![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।
[তুহিন ছেলেটা বেশ মেধাবী। সর্বদা লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আজকে তারই জীবন থেকে কিছু কথা বলব।]
.
তুহিনের মা তুহিনকে বলতেছে, 'অনেক রাত হয়েছে বাবা! তুই এখনও কেন ঘুমাসনি? এত পড়লেতো পাগল হয়ে যাবিরে বাবা।'
- 'আরে নাহ আম্মু, ঘুম ধরছে না তাই আরকি। এই অঙ্কটা করে বা প্যারাগ্রাফটা পড়েই না হয় ঘুমাবো।'
- 'আরে তুই ঘুমাওতো! আগে ঘুম তারপর পড়া। বাকি পড়াটুকু সকাল বেলায় শেষ করিস।'
- 'আম্মু! তুমি বুঝো না কেন? আমি ক্লাসের ১ম বয়। পড়া সম্পন্ন না করে ক্লাসে প্রবেশ করা আমার জন্যি হারাম!'
- 'ঠিক আছে বাবা তাড়াতাড়ি ঘুমাও।'
.
জি হ্যাঁ, এটা আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কাহিনী। যেই ছেলেটি বইয়ের পোকা ছিল। শুধু বইয়ের পোকাই নয়, বই ছাড়া কিছুই বুঝত না। ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রদের সাথে পাল্লা দিতে দিতেই তার শেষ হয়ে যায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন। তারপর মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যায়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়া মোটামোটি ভালই করে। প্রাথমিক জীবনের মতই চলছে দিনকাল।
.
ছেলেটি একধাপ অতিক্রম করে সপ্তম শ্রেণীতে প্রদার্পণ করল। বন্ধু বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে ইন্টারনেট ও ফেইসবুক সম্পর্কে ধারণা পেল। তখনও কিন্তু ছেলেটি কোন ফোনই ইউস করত না। কিন্তু যখন ছেলেটির মাথার নিউরনে সেই ইন্টারনেট ও ফেইসবুকের কথা ঘোরপাক খাচ্ছে। ঠিক তখনই তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা ম্যানেজ করে একটা নেটযুক্ত 3G ফোন কিনল। অতঃপর তার এক বন্ধুর থেকে ফেইসবুক আইডি খুলে নিল। ফেইসবুক কিভাবে চালাতে হয় তার খুটি-নাটি ব্যবহারবিধি সব শিখে নিল। তারপর ছেলেটি পড়ালেখা বাদ দিয়ে অতিরিক্ত ফেইসবুকিং, চ্যাটিং ও ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ল। শুধু তাই নয়; বন্ধুদের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন (Adult 18+) পর্ন ওয়েব সাইটগুলোতে প্রবেশ করতেও দ্বিধাবোধ করল না।
দিনদিন এসবের প্রতি আসক্ত আরও বৃদ্ধি পেতেই থাকল। কিন্তু পড়ালেখার ব্যাপারে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন। S.S.C পরীক্ষার আর মাত্র ১মাস আছে। কি করবে সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না। আম্মুর বকনি আব্বুর পিটনি খেয়ে কোনরকম ফেইসবুক ব্যবহার স্থগিত করেছে।
.
[সত্যিই আমি কোন জগতে ঢুকে ছিলাম? আমারতো সামনে বোর্ড পরীক্ষা। যে পরীক্ষা জীবনের একসিঁড়ি অতিক্রম করার মাধ্যম।]
এই অন্তিম মুহূর্তে সে দিবারাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে লেখাপড়া করছে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? সময়ে এক ফোঁড় অসময়ে দশ ফোঁড় দিয়ে কি লাভ হবে! সময়ের কাজ অসময়ে করলে সে কি করে তার ন্যায্য পাওনা পাবে! যেমন কর্ম করেছে অনূরূপ ফল তাকে ভোগ করতেই হবে।
.
আজকে এস.এস.সির রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। (A+) পাওয়া ছাত্র আজ কেন সে (A-) পেয়েছে? কারণ সে ডিজিটাল নেশা পান করেছিল। যে নেশায় একবার কেউ আসক্ত হলে, তা থেকে বের হওয়া কঠিন দুঃসাহসী ব্যাপার। এই ডিজিটাল নেশা এমন এক খারাপ নেশা যে, তা ইয়াবার থেকেও কিয়ৎ কম না। এই নেশায় যে আসক্ত থাকে সে সত্যিই বাহিরে কি হচ্ছে তা বুঝতেও পারবে না। এই নেশা এমন এক নেশা যা না হলে নেশারু ব্যক্তির ঘুমই ধরবে না।
.
মানুষের মৌলিক চাহিদা এখন আর পাঁচটা নয়। ডিজিটাল যুগের সংস্পর্শে আরও পাঁচটা বৃদ্ধি পেয়েছে। যথা-
১. প্রেম করা;
২. ফেইসবুক/ইন্টারনেট চালানো;
৩. মিথ্যা কথা বলা;
৪. ঝগড়া করা/তর্ক করা;
৫. বিয়ে করা;
আর হ্যাঁ সত্যি কথা বলতে কি? এই পাঁচটা চাহিদা যদি সার্বজনীন থাকত, তবে সমাজ বিজ্ঞানীরা মৌলিক চাহিদাগুলো ‘স্যার দিমিত্রি ম্যান্ডেলিফের’ পর্যায় সূত্রের মতো সংশোধিত ও বর্ধিত করত।
ইন্টারনেট ও সামাজিক নেটওয়ার্কের ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারের ফলে আজ সমাজে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনুরূপ ভালোর দিকে লক্ষ করলেও এর ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাবও কম না। কল্পনা নয় এটাই সত্যি, গল্প নয় এটাই বাস্তবতা।
.
সর্বপরি অবিভাবকদের বলতে চাই, সম্মানিত মা-বাবারা আপনার সন্তানদের প্রতি লক্ষ রাখুন। উপযোগী বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাদের হাতে 3G(৩গ্রাম..) মোবাইল তুলে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। যদি তদের হাতে ফোন তুলে দিতেই হয়, তাহলে তার প্রতি টেক কেয়ারিং এর দায়িত্ব আপনার। ফোনের 'হার্ডডিস্ক' চেক করে দেখুন, সেখানে কি কি হচ্ছে! সৎকাজে আদেশ দিন এবং অসৎকাজে বাধা প্রদান করুন। ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা দিন। এটাই আপনার সন্তানের জন্য মঙ্গল ও ভবিষ্যত উজ্জ্বলের মাপকাঠি।
মনে রাখবেন, “ফোন কিনে দিয়েছেন আপনার কামাইয়ের টাকা দিয়ে, সন্তান জন্ম দিয়েছেন আপনার বীর্য দিয়ে। সুতরাং সন্তান যতগুলো খারাপ কাজ করবে, এর ফল আপনাকেই ভোগ করতে হবে।”
.
ছাত্র-ছাত্রী ভাইবোনদের বলতে চাই, ফুলের মধ্যে মধু+বিষ দুটোই বিদ্যমান। ফুল কোনদিন মৌমাছিকে বলে নাই যে, তুই আমার কাছ থেকে মধু নিয়ে যা। আবার ভ্রমরকেও বলে নাই যে, তুই আমার থেকে বিষ নিয়ে যা। এটা যারযার প্রয়োজনে সে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। অনূরূপ আপনাকে ভ্রমর নয়, মৌমাছি হতে হবে। ফেইসবুক নামক ফুল থেকে বিষ নয়, মধু সংগ্রহ করুন।
.
সামাজিক নেটওয়ার্ক বা মিডিয়া ব্যবহার করুন, কিন্তু সীমারেখা অতিক্রম করে নয়। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য যে পবিত্র জিনিসগুলো হালাল করে দিয়েছেন, তোমরা সেগুলো নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়ো না, আর কখনো হারামের সীমা লংঘন করো না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সীমালংঘনকারীদের অপছন্দ করেন।’ (সূরা আল মায়েদা-৮৭)
.
লেখাঃ কাওছার আজাদ (Kawstein)
©somewhere in net ltd.