নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ডাইনী বউ’

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৪

বিয়ের পর থেকে আর ফেসবুকে আসা হচ্ছে না। মনটা ফেসবুকের জন্য কেমন যেন করছে। রুম থেকে বের হয়ে ছাদে উঠলাম। এ সুযোগে ম্যাসেঞ্জার ওপেন করলাম। অনেক জন অনেক টেক্সট করেছে। এক বন্ধু মেসেজ করেছে, ‘হ্লা ফেসবুকে আসবি কবে? সদ্য বিয়ে করে ভুলে গেলি নাকি? সারা দিন-রাত নতুন বউ নিয়ে ব্যস্ত থাকিস।’
তার মেসেজটা পড়ছি আর হাসছি। আহা, অনেক দিন পর আজকে শান্তিতে ফেসবুক চালাচ্ছি। কিন্তু হুট করে বউয়ের ফোন থেকে কল আসলো। রিসিভ করলাম, ‘হ্যাঁ, কি হয়েছে বলো?’
বউ বাঘের মতো গর্জন দিয়ে বলে উঠল, ‘তুমি কোথায়?’
ভেবেছিলাম মিথ্যা বলব। কিন্তু নতুন বউ বলে কথা! কথা-বার্তা শুনেই বোঝা যাচ্ছে ডাইনী টাইপের। তাই ভয়ে ভয়ে সত্যটাই বললাম, ‘আমি ছাদে আছি।’
– ‘কি, তুমি ছাদে কেন? তাড়াতাড়ি রুমে চলে আস।’
– ‘ঠিক আছে যাচ্ছি। তবে বলবে না কি হয়েছে?’
– ‘আরে জলদি আস তো।
.
আমি ফোনকলটা কেটে দিলাম। আর হলো না ফেসবুক চালানো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আল্লাহ, এ কোন বউ এনে দিলি? নতুন অবস্থায় যে ডাইনী, পুরাতুন হবার তো আরো অনেক বাকি!’
আমি আস্তে করে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলাম, ‘আচ্ছা এখন বলো কি হয়েছে?’
– ‘ফোনটা এদিকে দাও দেখি।’
আমি কিছু না ভেবেই তার হাতে দিলাম।
– ‘এটা কি হচ্ছে ফোনে?’
– ‘কি?’
– ‘কি মানে, দেখো কি হচ্ছে।’
আমি তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দেখি, ফেসবুক থেকে এখনো বের হইনি। মানে ফেসবুক থেকে বের না হয়েই তার কাছে এসেছি।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘না, মানে কিছু না। তুমি ঘুমাও।’
সে কোনো কথা না বলে বাধ্য বউয়ের মতো ঘুমাতে গেল। তার সাথে বিয়ে হওয়া অবধি গৃহবন্দীর মতো আছি। ফেসবুকেও ভালো করে আড্ডা দেওয়া হয় না। আর হবেই-বা কি করে? প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতেই থাকে। এরই মধ্যে যদি টেবিলের উপর পড়ে থাকা অসহায় ফোনটাকে হাতে নিতে যাই, ঠিক সেই মুহূর্তেই তার কথামতো আবার ফোনটাকে টেবিলেই রাখতে হয়। আগে মনে করছিলাম, বৈবাহিক জীবন শান্তিময়। কিন্তু এখন বুঝতেছি, ওসব ভাবনা মাত্র।
.
যাহোক, বউ মনে হয় এবার ঘুম এসেছে। তাই আস্তে করে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে প্রবেশ করলাম। এ কয়দিনে অনেকেই অনেক ধরনের মেসেজ করেছে। এক বন্ধু তো আমাকে মেসেজে স্বার্থপর বলেই ছেড়েছে। আমি তার মেসেজের রিপ্লে দিলাম, ‘আসলে বন্ধু, আমি খুব ব্যস্ত। তাই হয়তো আর আগের মতো ফেসবুকে আসাতে পারি না।’
– ‘ব্যস্ত আর কি থাকবি! নতুন বিয়ে করলে সবাই বউ নিয়েই ব্যস্ত থাকে, এটাই স্বাভাবিক।’
– ‘তুই বিয়েতে আসিসনি কেন? সেটা আগে বল। শালা, তুই তো বড় স্বার্থপর।’
– ‘স্যরি রে দোস্ত। তোকে তো সেদিন বললামই আমার সমস্যাটার কথা, এর পরও কেন মন খারাপ করে রয়েছিস? আর আমার পরিবর্তে আমার ছোট ভাই তো গিয়েছিল।’
– ‘আচ্ছা, বাদ দে। ফ্রি থাকবি কোন দিন?’
– ‘কেন?’
– ‘যেদিন ফ্রি থাকবি সেদিন আমাদের বাসায় আসবি। ওকে?’
– ‘উ-হুঁ, ভাবীকে নিয়ে তুই আগে আসবি।’
– ‘ধুর শালা…’
– ‘অযথা রেগে যাচ্ছিস। আচ্ছা, ভাবী কেমন আছে রে?’
– ‘ধুর, ওই পেত্নীর কথা আর বলিস না।’
– ‘কেন, কি হয়েছে আবার? নতুন বউকে পেত্নী বলার কারণ কী?’
– ‘আরে নাহ, এমনিতেই বললাম। বাদ দে ওসব দুঃখের কথা।’
– ‘দুঃখের কথা মানে? ওহো, বুঝেছি…’
– ‘তুই কচু বুঝেছিস।’
.
এদিকে আমার বউ পাশে শোয়া আবস্থায় থেকে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে লাগল, ‘বাহ, দারুণ তো! বন্ধুর সাথে সুন্দর চ্যাটিং হচ্ছে। আমকে নিয়ে বেশ মজা করা হচ্ছে, তাই না?’
আমি চ্যাটিং করছিলাম আর সে গুপ্তচোরের মতো সব দেখেছে নিশ্চয়ই। ধুর, এবারও হাতে-নাতে ধরা খেয়ে গেলাম। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে বললাম, ‘না মানে ইয়ে, তুমি এখনো ঘুমাওনি?’
– ‘আমি পেত্নী, হ্যাঁ? তো থামলে কেন? মেসেজ লিখে রিপ্লে দাও।’
– ‘দেখো আমার ভুল হয়েছে। আর কোনো দিন এরকম হবে না।’
– ‘যথেষ্ট হয়েছে! এখন ফোনটা আমাকে দিয়ে জলদি ঘুমিয়ে পড়ো।’
– ‘কেন? তুমি যা বলবে তাই শুনতে হবে নাকি?’
– ‘অবশ্যই। তা না হলে…
– ‘কি করবে? যতই কিছু বলি না জন্য মাথার উপর উঠে গেছ।’
– ‘অত কথা শুনতে চাই না। তুমি ফোনটা দিবে কিনা সেটা বলো।’
– ‘আসলেই তুমি একটা ডাইনী। তোমাকে বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছি।’
– ‘তুমি ভুল করো আর যাই করো, সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়ছি না। দাঁড়াও, শাশুমাকে ডেকে আনছি।’
– ‘কি, এই না না। তুমি যা বলবা আমি তাই শুনব। প্লিজ, তবুও আম্মুকে ডাকবে না। কেননা, সে তোমার থেকেও আরো বড় ডাইনী।’
– ‘কি, আমি ডাইনী?’
– ‘না, তুমি খুব ভালো।’
– ‘তাহলে আম্মাকে বড় ডাইনী বললা কেন? এ কথা গিয়ে তাকে যদি বলে দেই?’
– ‘তাহলে তুমি বিধবা…’
– ‘মানে কি?’
– ‘আমি কবরে চলে যাব। না মানে, তোমার শাশুমা এসে পাইকারী হারে পিটুনী দিবে। আর হাতের কাছে ঝাঁটা থাকলে তো কথাই নেই।’
– ‘আহা রে বেচারা! থাক, আর ঝাঁটার থেরাপী খেতে হবে না। এখন ফোনটা আমাকে দিয়ে শীঘ্রই ঘুমিয়ে পড়ো।’
আমি তার হাতে ফোনটা দিয়ে দিলাম। সে ফোনটা হাতে নিয়েই পাকা মেঝেতে আছাড় মারলো। ব্যস, মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে তছনছ হয়ে গেল। আমি আর কিছুই বললাম না। ভদ্রলোকের মতো পুনরায় শুয়ে পড়লাম। মনে মনে বলতে লাগলাম, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। ফোনটা ভেঙে ফেলে সে নিশ্চয়ই সীমাতিক্রম করেছে। সে কোন অপরাধে ফোনটা ভেঙে ফেললো, তা আমার মাথায় ঢুকছে না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, ভেঙে ফেলেছে বেশ করেছে। আর ফোনই ব্যবহার করব না।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, ভাঙা ফোনের টুকরোগুলো মেঝে থেকে পরিষ্কার করেছে। আমি তার সাথে কোনো কথা না বলেই অফিসে চলে গেলাম। এভাবে দুদিন চলে গেল, তবুও তার সাথে কোনো কথা বলিনি। পরের দিন আফিস থেকে রাত ১০টায় বাসায় ফিরলাম। সে শার্টের কলার ধরে বলতে লাগল, ‘স্যরি, আমার ভুল হয়েছে। প্লিজ, ক্ষমা করে দাও। আমার সাথে কথা বলছ না কেন?’
– ‘আশ্চর্য, শার্টের কলার ধরে কেউ স্যরি বলে নাকি?’
– ‘তাহলে পা ধরব? ওকে, নো প্রোবলেম…’
– ‘তোমার মাথা ঠিক আছে তো?’
– ‘অবশ্যই আমার মাথা ঠিক নেই। কেননা, দুদিন থেকে তুমি আমার সাথে কথা বলছ না। আমার আর সহ্য হচ্ছে না। প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
– ‘ঠিক আছে, এবার একটু হাসো।’
– ‘অবশ্যই হাসব। তবে এই টাকাগুলো আগে নাও। ১৫ হাজার আছে।’
– ‘টাকা নেব কেন? আর এগুলো তুমি কোথায়ে পেলে?’
– ‘কালকেই মার্কেটে গিয়ে ভালো ব্রান্ডের একটা ফোন কিনে নিবা। আরো টাকা লাগবে?’
– ‘আমি ফোন ইউজ করব না।’
– ‘তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমাও করোনি। প্লিজ, তুমি ফোন কিনবা। তোমার ফোন অফ থাকলে অনেক সমস্যা হবে।’
– ‘ঠিক আছে, কালকে কিনে নিব। কিন্তু তোমার টাকা দিয়ে কেন? এই টাকা তুমি কোথায় পেলে?’
– ‘আরে ধুর, বিয়ের আগে কোচিং সেন্টারে টিউশনি করতাম না? সেই টাকা।’
– ‘ও আচ্ছা। তো রেখে দাও। এগুলো তোমার কাজে লাগবে। আর আমি এত বেশি দামি ফোন কিনব না। কালকে আমার টাকা দিয়েই একটা নরমাল ফোন কিনে নিব।’
– ‘আমি ছোটো থেকেই জেদি মেয়ে। যা বলি তাই করি। সো, বেশি কথা না বলে টাকাগুলো তোমার কাছেই রেখে দাও। আর অবশ্যই ভালো ব্রান্ডের ফোন কিনবা।’
– ‘ঠিক আছে জনাবা, এবার কিছু খেতে দিবা, নাকি না খেয়েই ঘুমাব?’
– ‘হিহিহি, কেন নয়? তোমার প্রিয় খাবার কচুশাক রেধেছি।’
– ‘সত্যি?’
– ‘আবার জিগায়?’
– ‘আজকে খুব ভালো লাগছে। সত্যিই তোমার ভিতরটা অনেক সুন্দর, যদিও ক্যারেক্টারটা ডাইনীর মতো।’
– ‘আবার…’
– ‘উফ, চুল ছাড়ো বলছি।’
– ‘আর একবার ডাইনী বললে তোমার মাথার চুল একটাও থাকবে না। একেবারে টাকলু হয়ে যাবা।’
– ‘হাহাহা, তখন লোকে তোমাকে টাকলুর বউ বলে ক্ষেপাবে।’
– ‘আমি কিন্তু…’
– ‘কিন্তু কি?’
– ‘কচু।’
এভাবেই চলছে দিন-কাল। জেদ, রাগ ও ভালোবাসা- এই তিনটি গুণে সে গুনান্বিত। আমাকে যতটা ভালোবাসে, এর চেয়েও দ্বীগুণ শাসন করে। বেচারী এই অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তার প্রেমে আমাকে বশীভূত করেই ছাড়ছে।
.
বউ আজ তার বাপের বাড়ি তথা আমার শ্বশুরালয়ে চলে গেছে। তার অনুপস্থিতে তার নামে এত কিছু লিখতে পারলাম। তাই এসব গোপন তথ্য আমার বউয়ের কানে ফাঁস করবেন না। সে যদি জানতে পারে এসব আমি লিখেছি, তাহলে আমার অবস্থা কি হবে আল্লাহই ভালো জানে। কেননা, বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের মতো- সৃষ্টিকর্তার পর বউ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না।
.
লেখা : কাওছার আজাদ (কচু)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.