নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘হিংসার অনলে দগ্ধ আলেমসমাজ, অতঃপর...’

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩০

‘তুই তিন কারণে কাফের, তুই পাঁচ কারণে কাফের, তুই দশ কারণে কাফের, তোর বাপ কাফের, তোর দাদা কাফের, তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী কাফের। তুই বাটপাড়, তুই চিটার, তুই নাস্তিক, তুই মুনাফিক, তুই মুর্তাদ, তুই ফাসেক, তুই ব্রিটিশদের পা-চাটা গোলাম, তুই অমুক দলের প্রডাক্ট, তুই ইহুদী ও খ্রিস্টানের দালাল।’ – আমার রুমমেট তানযীম পড়ার টেবিলে বসে এভাবে বকবক করছে।
.
ইদানীং তার কি যে হয়েছে- শুধু উদ্ভট অবান্তর সব কথা প্রসব করছে। কালকে ডিনার করার সময় হুট করে সে একটা অবান্তর প্রশ্ন করে বসল, ‘আচ্ছা কাওছার, বলতো- বাচ্চাওয়ালী মা মুরগিগুলো বাচ্চাদেরকে নিয়ে চলা-ফেরা কিংবা হাঁটার সময় কক-কক-কক করে কেন? এবং মা মুরগির সাথে সাথে তার বাচ্চাগুলোও কেন চেঁও-টেঁও-চেঁও কেন করে? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি হতে পারে?’
সে এমন মুহূর্তে এসব কথা বলছিল, যখন আমি কয়েক লোকমা ভাত খেয়ে কেবল পানির গ্লাস মুখে দিয়ে পানি গিলছি। ব্যস, তার কথা শুনে আমি হাসি চেক দিতে পারলাম না- মুখে যেটুকু পানি ছিলো তা নাক দিয়ে বের হলো। সে আমার মাথার ঠিক মাঝ বরাবার তার হাতের তালু দিয়ে মৃদুস্পর্শ থাপড়াতে লাগলো, যাতে মুখগহ্বরে ওঠা পানি দ্রুত বেরিয়ে যায়।
.
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ‘ভাই রে, তোর হয়েছেটা কি বল তো! তুই রিসেন্টলি কেমন যেন মডিফাই পার্সন হয়ে যাচ্ছিস। সত্যিই আমি অবাক হয়ে...’
আমার কথা পুরোপুরি শেষ হতে না হতেই সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আবার বলতে লাগলো, ‘জানিস কাওছার, ২০ তারিখে আমার দুলাভাই সিঙ্গাপুর থেকে দুই মাসের জন্য দেশে আসবে। তিনি আজকে সন্ধার আগে কল দিয়ে হাসিচ্ছলে জানতে চাইলো যে, ‘তানযীম, তোর কিছু (গিফ্ট-ট্রিট) লাগবে কি-না?’
প্রত্যুত্তরে বলেছি, ‘ভাইয়া, আমার কিচ্ছু লাগবে না, শুধু সিঙ্গাপুর থেকে দুটো খেলনা ভল্লুক (Teddy Bear) নিয়ে আসলেই অনেক খুশি হবো। একটা আপুর জন্য, আর একটা আমার জন্য।’
– ‘হাহাহা, তোর আপু এবং তুই কি এখনও বাচ্চা মানুষ যে, তোদের জন্য টেডিবিয়ার নিয়ে যাবো!’
– ‘তাহলে থাক, আনা লাগবে না। আমি কিন্তু প্রথমেই বলেছি যে, আমার কিচ্ছু লাগবে না।’
– ‘কারো কাছ থেকে কিছু নিতে হলে এতো কমদামি জিনিস নিবি কেন? বল তোর প্রিয় ফোনের নাম কি?’
– ‘বললাম তো, আমার লাগবে না কিছু।’
– ‘ঠিক আছে, আজকে সো-রুমে গিয়ে তোর জন্য একটা পারফেক্ট ফোন (Xiaomi Redmi Note 7) নিয়ে রাখব। কি, এবার খুশি তো?’
– ‘না, আমার এতো দামি ফোন লাগবে না। আমার টেডিবিয়ার চাইই...’
– ‘ধুর শালা, তুই আস্ত একটা উজবুক! ভার্সিটিতে পড়ুয়া স্টুডেন্ট হয়ে টেডিবিয়ারই যখন তোর খুব প্রিয়! ঠিক আছে, তাই নিয়ে যাবো। Bye!’
.
‘এই বলে দুলাভাই ফোন কেটে দিলো। হ্যাঁ, আমি জানি- তুই নিশ্চয়ই আমাকে এখন প্রশ্ন করবি যে, ‘আপসোস! এতো দামি জিনিসটাকে হাতছাড়া করলি! আচ্ছা, তুই টেডিবিয়ার দিয়ে কী কচুটাই-বা করবি?’ – তানযীম আমাকে বলল।
আমি একটুখানি অবাক হয়ে বললাম, ‘হুঁ, তাই তো! তুই টেডিবিয়ার দিয়ে কী করবি? নাকি তোর প্রেমিকা মিতুর জন্য? হাহাহা!’
– ‘তোর ভাবনা সঠিক না-ও হতে পারে। আমার কোনো প্রেমিকা ছিল না এবং বর্তমানও নাই। মিতু জাস্ট আমার ক্রাশ ছিল। এজন্য তার ফেসবুক আইডি থেকে কিছু পিকচার মেমোরিতে ডাউনলোড দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু তোর সংস্পর্শে এসে কিছু হুজুরের ওয়াজ শুনে সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। আমার ফোনের ১৬ জিবি মেমোরিতে যত্তো পছন্দের গান-মুভি ছিল, সব ডিলিট করেছি। দেখ, এখন আমার মেমোরি কার্ড ইসলামিক সংগীত ও স্বনামধন্য ইসলামিক স্কলারদের লেকচার দিয়েই ভর্তি। আমি এখন নিয়মিত সালাতও আদায়...’
– ‘এই হয়েছে হয়েছে, থাম তো! তুই এতক্ষণে যেসব কথা বললি, এগুলো আমার অজানা নয়। আচ্ছা, বলতো- তুই কথা বলতে গেলেই এরকম ছোট-খাটো একটা লেকচার দিয়ে ফেলিস কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি না দিয়ে আউট অ্যব কনটেন্টসে কথা বলিস! হাউ খাউ? তোর হয়েছেটা কী?’
– ‘হাহাহা, তুইও তো এই মুহূর্তে ছোট-খাটো একটা লেকচার দিয়ে ফেললি।’
– ‘Enough is enough! I don't want to talk to you anymore. let me sleep now. If you can, call me at 4:00 AM early in the morning. Good Night.’
.
এটা ছিল কালকের কাহিনী। কিন্তু আজকে সে পড়ার টেবিলে বসে– ‘তুই তিন কারণে কাফের, তুই পাঁচ কারণে কাফের ও ইত্যাদি...’ বলছে কেন? কাকে বলছে? আর কেনই-বা বলছে? আমাকে আবার বলছে না তো! ধুর, কি সব ছাইপাস ভাবছি! ভাবনার সাগর থেকে বের হয়ে গলা খাকারি দিয়ে রুমে প্রবেশ করলাম। সে গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করলো, ‘কি রে, টিউশনি থেকে কখন আসলি?’
– ‘এই মাত্র আসলাম। কী পড়ছিস?’
– ‘ওই যে, পরশুদিন যে বইটা আমাকে পড়তে দিলি- নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষার বেসিক বইটা পড়ছি। অসাধারণ একটি বই রে!’
– ‘ও আচ্ছা। তো কিছুক্ষণ আগে আওয়াজ করে কী সব জিকির জপছিলি যেন?’
– ‘না মানে, কিচ্ছু না। তোর দেয়া এই বইটাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসও সংযোজন করে দেয়া আছে দেখছি। তন্মধ্যে কয়েকটি হাদিস হলো :
রাসূল (স.) বলেছেন, ‘পরস্পর দুশমনি করো না। পরস্পর হিংসা পোষণ করো না। একে অন্যের ছিদ্রান্বেষণ করো না। আল্লাহ তায়ালার বান্দা সকলেই ভাই ভাই হয়ে যাও।’ [১]
‘যে নম্রতা হতে বঞ্চিত সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।’ [২]
‘খাঁটি মুসলমান ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ হতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ [৩]
‘মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং হত্যা করা কুফুরী।’ [৪]
‘হিংসা হতে দূরে থাক। কেননা, হিংসা নেকীকে ধ্বংস করে দেয়। যেমন, আগুন শুকনা কাঠকে।’ [৫]
এবার সে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, ‘একটু ভেবে দেখ কাওছার, আলোচ্য এই ৫টি হাদিসের আমল সাধরণ মানুষ তো দূরের কথা, আমাদের আলেমগণের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া দায়। কিছুক্ষণ আগে আমি যেসব জিকির জপছিলাম, যা আঁড়ালে থেকে তুইও হয়তো শুনেছিস। তাহলে খেয়াল করে দেখ, ওসব হিংসাত্মক গালিবাজি জিকির কিন্তু আমার নয়; কথিত কিছু আলেমদের মুখ থেকে সংগৃহীত। এক আলেম অন্য আলেমকে সহ্য করতে পারে না। এক আলেম অন্য আলেমের দোষ খুঁজে বেড়ায়। তুই কাফের, তুই মুনাফিক, তুই ফাসেক ইত্যাদি অকথ্য সাধু ভাষায় গালিগালাজ করে। বিনয় নম্রতা নামক গুণটি কথিত কিছু আলেমদের মাঝে একেবারেই নেই। হিংসার অনলে একেকজন যেন পুড়ে মরছে। কেউ ভুল করলে তা শুধরে না দিয়ে পাব্লিকপ্রেসে গালিবাজি কিংবা ফতোয়াবাজি করতে তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তুই বল কাওছার, আলোচ্য হাদিসরগুলোর আলোকে বিচার করলে এসব আলেমদেরকে বয়কট করা ছাড়া উপায়ন্তর থাকে? আচ্ছা, এসব হাদিসগুলো কী সেসব আলেমরা জানে না? কি জানি, হয়তো জানে না। হায় আপসোস, আলেমরাই যদি এভাবে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে তবে সাধারণ মানুষ কি করবে?’
– ‘সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি করবে।’
– ‘এক্স্যাক্টলি, ইউ স্যে রাইট বস। এজন্যই তো তোমাকে গুরু বলি।’
– ‘এতক্ষণে যে বয়ান করলি, আমার গুরু তো তুইই মিয়া। এ্যনিওয়ে! তো গুরুজি, এখন কি বলা যাবে- টেডিবিয়ার তোর কাছে কেন এতো প্রিয়?’
– ‘দ্যাটস সিম্পল! টেডিবিয়ারকে চেয়ারে বসে রাখব এবং বলব- তুই কাফের, তুই মুনাফিক, তুই ফাসেক ও ইত্যাদি...। দ্যাটস ইম্পরট্যান্ট টু ক্যীপ প্রাক্টিসিং টু বি গুড এ্যট গালি।’
– ‘হাহাহা, সাংঘাতিক বুদ্ধি তো! তা গালি প্রাক্টিসি করবি, এটা তো Talking Tom দিয়েও পারতি।’
– ‘কিন্তু Talking Tom তো পাল্টা গালি আমাকেও দিবে। কারণ, এর মধ্যে রোবোটিক্স সত্ত্বা আছে।’
– ‘Wow, what a outstanding intellect! Your intelligence and the power of flexible thinking should be appreciated.’
.
আমার কথায় সে প্রশংসায় মুখরিত না হয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ হাসি দিয়ে বলতে লাগলো, ‘১০০জন সাধারণ মানুষ ইসলামের যত ক্ষতি করতে পারে, তার চেয়েও বেশি ক্ষতি করতে পারে মাত্র ১জন আলেম ব্যক্তি। কারণ, একজন আলেমের পিছনে শতাধিক শয়তান লেগে থাকে। শয়তানের সাথে যুদ্ধ করে যে আলেম জিততে পারে সে-ই প্রকৃত আলেম। এরাই হলো নবীগণের উত্তরসূরী। আর যে হেরে যায় সে শয়তানের থেকেও নিকৃষ্ট হয়ে যায়। এরা হলো শয়তানের খালাতো ভাই।’
.
আমি এক গ্লাস পানি এনে তার সামনে দাঁড়ালাম। আমার বাম হাত তার কাঁধের উপর রেখে ডান হাত দিয়ে পানিভর্তি গ্লাসটা তার হাতে দিয়ে বললাম, ‘নে দোস্ত, পানি পান কর।’
সে পানি পান করছে। আর আমি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি- কিছুদিন আগেও যে ছেলেটা ধর্মপালনে উদাসীন ছিল, আজ সে বিশ্বাসীদের মধ্য হতে একজন।
.
-"কাওছার আজাদ"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.