নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“অপেক্ষার প্রহর”

০৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:৫৬

আজ আমাবস্যার সেই তিমির রজনি। রাত্রি অনেক গভীর। তবুও দু’চক্ষুতে ঘুম আসছে না। চারদিকে নিস্তব্ধ নীরব পরিবেশ ও ঘন অন্ধাকার। বাড়ির চারপাশের বাঁশ বনের হাওয়া লেগে বিচিত্র শব্দ উঠছে। অদ্ভুত ধরনের অত্যন্ত বিষধর সাপ ও পোকা ডাকছে। সেই বাঁশবাগানে রাত্রি দ্বিপ্রহরের সমাবেশে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। মাঝে মধ্যে শিয়ালের হাঁক শুনে সত্যিই আমি ভয়ে ভীতুচ্ছন্ন।
.
আজকে মনটাও ভাল নেই। কেননা দু’দিন ধরে আতকিয়ার সাথে দেখা হচ্ছে না। মেয়েটা কলেজেও আসছে না, ফোনটারও সুইচ অফ করে রেখেছে। হৃদপিন্ডের স্পন্দন পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতেই আছে। তাঁর ফোনে একটা ভয়েস মেসেজ দিয়েছিলাম যে, “আমার খুব ভয় করছে, ঘুম ধরছে না। তুমি যেভাবেই থাক না কেন, প্লিজ একবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে।”
.
হঠাৎ ফোনের স্কিনে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কল আসল। প্রসন্নমনে ভয়ে ভয়ে ফোন কলটা সমাদর করলাম।
— আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন আপনি?
— কেন আমাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে?
— ওহ, আতকিয়া! আসলে তুমি কল দেয়াতে আমার আস্তমান হৃদয়ে স্বস্তি ফিরে আসল। তুমি ঠিক আছ তো?
— আলহামদুলিল্লাহ্। কিন্তু তুমি এখনও জেগে আছ কেন? এরকম রাত জেগে থাকলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে, বুঝেছ?
— তা ঠিক, তবে কি মনে করে আমাকে এত রাতে কল দিলে? কষ্টে আছি, কষ্টেই থাকি!
— দেখ নাঈম, একটা দুঃস্বপ্ন দেখে আমার খুব ভয় করেছে। প্লিজ তুমি এরকম বলো না!
— আচ্ছা। কলেজ আসোনি, ৩ দিন যাবৎ ফোনটাও বন্ধ ছিল কেন?
— নারীত্ব বিঘ্ন সমস্যার কারণে এ ক’দিন কলেজ যাইনি। আর সিমটা আতিক (আমার ছোট ভাই) আন্দাজি ফোনটা টিপতে টিপতে ‘পাক ব্লক’ করেছে।
— ও আচ্ছা! তাহলে এখন বলো, কি সেই দুঃস্বপ্ন?
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে বলতে লাগল, “আমি তোমাকে হারাতে চাই না। তোমার উষ্ণ বুকে আমার তৈলসিক্ত মাথা রেখে আমৃত্যু পর্যন্ত ঘুমাতে চাই।”
— তা ঘুমাও। কিন্তু কি সেই দুঃস্বপ্ন দেখেছ সেটা তো বলবে?
.
সে বলতে লাগল, “স্বপ্নটা এরকম ছিল যে, আমরা দু’জনের বিয়ে হয়ে গেছে। কিছুদিন পর আমরা দু’জন মিলে কক্সবাজার সমূদ্র সৈকত দেখার জন্য ভ্রমণ করলাম। সেখানে আমি লঞ্চ জার্নি করার জন্য তোমাকে প্রস্তাব দিলাম। তুমি কিছু না ভেবেই লঞ্চের টিকেট সংগ্রহ করলে। অতঃপর আমরা দুপুরে লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চটি যখন সমূদ্রের মাঝ পথে তখন প্রচন্ড বাতাস ও ঘূর্ণিঝড় শুরু হলো। আর তুমি শুধু এতটুকুই বলেছিলে যে, ‘আতকিয়া ভয় করো না, আল্লাহ্ আমাদের সাথেই আছেন। আমার হাতটা শক্ত করে ধরো।’ ঠিক সেই সময়ই তুমি জানালার পাশ দিয়ে ছিটকে পানিতে পড়ে গেলে। আর আমি করুণ আর্তনাদের চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, নাঈম---!”
— তারপর কি হয়েছিল? নিশ্চয়ই আমাকে রক্ষা করার জন্য তুমিও সমুদ্রে ঝাপ দিয়েছিলে।
— না, তারপর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভাগ্যিস এটা স্বপ্ন ছিল। আপাদমস্তক সর্ব শরীর ঘামে ছলবল হয়ে গেছে। নিঃশ্বাস সংকোচিত হচ্ছে। অবশেষে ফ্যানের নিচে ১৩ মিনিট যাবৎ ঠাণ্ডা হলাম।
— ওয়াও, স্বপ্নটা দারুণ ছিল! তবে আমি এ কয়েকদিনে তোমার থেকে বেশি ভয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম। কতবার ফোনে ট্রাই করেছি, তবুও তোমাকে পাইনি।
— কি তুমি দারুণ স্বপ্ন বলছ এটাকে? আমার না খুব ভয় করছে! আমাকে ছেড়ে কোথাও চলে যাবে না তো?
— ধুর পাগলী! তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। তুমি আমার হৃদয়, কলিজার টুকরো। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন বড় অসহায়। শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছি, তিন কবুলের স্বর্গের বন্ধন কবে আসবে এই জীবনে।
— আহারে আবেগী ছেলে! তোমারে যে কত ভালবাসি। কি মধু ঢেলে দিলে আমার এই কোমল হৃদয়ে!
— তোমাকে বিয়ে করে সাথী বানাব ইহকালে, যেন থাকতে পারি তোমার সাথে পরকালে জান্নাতে। দিবে থাকতে?
[আমার কথা শুনে মেয়েটা কাঁদছে, অতঃপর আল্লাহু আকবার]
— হেই, এত জোরে কেউ তাকবির দেয় নাকি হুম্ম!
— কেন ভয় পেয়েছ বুঝি?
— ভয় পাইমু না মানে? আমি তো তোমার তাকবিরের আওয়াজ শুনে সেন্সলেন্স হয়ে যাওয়ার পথে। ভেবেছিলাম, এই আজ হইছেরে! না জানি কার বাড়িতে জঙ্গি হামলা করল।
— এই ফোন কেটে দিলাম কিন্তু নাঈমস্তক সাহেব!
— আরে নাহ! মাফ চাই, ক্ষমা চাই ও দোয়া চাই তবুও ফোনটা কাইটা দিয়েন না ম্যাডাম।
— এই তুমি এত দুষ্টু কেন রে? তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে যখন তুমি জান্নাতে থাকার কথাটা বলো। আর আমার রাগ তখনই বৃদ্ধি পায় যখন তুমি অবান্তর কথাগুলো বলো।
— আমি কিন্তু মানুষটা বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা। তাই ক্রোধ বা রাগকেও শীতল করতে পারি। প্রয়োজনে পাশে আছি।
— আচ্ছা তাহলে ঠাণ্ডা মনে তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করে আমাদের দাম্পত্য জীবন যেন শান্তির হয়। প্রভুর নিকট এই দোয়া করিও।
— হুম, আমি দোয়া করব যে, হে আল্লাহ্ এই পাগলীটারে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দাও। আর সুন্দর একটা ধার্মিক পর্দাশীল মেয়েকে যেন বিয়ে করতে পারি।
— কি বললে? মাথা ঠিক আছে তোমার? হেইটা একটা দোয়া হলো নাকি?
— হা-হা-হা, বোকা মেয়ে কোথাকার! পর্দাশীল ও সুন্দরের দিক থেকে তুমি কম নাকি?
— বাহ, তুমি কত ভাল্লো! আসো মুক্ত আকাশে উদার মনে দুজনে মিলে পাখিদের মতো উড়ে বেড়াই।
— চলো আকাশ ছুঁয়ে দেখি। কারো ভালো লাগায় উচ্ছ্বাশীত হই। মানব্যের কান্নায় আহাজারি করি। বিশ্বটারে শান্তিময় পবিত্র ভালোবাসার উপযুক্ত স্থান করে তুলি। এটাই তো উৎফুল্লচিত্তের প্রীতি তোমার আমার ভালোবাসা।
.
অপেক্ষার প্রহর, সেই প্রীতিময় পূর্ণিমাতিথি রাত্রে তোমার আমার দাম্পত্যের বন্ধন।
..
লেখাঃ কাওছার আজাদ (নাঈম)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.