![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।
অফিসের কাজ শেষ করে দ্রুত বাসায় ফিরলাম। আজকে শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছে, তাই কিছু খেয়ে দ্রুত ঘুমালেই ভাল হবে। আমার ঘুমের সাথী কোলবালিশকে নিয়ে ঘুমাতে যাব, ঠিক সে সময় আমার স্ত্রী আতকিয়া গর্জন দিয়ে বলে উঠলো, ‘আজ এই বাড়িতে আমি থাকবো না হয় সতীন কোলবালিশটা থাকবে।’ এই বলে কোলবালিশটাকে খাট থেকে মাটিতে ছুড়ে মারলো।
ভাবলাম, ছুড়ে মারারই তো কথা। কেননা, কোলবালিশ নিয়ে ঘুমাবে তারাই যারা এখনো বিয়ে করেনি। কিন্তু তাই বলে বিবাহিতরা কেন? যথাযথ হয়েছে। তাই আমিও কোনো প্রকার রাগ না করে গান গাইতে লাগলাম,-
‘বেঁচে থেকে লাভ কি বল?
তোকে ছাড়া…
এ জীবন অসহায়।’
.
এবার আতকিয়া আরো রাগান্বিত হয়ে বলতে লাগল, ‘বাহ, কোলবালিশ ছাড়া জীবন অসহায়। ও খোদা, আমি আর বাঁচতে চাই না।’
– ‘কচু, অলওয়েজ এক লাইন বেশি বুঝো।’
– ‘হ আমি ঠিকই বুঝেছি। আমি কত সুন্দর একটা বউ থাকাতে, তুমি কোলবালিশ নিয়ে ঘুমাও। আবার গানও বের করেছ, বেঁচে থেকে লাভ কি বল? মানে কি? কোলবালিশ ছাড়া মরে যাবে বুঝি? তাহলে আমাকে বিয়া করার কি প্রয়োজন ছিল?’
– ‘মাথা ঠিক আছে তো?’
– ‘আমার মাথা ঠিকই আছে। একই রুমে একই খাটে নিজের স্ত্রীকে রেখে একটা জড় বস্তুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাও। তোমার লজ্জা করা উচিৎ।’
.
আমি তার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বলতে লাগলাম, ‘তুমি খুব রাগ করেছ তাই না? হাহাহা, আস্ত পাগলী একটা! আমি বলেছি, তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অসহায় ও অচল। আর তুমি কিনা এই নিষ্পাপ বালিশটাকে দোষারোপ করতেছ। এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না।’
এবার আতকিয়া একটা মৃদ্যু হাসি দিয়ে বলতে লাগল, ‘তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি কেন বুঝ না?’
– ‘শুনো আতকিয়া, কারো ব্যক্তিগত জিনিস নিয়ে তামাশা করলেই ভালোবাসা প্রমাণিত হয় না। আপন মানুষ সুখি থাকলেই ভালোবাসার গন্ধ পাওয়া যায়।’
– ‘তা বুঝলাম। কিন্তু আমি এটাই বুঝাইতে চেয়েছি যে, বিশ্ব নবী (স.) এর ঘরে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী সব সময় না থাকলেও তার ঘরটি ভালবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল।’
– ‘দেখ, তিনি ছিলেন সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মানব। সুতরং তার সাথে আমাদের তুলনা করলে চলবে! আর আমাদেরও-বা ভালবাসার কমতি কোথায়?’
– ‘কমতি কোলবালিশ! আর এখানে তুলনা করার কথা আসলো কোত্থেকে? স্বয়ং রাসূল (স.) তো আমাদের জীবনের জন্য আদর্শস্বরূপ। তাই তার আদর্শকেই কেবল গ্রহণ করতে হবে।’
– ‘হুম্ম, তা ঠিক আছে। তবে আমার মাথায় ঢুকছে না, স্ত্রী স্বামীর সাথে ঝগড়া করে তার পুরোপুরি হক আদায় না করলে। কিন্তু কোলবালিশ নিয়ে কেন? রহস্য আছে নিশ্চিয়ই।’
– ‘হিহিহি, কোনো রহস্য নেই। রাসূল (স.) বলেছেন, যে স্বামী তার স্ত্রীর দিকে একবার ভালোবাসা তথা নেক দৃষ্টিতে তাকায়, তার উপর আল্লাহ তায়ালা দশটি করে রহমত বর্ষিত করে। কি, তুমি কি তাকাও আমার দিকে সেই দৃষ্টিতে?’
– ‘আহা রে পাগলীটা, আমাকে কত নসিহত করে! এইতো তাকিয়ে আছি তোমার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে।’
আতকিয়া অভিমান করে মুখটা পিছনে ঘুরিয়ে বলতেছে, ‘জ্বি না জনাব, এভাবে নয়! আগে কোলবালিশকে ডিভোর্স দিতে হবে তারপর।’
– ‘উফ, ঘুরে ফিরে কোলবালিশ! আচ্ছা, তোমার কোলবালিশ নিয়েই যখন এত আপত্তি, তাহলে তা অবশ্যই ত্যাগ করব। কিন্তু শর্ত আছে।’
– ‘কি শর্ত বলো। আমি মেনে নিতে রাজি আছি।’
– ‘আমার ঘুমের সাথী ছিল কোলবালিশ। সেটা তো এখন আর থাকছে না। সুতরাং আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তোমার।’
– ‘ওমা, তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিব! এটা কি করে সম্ভব?’
– ‘অভ্যাসের দাসত্ব একজন মানুষ অনায়াসে কোলবালিশ ত্যাগ করবে। এটা কি করে সম্ভব?’
– ‘উফ বল-না, কিভাবে তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিব?’
– ‘আমি জানি না।’
– ‘প্লিজ বলো…’
– ‘কেন? তুমি না সুন্দর সুন্দর গল্প, কবিতা গান, সংগীত ও দ্বীনি কথা বলতে পার। আমার বুকে মাথা রেখে তা আমাকে শুনাবে আর আমি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ব।’
– ‘অ্যাঁ, আমি পারব না।’
– ‘তাহলে আমিও আর কোলবালিশ ছাড়ব না।’
– ‘এই না না, প্লিজ। আমি রাজি।’
– ‘তাহলে শুরুটা তোমাকে দিয়েই হোক। বলো, তোমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটা সত্য ঘটনা।’
– ‘আমি বলব? এই মুহূর্তে? না না, এ হতে পারে না। প্লিজ, শুরুটা তুমিই করো।’
– ‘কোলবালিশ নিয়েই যখন এত কিছু, তাহলে কোলবালিশের ব্যাপারেই একটা সত্য ঘটনা বলি?'
– ‘কেন নয়, অবশ্যই।’
.
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলাম,- আমার বয়স তখন প্রায় ১৪-১৫ হবে। আমি তখন এই রুমে একাই ঘুমাইতাম। কুরবানীর গরু যবেহ করা ছুরি থেকে যাবতীয় জিনিসপত্র আমার রুমেই রাখা হত। একদিন অনেক রাত হয়েছে তবুও চোখের পাতায় ঘুম আচ্ছিল না। কি করবো ভেবে না পেয়ে শোয়া অবস্থা থেকে খাটের মধ্যভাগে বসে পড়লাম। কিন্তু কোন শয়তান যে আমাকে বুদ্ধি দিয়ে গেল, ‘এতবড় খাট! আর তুই মানুষ থাকিস একায়! তোর ঘুম ধরবে কিভাবে? সাইজ মতো কেটে ফেলা।’
বুদ্ধি মাথায় আসা আর কাজ শুরু। আলমারি থেকে গরু যবেহ করা ছুরি বের করে স্কেল দিয়ে মেপে কাটতে শুরু করলাম। আর তৎক্ষণে আমার রুমে শব্দ শুনতে পেল আম্মু। দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে প্রবেশ করল, ‘এই তুই এটা কাটছিস কেন?’
– ‘না মানে আম্মু। আমি একায় থাকি তাই এতবড় খাটের কি প্রয়োজন?’
– ‘তাই জন্যে তুই এভাবে কেটে নষ্ট করবি?’
– ‘তো কি করমু আম্মু? একায় একায় এতবড় খাটে আমার ঘুম আসে না।’
– ‘হুম্ম বুঝতে পারছি।’ এই বলে আম্মু আমাকে একটা কোলবালিশ এনে দিয়ে বললো, ‘এই নে তোর বউ। এখন থেকে আর ঘুমের সমস্যা হবে না।’
.
জানো আতকিয়া, আমি সেদিন নিজের বোকামি আর আম্মুর মুখে ‘বউ’ শব্দটি শুনে ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম। কিন্তু আম্মু আজ দুনিয়াতে নেই। নীরবে তার জন্য খুব কান্না করি। এখনো তার কথা খুব মনে পড়ে। আম্মু আমার মনের কথাগুলো সহজেই বুঝতে পারত। কেন জানি না, ঐ কোলবালিশটা নাকের কাছে আনলেই মায়ের হাতের পরশের গন্ধ পাই।
.
এদিকে আতকিয়া আনন্দের সহিত আমার বুকে মাথা রেখে নীরবে ঘটনাটি শুনছিলো। কিন্তু শেষের কয়েকটা কথা শুনেই হয়ত তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর বলছি, ‘হ্যালো ম্যাডাম, কাঁদছেন কেন?’
– ‘আজ নিজেকে কেন যেন অপরাধী মনে হচ্ছে।’
– ‘হাহাহা, পাগলী একটা। আজ থেকে তোমার সতীন কোলবালিশকে তালাক দিলাম। এবার খুশি তো?’
– ‘না…’
– ‘কেন?’
– ‘কোলবালিশ নিয়ে এত বিশাল হৃদয়ভেদী ইতিহাস, এটা আমি জানতাম না। প্লিজ, আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন।’
– ‘ধুর পাগলী, কোলবালিশের হিসেব বাদ দাও তো। কারণ, এটা অপত্নীকদের সঙ্গী, কিন্তু উদ্বাহিতদের জন্য নয়।’
– ‘হয়তো…’
– ‘এবার একটু হাসবে?’
– ‘না, তবে একটা কবিতা বলি?’
– ‘অবশ্যই।’
.
এবার আতকিয়া কবিতা আবৃতি করতে লাগলো,-
‘ওহে অবসন্না দূর্বলা কোলবালিশ,
তোর বিরুদ্ধে করেছি কত নালিশ।
পেলব দেহ বলিষ্ঠ বাহু বন্ধনে,
জড়িয়ে ধরে ঘুমায় খানিক লগ্নে।
তোর সুনরম গাত্রে চরণ লুটায়ে,
এভাবে কেটে কত রাত্রি নির্ঘুমে।
নিজের কষ্টগুলো সব চাপা রেখে,
অনূঢ়দেরকে করেছ তুমি সিক্তে,
ঘুমের রজনী কেটে যায় মুহূর্তে।
ওহে অবসন্না দূর্বলা কোলবালিশ,
তোর বিরুদ্ধে করেছি কত নালিশ।
তুই অবিবাহিত পুরুষদের মিত্র,
কিন্তু সেই পুরুষের স্ত্রীদের শত্রু।
তোকে জড়িয়ে ঘুমায় যখন স্বামী,
স্ত্রী তখন ক্ষোভে বকে অবিরত।
ওহে অবসন্না দূর্বলা কোলবালিশ,
তোর বিরুদ্ধে নাই কোনো নালিশ,
তুই শুধু অনূঢ়দের সাথেই থাকিস।’
.
লেখা : কাওছার আজাদ (কচু)
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:০৫
কাওছার আজাদ বলেছেন: সময় দিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৬
প্রামানিক বলেছেন: পুরো ঘটনাটাই মজার, কবিতাও সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ