নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“কচুরিপানা”

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৮

‘কচুরিপানা গরু খেতে পারলে আমরা খেতে পারব না কেন?’ হুঁ, বেটা মুন্ত্রী সাহেবের সাহস কত্তোবড়! আমাদেরকে গরুর সাথে তুলনা করছে! মানুষ কি কখনো গরু হতে পারে? কী জানি! হতেও পারে। বাজারে গরু ও গরুর মাংসের যে চড়া মূল্য! সেক্ষেত্রে মাথা মোটা মানুষগুলো যদি গরুর কাতারে যায়, তবে গরুর বাজার কিছুটা সস্তা হলেও হতে পারে।
পরিকল্পনা মুন্ত্রী (এম এ মান্নান) সাহেবের মূল বক্তব্য ছিল, ‘কচুরিপানা নিয়ে কিছু করা যায় কি-না?’ অর্থাৎ কচুরিপানাকে কাজে লাগানো যায় কি-না, এ বিষয়ে গবেষণা করা। আমি মূলত মুন্ত্রী সাহেবের এই বক্তব্য শুনেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। মন্ত্রী সাহেব মানুষকে গরু কিংবা ছাগলের সাথে তুলনা করলো কি-না, এটা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নাই। আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম– আমি মূলত কচু ও কচুপাতা নিয়ে গবেষণা করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ‘কচু ও কচুরিপানা’ নাম দুটোতে অনেকাংশ মিল আছে– যদিও কাজে-গুণে অনেক তফাৎ। কিন্তু ঘটনাক্রমে দুদিন থেকে কচুরিপানা নিয়েও অনেক গবেষণা করেছি। নিম্নে কচুরিপানা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো,–
.
(ক) ‘Water hyacinth control’ বা কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী যথেষ্ট সোচ্চার :
১। কচুরিপানা দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদগুলির মধ্যে হতে একটি। এর প্রজননের প্রাথমিক মাধ্যমটি রানার বা স্টোলনগুলির মাধ্যমে হয়, যা শেষ পর্যন্ত কন্যা গাছের গঠন করে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ উৎপাদন করে যা প্রায় ৩০ বছর অবধি কার্যকর থাকে। এদের দ্রুত পুনরুৎপাদন করার ক্ষমতার কারণে জনসংখ্যা প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে যায়। উত্তর আমেরিকাতে কচুরিপানা একটি আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসাবে বিবেচিত হয়।
.
২। বাংলাদেশে ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা আইন জারি করা হয়, যার মাধ্যমে বাড়ির আশেপাশে কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানে অংশ নেয়াকে নাগরিক কর্তব্য ঘোষণা করা হয়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সবগুলো দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাকে কচুরিপানার অভিশাপ-মুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক নির্বাচনে বিজয় লাভ করে তার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং কচুরিপানার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালান।
.
৩। ভিক্টোরি হ্রদের মতো বিভিন্ন নদীতে অত্যধিক কচুরিপানা থাকার কারণে মাছ ধরতে গিয়ে মৎস্যজীবীরা সমস্যায় সম্মুখীন হয়। জলপরিবহনে বাধা সৃষ্টিসহ আরও অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হয়। কিছু প্রজাতির মশার লার্ভা কচুরিপানার আগাছার উপস্থিতি দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশে প্রজন্ম বৃদ্ধিতে সাফল্য লাভ করে। নদীতে ঊর্ধ্বস্থ কচুরিপানা থাকার ফলে মৎস্য ও অন্যান্য প্রাণীকুলের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। এজন্য জলজ প্রাণীবৈচিত্য রক্ষার্থে কচুরিপানা হঠাও (Water hyacinth control) আইন সব দেশেই জারি আছে।
.
(খ ) ‘নবায়নযোগ্য কাঁচামাল ব্যবহার ও প্রাকৃতিক রূপান্তর পরিকল্পনা’– গ্রিন কেমিস্ট্রির এই দুটি মন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে গবেষকরা কচুরিপানার মাহাত্ম্য প্রমাণ করেছে। পৃথিবীব্যাপী যখন ‘কচুরিপানা হঠাও’ স্লোখানে মুখরিত, সেই লগ্নে একদল গবেষক কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করা যায় কিনা, এ চিন্তায় ব্যস্ত। তাহলে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কচুরিপানার ফজিলত :
১। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ কচুরিপানা দিয়ে নিম্নমানের কাগজ, ফোল্ডার বক্স, ঝুড়ি, মাদুর, ফাইবার বোর্ড ও বিটুমিনাইজ বোর্ড তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এই জাতীয় উদ্ভিদের কান্ড থেকে প্রাপ্ত ফাইবারটি দিয়ে সুতা ও দড়ি তৈরি করা যায়। এমনকি বাংলাদেশের মেনোনাইট সেন্ট্রোল কমিটিও কয়েক বছর ধরে কচুরিপানা থেকে কাগজ উৎপাদন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছে।
.
২। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কচুরিপানায় (
hyacinth) থাকা পুষ্টিগুণগুলো অনুধ্যায়ী বা জাবর-কাটা প্রাণীদের জন্য উপলব্ধ। চীনের শূকর চাষীরা কচুরিপানা, উদ্ভিজ্জ বর্জ্য, চালের ব্রান, কোপড়া পেষ্টক ও লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে শূকরের উপযুক্ত খাদ্য তৈরি করে। একইভাবে ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় কচুরিপানাকে ভাতের ব্রান ও ফিশমিল দিয়ে সিদ্ধ করে শূকর, হাস এবং পুকুরে মাছের খাবারের সাথে মিশানো হয়। তবে কচুরিপানায় উচ্চজল ও খনিজ সামগ্রী থাকার কারণে এটি সব প্রাণীর জন্য খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত না-ও হতে পারে। কিন্তু কম্বোডিয়ার বাসিন্দারা কচুরিপানাকে নিজেদের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে। অর্থাৎ তারা কচুরিপানার পাতা, লতি, ফুল ও মাছ দিয়ে অসাধারণ একটি মাছের স্যুপ তৈরি করে খায়।
.
৩। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পশুর খাদ্য সরবরাহে প্রায়শই কম থাকে। এজন্য বহুকাল থেকেই মানুষ কচুরিপানাকে গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। পচা কচুরিপানাকে কম্পোস্ট সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
.
উপরিল্লিখিত আলোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, “কচুরিপানা মানুষ ও গরু সবাই খেতে পারবে, এতে কোনো সমস্যা নাই। তবে এটার পুষ্টিগুণগুলো যেহেতু অনুধ্যায়ী বা জাবর-কাটা প্রাণীদের জন্য উপলব্ধ, তাই মানুষদের না খাওয়াই উচিত। কিন্তু কচুরিপানা দিয়ে যে আমরা বহুত কিছু করতে পারি, তা উপরে বিশদ আলোচনা করেছি। পৃথিবীর কোনো কিছুই তুচ্ছ নয়, প্রত্যেকে ‘কিছু’ই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সেরা। এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা নিশ্চয়ই খামাখা নয়; বরং সব সৃষ্টিই পৃথিবীর বুকে অলংকার স্বরূপ।”
.
–“কাওছার আজাদ”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.