নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“আর নয় হিমু”

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

২০১৩ সালের কথা। বাবার পকেট থেকে তিন হাজার টাকা মেরে বই মেলায় গেলাম। যুবক-যুবতীদের প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের বেশ কয়েকটা বই কিনলাম। তন্মধ্যে বোতল ভূত, ভূত মন্ত্র, মিসির আলি সিরিজ - দেবী, হিমু সিরিজের বইও ছিল। তারপর বাসায় এসে আমার ক্লাসিক বইগুলো বাদ দিয়ে শুরু করলাম উক্ত বইগুলো পড়তে। রাত্র গভীর ফ্লাশ লাইটের তীব্র আলোতে বইগুলো পড়তে বেশ ভালোই লাগছে। এক পর্যায়ে সব বই শেষ করে হিমু সিরিজ পড়তে লাগলাম। অবশেষে হিমুর ভক্ত হয়ে গেলাম।
.
রাতের পর রাত কেটে যায়। কিন্তু মাথা থেকে একটা ভূত যাচ্ছে না। কি করে আমিও হিমু হতে পারব! হিমুর মতো ক্যারেক্টর অর্জন করব! হিমুর মতো ভিন্নধর্মী পোলা হব! কীভাবে হিমুর মতো মহাপুরুষ হব?
নাহ, আমাকে হিমুর মতো হতেই হবে। তার চরিত্রকে ফলো করতেই হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আম্মুর কাছে ৫০০ টাকা দাবি করলাম। আর বাবাকে খুব ভয় করি। তাই তার থেকে টাকা চাওয়ার সাহস আমার আদৌ হয়নি। শুধু মাঝেমধ্যে তার পকেট মেরে যা কামাই।
.
এবার আম্মু রাগান্বিত হয়ে বলতে লাগল, 'ঘুম থেকে উঠলিই কেবল। তাতেই টাকা চাচ্ছিস! এত সকালে টাকা কি করবি?'
— 'না আম্মু, টাকার খুব দরকার ছিল। স্কুল থেকে পিকনিকে যেতে হবে।'
— 'সব তোর মিথ্যা কথা।'
হুঠ করে পাশ থেকে আমার বোন বলে উঠলো, 'সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠেই মিথ্যা কথা বলার কি দরকার ছিল! কই পিকনিকে যাওয়া সম্পর্কে আমি তো কিছুই জানলাম না।'
.
আমি যে জ্যান্ত মিথ্যা কথা বলেছি, তা সহজেই তারা ধরে ফালাইছে। এখন কি করব? আমি যে 'হিমু' হতে চাই। হলুদ পাঞ্জাবী কিনতে চাই। টাকা ম্যানেজ করতেই হবে। আবার বাবার পকেট মারলাম। এবার তিন হাজার নয়, সাতশত টাকা নিয়েছি। দিলাম মার্কেট মুখে দৌড়। ৪৭০ টাকা দিয়ে একটা চকচকে টসটসে হলুদ পাঞ্জাবী কিনলাম।
এখন আমি হিমু। আমারে আর কে ঠেকায়! কিন্তু হিমুর মতো আমার তো আর জ্ঞান নাই। হিমু সিরিজে পড়েছিলাম, হিমুর চরিত্র একদম ভিন্নধর্মী। কারো সাথে মিল নাই। সে যেন এক মঙ্গলগ্রহের প্রাণী। কথা হিসাব করে বলে। অতিরিক্ত কথা বলা তার স্বভাব নয়। মাঝেমধ্যে হুঠ করে একটা করে কথা বলবে, আর তা পরেরদিন সত্যি সত্যিই বাস্তবায়িত হবে।
.
কি করি, কি করি? কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। তাহলে কি আমার হিমু হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাবে। নাহ, তা হতে পারে না।
পরেরদিন খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পরে ঘারে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে গেলাম। কিন্তু সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকচ্ছে, যেন আমি অন্য গ্রহ থেকে পালিয়ে এসেছি। স্কুলে অনেকেই অনেক কথা আমাকে বলতে লাগল। ওদিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময় আমার হাতে নেই। আমার একটাই লক্ষ্য, কীভাবে হিমু হতে পারব।
এক পর্যায়ে আমাকে কেউ 'কাওছার' বলে ডাকলে খুব রাগ ধরে। কেন তারা আমাকে হিমু বলে না। কি অপরাধ করেছি আমি?
.
নাহ, এভাবে কাজ হবে না। একটা একটা করে হিমুর চরিত্রকে ফলো করতে হবে। এবং তা অর্জন করতে হবে। যখন হিমুর সব যোগ্যতাই আমার কাছে বিদ্যমান, তখন লোকেরা আমাকে 'হিমু' না বলে যাবে কোথায়?
ইতোমধ্যে আমার এরকম কাহিনী দেখে, লোকেরা আমাকে 'হিমু' তো বলছেই না; বরং উল্টো আমাকে 'পাগলা হিমু' বলে খেপায়। আর এদিকে মা-বাবা আমাকে নিয়ে মহা টেনশনে রয়েছে। এলাকার লোকদের ধারণা, 'কত সুন্দর একটা পোলা! কিন্তু কিসব কল্প-কাহিনীর বই-টই পড়ে পাগল হতে যাচ্ছে।'
ধুর ছাই! লোকেরা হিমুর মর্ম কি বুঝবে? তারা তো গরুর মতো খায়, আর হাঁসের মতো পায়খানা করে। তাদের কথায় কান দিলে চলবে না। আমাকে হিমু হতেই হবে। আর কয়েকদিন সাধনা করলেই পরিপূর্ণভাবে হিমু হতে পারব। হিমুর মতো ব্যপৃত পন্ডিত হতে পারব। হিমুর মতো অত্যুৎকৃষ্ট হতে পারব।
.
হিমু হওয়ার গৃধ্র সাধনার নিমিত্তে আমার মাথার চুল বেশ বড় হয়ে গেছে। সবার সাথেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। যে সুশীল সমাজের লোকেরা হিমুর মর্ম বুঝে না। হিমুকে 'পাগলা হিমু' বলে খেপায়। হিমুকে অসম্মান করে। তাদের সাথে অনর্থক কথা বলে লাভ কি!
.
এদিকে আমার চিন্তায় মা-বাবা ঠিক মতো ঘুমাতেও পারে না। আমার লক্ষ্য, কিভাবে 'হিমু' হতে পারব? আর মা-বাবার চিন্তা, কিভাবে এই পাগলামো থেকে আমাকে মুক্ত করা যায়?
.
প্রতিদির ন্যায় আজকেও চেয়ারে বসে হিমু সিরিজের শেষের গল্পটা পড়তেছি। হঠাৎ টেবিলের দিকে নজর পড়ল। আশ্চর্য তো, 'এই বইটা এখানে কে রেখেছে? বইটা আস্তে করে হাতে নিলাম। বইয়ের উপরে মোটামোটা অক্ষরে লেখা, 'কিশোরদের প্রিয়নবী (সা.)'। তার নিচে লেখিকার নাম, 'খাদিজা আখতার রেজায়ী'।
হিমু সিরিজের বই পড়া বাদ দিয়ে এটা বই পড়ব! নাহ, তা হতে পারে না। কিন্তু মনটা মানলো না। বারবার শুধু ঐ বইটির দিকেই নজর যাচ্ছে। আমি বইটা আস্তে আস্তে পড়তে শুরু করলাম। যেই বইটা প্রথমে পড়তেই ইচ্ছে করছিল না, সেই বইটা বিরামহীনভাবে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করলাম। এই সময়টা যে কীভাবে অতিবাহিত হয়েছে, আমি নিজেও বুঝতে পেলাম না।
হযরত মুহাম্মদ (স) এর শৈশব কৈশরের প্রাণস্পর্শী বর্ণনাগুলো পড়ে শরীরটা শিউরে উঠল। মনটা কেঁপে উঠল। হিলফুল ফুযুলসহ নানা শন্তি উদ্যোগের কাহিনীগুলো পড়ে মনের মধ্যে একটা শান্তি বিরাজ করতেছে।
.
এক পর্যায়ে ভাবতে লাগলাম, কাল্পনিক চরিত্র হিমুর মতো হয়ে কোনো লাভ নাই। বরং সমাজে নিজেকে পাগল বলে উপস্থাপন করাই হবে। যেমনটা প্রভাব ফেলেছে আমার জীবনে। মা-বাবা, পরিবার ও সমাজের লোক আমাকে পাগলই বলতেছে। তাই আমি এখন বিশ্ব নবী (স)-এর চরিত্রকে অনুসরণ করে চরিত্রবান হতে চাই। আমি দুর্ভাগ্যগ্রস্তদের দল থেকে প্রথিতযশাদের দলে আসতে চাই। আমি আর হিমু হতে চাই না। বাবা-মা অনেক আদর যত্ন করে কুরআনের ছোট্ট একটা সূরার নামেই আমার নাম রেখেছে 'কাওছার'। আমি 'কাওছার' নাম নিয়ে বিশ্ব নবীর চরিত্রকে ফলো করে বেঁচে থাকতে চাই।
.
বাবার পকেটের চুরি করা টাকার বই দিয়ে 'হিমু' হতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ফলাফল হীতে বিপরীত হলো। আল্লাহ্ আমাকে কবুল করেছে। তবে টেবিলের উপর 'কিশোরদের প্রিয়নবী (স)' বইটি কে রেখে গেছে! তাকে আদৌ খুঁজে পেলাম না।
এখন আমি মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। এক আলেমের নিকট কুরআন শরীফ পড়া শিখতেছি। আমার বাবা-মা আমার এরকম পরিবর্তনে অনেক আনন্দিত।
.
- 'কাওছার আজাদ'

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.