নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘আল-কুরআন, মহাবিশ্ব ও নাস্তিক’

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:০৪

আমাদের ভার্সিটির স্বনামধন্য শিক্ষক ড. ছদরুল হক (জাফর) স্যার ক্লাসে উপস্থিত হয়েছে। আজ স্যার ক্লাসে আসা অবধি এখন পর্যন্ত বেশি একটা কথা বলছে না। সম্ভবত স্যারের মন খারাপ। হতে পারে আমিই এর জন্য দায়ি। কেননা, ভার্সিটির প্রথম দিনে প্রথম ক্লাসে স্যারের সাথে বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে খুব তর্ক করেছিলাম। তাঁর সাথে এত তর্ক/লজিক্ করা আমার মোটেও ঠিক হয়নি।
.
জানতে পারলাম, ‘তিনি নাকি ডাবল এম.এসসি. (পদার্থ/রসায়ন) ও কানাডা কৃর্তক (পিএইচ.ডি.) ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং শতাধিক বইয়ের রচিয়তা।’ ভার্সিটির সব শিক্ষক-ছাত্ররাই তাকে সম্মান দিয়ে চলে।
[আমি ভার্সিটিতে নতুন স্টুডেন্ট, তাই স্যারের এসব শিক্ষাগত তথ্য জেনে নিলাম এক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে।]
.
তো যাইহোক, এবার জাফর স্যার মুখ খুললেন। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি? যে বলতে পারবে, “মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত, সংকুচিত নাকি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে?”
.
কতিপয় স্টুডেন্ট বলল, মহাবিশ্ব স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। আবার কেউ বলতেছে, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। এছাড়া সবাই নিশ্চুপ। কেউ কোনো কথা বলছে না। এরপর স্যার তাদের কাছে কোনো যুক্তি ও প্রমাণ চাইলে, তারা নির্বাক হয়ে আছে। আর আমি তো মাথা নিচু করে মৌনতা পালন করছি।
.
এবার জাফর স্যার দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুঃখ প্রকাশ করে বলতেছে, ‘তোমরা ভার্সিটির স্টুডেন্ট, অথচ মহাবিশ্ব সম্পর্কে তুচ্ছ জ্ঞানও মাথায় রাখো না! এর থেকে বড় দুঃখের ব্যাপার আর কি হতে পারে।’
.
এবারও সবাই নিশ্চুপ। অবশেষে স্যার আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ওহে অদুরভবিষ্যতের অন্তর্বর্তী বিজ্ঞানী আল-কাওস্টাইন মহাবিশ্ব সম্পর্কে তোমার কিছু বলার আছে?”
.
আমি বললাম, ‘তুচ্ছ জানা আছে স্যার।’
— তুচ্ছ মানে কী?
— তুচ্ছ মানে, ‘ছায়াপথের দূরে যাওয়ার দ্রুতি তাদের পরস্পরের মধ্যকর দূরত্বের সমানুপাতিক।’ এই সূত্রটা আপনি ব্যাখ্যা করলেই আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন।
— তাঁর মানে তোমার এ সূত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে!
.
[এ কথা শুনে আমাদের ক্লাসের বিলিয়ান্ড ছাত্রী ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল নৈরীতা বলে উঠল, কেমন করে সম্ভব স্যার? মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে বুঝলাম। তাহলে আমরা এটা অনূভব করতে পারছি না কেন? আমার জানামতে, ১৯১৭ সালের আগের বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল পৃথিবী স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।]
.
আমি নৈরীতাকে বললাম, ‘হুম্ম তা ঠিক আছে। কিন্তু এটি বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুইন হাবল প্রথম উল্লেখ করেছিলেন ১৯২০ সালে যে, মহাবিশ্ব ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে।’
— তো কিভাবে? বুঝিয়ে বলো। [তাঁর কথার সাথে একমত হয়ে স্যারও বলে উঠল, হ্যাঁ এখন তা বুঝিয়ে বলো।]
.
আমি বললাম, ‘এডুইন হাবল তাঁর থিওরিতে উল্লেখ করেন, বর্ণালির লাল অপসরণ বা লোহিত ভ্রংশ থেকে বুঝা যায় যে, ছায়াপথগুলো স্থির নয় বরং ছায়াপথগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আর এই ছায়াপথের দূরে যাওয়ার দ্রুতি তাদের পরস্পরের মধ্যকার দূরত্বের সমানুপাতিক। ছায়াপথের পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব যত বেশি তাদের সরে যাওয়ার দ্রুতি তত বেশি। ফলশ্রুতিতে, এ মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে।’
.
স্যার অতি প্রফুল্লচিত্তে বলে উঠলেন, “সুন্দর উপস্থাপন করেছ কাওস্টাইন। তবে একটা বিষয় বুঝার বাকি রইল যে, মহাবিশ্ব ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু এসম্পর্কে বিখ্যাত ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন কিছু বলেনি। অথচ সেই গ্রন্থ বিশ্বাসীরাই বলে থাকে, তাদের কুরআন নাকি বিজ্ঞানের এক আশ্চার্য্য নির্দশন। আমি তাদের এ কথাকে একদম যুক্তিহীন ও ভিত্তিহীন মনে করি।”
.
আমি মাথা নিচু করে ভাবলাম, ‘বাহ, কি কৌশলে আমাকে এতদূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে আসলো! এতক্ষণে এই তাহলে স্যারের চক্রান্তের জাল।’
.
[জাফর স্যার আমার এই এক মিনিটের নীরবতাকে গোল পয়েন্ট মনে করলেন।]
.
আমি স্যারকে বললাম, “দেখুন স্যার, আল কুরআন কোনো বিজ্ঞানের পুস্তক নয় যে, সেখানে বিজ্ঞানের সব কিছুই পঙ্খানুপঙ্খানুভাবে উল্লেখ থাকবে। কিন্তু বি-জ্ঞা-ন হচ্ছে নিদ-দ-র্শ-ন। যেমন আল কুরআনে অনেক নিদর্শন আছে। যার মধ্যে এক হাজারেরও বেশি আয়াতে বিজ্ঞান সম্মত জ্ঞান রয়েছে।”
.
এবার স্যার মৃদু হাসি দিয়ে বলতেছে, “মিস্টার কাওস্টাইন, আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এখনও পেলাম না। আশা করেছিলাম তুমি কুরআন দিয়েও প্রমাণ করে দিবে যে, পৃথিবী ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তা না প্রমাণ না করে অন্যদিকে প্রসঙ্গ টানতেছ।”
.
[সব স্টুডেন্টরাই আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। আর আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, পন্ডিত মশাই আমার সরলতার সুযোগ নিচ্ছে! রাখো দেখাচ্ছি মজা।]
.
আমি বললাম, “আপনি যা ভাবছেন তা মোটেও সঠিক নয় স্যার। মহাবিশ্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, "I built the sky, and I'm definitely the greatest extract of it." (Surah Jariah-47) ‘আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার নিজ ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই এর মহাসম্প্রসারণকারী।’ (সূরা যারিয়াত-৪৭)।
.
শুধু তাই নয়, আরও একটি তুচ্ছ প্রমাণ আছে স্যার। প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ স্টিফেন হকিং তাঁর "A brief history of time" বইতে লিখেছেন, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কিত আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীর মহান বুদ্ধিবৃত্তিক টেলিষ্কোপ আবিষ্কারের পূর্বে আল-কুরআন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে।
.
তাহলে এখন বলুন স্যার, “বিজ্ঞানের এইমাত্র ১৯২০ সালের থিওরি ১৪.৫০শত বছর আগের কুরআন কিভাবে জানলো?”
.
স্যার কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর বলল, “আরবেরা জ্যোতির্বিদ্যায় অনেক অগ্রগামী ছিল। তাই হয়তো কেউ তোমার রাসূলকে এ সম্পর্কে বলেছিল, আর তাই তিনি তা কুরআনে সুন্দরভাবে উল্লেখ করেছেন।”
.
আমি বললাম, “আপনার কথায় আমি একমত যে আরবরা জ্যোতির্বিদ্যায় বেশ এগিয়ে ছিল। কিন্তু স্মরণ করুন স্যার, কুরআন নাযিলের দিনগুলো খুবই পুরনো। আরবরা জ্যোতির্বিদ্যায় অগ্রসর হওয়ার বহু শতাব্দী পূর্বেই কুরআন নাযিল হয়েছিল। তাই এটা একই সময়ে আদান-প্রদান কি করে সম্ভব স্যার? অতএব কুরআন থেকেই আরবরা জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।”
.
অপরদিকে পবিত্র কুরআন হচ্ছে- ফুরকান তথা সত্য মিথ্যার প্রভেদকারী বা পার্থক্যকারী মাপকাঠি। কিন্তু স্যার আপনি তো এ গ্রন্থকে বিশ্বাস করেন না। তাই আপনার নিকট বিজ্ঞানই মহাসত্য বা মাপকাঠি। সুতরাং আমি কুরআনের আলোকে সেই আপনার মাপকাঠি ব্যবহার করেই বলব যে, আল কুরআনই চিরন্তর সত্য ও বিজ্ঞানের চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ।
.
স্যার অতিশয় ক্রুদ্ধ হয়ে তীব্র গলায় বললেন, “অসম্ভব! কশ্মিনকালেও কুরআন বিজ্ঞানের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠতর হতেই পারে না। এটা তোমার ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। তোমার একথার যথাযথ যুক্তি বা প্রমাণ কী?”
.
আমি বললাম, স্যার, কাওস্টাইন কখনো প্রমাণ ও যুক্তি ছাড়া কথা বলে না। পবিত্র কুরআনে এক জায়গায় সমুদ্রের তরঙ্গ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, [ঢেউ যখন অগ্রসর হয় তখন দুটি ঢেউয়ের মধ্যবর্তী স্থান অন্ধকার থাকে।]
.
এখন আসি বর্তমান বিজ্ঞান কি বলেছে, “প্রচন্ড ঝড়ের সময় সমুদ্র যখন বিক্ষব্ধ হয় তখন দ্রুতগতিসম্পন্ন তরঙ্গগুলোর মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ আন্ধকারচ্ছন্ন থাকে।”
.
তৎপর আমার প্রশ্ন হচ্ছে স্যার, “আমরা জানি, হযরত মুহাম্মদ (স.) মরুভূমি অঞ্চলের সন্তান ছিলেন। তিনি কখনো সমুদ্র দেখেননি। সুতরাং সমুদ্র তরঙ্গের দুটি ঢেউয়ের মধ্যবর্তী স্থান যে অন্ধকার হয় তা তিনি জানবেন কি করে স্যার?”
.
এতে প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র কুরআন বিজ্ঞানের চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ। আর তা মুহাম্মদ (স.) নিজে রচনা করেননি। নিশ্চয়ই এর পিছনে এক সৃষ্টিকর্তার হাত রয়েছে।
.
এবার স্যার তাঁর মুখটা হুতুম পেঁচার মতো করে টেবিলের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলেন। তারপর মোটা ফ্রেমের চশমাটা চোখ থেকে খুলে রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করতে লাগলেন। আর বললেন, “ইঁচড়ে পাকা বৈজ্ঞানিক বসে পড়ো, তুমি মিয়া বিজ্ঞানের কচু বুঝো।”
.
হাজার হলেও শিক্ষক মানুষ, তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলা প্রত্যেক স্টুডেন্টদের একান্ত কর্তব্য। তাই আমি আর কোনো কথা না বলে নিশ্চুপ হয়ে ব্রিঞ্চিতে বসে পড়লাম। ভাবার ভিষয় এই যে, ‘ফ্রান্সিস বেকন’ যথার্থই বলেছেন, “বিজ্ঞানের অল্প জ্ঞান মানুষকে নাস্তিক বানায়। কিন্তু বিজ্ঞানের গভীর জ্ঞান সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসী বানায়।”
..
লেখাঃ কাওছার আজাদ (নাঈম)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.