![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।
এ মাসে নতুন একটা টিউশনি পেয়েছি। গৃহশিক্ষক হিসেবে তৃতীয় শ্রেণীর (কিন্ডারগার্টেন) বাচ্চাকে পড়াতে হবে। আমার দায়িত্ব বাচ্চাকে ক্লাসের পড়া পড়াতে হবে। তো প্রথম দুদিন পড়ানোর পাশাপাশি বাচ্চার সাথে ফ্রি হয়ে নিলাম। বাচ্চাকে প্রথমেই বলে দিয়েছি, ‘আমি তোমার বন্ধুর মতো। আমাকে পড়া-শুনা বিষয়ক যাবতীয় প্রশ্ন নির্ভয়ে করবা। কোত্থাও না বুঝলে বারবার বুঝে দিতে রাজি আছি। পড়ার জন্য কখনই তোমার গায়ে হাত তুলব না—যদিও পিটানোর জন্য তোমার আম্মু অনুমতি দিয়ে রেখেছে। তবুও তুমি পড়া না পারলে পিটাবো না। কেননা, পড়ানোর সময় বাচ্চাদেরকে পেটালে তা শরীরে নয়; বরং ব্রেণে গিয়ে আঘাত লাগে। তবে হ্যাঁ, শুনে রাখো– দুষ্টুমি আর ফাঁকিবাজি করলে কিন্তু আমার কাছে কোনো ছাড় নাই।’
– “জি ঠিক আছে স্যার। দুষ্টুমি করব না। এরপরও যদি পিটান, তবে আপনাকে ফ্রিজের ভিতর ঢুকিয়ে রাখব।”
– “কী বললা তুমি?”
– “কিচ্ছু না স্যার।”
– “তোমাদের স্কুলের শিক্ষকরা খুব পিটায়, তাই না?”
– “পড়ার জন্য তেমন পিটায় না। তবে একটা স্যার আছে। আমার মাথায় ধরে না, ওই স্যারটা শুধু আমাকেই পিটায় কেন? একদিন ক্লাসে এসে সবাইকে হেড ডাউন করতে বলেছে। আর আমি হেড ডাউন করে ব্যাগ থেকে বই বের করতে যাচ্ছিলাম। এজন্য আমার পিঠে ২০ বেত্রাঘাত মেরেছে।”
– “ঠিকই করেছে। তুমি স্যারের কথাকে অমান্য করছ জন্য মেরেছে।”
– “তা ঠিক আছে। কিন্তু ওই স্যার শুধু আমাকেই মারে কেন? অন্য ছাত্ররাও তো দুষ্টুমি করে, তাদেরকে তো পিটায় না।”
– “হুম, ভাবার বিষয়।”
– “আর এজন্যই একদিন ওই স্যারকে উচিত শিক্ষা দিয়েছি।”
– “মানে?”
– “স্কুলে পিটি করানোর সময় পিছন থেকে মৌমাছি লাগাই দিছি। সেদিন বুঝেছে মৌমাছি কামড়ালে কেমন লাগে।”
– “সাংঘাতিক তো তুমি! তখন মৌমাছি পেয়েছিলা কোথায়? আর তোমার স্যার কি তা টের পায়নি?”
– “আমাদের আমগাছে মৌমাছি বাসা বেঁধেছিল, তা ভাঙার পর সেখান থেকে পলিথিনে করে ধরে নিয়ে গেছিলাম। আর ওই স্যার বেটা টের পাবে কেন? টের পেলে তো আমার অবস্থা...”
– “এটা কিন্তু ঠিক না। স্যারদেরকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। তাদেরকে শ্রব্ধা ও সম্মান করবা সব সময়।”
– “কিন্তু স্যারেরা যদি আমাদেরকে ইচ্ছেমতো পিটায়, আমাদেরকে আদর-স্নেহ না করে, তবে কীভাবে তাদেরকে শ্রব্ধা ও সম্মান করব? আপনিই বলুন স্যার, শ্রব্ধা আর সম্মানবোধ কী ভিতর থেকে এমনি এমনি আসে?”
– “বাহ, এতটুকু ছেলে খুব পাকা পাকা কথা বলতে শিখেছো দেখছি। বই বের করো জলদি...”
.
ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া এই পিচ্চি ছাত্রের শেষের কথাগুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। সত্যিই আমি খুব বড় অবাক হয়েছি। বাচ্চাদেরকে যদি আদর-স্নেহই না করা হয়, তবে তাদের থেকে আমরা কীভাবে সম্মান পেতে পারি? কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদেরকে আমরা শিক্ষকরা কেন বেত্রাঘাত করি? এটা তাদের সাথে চরম অন্যায়। তাদেরকে ধমক দেওয়া, বিভিন্ন কায়দায় শাস্তি দেওয়া, বেত্রাঘাত করা এবং তাদেরকে ভয় দেখানো—এগুলোকে শিশু-শিক্ষানুরাগীরা কখনই সাপোর্ট করেন না। কোমলমতি বাচ্চাদেরকে ভালোবাসা, আদর-স্নেহ ও গল্পে গল্পে পাঠদান করতে হবে। শাস্তি দিয়ে নয়। সম্মানিত শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ থাকলো, আপনারা কোমলমতি বাচ্চাদেরকে শাস্তি দিবেন না।
.
– “কাওছার আজাদ”
©somewhere in net ltd.