![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।
আতকিয়া মেয়েটা যেমন নম্র-ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের তেমনি ধার্মিক পরহেজগার। এক কথায় গ্রামের সবারই প্রিয় পাত্রী। শুধু গ্রামেই না বাড়িতেও তার কোন ভালবাসার কমতি নেই। কেননা, এমনিতেই মাতৃহারা মেয়ে আবার অন্যদিকে ভাল মেয়ে। মধ্যবৃত্ত পরিবারে তার জন্ম। সেই ছোট্টকালে ক্লাস থ্রিতে পড়া অবস্থায় তার মা পরলোকগমন করেছে। তখন মা হারা কষ্ট না বুঝলেও এখন সে ঠিকই বুঝে। প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সে সুন্দর করেই পারি দিয়েছে। কিন্তু এখন মাকে ছাড়া তার আর কিছুই ভাল লাগছে না।
.
কালকে থেকে তার 'S.S.C - Exam' শুরু হবে। সব ছেলে-মেয়েরাই আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে দোয়া নিয়েছে। তারা কালকে হয়ত তাদের মা-বাবার কাছ থেকেও দোয়া ও আশীর্বাদ নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে।
.
আজকে আতকিয়ার মায়ের কথা খুব মনে পড়েছে। ইশ, যদি আজ আমার মা থাকত তহলে আমাকেও দোয়া আশীর্বাদ করত।
এই কথা ভাবতে ভাবতে সে বাংলা ১ম পত্র বইটি হাতে নিয়ে পড়তে থাকল। যেহেতু কালকে তার পরীক্ষা। ঘরিতে তাকিয়ে দেখে ১২.৩০am বাজে। আর দেরি করা যাবে না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। সে ঘুমানোর জন্য খাটে দ্রুত সুয়ে পড়ল। চোখগুলো বন্ধ, আচমকা ঘুম কেবল ধরতেছে। ঠিক ঐ সময় সে অনূভব করতে লাগল, তার মাথায় কে যেন হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। (যেমনটি করে একজন মা তার ছোট্ট শিশুকে ঘুমানোর জন্য।) আর বলতেছে, 'মারে আমাকে ক্ষমা করে দিস, তুই চিন্তে করিস না, তোর মা এবং তোর মায়ের আশিস তোর সাথেই আছে। আমি নিশ্চিত তুই ভাল করে পরীক্ষা দিয়ে ভাল রেজাল্ট করবি!' এই রকম কিছু কথা শুনা যাচ্ছে। আর তার মাথার চুলগুলোতে কে যেন বিলি কাটছে।
.
রাত্রি অনেক গভীর, অন্ধকার কক্ষ, জানালা দরজা সবই বন্ধ কিন্তু এই আওয়াজ কোথা থেকে আসল? স্বপ্ন নয় তো! নাহ, আমার তো এখনো ভাল করে ঘুমই ধরেনি। তাহলে মায়ের আত্মা কি আমার রুমে এসেছে! নাহ, স্বরণ পড়ছে না তার গলার কণ্ঠ। সেই ছোট্টকালে মাকে হারিয়েছি। এই কথা ভাবতে ভাবতে সে সোয়া অবস্থা থেকে বসে পড়ল। আশ্চর্য, অপরিচিত একটা সুগন্ধি আসল কোত্থেকে! তার শরীর ভয়ে সিউরে উঠেছে। তার সাথে তার রুমে চাচাতো বোন 'আদিবা' থাকে। সে তার বয়স অপেক্ষা অনেক ছোট। রাত্রি ১০টা না হতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে। এখনো সে ঘুমন্ত। তাকে ডাকা যাবে না। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
.
`গুড আইডিয়া...
মক্তবের হুজুর বলেছিল, যে `আয়াতুল কুরসি` পড়ে ঘুমায় তার কাছে অদৃশ্য আত্মিক সত্ত্বা আসতে পারে না। শয়তান তার কাছে আসবে না বলে ওয়াদাবদ্ধ। বিপদে পড়লে `আয়াতুল কুরসি`(সূরা বাকারা, আয়াত. ২৫৫) পড়লে উক্ত আয়াত তার জন্য সহায়ক হয়।
.
সে আয়াতটি পড়তেই থাকল। কি আশ্চর্য, সত্যিইতো তার কক্ষে আর সুগন্ধি ও শব্দ কিছুই নেই। সে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল। যেহেতু কালকে পরীক্ষা। সকালে ঘুম ভাঙ্গল তার পিতার ডাকে। তারপর সে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং কিছুক্ষণের জন্য পড়তে বসল। এরপর সে সময় অনুযায়ী পরিক্ষা দিতে গেল। এভাবে ক্রমানুগতভাবে তার সব পরীক্ষা দেওয়া শেষে হয়েছে।
.
আজকে তার রেজাল্ট প্রকাশিত হবে। তার কাজিন্সদের নিয়ে ফলাফল প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে।
- আতকিয়া আপু, তোমার গোল্ডেন (A+), অভিনন্দন! এখন মিষ্টি খাওয়া আমাদের! (আদিবা)
- হুম, তা তো খাবিই! তার সাথে সবাইকে খাওয়াবো! (আতকিয়া)
.
এভাবে তারা সারাদিন আনন্দ উল্লাস করেই দিন কাটালো। সব থেকে বেশি আনন্দিত দেখাচ্ছে তার চাচাতো বোন আদিবাকে।
আচ্ছা যাইহোক, তারা সবাই রাত্রিতে ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু এত ভাল রেজাল্ট করেও তার মন ভাল নেই। কারণ, যার মুখে হাসি ফুটাবে সেই তো আজ নেই! মনের অজান্তেই চোখ থেকে বেড়িয়ে আসে পানি।
.
আজকে আর অর্ধঘুম অবস্থায় নয়। চোখ খোলা অবস্থায় কে যেন বলতেছে, 'মারে আর কাঁদিস নে! এইতো আছি আমি তোর মা! আমি খুব খুসি হয়েছি রে মা তোর রেজাল্ট শুনে।' এইরকম বলতেছে আর আতকিয়ার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে!
কিন্তু এ কি হায়, হাতগুলো বরফের চেয়েও ঠান্ডা! ভয়ে ভীতুচ্ছন্ন হয়ে গেছে সে। শরীর থেকে তীব্র ঘাম বেড়ুচ্ছে। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে সে জোরে আওয়াজ ছেড়েই সেন্সলেন্স হয়ে পড়ল। পাশ থেকে আদিবাও ভয়ে চিল্লাইতে শুরু করল। তার বাবা, চাচা-চাচী, আশপাশের লোকজন সবাই এসে তাদের বাড়িতে ভিড় জমালো। তারপর ঈমাম সাহেব এসে, দোয়া-কালাম পড়ে তাকে সুস্থ করালো।
.
[উপরোক্ত কাহিনীটা আমার স্ত্রী আতকিয়ার মুখ থেকে শুনেছিলাম বিয়ের কিছুদিনপর।]
.
হ্যাঁ, আমার সাথে তার বিয়ে হওয়ার পরও প্রতিনিয়ত এই রকম ঘটনা তারসাথে ঘটত, আর সে চিল্লাইয়া উঠত। এ রকম জ্বালা কার সহ্য হয়, অর্ধরাত্রে স্ত্রীর বিকট শব্দে ঘুম ভাঙ্গা! তাই রাগ করে এই অবান্তর ঘটনাগুলোর জন্য তাকে 'অবন্তীকা' নাম দিয়েছি। সেও আমাকে ছাড় দেয়নি, তার কথা গুলো আমার মাথায় ঢুকে না বিধায়, তাই সে আমার নাম নাঈম থেকে 'নাইমস্তক' দিয়েছে।
.
সে এক সংগ্রামী রে বাবা! আমাকে বিশ্বাস করাইবো তো ছাড়ব। এজন্য একদিন সারা রাত আমাকে ঘুমাতে দেয়নি, বিশ্বাস বলে কথা! তারপর যা হবার তাই হলো, অবশেষে আমিই অজ্ঞান। আর সে নাকি সারাটা রাত আমার এই অবস্থা দেখে নিজেই কেঁদে যাচ্ছিল! ঐ যে একটা কথা আছে না রে ভাই, 'যত হাসি তত কান্না, বলে গেছে রামশর্মা।' অনুরূপ আমারও অবস্থা রে ভাই!
.
এখন আর সে ঘুমের ঘরে চিল্লায় না রে ভাই। তার সাথে এখন বড় কিছু ঘটতেছে। ঘুমন্ত অবস্থায় সে এখন হেঁটে বেড়ায়। অনেক ডাক্তার, কবিরাজ ও হুজুর দিয়ে চিকিৎসা করাইছি তারে। ঐ লাউ যেই কদু! তবে এক বড় আলেম 'তাবিজ' দিয়েছে, যাতে তার কোন ক্ষতি না হয়। তবুও আমি আতকিয়াকে নিয়ে মহা টেনশনে আছি। তাইতো প্রতিদিন তার হাতের সাথে আমার হাত দড়ি দিয়ে বেধে রেখে ঘুমাই! টেনশন ফ্যাক্ট..!
.
লেখাঃ কাওছার আজাদ (নাঈম)
©somewhere in net ltd.