![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Life is short but Hope is Long...
লেন্দুপ দর্জি উপাখ্যান
একটি স্বাধীনতার অপমৃত্যু
এবং একটি স্বাধীনতার বাঁচার
আর্তনাদ!
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! রশীদ
জামীল
ব্যবহারের পর টিস্যু পেপারকে কেউ
আর যত্ন করে রাখে না। কলা খাওয়া
শেষ হলে খোসা ছুড়ে ফেলে
দেয়াহয়। এটাই নিয়ম। যেমন ছুড়ে
ফেলা হয়েছিল লেন্দুপ দর্জিকে।
হিমালয়ের পাদদেশে সাত হাজার
ছিয়ানব্বই কিলোমিটার আয়তনের
সবুজে ভরা অনিন্দ্য সুন্দর একটি দেশ
সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে
দেয়ার খলনায়ক লেন্দুপ দর্জিকেও
শেষবেলায় আক্ষেপ করে বলতে
শোনা গেছে, ''সিকিমকে ভারতভুক্ত
করার জন্য আমি সবকিছুই করেছি।
কিন্তু কার্যসিদ্ধির পর ভারত
আমাকে ভুলে গেছে। আগে আমাকে
লালগালিচা অভ্যর্থনা দেয়া হতো,
এখন দ্বিতীয় সারির রাজনীতিকের
সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আমাকে
কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়''।
ঘটনাটি কি বাংলাদেশের মনে
আছে? বিশেষ করে বিশেষ যাদের
মনে থাকা দরকার!
একটি জাতির স্বপ্নকে, একটি দেশের
মানচিত্রকে বিক্রি করে দেয়া
লেন্দুপ দর্জি মারা গেছে খুব
বেশিদিন হয়নি। ১০২ বছর বয়সে ২০০৭
সালে মরার আগে সে টের পেয়ে
গেছে বেঈমানের সাথে বেঈমানিই
করা হয়। কিচ্ছু করার নেই।
সাম্প্রতিক পৃথিবীর বেঈমানদের
তালিকায় লেন্দুপ দর্জি নামটি
মোটা হরফে আলাদা হয়ে আছে।
কোনো জাতি যখন তাদের
স্বাধীনতা নিয়ে শংকিত হবে, তখন
সামনে চলে আসবে লেন্দুপের নাম।
এভাবেই লেন্দুপরা যুগে যুগে মানুষের
ঘৃণা কুড়াতে থাকবে।
দুই
১৮৪৪ সালে বৃটিশরা তিব্বত দখলের
জন্য সিকিম দখল করে নেয়ার চার
বছরের মাথায় আবার স্বাধীনতা
ফিরিয়ে এনেছিল সিকিমবাসি।
সাতচল্লিশে ইংরেজরা উপমহাদেশ
ছেড়ে পালানোর পর 'ভারত নাকি
স্বাধীনতা' প্রশ্নে অনুষ্টিত
গণভোটে সিকেমের স্বাধীনচেতা
মানুষ স্বাধীনতার পক্ষেই রায়
দিয়েছিলো। ১৯৭০ সালে দর্জির
'সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস' দলের
মাধ্যমে দেশটিতে চরম অরাজকতা
সৃষ্টি করানো হল। সমস্যা তৈরি
করাতে না পারলে তো সমাধানের
জন্য নাক গলানো যায় না। ঝগড়া না
লাগালে তো বাগড়া দেওয়া যায়
না।
সমস্যা 'তৈরি করল' না বলে 'করাহল'
কেনো বললাম? কারণ, লেন্দুপ ছিল
রক্তে মাংসে গড়া একটি পুতুলের
নাম। পুতুলকে যেমনে নাচানো হয়,
সে তেমনেই নাচে। সেও শুধু
নাচছিলো। ভারতের প্রখ্যাত
সাংবাদিক সুধীর শর্মা তাঁর Pain
Of Loosing Nation বইতে লিখেছেন,
“আমাকে লেন্দুপ দর্জি নিজে
বলেছেন, বছরে তিন/চার বার আমার
সাথে 'র' এর লোক দেখা করতো এবং
দেশে অশান্তি, অরাজকতা ও
সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে বলতো''।
অনেক কাহিনির জন্মদিয়ে ১৯৭৫
সালের ১৬ মে সিকিম হাজার বছরের
স্বাধীনতা বিকিয়ে দিয়ে ভারতের
অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। এভাবেই
একটি স্বাধীন দেশের অপমৃত্যু ঘটে।
তিন
মাটির সাথে বেঈমানির ইতিহাসের
একটুকরো কলংকের নাম লেন্দুপ দর্জি!
মীর জাফর, মীর মদন, ঘঁসেটি বেগম
আর জগৎ শেটরা ছিল গোপনে
বেঈমান। বাহ্যিক সম্পর্ক ঠিকটাক
রেখে দেশবিরোধী শক্তির সাথে
ভেতরে ভেতরে আঁতাত করেছিল
তারা। লেন্দুপ ছিল ব্যতিক্রম।
কোনো রকম লোকচুরি না খেলে যা
করার প্রকাশ্যেই করেছে সে। নুন
যাদের খেয়েছে, প্রকাশ্যেই গুণ
গেয়েছে তাদের। নুনের হকও আদায়
করে দিয়েছে কড়ায়-গণ্ডায়। লেন্দুপ
দর্জি অন্যান্য বেঈমানদের থেকে
আলাদা।
দুর্বলের উপর সবলের প্রভাব খাটনো
পৃথিবীর স্বভাবজাত একটি ব্যাপার।
কখনো কখনো সেটা বাড়াবাড়ি
পর্যায়ে চলে যায়। তখন অবস্থায় হয়
দু'টির একটি। হয় সে জাতি একটি
তাবেদার জাতিতে পরিণত হয়। সে
দেশ কারো কলোনী মতন বেঁচে
থাকে। যেমন সিকিম। আর যদি
চোখে চোখ রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর
সাহস করে ফেলে, তাহলে ইতিহাস
অন্যরকমভাবেই লেখা হয়।
বাংলাদেশের রক্তের পালস যদি
জানা থাকে কারো, তাহলে বোঝার
কথা তাবেদারি বাংলাদেশের
মানুষের ধাতে নেই। বাহান্ন আর
একাত্তর তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশ মানেই খালেদা জিয়া
ছিল না। বাংলাদেশ মানেই শেখ
হাসিনা নয়। শেখ হাসিনা,
খালেদা জিয়া কিংবা কোনো
নেতানেত্রীর চৌদ্দগোষ্ঠীর ক্ষমতা
নেই বাংলাদেশকে নিলামে তুলে
দেনা-পাওনার হিসাব মেলাবেন।
একাত্তরে সাতকোটি মানুষ লড়েছে
দেশের জন্য। মেরেছে মানুষ। মরেছে
মানুষ। পাকিস্তানের গোলামীর
জঞ্জির ছিড়ে বেরিয়েছে বাঙালি,
কোনো ফ্যামিলির গোলামী করার
জন্য নয়।ণ যেমন জিয়া পরিবারে জন্য
নয়, একইভাবে শেখ পরিবারের জন্যও
নয়। আওয়ামীলীগ-বিএনিপি একে
অন্যকে ভারত-পাকিস্তান পাঠায়।
বিএনপি বলে আওয়ামীলীগ ভারতের
দালাল। আওয়ামীলীগ বলে বিএনপি
পাকিস্তানের দালাল। দল
নিরপেক্ষা মানুষের প্রশ্ন, তাহলে
তারা বাংলাদেশে কী করেন?
এখন দেশ যদি এই দুই দলের
তালুকদারি সম্পত্তিই না হবে, তবে
এতকিছু!
-তবে যে গঙ্গা, ট্রানজিট, রামপাল,
বর্ডার, ফেলানী অথবা দাদাগিরি!
-মান ইয়া না মান, মায় তেরা
মেহমান স্টাইলে অবৈধ খবরদারি!
-বাংলাদেশের বাজার দখলের এত
এত প্লানিং-প্রোগ্রামিং!
--- এক কথায় জবাব হল, বাঙালি
ঘুমপ্রিয় জাতি। বেশিরভাগ সময়
ঘুমিয়েই কাটায়। খুব একটা জাগে না।
আর একবার যখন জেগে যায়, হিসাব
না মেলা পর্যন্ত আর ঘুমায় না।
আশার জায়গা এটাই।
চার
জাকির নায়েক কোনো ইস্যু ছিল না।
তৈরি করা হয়েছিল। একজন জাকির
নায়েক বা একটি পিচটিভি মূখ্য ছিল
না। আদিষ্ট লক্ষদৃষ্টি ছিল অন্যকিছু
এবং সেটাই ছিল মূখ্য। কথাটি
সেদিন অনলাইনে এক ভাইয়ের
প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম।
বলেছিলাম, 'দেখুন, সালাফিয়্যাতের
নামে মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি
ছড়ানো এক বিষয় আর অন্যায়ের
প্রতিবাদ অন্য বিষয়। আমি লা-
মাজহাবিয়্যাতের নামে লা-
দ্বীনিয়্যাত নিয়ে সাধ্যমত কথা
বলবার চেষ্টা করি। এটা আমি করি
অন্যায়ের প্রতিবাদ-স্পৃহা থেকে।
আমি জাকিরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের
প্রতিবাদ করছি সেই একই বোধ
থেকে। আর সেটা হল অন্যায়ের
প্রতিবাদ। কারো মুখ বন্ধ করে দেয়া
অথবা রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া
অথবা অন্য কারো কারণে সরে যেতে
বাধ্য হলে খুশি হওয়া; কাপুরুষের
কাজ। আমাদের উলামায়ে কেরামের
যোগ্যতার প্রতি আস্থা আছে আমার।
আমি মনেপ্রাণেই চাই জাকির মাঠে
থাকুন। তিনি তাঁর কথা বলুন। আমরা
আমাদের কথা বলব। উনার যে কথা
ভুল মনে হবে সেটা ভুল কেনো,
বুঝিয়ে বলব মানুষকে। যদি পারি, না
পারার তো কারণ নাই, সেটাই হল
কথা। এই সেলফ কনফিডেন্স থাকা
দরকার। পিচটিভি যদি বিভ্রান্তি
ছড়ায়, তাহলে মুসলমান নামের
সোনাগুলো পিচটিভি নামের আগুনে
পুড়ে খাটি হয়ে আসুক না।
মুখ্য ছিল অন্যকিছু। কী ছিল সেটা?
রামপাল-বাণিজ্যের পর সেটা কি
একটু পরিষ্কার হল? মন্দিরের পাশের
ডোবায় অস্ত্রের খনি পাওয়ার পর
মনিটরিং এর ফরমান জারি হয়
মদজিদের খুতবায়! আরেকটু কি
ক্লিয়ার হল? যদি হয়, তাহলে তো
ভালোই। আর নাহলে আবেগের
ঘোড়ায় হুজুগের লাগাম ধরে
যেদিকেই দৌড়ান, সামনে শুধু
আস্তাবলই খুঁজে মিলবে।
পাঁচ
কায়া এবং ছায়া। কায়া যা করে,
ছায়াও তাই করে। ভারতে জাকিরের
পিচটিভি নিষিদ্ধ করার সংবাদ
ভারতের সকল মানুষ জানার আগেই
বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ করাহল।
আমাদের আপন শ্রেণির একটি অংশ
খুশি হলেন। আমরা যখন বললাম, 'কী'-
এর পেছনে না লেগে 'কেনো'র কথা
ভাবুন। তাঁরা অসন্তুষ্ট হলেন। আমি
জানি না ইতোমধ্যেই কাহিনি
তাদের কাছে ক্লিয়ার হয়েছে
কিনা? নাকি আরো কিছু হারানোর
পর হবে? রামপাল গেছে! জুমার
নামাজের স্বাধীনতা গেছে! আর কী
কী গেলে তারা বুঝবেন কী ঘটছে আর
কেনো ঘটানো হচ্ছে?
উলামায়ে কেরাম যারা এই লেখা
পড়ছেন। আপনার একটু চোখ বন্ধ করুন।
কয়েক লাইন একটু নাফরমানি কথা বলব
এখন।
ভালোবাসা একতরফা হয় না।
ভারতের প্রতিটি প্রদেশেও ভারতের
এতগুলো চ্যানেল নেই যতগুলো আছে
বাংলাদেশের আকাশে! অথচ গুণগত
মানে বাংলাদেশি নাটক অনেক
এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের
প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো
ভারতে সম্প্রচারের অনুমতি নেই! এ
কেমন ভালোবাসা? আর এর নাম যদি
হয় ভালোবাসা, তাহলে গোলামী
আর কারে কয়?
বিএনপিজীবি হযরতগণ যেনো খুশি
না হন। আমরা ভুলে যাইনি একই
অবস্থা আপনাদের সময়ও ছিল।
আপনারাও তোষণ নীতিতে কম
ছিলেন না। ভারতীয় চ্যানেল
সম্প্রচার ইস্যুতে আজ আওয়ামীলীগ
যা করছে, আপনারাও খুব খুব একটা কম
করেননি।
আমরা সাধারণ বাংলাদেশিরা
জানি, বাংলাদেশের প্রধান দুই দল
আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির মাঝে
সবকিছুতে অমিল থাকলেও দু'টি
বিষয়ে ভয়াবহ মিল ররেছে তাদের
মাঝে। আর বিষয় দু'টি হল, লুটা এবং
চাটা। অর্থাৎ, বাংলাদেশকে
লুটেপুটে খাওয়া এবং ইন্ডিয়ার পা
চাটার ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ-
বিএনপির মাঝে আমরা কোনো
পার্থক্য খুঁজে পাইনি। কার কোন
পাপের শাস্তি হিশেবে এই দল দু'টি
বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসার
এবং দেশের মানুষের শরীর থেকে
লেবু চিপে রস বের করার মত রক্ত চুষে
নেয়ার সুযোগটা পেল, আমরা জানি
না।
ছয়
চৌদ্দকোটি মুসলমানের দেশ।
ষোলকোটি মানুষের দেশ।
বাংলাদেশের মানুষ নানা পথ নানা
মতে বিভক্ত। বাংলাদেশের মানুষ
নষ্ট রাজনীতির দর্শনে আকর্ষিত হয়ে
একজন আরেকজনের ছায়াও মাড়াতে
চায় না। স্বাধীনতার বেয়াল্লিশ
বছর পরেও বাংলাদেশের মানুষ
'বাঙালি-বাংলাদেশি' নিয়ে
মাইর-দরবার করে। সব ঠিকাছে।
কিন্তু বাংলাদেশে থাকা পাক-
ভারতের গুটি কতেক প্রেতাত্মা
ছাড়া দেশের সকল মানুষের মধ্যে
একটি ব্যাপারে কোনো বিভক্তি
নেই। আর সেটি হল 'মাটির মায়া'।
বাংলাদেশের মানুষ একবেলা খাবে
একবেলা না খেয়ে থাকবে, এটা
মানতে পারে কিন্তু কারো
তল্পিবাহক হয়ে থাকা মানতে পারে
না। এই ব্যাপারটি হাড়ে হাড়ে টের
পেয়েছিল একাত্তরের পাকিস্তান।
একাত্তরের আগে, এমন ছিল না যে,
মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচতে পারছিলো
না! তবুও গর্জে ওঠেছিলো
পাকিস্তানি হারামীদের বিরুদ্ধে?
কারণ একটাই ছিল। মাথা উঁচু করে
বাঁচার মত বাঁচা।
আয়তন ও জনসংখ্যাগতভাবে ভারত
এবং বাংলাদেশের অবস্থান আমরা
জানি। কিন্তু কোয়ালিটি আর
কোয়ান্টিটির মধ্যে ব্যবধানগত যে
পাওয়ার আছে, ভারত সেটা জানে
কিনা, আমরা জানি না। ঈমান মানে
জীবন। ঈমান-বিহিনতা মরা গাছের
মতো। এক লক্ষ মরা গাছ হল গাছের
কোয়ান্টিটি। একটি দিয়াশলাইয়ের
কাঠি হল গাছের কোয়ালিটি। আর
একলক্ষ গাছের জন্য একটি
দিয়াশলাইয়ের কাঠিই যে যথেষ্ট,
ব্যাপারটি মাথায় থাকা দরকার।
ষোলকোটি মানুষ বাঁচতে চায়।
প্রতিবেশির উচিত ভদ্র
প্রতিবেশিসুলভ আচরণ করে আমাদের
সুন্দরভাবেসুন্দরভাবে বাঁচতে দেয়া।
ষোলকোটি মানুষ যদি মরতে রাজি
হয়ে মাঠে নেমে যায়, মাটির কসম,
একশ' কোটি দিয়েও আর দাবিয়ে
রাখা যাবে না।
২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৫৭
খাইরুন নাহার বিনতে খলিল বলেছেন: অনেক শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৫৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
কোরবাণী ঈদের শুভেচ্ছা।