় লেগে থাকে যে তাঁকে গ্রেফতার করতে হলে কমপক্ষে এক প্লাটুন সৈন্য লাগবে (ত্রিশ জনের মতো)। এতে জেনারেল রাও ফরমান আলী তার ওপর কিছুটা রুষ্ট হন এবং বলেন তিনি যেভাবে হুকুম দিচ্ছেন সেইভাবেই হুকুম পালিত হবে। উত্তরে ব্রিগেডিয়ার জহির বলেন, এই হুকুম তার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়।


২৪ তারিখ সন্ধ্যায় পিআইএ বিমান যোগে করাচী হতে জেনারেল মিট্টা ঢাকায় আসে। জহির জেনারেল মিট্টার সাথে সাক্ষাৎ করে পুরো বিষয়টা খুলে বলেন। সেদিন রাতে পাকিসত্মানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান, জেনারেল টিক্কা খান আর রাও ফরমান আলীর মধ্যে 'অপারেশন সার্চ লাইট' নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে ব্রিগেডিয়ার জহির জেনারেল হামিদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং বলেন যে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে হলে অন্তত এক প্লাটুন কমান্ডোর প্রয়োজন হবে। জেনারেল হামিদ জেনারেল ফরমান আলীকে ফোন করে ব্রিগেডিয়ার জহিরকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য দিতে বলেন এবং ব্রিগেডিয়ার জহিরকে এও বলেন যেন মুজিবকে জীবিত গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় যদি শেখ মুজিবের মৃত্যু হয় তাহলে তার দায় দায়িত্ব তাকে নিতে হবে।



মার্চের ২৫ তারিখ রাত নয়টায় ব্রিগেডিয়ার জহির তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের দিকে যাত্রা করার কথা। যাত্রা করতে করতে রাত প্রায় এগারোটা হয়ে যায়। সাথে আরও ছিল মেজর বিল্লাল, ক্যাপ্টেন সাঈদ ও ক্যাপ্টেন হুমায়ূন। তাদের যাত্রাপথ ছিল তেজগাঁ বিমানবন্দর, সংসদ ভবন (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়), মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমন্ডি। পথে পথে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা বা ব্যারিকেড। কোথাও উল্টানো গাড়ি, কোথাও বা গাছের গুঁড়ি অথবা বড় বড় পাইপ। একাধিক জায়গায় ব্রিগেডিয়ার জহিরের সৈন্যরা তাদের সাথে থাকা রকেট লঞ্চার দিয়ে গোলা বর্ষণ করে স্থাপিত প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলে। অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হয়ে গেছে।
মধ্যরাতের পর পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে প্রবেশ করে। চার পাশে গাঢ় অন্ধকার। এসময় রাস্তার বাতিগুলোও নেভানো ছিল। ক্যাপ্টেন হুমায়ূনের সৈন্যরাই প্রথম বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে প্রবেশ করে। গোলাগুলির কারণে তখন বত্রিশ নম্বর জনমানব শূন্য হয়ে পড়েছে। বাড়ির সামনে কিছু পুলিশ পাহারা ছিল। তারাও ইতোমধ্যে সরে পড়েছে। হঠাৎ পাকিস্তানী সৈন্যরা দেখে বাড়ির একজন লোক একটি বড় দা নিয়ে তাদের দিকে ধেয়ে আসছে। তাকে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করা হয়।


বত্রিশ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নিচতলায় তখন কেউ ছিল না। প্রথম তলাও খালি। একটি বন্ধ কক্ষের ভেতরে কিছু মানুষের আওয়াজ শুনতে পেয়ে ব্রিগেডিয়ার জহির মেজর বিল্লালকে কক্ষের দরজা ভাঙ্গার হুকুম দেয়। দরজা ভাঙ্গার পর দেখা যায় ভেতরে পরিবারের অন্যদের সাথে বঙ্গবন্ধুও আছেন। এ সময় হঠাৎ করে সাথের হাবিলদার মেজর খান ওয়াজির বঙ্গবন্ধুকে শাবীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। ব্রিগেডিয়ার জহির বঙ্গবন্ধুকে তার সাথে যেতে আদেশ দেয় এবং তার জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। বঙ্গবন্ধু তার পরিবারের সদস্যদের কাছ হতে বিদায় নেন এবং নিজের প্রিয় পাইপটাকে হাতে তুলে নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জহিরের সাথে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন। ততক্ষণে সারা ঢাকা শহরে ইতিহাসের ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। বন্দী বঙ্গবন্ধুকে যখন সেনানিবাসে নিয়ে যওয়ার জন্য একটি ট্রাকে তোলা হয় তখন ঢাকা শহর জ্বলছিল। চারদিকে মানুষের গগনবিদারি চিৎকার আর আগুনের লেলিহান শিখা। ঢাকা তখন জ্বলছে ।

জহির খান আরও লিখেছেন, আমার প্রতি নির্দেশ ছিলো শেখ মুজিবকে শুধুই গ্রেপ্তার করা। আমাকে এটা বলা হয়নি যে, আমি তাকে কোথায় নিয়ে যাবো। কার কাছে হস্তান্তর করবো। আমি গাড়িতে ফেরার পথে এসব কথাই ভাবছিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম তাঁকে ন্যাশনাল এসেম্বলি ভবনে নিয়ে যাবো। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সেখানেই তাকে রাখবো। আমি ন্যাশনাল এসেম্বলি ভবনে থামলাম। মুজিবকে ভবনের উপরতলায় নিয়ে গিয়ে বসতে দিলাম। যখন আমরা এসব করছিলাম, তখন ফার্মগেট এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষের পায়ের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম এসব লোক বুঝি আমাদের দিকেই ছুটে আসছে। তাই আমরা নিজেদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সে সব শব্দ মিলিয়ে যায়। পরে আমরা জেনেছিলাম, এসব ছিল আওয়ামী লীগ কর্মীদের কাজ। তারা সমবেত হয়ে সেনানিবাসে হামলা চালাতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা পালিয়ে যায়।
ন্যাশনাল এসেম্বলি ভবন থেকে আমি মার্শাল ল’ হেড কোয়ার্টারে গিয়েছিলাম। সেখানে জেনারেল টিক্কা খান তার সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমি ব্রিগেডিয়ার গোলাম জিলানী খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি তখন সবে ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাকে বললাম, আমি শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে ন্যাশনাল এসেম্বলি বিল্ডিংয়ে রেখে এসেছি। তিনি আমাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের অফিসে নিয়ে গেলেন। বললেন, ভেতরে গিয়ে জেনারেলের কাছে রিপোর্ট করে এসো। জেনারেল টিক্কা ততক্ষণে নিশ্চয়ই গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে গেছেন। তিনি বেশ কেতাদুরস্ত হয়ে বসেছিলেন এ আশায় যে, আমি আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে গ্রেপ্তারের খবর দেবো। কৌতুকবশত আমি তাঁকে বললাম, আমি এমন একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছি, যাকে মুজিবের মতো দেখায় কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে তিনি মুজিব কিনা। একথা শোনামাত্র জেনারেল টিক্কা খাঁচা ছাড়া খেঁকশিয়ালের মতো তাঁর চেয়ার থেকে লাফ মেরে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি দরজার বাইরে অপেক্ষমাণ ব্রিগেডিয়ার জিলানিকে ডাক দিলেন। জিলানি তাঁকে নিশ্চিত করেন যে, তিনি শিগগিরই বিষয়টি পরীক্ষা করে তাকে জানাচ্ছেন। কর্নেল এস ডি আহমদকে তখনই বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে পাঠানো হলো। তিনি ন্যাশনাল এসেম্বলি ভবনে দ্রুত ছুটে গেলেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখলেন আমি সত্যিই প্রকৃত মুজিবকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি কিনা।
কর্নেল এসডি আহমেদের প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত আমি অদূরে পায়চারী করছিলাম। সিগারেট খাচ্ছিলাম। আমি যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম, তখন কারও হাত ফসকে কিংবা গানার হয়তো কিছু একটা সন্দেহজনক দেখে থাকবেন। তিনি একটি লাইট মেশিনগান দিয়ে একটি গোলা ছুড়লেন। বিস্ফোরণের পরে চারপাশ হঠাৎ শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু পরমুহূর্তেই সেনানিবাস এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন থাকা বাহিনীগুলোর প্রত্যেকটি অস্ত্র যেন গর্জে ওঠে। সেই মিশনে অ্যান্টিএয়ারক্রাফট রেজিমেন্টও অংশ নেয়। ঢাকার আকাশ আতশবাজির রঙে ভরে উঠেছিল। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই যেভাবে হঠাৎ গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছিল, সেভাবেই তা স্তব্ধ হয়ে যায়।
প্রায় বিশ মিনিট পরে কর্নেল আহমদ ফিরে আসেন এবং নিশ্চিত করেন যে আমি সত্যিকারের মুজিবকে গ্রেপ্তার করেছি। আমি যখন জানতে চাইলাম গ্রেপ্তার করে তাকে আমার কোথায় নিয়ে যাওয়ার কথা, তখন বুঝলাম সেই প্রশ্ন কার মাথায়ই ছিল না। পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত হয় যে, মুজিবকে সেই কক্ষে রাখা হবে, যেখানে তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় অন্তরীণ রাখা হয়েছিল। আমরা তাকে ১৪ ডিভিশন অফিসার্স মেসে নিয়ে গেলাম। তাকে একটি স্বতন্ত্র সিঙ্গেল বেডরুম দেয়া হলো। তার জন্য একজন প্রহরী নিয়োগ করা হলো। পরদিন মেজর জেনারেল মিটঠা আমার কাছে জানতে চাইলেন, মুজিবকে কোথায় রাখা হয়েছে? আমি যখন জানালাম, তখন তিনি অসন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন, পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারণাই নেই। তাঁকে যেখানে রাখা হয়েছে, সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করতে পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। তিনি এরপর মুজিবকে একটি স্কুল ভবনের তেতলায় স্থানান্তর করেন।



মুজিব আগেই জানতেন রাস্তার ব্যারিকেড সরাতে রকেট লঞ্চার ছুড়তে হয়েছিল
Click This Link



যেভাবে গ্রেফতার হলেন বঙ্গবন্ধু
Click This Link

ঢাকায় গর্জেছে মেশিনগান ও কামান
Click This Link

১৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

রাসেল ভাই বলেছেন: ওম্মা কমেন্ট করতে না করতে দেখি বা্হো হাজির । আট নাম্বার কমেন্টের পর কমেন্ট করতেছিলাম আমি তিন লাইনের একটা কমেন্ট লিখতে লিখতে বা্হো ২০ লাইনের তিনটা কপি পেষ্ট মাইরা দিছে ।


অবশ্য তারে কিছু কইয়া লাভ নাই । সে অলরেডি সদরঘাট হ্ইয়া গেছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.