![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।
[আমি সাধারণত খুব সহজে সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে কিছু বলি না। কিন্তু যখন বলি, তখন চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ি। তো, আজকের আলোচ্য বিষয় 'মূর্তি বা ভাস্কর্য' নিয়ে...]
[১]
Sculpture (ভাস্কর্য)-এর সংজ্ঞা হচ্ছে, 'The art of making two or three-dimensional representative or abstract forms...' (Source : lexico Dictionary)
অর্থাৎ 'দ্বি-মাত্রিক বা ত্রি-মাত্রিক প্রতিনিধি বা বিমূর্ত রূপে তৈরিকৃত শিল্পকর্মকই ভাস্কর্য।'
শব্দগত বিশ্লেষণ করলে– 'Statue, Sculpture, Forms, Dummy' শব্দগুলোর অর্থ যথাক্রমে মূর্তি, ভাস্কর্য, মানবমূর্তি, শিলারূপা, অবয়ব, খোদাই-করা প্রতিকৃতি ইত্যাদি। অভিধানে এসব শব্দগুলোকে কখনই পার্থক্য করা হয়নি; বরং সমার্থক বা প্রতিশব্দ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার অর্থগত দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দুধর্মে মূর্তি বলতে, দেবতার বিমূর্ত অবয়ব বা প্রতিমাকে বোঝায়।'
তাই বলা যায় যে, এখানে সংজ্ঞাগত, শব্দগত ও অর্থগত দৃষ্টিকোণ থেকে ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে কোনো ধরনের পার্থক্য করার অবকাশ নেই। যারা এই একই জিনিসকে পার্থক্য করতে চাচ্ছে, তাদের যুক্তি এরকম— 'প্রতিমা হলো মানুষ যার আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ভুলের ক্ষমা চায় ইত্যাদি। এবং ভাস্কর্য হলো মানুষসহ কোনো প্রাণী বা কোনো কিছুর মূর্তি, যাকে মানুষ সম্মান দেখাতে বা সৌন্দর্য বর্ধন করতে রাখে; মানুষ যার আরাধনা বা উপাসনা করে না। সুতরাং ইসলামে প্রতিমা বা মূর্তি নিষিদ্ধ; কিন্তু ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নয়। কেননা, হাদিস-কোরআনে কোত্থাও ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বলে নাই।' (মূর্খ হলে যা হয় আর-কি!) গণ্ড-মূর্খরা মূর্তি বা প্রতিমা এবং ভাস্কর্যকে আলাদা করতে চাচ্ছে। এসব বকলমেরা কী শিখলো যে, একই জিনিসের বিভিন্ন নাম অর্থাৎ সমার্থক শব্দকে বুঝলো না?
আবার কিছু তেলবাজ চাটুকার আলেম ফতোয়া দিচ্ছে যে, ইসলামে ভাস্কর্য নিষিদ্ধ নয়— যতক্ষণ-না কেউ সেটাকে পূজা করবে। হাস্যকর, অবশ্যই হাস্যকর যুক্তি! (এসব চাটুকারদের ফতোয়া [৩]-নং পয়েন্টে পর্যালোচনা করেছি)।
[২]
১। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে হিন্দুধর্মের দেবতা বিষ্ণুমূর্তি বা বিষ্ণুদেবতার ভাস্কর্য বা মূর্তি রয়েছে। যেটাকে হিন্দুধর্মে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবতা ধরা হয়। ত্রিমূর্তির অন্যতম সদস্য এবং বিষ্ণু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিপালক রূপেও পরিচিত তিনি।
২। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে অর্ধনারীশ্বর ভাস্কর্য বা মূর্তি রয়েছে। প্রাচীন অর্ধনারীশ্বর হলেন হিন্দু দেবতা শিব ও তার পত্নী দেবী পার্বতীর একটি সম্মিলিত রূপ।
৩। নিউইয়র্ক 'মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট'এ ব্রোঞ্জনির্মিত চোলযুগীয় নটরাজ বেশে শিবের ভাস্কর্য বা মূর্তি রয়েছে।
এছাড়াও ভারত উপমহাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দর্শনীয় স্থানে বা জাদুঘরে বিভিন্ন দেবদেবীর ভাস্কর্য বা মূর্তি রয়েছে। আচ্ছা, এগুলো জাদুঘরে কেন রাখা হয়েছে? নিশ্চয়ই সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য। আরাধনা বা উপাসনা করার জন্য নয়। তাহলে এগুলোকে কি বলবেন ভাস্কর্য নাকি মূর্তি? গ-মূর্খরা তো মূর্তি বলতে দেবতার প্রতিমাকে (মানুষ যার আরাধনা করে) বোঝাতে চাচ্ছে। তাহলে সম্মান প্রদর্শন কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কোনো দর্শনীয় স্থান বা জাদুঘরে রাখা দেবতার প্রতিমাকে কী বলবেন? ভাস্কর্য নাকি মূর্তি?
[৩]
এতক্ষণে তো প্রমাণ করলাম যে, মূর্তি আর ভাস্কর্য একই জিনিস। কিন্তু এখন আবার অন্য আরেকটি ফতোয়া নিয়ে হাজির হবে চাটুকার গ-মূর্খরা। তারা এবার বলবে,—
"ইরান, মিসর, ইরাকের মতো মুসলিম দেশগুলোর জাদুঘরে অসংখ্য ভাস্কর্য এবং প্রাচীন শাসক ও দেব-দেবীর মূর্তি তো রয়েছে। সেসব দেশে উন্মুক্ত স্থানে রয়েছে অনেক ভাস্কর্য। মুসলমানদের তীর্থস্থান খ্যাত সৌদি আরবের জেদ্দাতেই আছে দুই দুইটি মূর্তি! একটি উটের ‘মূর্তি’, আরেকটি মুষ্টিবদ্ধ হাত সদৃশ ‘মূর্তি’। পারস্যের কবি শেখ সাদী, যিনি নামকরা খ্যাতিমান মুসলিম কবি ছিলেন। সেই শেখ সাদীর মাজারের সামনেই তার একটি মর্মর পাথরের ভাস্কর্য আছে। ইসলামি রাষ্ট্র ইরানে অবস্থিত কবি ওমর খৈয়াম ও মহাকবি ফেরদৌসির ভাস্কর্য আছে। এগুলো নিয়ে কারো সমস্যা নেই। নেই কোনো মাথা ব্যাথা। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থাকলেই যত্রতত্র সমস্যা!"
একটুখানি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই,— যেসব মুসলিম দেশগুলোতে ভাস্কর্য আছে, সেগুলোর ব্যাপারে সেসব দেশের ইসলামিস্টরা অবশ্যই প্রতিবাদ করেছিল। যেমন, তুরস্কে প্রায় চারশত বছর পূর্বে ইসলামপন্থী দলের বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে সেখানে ভাস্কর্য শিল্পকলার তেমন উন্মেষ ঘটেনি। সেটা ভিন্ন কথা, কিন্তু আমি চাটুকারদের বলতে চাই, কোনো মুসলিম দেশ ইসলাম বহির্ভূত কিছু করলে এর দায়ভার ইসলাম নিবে কেন? ইসলামের দলিল কুরআন-হাদিস; কোনো দেশ নয়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, 'তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।' (সূরা হজ্জ- ৩০)
আলোচ্য এই আয়াতে পরিস্কারভাবে সবধরনের মূর্তি বা প্রতিকৃতিকে পরিত্যাগ করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সকল কর্মকান্ড বর্জন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে হাদিস শরিফে স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু'টি হাদিস হচ্ছে,—
১। আউন ইবনে আবু জুহাইফা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদ ভক্ষণকারী ও সুদ প্রদানকারী, উল্কি অঙ্কণকারী ও উল্কি গ্রহণকারী এবং প্রতিকৃতি প্রস্তুতকারীদের (মূর্তি বা ভাস্কর, চিত্রকরদের) উপর লানত করেছেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫৯৬২; ইফা- ৫৪২৪)
২। '...তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মাসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরি করে রাখতো। কিয়ামাত দিবসে তারাই আল্লাহর নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টজীব বলে পরিগণিত হবে।' (৪৩৪, ১৩৪১, ৩৭৩; মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫২৮, আহমাদ ২৪৩০৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৫)
এই দুটো হাদিসে স্পষ্টভাবে মূর্তি বা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। ২নং হাদিসে লক্ষ্য করুন, 'আর তার ভিতরে ঐ লোকের (সৎ লোক) মূর্তি তৈরি করে রাখতো।' এই বাক্য দ্বারা কী বোঝা যাচ্ছে? এখানে দেবদেবীর মূর্তির কথা বলা হয়নি; বরং কবরে শায়িত মৃত্যু ব্যক্তির মূর্তি বা ভাস্কর্যের কথা বলা হয়েছে। এবং মূর্তি বা ভাস্কর্য প্রস্তুতকারীকে নিকৃষ্ট সৃষ্টজীব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আমি সম্মানের সাথে বলতে চাই– বঙ্গবন্ধু একজন দেশপ্রেমিক, সৎ-সাহসীক, নির্ভীক নেতা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। আমি তাকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, ব্যক্তি হিসেবে অনেক ভালবাসি। আমি চাই, কবর জীবনে যেন আল্লাহ তাকে শান্তিতে রাখেন। আমরা চাই না, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন সৎ ও ধর্মপ্রাণ নেতার ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মিত হোক পথে-ঘাটে, দর্শনীয় স্থানে কিংবা তার কবরের পাশে। এজন্য আমাদের আলেমগণ বিরোধিতা করেছে।
আমি আবারও বলছি– 'গণজাগরণ মঞ্চ কিংবা মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সে-সমস্ত চ্যালা-চামাণ্ডা ও চাটুকারদের উদ্দেশ্যে, 'আপনারা ফেইক বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। আপনারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, আপনারাই চাটার গোষ্ঠী..! অনেক হয়েছে! বঙ্গবন্ধুর চেতনা দিয়ে আর ব্যবসা করবেন না, প্লিজ। এক প্যাকেট বিরিয়ানি এবং নেত্রীর নেক নজর পাবার জন্য আর কত ঝাঁপা-লাফা করবেন? তেলবাজ গ-মূর্খ মৌলানারা (!) আর কত ভণ্ডামী করবেন? স্বার্থ হাসিলের জন্য আর কত...'
–'কাওছার আজাদ' (কচু)
©somewhere in net ltd.