নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একাকিত্বের কথন

কাওছার০

নীরব কথক

কাওছার০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা, তোর লাইগা ওষুধ আনছি (গল্প)

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫

প্রতিদিনের মত রাসেল রাস্তায় বের হয়েছে।শরীরে একটা ময়লা,ছেঁড়া গেঞ্জি।আর একটা কালো হাফ প্যান্ট।উসকো খুসকো চুল,মলিন এক চেহারা।রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে আছে সে।এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে সিগন্যাল বাতিগুলোর দিকে।সবুজ আলোটা কখন বন্ধ হবে আর লাল আলোটা কখন জ্বলবে তারই অপেক্ষায় রয়েছে।একসময় লাল বাতিটা জ্বলে উঠলো।চলমান গাড়িগুলো থেমে গেল।রাসেল দৌড়ে একটা বাসে উঠে পড়ে।



আগে ছোট ছোট গাড়িগুলোর কাছে যেয়ে দাঁড়াতো।কিন্তু এখন আর যায় না।হৃদয়ের একেবারে গভীর থেকে কারো কাছে সাহায্য চাওয়ার যে বাণীগুলো বেরিয়ে আসত তা ঐ বিলাস বহুল গাড়ির কাঁচ ভেদ করতে পারত না।কাঁচের দেয়ালটা কোন সময় কেউ সরায়নি।



>স্যার,আমার মায় আইজকা কয়েকদিন ধইরা অসুস্থ।মায়েরে ওষুধ কিনা দিতে পারতাছি না।আফনেরা কিছু সাহায্য করেন।তাইলে আমি মায়েরে ওষুধ কিনা দিতে পারমু।আমার মায় সুস্থ হইব।স্যার করেন না কেউ সাহায্য।



কথাগুলো বলতে বলতে বাসের সিটের মাঝ দিয়ে এগিয়ে যায় সে।সিটে বসা মানুষগুলোর দিকে তার হাতটা অবলীলায় চলে যায়।তার মনে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস।কেউ না কেউ তাকে সাহায্য করবে।প্রথম কয়েক সারির সিট সে পেরিয়ে যায় সে।ভেতরের আশার প্রদীপটা নিভু নিভু করছে।কথাগুলো বলতে বলতে মাঝ সারিটাও পার হয়ে যায় সে।মনটা হাহাকার করে ওঠে।কেউ কি তাকে সাহায্য করবে না?এমন সময় শেষ সারির একটা লোক ডাক দেয়।



>ঐ পিচ্চি এইদিকে আয়।



কথাটা শুনে রাসেলের আশার প্রদীপটা এবার সবেগে জ্বলে ওঠে।এগিয়ে যায় লোকটার দিকে।



>তোর মা অসুস্থ?

>জে স্যার।

>কি হইছে?

>আইজকা কয় দিন ধইরা মায়ের অনেক জ্বর।



লোকটা রাসেলের দিকে তাকিয়ে থাকে।বুক পকেট থেকে ১০ টাকার একটা নোট বের করতে দেখে সে।



>৫ টাকা দে।

>স্যার,ভাংটি নাইকা তো। হতাশের সুরেই বলে সে।



একবার এক লোক ১০ টাকা দিয়ে বলেছিলো ৪ টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দিতে।কিন্তু রাসেলের কাছে তখন একটা টাকাও ছিলো না।ভাংটি দিতে পারে নি সে।লোকটাও আর টাকা দেয় নি তাকে। আজকের লোকটা যখন ১০ টাকা বের করে বলল তাকে ভাংটি দিতে বলল,তখন তার মনে নেমে এসেছিলো একরাশ হতাশা।কারণ তার কাছে কোন টাকাই নেই।ভাংটি তো আরো পরের কথা।



>আইচ্ছা রাখ পুরাটাই।



লোকটা রাসেলের হাতে ১০ টাকার নোটটা দেয়।রাসেলের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।খুশি মনে বাস থেকে নেমে পড়ে।ততক্ষণে সিগন্যালের সবুজ বাতিটা জ্বলে উঠেছে।রাসেল দৌড়ে ফুটপাতে উঠে পড়ে।অপেক্ষা পরবর্তী সিগন্যালের জন্য।



আজ রাসেল অনেক খুশি।অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ টাকা সে একটু বেশি পেয়েছে।ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত দেয় সে।মুঠের মধ্যে টাকার নোটগুলো।বের করে টাকা গুনতে থাকে সে।২ টাকার নোট,১০ টাকার নোট,কয়েকটা কয়েন।২ টাকার নোটগুলো একটু ছিড়া।কিন্তু সেদিকে কোন খেয়াল নেই তার।২ টাকার নোট ছিঁড়া হলেও চলে।টাকাগুলো সাজায় সে।এরপর গুনতে থাকে।হাতের কড় গুনে টাকা গুনতে থাকে।মোট ৫০ টাকা পেয়েছে আজ।টাকাগুলো মাঝ বরাবর ভাজ করে আবার পকেটে রেখে দেয় ।বস্তির দিকে রওনা দেয় সে।



বস্তির পাশে একটা ঔষধের দোকানে দাঁড়ায় সে।ডিসপেনসারির লোকটাকে ডাক দেয় সে।



>ডাক্তার চাচা,আমারে জ্বরের ওষুধ দেন।

>প্রেসক্রিপশন আছে?

>না চাচা।

>তাইলে ঔষধ দেয়া যাইব না।আগে ডাক্তার দেখাইত হইব,ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেইখা ঔষধ দিতে হবে।

>ডাক্তার দেহাইতে কত লাখে চাচা?

>২০০ টাকা।



টাকার পরিমাণ শুনে রাসেলের মনটা খারাপ হয়ে যায়।এত টাকা তো তার কাছে নাই।তাহলে কি সে মায়ের জন্য ঔষধ কিনতে পারবে না!



>চাচা,আমার কাছে তো এত টাহা নাই।

>যা তো এখান থেকে।বিরক্ত করিস না।



রাসেল অনুনয় বিনয় করতে থাকে লোকটার কাছে।লোকটার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।সজোড়ে চড় মারে রাসেলকে।রাসেলের দুচোখ বেয়ে জল বেরিয়ে আসে। মারের ভয়ে লোকটার কাছে আর যায় না সে।মন খারাপ করে বস্তির পথে হাটা শুরু করে সে।



হটাত্‍ কে যেন ডাক দেয় রাসেলকে।তাকিয়ে দেখে করিম চাচা।চা দোকানদার সে।



>কিরে,তোর কি হইছে?কানতাছস কেন?



রাসেল কোন জবাব দেয় না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।



>কিরে কথা কছ না কেন?কি হইছে আমারে কবি তো!

>চাচা,মায়ের না আইজকা কয়েকদিন ধইরা জ্বর।আমার কাছে আছে মাত্র ৫০ টাকা।ওষুধ কিনতে গেছিলাম।হেরা ওষুধ দেয় নাই।কইছে ডাক্তার দেহাইতে।তারপর ওষুধ দিবো।ডাক্তার দেহাইতে ২০০ টাকা লাগব।এত টাকা তো আমার কাছে নাই।আমি হেরে অনেকবার কইছি খালি ওষুধ দিতে।পরে হে রাগি আমারে চড় মাইরছে।



কথাগুলো বলে রাসেল আবারো কেঁদে দেয়।রাসেলের কথা গুলো শুনে করিমের খারাপ লাগে।



>তুই একটু এইখানে বয়।আমি তোরে ওষুধ কিনা দিমু নে।

>কিন্তু চাচা,ডাক্তার না দেহাইয়া কেমনে ওষুধ নিবা?

>তুই চিন্তা করিস না।



করিম চাচার কথা শুনে রাসেলের মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।বসে পড়ে কাঠের টুল টাতে।



হাতের কাজগুলো শেষ করে রাসেলকে নিয়ে ডিসপেনসারিতে যায় করিম।করিম ডিসপেনসারিতে যেয়ে লোকটাকে নাপা ট্যাবলেটের কথা বলে।রাসেল ঔষধের নামটা মনের মাঝে গেঁথে নেয়।পরেরবার যদি জ্বর হয় তাহলে এই ঔষধটা কিনবে।



করিম ট্যাবলেট এর পাতাটা রাসেলকে দেয়।আর বলে দেয় খাওয়ার পরে খাওয়াতে।



রাসেলের মনে এখন কোন চিন্তা নেই।তার মায়ের জন্য ঔষধ কেনা হয়ে গেছে।এই ঔষধ খেলে মা সুস্থ হয়ে উঠবে।



যেতে যেতে রাসেল কল্পনার জগতে ভেসে যায়।সে দেখতে পায় তার মা এখন সুস্থ।তার মা কাজ করছে।তার সাথে খেলছে।তাকে আদর করছে।তাকে খাইয়ে দিচ্ছে।তার মা আদর করে কপালে চুমু দেয়।রাসেলও তার মাকে চুমু দেয়।মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে।



এসব ভাবতে ভাবতে ঘরের কাছে এসে পড়ে।পলিথিনের পর্দাটা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে সে।মাকে ডাক দেয়।



>মা,দেখ তোর লাইগা ওষুধ আনছি।এই ওষুধ খাইয়া তুই সুস্থ হইয়া যাইবি।



কিন্তু মা কোন কথা বলছে না।



>কিরে মা কথা কছ না কেন?আমার লগে রাগ করছস তাই না?তোর লাইগা ওষুধ আনতেই তো দেরি হইয়া গেল।আর দেরি হইব না।



কোন কথা ভেসে আসে না।রাসেল ভাবে মা মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। মায়ের কাছে যায়।হাত দিয়ে শরীর নাড়া দেয়।মায়ের শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। 'মায়ের কি তাইলে অসুখ ভালা হইয়া গেছে গা?' মনে মনে খুশি হয়ে ওঠে রাসেল।কিন্তু তার মায়ের কোন সাড়া নেই।



রাসেল বাইরে বেরিয়ে আসে।হাত মুখ ধোঁয়ার জন্য কলপাড়ের দিকে যায়।তারপর আবার ফিরে আসে।এসে আবারো মাকে ডাক দেয়।



>মা,ও মা।আর কত ঘুমাইবি?তোর লাইগা ওষুধ আনছি।ডাক্তারে কইছে খাইয়া তারপর ওষুধ খাইতে।তুই একেবারে ভালা হই যাবি।



কিন্তু মায়ের কোন সাড়া নেই।মায়ের হাত ধরে এপাশ ফিরায় সে।রাসেল বুঝতে পারছে না,তার মা কেন কথা বলছে না।বাইরে বেরিয়ে আসে।



>চাচা,মায়েরে হেই কখন থেইকা ডাক দিতাছি মা তো কোন কথা কইতাছে না।



রাসেলের কথা শুনে করিম মিয়া আঁতকে ওঠেন।রাসেলকে সাথে নিয়ে বস্তির দিকে যান।পর্দা সরিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েন।রাসেলও পেছন পেছন আসে।শরীরে হাত দিয়েই করিম মিয়া বুঝতে পারেন।তিনি ভেবে পান না,এই ছোট ছেলেটাকে তিনি কি বলবেন,কিভাবে বুঝ দেবেন।রাসেল দেখতে পায় করিম চাচা কাঁদছে।



>চাচা,তুমি কান্দ ক্যান?

>তোর মায় আর উঠবো না।ওষুধও খাইব না। রাসেলকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি।



>মায় ঘুম থেইকা উঠলেই ওষুধ খাইবো।



রাসেলের এই কথা শুনে করিম মিয়ার চোখের জল আরো বেশি করে পড়ে।ছেলেটাকে কিভাবে বুঝাবেন?



কিছুক্ষণ পর রাসেল আবারো তার মাকে ডাক দেয়।



>মা,তাড়াতাড়ি ওঠ।তোর লাইগা ওষুধ আনছি।কিরে মা কথা কছ না কেন?তুই এই ওষুধ খাইলে সুস্থ হইয়া যাইবি।ওঠ মা।



রাসেলের কথা গুলো তার মায়ের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না।বিদেহী আত্মাটা হয়তো পাশে বসে কাঁদছে ছেলের কথাগুলো শুনে।তার ছেলে তো এখনো বলেই যাচ্ছে



"মা,তোর লাইগা ওষুধ আনছি।এই ওষুধ খাইলে তুই সুস্থ হইয়া যাইবি।............."



সমাপ্ত

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫

কাউসার রানা বলেছেন: গায়ে কাঁটা দিয়ে গেল কথা গুলো :((

২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০

লাবনী আক্তার বলেছেন: পড়তে পড়তে চোখে জল চলে আসল। :((

৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৯

কাওছার০ বলেছেন: :(

৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০৯

মাক্স বলেছেন: টাচি।+++++

৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:২০

মিকন মোদক বলেছেন: খুব কষ্ট লাগল......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.