নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“র্যাগিংয়ের চৌদ্দ গোষ্ঠী”

০৯ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:০১

[১]
অদম্য চেষ্টার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে আবাসিক হলে বা ছাত্রনিবাসে কোনো আসন বরাদ্দ পাইনি। শহরে বড় খালার বাসা ছিল, তাই থাকা-খাওয়া নিয়ে তেমন চিন্তা ছিল না। তবে সমস্যা বাজলো অন্য কোথাও— ক্লাস শুরুর তৃতীয় দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কীট-পতঙ্গ কর্তৃক র্যাগিংয়ে শিকার হলাম। শিক্ষিত এসব মাফিয়াদের ওপর অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে বিষণ্ণ ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পদব্রজে বাসায় ফিরলাম। আয়েশা আপুকে (খালাতো বোন) ব্যাপারটা খুলে বললাম। তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর কাকে যেন ফোন দিলো। ফোন রিসিভ হতে না হতেই রাগে গজগজ করে বলতে লাগলো, ‘এই, ভার্সিটিতে তোরা থাকতে আমার ভাই র্যাগিংয়ে শিকার হয় কী করে?’
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কী প্রত্যুত্তর এসেছিল তা শুনতে পারিনি। তবে তৎক্ষণাৎ আপু আমার সম্পর্কে তাকে বলে দিলো, ‘নাঈম হাসান; রসায়ন বিভাগ (১ম বর্ষ/১৩তম ব্যাচ)। একটু দেখে রাখিস রে, ও আমার খালাতো ভাই হয়।’ এই বলে আপু ফোন কেটে দিলো। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
– ‘কী রে, তুই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছিস যে? যা ফ্রেশ হয়ে এসে জলদি খাবার খেয়ে নে।’
আমি এতক্ষণ চড়ক গাছের ন্যায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। আপুর কথাতে আমার চৈতন্য ফিরে আসে। আমি হাসিচ্ছলে বলতে লাগলাম, ‘আবারও প্রমাণিত হলো যে, ইডেন কলেজ থেকে উঠে আসা মেয়েরা সত্যিই ডেঞ্জারাস!’
আপু আমার কথাটা হেসেই উড়ে দিলো। বাট, কিছুই বলল না।
.
[২]
ক্লাস শেষে অবসাদগ্রস্ত গাত্র-মন ও ক্ষুধার্থ পেটে হনহন করে হেঁটে বাসায় ফিরছি। পথিমথ্যে কয়েক জন মেয়ে আমার পথ আগলে দাঁড়ায়। কালো বোরকায় আবৃত একজন মেয়ে সামনে এসে আমার চশমা খুলে নিল। কিছুক্ষণের জন্য আমি নিশ্চিত যে এরা মলম পার্টির সদস্য। এর পরের বাক্য হবে, ‘সাথে যা কিছু আছে চটপট বের করে দাও। নইলে...!’ কিন্তু না, আমার ধারণা পাল্টে দিয়ে আমার সামনে থাকা মেয়েটা গুরুগম্ভীর গলায় বলতে লাগলেন, ‘তোমার নাম নাঈম হাসান; রসায়ন বিভাগ (১ম বর্ষ/১৩তম ব্যাচ)। কি, তথ্য ঠিক আছে?’
– ‘না মানে! জি ম্যাডাম হ্যাঁ। আমার কাছে যা কিছু আছে সব নিতে পারেন। প্লিজ ম্যাডাম, আমাকে ছেড়ে দিন।’
– ‘চুপ শালা, বেশি কথা বলছ। আমাদেরকে দেখে কি মলম পার্টির লোক মনে হয়?’
– ‘না ম্যাডাম। আমি এই শহরে একদম নতুন। আমার ভুল হয়েছে। এবারের মতো মাফ করে দিন।’
আমার এরকম অবস্থা দেখে ওরা হাহা করে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। কিন্তু আমি সেটা গুরুত্ব না দিয়ে মাথা নিচু করে বলতে লাগলাম, ‘আমি তবে যাই?’
– ‘এখনো দাঁড়িয়ে আছো তুমি!’
.
আমি পুনরায় বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম। কিন্তু চশমা ছাড়াই। হুদাই আমরা চশমাটা নিয়ে নিলো! চশমা ছাড়া চলতে ফিরতে যে কি কষ্ট হবে, তা তো ওরা বুঝবে না। মনে মনে গালি দেওয়া ছাড়া কিচ্ছু করার নাই। হাঁটতে হাঁটতে অকস্মাৎ মনে পড়লো, ‘আয়েশা আপু যে সেদিন ফোনে আমার সম্পর্কে কাকে যেন তথ্য দিয়েছিল, নিশ্চয়ই এরা তারাই হবে।’ যাক, তবে ভয়ের কিছু নেই। এরা হয়তো আপুর ফ্রেন্ডস এবং আমার শুভানুধ্যায়ী। তবুও বাসায় এসে আয়েশা আপুকে জিজ্ঞাস করে নিশ্চিত হলাম যে, ওই মেয়েটা ইডেন মহিলা কলেজে আপুর সাথেই পড়ত। অর্থাৎ আপুর বান্ধবী।
.
[৩]
বিদ্যুত না থাকায় পাখাও ঘুরছে না। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। ক্লাসরুমে গরমের তীব্রতা যেন আর কাটছেই না। তাই আমার কয়েকজন নতুন বন্ধু মিলে ক্যাম্পাসের প্রাঙ্গনে একটা গাছের নিচে গিয়ে বসলাম। কয়েকজন সিনিয়র ভাই আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদেরকে সালাম না দেওয়ায় তারা বেজায় ক্ষেপে গেলো। কর্কশ গলায় একজন অন্যজনকে বলতে লাগলো, ‘এরা মনে হয় নতুন বেয়াদব। চল, এদেরকে আদবি শিক্ষা দিয়ে আসি।’
ওরা একদম আমাদের নিকটে চলে আসলো। বলতে লাগলো, ‘সিনিয়র ভাইদের সাথে দেখা হলে তাদেরকে সালাম দিতে হয়, সেটাও তোরা জানছ না। বেয়াদবের বাচ্চা সব কটা। মা-বাবা বুঝি তোদেরকে আদব-কায়দা শেখায় নাই!’
আমার পাশ থেকে এক ক্লাসমেট চট করে উত্তর দিল, ‘স্যরি ভাইয়া, আপনি ভুল বলেছেন। আমরা ভার্সিটিতে আদব-কায়দা শেখার জন্যই এসেছি, ঘোড়ার ঘাস কাটার জন্য নয়। আর বেয়াদবি করলে আমরা করেছি, কিন্তু তাই জন্যি আমাদের বাবা-মাকে গালি দেয়া অশোভনীয়।’
সবাই চুপ থাকলেও তার সাথে সুর মিলিয়ে আমিও আওয়াজ করলাম, ‘ঠিক বলেছিস দোস্ত।’
ব্যস! এতেই ওরা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে তেড়ে আসলো। একজন আমার এই ফ্রেন্ডের দুই গালে কষিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারলো। থাপ্পড় খেয়ে ছেলেটা প্রায় কেঁদেই ফেলেছে। এদিকে অন্য আরেকজন আমার শার্টের কলার ধরে বলল, ‘তুইও তো ওর সাথে ঠিক ঠিক বলেছিস, তাই না? তোর জন্যও কিছু...’
ভার্সিটির বড় ভাই নামক মাফিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই পিছন থেকে এক মেয়ে এসে মাফিয়ার কান-শাখা বরাবর ঠাস ঠাস করে দুই থাপ্পড়। তৎক্ষণাৎ বেচারা ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলো। হাউ পসিবল? মাফিয়া হ্যাজ বিকাম অজ্ঞান!
আরেহ, এ তো নীলিমা আপু। সাথে আরো কয়েকজন মেয়েও এসেছে। আমি মিনমিন করে বললাম, ‘আবারও প্রমাণিত হলো যে, ইডেন কলেজ থেকে ওঠে আসা মেয়েরা সত্যিই খুব ডেঞ্জারাস।’
.
পিনপতন নীরবতা! একটা মেয়ের সাহস দেখে আমরা সবাই হতবাক। কিছুক্ষণপর মেয়েটা নীরবতা ভেঙে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যসব বড়ভাই নামক মাফিয়াদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো, ‘ছোটদেরকে র্যাগিং দিতে খুব ভালো লাগে, তাই না? আর একবার যদি এরকম কিছু করতে দেখি, তবে কিক মেরে আউট অব বাউন্ডারি! মনে থাকবে তো?’
তারা মাথা নিচু করে বলতে লাগলো, ‘জি আপু।’
– ‘যা ভাগ, জলদি করে এক বোতল পানি এনে মাটিতে পড়ে থাকা এই গর্দভটার চোখে-মুখে ছিটা দে। নইলে জ্ঞান ফিরবে না।’ তারা পানি এনে চোখে-মুখে ছিটা দিল। ছেলেটার জ্ঞান ফিরলে ওরা সবাই চলে যায়। এদিকে নীলিমা আপু জুনিয়র তথা আমাদেকে উদ্দেশ্যে করে বলতে লাগলো, ‘তোমরা ভার্সিটির স্টুডেন্ট। তোমরা কিশোর। তোমাদের দুই হাতের তালুতে আকুল সূর্যোদয়, রক্তশোভিত মুখমণ্ডলে চমকায় বরাভয়। তোমরা প্রতিবাদ করতে শিখো। ভয় করলে চলবে না।’
আমরা সমস্বরে বলতে লাগলাম, ‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।’
নীলিমা আপু মৃদু হাসলেন এবং ‘সবাই ভালো থেকো’ এই বলে তারা চলে গেলেন।
.
[৪]
দেখতে দেখতে আমি দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করলাম। এতদিনে নীলিমা আপুর সাথে আমার মৈত্রীবন্ধন ভাই-বোন অবধি পৌঁছিছে। আমার ভার্সিটি লাইফে পড়া-লেখা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়ে নীলিমা আপু আমাকে যথেষ্ট হেল্প করত। বড় বোনের মতো সর্বদা শাসন করত, আবার অসম্ভব রকমের ভালোও বাসত।
.
নীলিমা আপু আজ খালার বাসায় বেড়াতে এসেছে। অনেকদিন পর আপুর সাথে বসে গল্প করছি। এই সুযোগে কথার অভিমুখে এক পর্যায়ে আপুকে বললাম, ‘আপু, অনেক দিন থেকে একটা কথা জিজ্ঞাস করতে চাচ্ছি, যেটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না।’
– ‘হুম, বলো বলো।’
– ‘আচ্ছা আপু, গত বছরে যে একটা ছেলেকে থাপ্পর মেরে অজ্ঞান করে দিছিলেন, এটা কেমনে সম্ভব? মেয়ে মানুষের থাপ্পর খেয়ে কেউ জ্ঞান হারায়?’
– ‘হাহা, সিম্পল! কেন, তুমি জানো না? অজ্ঞান বা মলম পার্টির সদস্যরা তো এপিট্রা (Epitra) কিংবা এ জাতীয় কিছু চেতনানাশক ড্রাগ ব্যবহার করে অজ্ঞান করায়।’
– ‘তাহলে আমার সেদিনের ধারণাই বুঝি ঠিক ছিল। আপনি নিশ্চয়ই মলম পার্টির সদস্য ছিলেন।’
– ‘ধুর পাগল, আমি ‘ফলিত রসায়ন ও ক্যামিক্যাল’ বিভাগের ছাত্রী না? সো, মাফিয়াদের সাইজ করার জন্য মাঝে মধ্যে অজৈব রাসায়নিক যৌগ ক্লোরোফর্ম (CHCl₃) ব্যবহার করি—এই আরকি, হাহা।’
– ‘জিনিয়াস লেডি! আপনার জামাই যিনি হবেন, তিনি খুব ভাগ্যবান হবেন।’
– ‘আমি তো ভাবছি, তোমাকেই আমার জামাই বানাব। ছেলে হিসেবে তুমি কিন্তু মন্দ না।’
– ‘ছেলে হিসেবে আমি খুব ভালো, এজন্য যদি আমাকে জামাই বানান, তবে আপনার প্রিয়তমেষু সদ্য বিসিএস ক্যাডার প্রাপ্ত ডাক্তার আতিক ভাইয়া কাকে বিয়ে করবে? হাহা, আমি কিন্তু সব জানি।’
– ‘ওই বান্দর, তুই তো দেখি আচ্ছা পেঁকে গেছিস! তোকে আজ...’
আপু মনে হয় কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়েছে। আমি নিশ্চিত আপু এখন আমার মাথার চুল ধরে টানবে। আর সাথে ঝাড়ি তো আছেই। তাই আমি চটজলদি উঠে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বললাম, ‘আপু, আমার খুব ক্ষিদে লেগেছে। তাছাড়াও রান্নাঘর থেকে চিকেন পোলাও-বিরিয়ানির অমৃত সুঘ্রাণ আসছে। আমি যেয়ে দেখে আসি রান্না-বান্নার অবস্থান কদ্দুর!’
.
“র্যাগিংয়ের চৌদ্দ গোষ্ঠী।”
– “কাওছার আজাদ” (কচুবিদ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.