নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“ধোকাবাজ”

১৩ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪

যেদিকেই তাকাই শুধু অভিরাম দেখতে পাই ধোকাবাজ আর রঙ্গবাজদের কৃতিকার্য। কারো চোখের মধ্যে ধুলো দিতে পারলেই যে আমি চালাক, এটাই বর্তমান মানুষের নীতিমালা। নাল, নীল, সাদা, বেগুনী ও রঙ-বেরঙের সীল মারো; কিন্তু ভেজাল কোনটাতে আছে যায় না সহজে ধরা। চোখের মধ্যে হাজার পাওয়ারি সানগ্লাস লাগালেও বর্তমান যুগে রঙ্গবাজদের সনাক্ত করাটা মস্তবড় ব্যাপার।
.
সম্মানিত পাঠক মহাদয়! আসুন আমরা ছোট্ট একটি কাহিনী থেকে ধোকাবাজদের সম্পর্কে কিছু তথ্য শুনি;-
শান্তিপুর ঈদগাহ ময়দান থেকে দুই কিলোমিটার মিটার দূরে একটি ছোট্ট বাঁশবন। সাথে বিরাট একটি দিঘিও আছে। এর পার্শ্বে আয়তকার যায়গা জুড়ে একটি ঝাউ গাছ দেখা যায়। উক্ত গাছটিতে বসবাস করে পক্ষিকুলের নিবাসী পরিবারভুক্ত এক ঝাক (Peafowl) ময়ূর। প্রত্যেহ সকাল-সন্ধা সেখানে ময়ূরদের দেখার জন্য লোকালয়ের ভীড় দেখা যায়। লোকজনেরা উপরের দিকে উচ্ছ্বাসীত দৃষ্টি নিয়ে হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে থাকে। আবার কেউ-বা সেখান থেকে ময়ূরদের পলক কুড়িয়ে নিয়ে যেয়ে ফুলদানিতে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে। কোন কোন সময় কবিরাজদেরকেও পাখা সংগ্রহ করার ব্যাপারে দেখা গিয়েছে। কে জানে ময়ূরের পাখায় আবার কি মৌহষধ আছে!!
.
অপর দিকে ময়ূরের বাসার কিছুদূর ফাঁকে কয়েকটি বাঁশের ঝাড়ের মধ্যে খড়-কুটা ও বাঁশপাতা দিয় তৈরি বাসায় থাকে কাক সাহেব। কিন্তু কাক মনে করে, 'ময়ূরকে মানুষ দেখতে আসে; তাদের পাখা কুড়িয়ে নিয়ে সযত্নে রাখে; এত সম্মান! কিন্তু আমাকে কেন দেখতে আসে না? আমি কি দেখতে কম সুন্দর নাকি? আমি কত সুন্দর কা-কা-কা করে গান গাইতে পারি। কিন্তু তবুও এই বেয়াক্কেল মানুষগুলো আমাকে না দেখতে এসে ঐ ময়ূরের জন্য পাগল। নাহ, এটা ঠিক না! কিছু একটা করতে হবে। 'আইডিয়া...' হ্যাঁ দারুণ আইডিয়া! গিরগিটির মতো রূপ পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু কি করে সম্ভব? হুম্ম, বুদ্ধি এসেছে।
বুদ্ধির উপাত্তঃ
(১) ময়ূরের পাখা কুড়াইতে হবে;
(২) শক্তিশালী আঠা যোগার করতে হবে;
(৩) এরপর নিজের শরীরে পাখাগুলো ফিটিং করতে হবে;
(৪) তাদের দলে যোগ দিতে হবে;
[চিচিংফাঁক, আমার সম্মান আর কে দেখে!] হুম্ম, পরিকল্পনামাফিক 'কাউয়া' বেচারা তাই করলেন। নকল ময়ূর সেজে আসলদের দলে গিয়ে জয়েন্ট করলেন।
কাকের অনুভূতি, 'আহ্ কি সম্মান রে দাদা! কত সুন্দর সুন্দর ফলমুল, নদীর স্বচ্ছ পানিতে স্নান। কত মজাগো! মরা মুরগি আর জ্যান্ত মুরগি চুরি করে খাওয়ার থেকেও বেশি আনন্দ রে বাবা!' কিন্তু কয়দিন? ধোকাবাজরা একদিন না একদিন ধরা তো খাবেই। দশদিন চোরের আর একদিন তো মালিকের।
.
ময়ূরদের যে জাতীয় খাদ্য বিষাক্ত সাপ, মেকি ময়ূর (কাক) তা তো আর জানে না। ময়ূরেরা সর্বদা সাপ না পাওয়ায় তারা ফলমুল ইত্যাদি খেয়ে জীবন যাপন করে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ওই সাপের দিকেই। একদিন তারা একটা বিষাক্ত সাপ দেখতে পেল। কমান্ডারের আদেশ অনুযায়ী সাপটিকে চারদিক থেকে ঘেরাও করল। আর ওই ছোট ময়ূরকে তারা ঈশাণ কোণে থাকতে বললো।
এদিকে তারা সাপটিকে ধাওয়া করতে লাগল। কিন্তু সাপটি বড় বড় ফনা তুলিয়ে ফোপাতে ফোপাতে সেই নকল ময়ূরের দিকে যেতে লাগল। আর কাক সাহেব (নকল ময়ূর) সাপকে দেখে ভয়ে পিছুনে অগ্রসর হতে লাগল। কমান্ডার সাহেব চিল্লাইয়ে বলে, 'এই গাধার বাচ্চা পিছুনে পিছাচ্ছে কেন? খাদ্য দেখেও ভয় পাচ্ছে কেন? কারণটা কি?'
সহকারী কমান্ডার দক্ষিণ দিক থেকে জোড়ে আওয়াজ ছেড়ে বলে, 'স্যার, আগে সাপটিকে শিকার করুন তারপর তার বিচার পরে করা হবে।'
সাপ শিকারের কিছুক্ষণ পর কমান্ডার বলতেছে, 'এই ধোকাবাজ! তুই খাদ্য দেখেও ভয় পেলি কেন?
- 'স্যার আমি সাপ দেখলে ভীষণ ভয় পাই!' (মেকি ময়ূর)
- 'স্যার মিথ্যে কথা বলছে এই মোনাফিকের বাচ্চা।' (সেক্রেটারী সাহেব)
- 'হ্যাঁ স্যার ওকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে। (সহকারি কমান্ডার)
- 'এই হারামজাদা!! তোর রহস্যটা কি?' এই বলে কমান্ডার সাহেব মেকি ময়ূরের শরীরে স্ব-জোরে একটা আঘাত করল। 'কিন্তু একি? এতো চিটারের বাচ্চা কাউয়া। স্লা ধোকাবাজ, গিরগিটি, রঙ্গবাজ! একে মেরে ফেলো আগে।'
হ্যাঁ এখন কাক সাহেবের নিস্তর দেহটি খোলা ময়দানে মৃত্যু অবস্থায় পরে আছে। জি ভাই, এটাই তার কর্মের ফল। ধোকাবাজগীরী ও অতিলোভের চূড়ান্ত ফলাফল।
এতক্ষণ থেকে যে গল্পটি আপনারা পড়লেন, এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে- 'মোনাফিক তথা ধোকাবাজদের রঙ পরিবর্তন করে ধোকাবাজির সময় ক্ষণিকের জন্য।' অন্যকে ধোকা দিতে যেয়ে তারা নিজেরাই ধোকায় শিকার হবে, এটাই বাস্তবতা। শুধু বাস্তবতাই নয়, বরং আল্লাহ্ তায়ালা এদের ধোকার কথা কুরআনেও স্পষ্ট বলেছেন, ‘মুখে ঈমানের দাবী করে, এরা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর নেক বান্দাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে, মূলত এ কাজের মাধ্যমে তারা অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই ধোকা দিয়ে যাচ্ছে, যদিও এ ব্যাপারে তারা কোনো প্রকারের চৈতন্য রাখে না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-০৯)
.
-'কাওছার আজাদ'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.