![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।
সে-এক বহুকাল আগের কথা! তখন নবম শ্রেণীতে পড়ি। দেখতে অনেক কিউট, নম্র-ভদ্র, শান্ত-শিষ্ট, সুশ্রী, সুদর্শন ও মেধাবী ছিলাম। এজন্য মেয়েরা আমাকে দেখলে বরাবরই ক্রাশ খেত। এই তালিকায় সিনিয়র আপুরাও বাদ যায়নি। স্কুলে ঢোকার সময় তাদেরকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার ছিল। আমাকে খুব বেশি বিরক্ত করত। কথা না শুনলে গাল টেনে ধরতো। সিনিয়র আপু বলে কথা। ভয় পেতাম। কিছু বলতাম না। [১]
.
আম্মু আমাকে সব সময় শাসনের উপর রাখতো। এজন্য তাকেও খুব ভয় পেতাম। তবে আব্বু ভিন্ন ধাঁচের। আম্মুর পিটুনির হাত থেকে আমাকে বরবরই রক্ষা করত তিনি। যখন যা চাইতাম তাই এনে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করত। গেম খেলার জন্য ফোন কিনে চেয়েছিলাম, তা-ও দিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা বাজলো ফোনে সিম তুলে। কিভাবে যেন মেয়েরা আমার নাম্বার নিয়ে রাতে বিরাতে ফোন দিত। মেয়েদের জ্বালা-যন্ত্রণা আর ভালো লাগে না। তারা কি করে পারে একটা ছেলেকে এতো ডিস্টার্ব করতে! মেয়েদের জ্বালায় কত সিম-কার্ড যে পরিবর্তন করেছি, তা আর কে জানে! এরকম ঘনঘন সিম পরিবর্তন কোনো মেয়েরাও করে না। (তখন সিম কিনতে গেলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশন করা লাগতো না। কেবল টাকা হলেই অনায়াসে সিম কেনা যেত। এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া খুব সহজেই...)। [২]
.
নাহ, একজন ছেলে মানুষ হয়ে কাপুরুষদের মতো বারংবার সিম পরিবর্তন করাটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। আর কত সহ্য করব মেয়েদের অত্যাচার! রাস্তাঘাটে ও ক্লাসে তো আছেই। সাথে ফোনেও। শান্তিমতো ফোনটাও টিপতে পারি ন। এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না! রাগে-দুঃখে মাথা ভনভন করে ঘোরে! কি অপরাধ করেছি আমি? সুন্দর হওয়াটাই কি অপরাধ? ওদেরকে পাত্তা না দেওয়াটাই কি আমার দোষ? না, আমি আর পারছি না। মেয়েদের থেকে মুক্তির পথ বের করতেই হবে। [৩]
.
অতিষ্ঠ! খুব বেশি বিরক্ত! এক পর্যায়ে এসব কথা আম্মুর কাছে শেয়ার করলাম। ব্যস, লও ঠেলা! তেলে আর বেগুনে আপন শক্তিতে জ্বলে উঠলো, "হারামি, তাই জইন্যে তোরে ফোন কিইন্না দিছি! সারাদিন মাইয়্যাদের লগে কথা বলছ, পেরেম করছ? আহুক তোর বাপ দেখামু মজা! আজ তোর পেরেমের চৌদ্দ ঘুষ্ঠি ছাপ কইরা ছাড়মু।"
— "আম্মু প্লিজ, আমার কথাটা ভালো করে একবার শুনবে তো!"
— "চুপ কর শয়তানের হাড্ডি! কত কষ্ট করে ল্যাহা পড়া শিখাচ্ছি! আর তুই পেরেম করছ? আইজক্যায় তোর বাপরে কয়য়া একটা মাইয়্যার সাথে বিয়া দিয়া দিমু। তহন বুঝবি কত ধানে কত তুষ!"
— "আম্মু...! একবার বিশ্বাস করো। ঐ মেয়েগুলোই আমাকে বরাবর ফোন দিয়ে বিরক্ত করে; এমনকি স্কুলেও। এই দেখো ওদের জ্বালায় কতগুলো সিম পরিবর্তন করেছি। তবু কেমনে যে আমার নাম্বার তারা পায়!!"
— "আমাকে বোকা ভাবতেছিস। তোর নাম্বার ওরা পায় কীভাবে? মনে করছিস তোর আম্মু পাগলী, কিছু বুঝে না। একটা কথা..."
.
কিছুক্ষণ পর :
— "এই দেখো আম্মু, আবার অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে।"
— "কই দে আমাকে ফোনটা দে দেখি।"
.
অ্যাকশন শুরু :
ফোন রিসিভ করেই আম্মু বলতেছে, “তো বউমা সারাক্ষণ বাপের বাড়িতে থাকলে সংসার চলবে? নাকি বাড়িতে আসা লাগবে না? আমি একায় একায় কাজ করতে করতে মরতাছি আর তুমি বাপের বাড়িতে বসে বসে 'ইন্ডিয়ান সিরিয়াল' দেখতেছো।”
— "আন্টি আপনি কিসব উল্টা-পাল্টা কথাবার্তা বলতেছেন? কে আপনার বউমা?"
— "ঐ মাইয়্যা এতো নাটক করছ কিল্লাইগ্যা? আমি তোর আন্টি না, শাশুড়ীমা হই।"
— "Sorry Aunt, এটা রং নাম্বার! টুঁ টুঁ টুঁ..."
.
(আম্মু, মাইয়্যার অবস্থা কাহেল কইরা দিয়েছে। ঐ মেয়ে আর দ্বিতীয়বার কল দিবে বলে মনে হয় না।) আমি আম্মুর থেকে ভয়ে ভয়ে ফোনটা নিয়ে আমার রুমে আসতে যাবো ঠিক ঐ সময় আম্মু বলতে লাগলো,— "এই থাম!"
— "জি আম্মু।"
— "এরকম ফালতু বিষয় নিয়ে কোনো কথা আমার কানে আর একবার আসলে, তোর এই বাড়িতে স্থান নাই।"
.
যাহ শালার কপাল রে! একটা বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আম্মুর কাছে গেলাম। কিন্তু সেখান থেকেও একটা বিপদ ঘারে করে নিয়ে আসতে হলো। তবে এটা ভেবে একটুখানি শান্তি লাগছে যে, দুই-তিন থেকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছে না। বাহিরে আর যাই কিছু হোক। বাড়িতে তো অন্তত শান্তি! আহা, শান্তিরে! প্রচুর শান্তি।
.
সন্ধার পর স্কুলের পড়া পড়তে বসেছি। হঠাৎ ফোনটা বেঁজে উঠলো। কলটা রিসিভ করেই আম্মুর মতো করে কিছুটা আবাল মার্কা কথা কইলাম, "আচ্ছা আপনি আজকে কয় কেজি গাঁজা খাইছেন। বর্তমানের মাইয়্যারাও যে নেশারু, তা আপনারাই প্রমাণ করে দিচ্ছেন। যত্তোসব।"
— "এই যে ছেলে! কথাবর্তা ঠিক করে বলবা। কী-সব আবোল-তাবোল কথা বলছো, হ্যাঁ.."
— "আমি কেমন করে কথা বলব না বলব এটা আপনার দেখার বিষয় নয়।"
— "আচ্ছা, তুমি কাওছার না?"
— "আমি কে, কি! এটা আপনার জানার দরকার নেই।"
— "আচ্ছা ঠিক আছে। তবে শুনে রেখো আমি তোমার স্কুলের তানিয়া ম্যাডাম বলছি। তোমাকে খুব ভালো স্টুডেন্ট মনে করতাম। কিন্তু তুমি এরকম, তা ভাবনার বাইরে ছিল। কয়দিন থেকে ক্লাস করছো না। তাই ফোন দিতে হয়েছে।"
— "কি! ম্যাডাম! স্যরি, স্যরি ম্যাডাম..."
— "টুঁ টুঁ টুঁ...!"
.
কি একটা অবস্থা! আবার বাঁশ। একটার পর একটা বাঁশ। বাঁশের উপর বাঁশ! এখন কি হবে আমার! কেন যে নবম শ্রেণীতে ভর্তির সময় কাগজপত্রে আমার ফোন নাম্বার দিয়েছিলাম! ধুর, গরুর মতো আচারণ করলাম! শিক্ষিকার সাথে এরকম আচরণ অশুভনীয়। যে শিক্ষিকা আমাকে এতো স্নেহ করতো, এত ভালোবাসতো। আর আজ তার সাথে অকথ্য ভাষায় কথা বললাম! এখন আমার কি হবে!
.
নাহ, এটা হতে পারে না। তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। ম্যাডামকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে, আসলেই কাহিনীটা কি ছিল! ম্যাডামের ফোনে কল দিলাম। কিন্তু এ কি! সুইচ অফ করে রেখেছে।
.
যেদিকে তাকাই, শুধু বাঁশ আর বাঁশ! কচুময় জীবন! দুশ্চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ম্যাডাম যদি আম্মুকে নালিশ দেয়। তাহলে আমার অবস্থা কী হবে— এটা ভেবেই গাঁ শিউরে ওঠে। যা হওয়ার তাই হয়েছে। আম্মু-আব্বুর কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ এসেছে। পরদিন সকালে আম্মু আমার কান ধরে স্কুলে নিয়ে যায়। অফিস কক্ষে প্রবেশ করে ম্যাডামের কাছে নিয়ে যায়। ক্ষমা চেয়ে বলতে লাগলাম, "ম্যাডাম, আমার ভুল হয়েছে। সেদিন আসলে..."
আমার কথা শেষ হতে না হতেই আম্মু আমার দুই গালে কষিয়ে দুই থাপ্পড় মারলেন। আমার চোখ দিয়ে যেন আগুনের ঝিলিক বের হলো। ক্ষণিকের জন্য পুরো কক্ষ অন্ধকার মনে হলো। মাথা ঘুরে উঠলো। তৎক্ষণাৎ বসে পড়লাম। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। তবুও আম্মু আমাকে মারার জন্য আবার হাত উঁচু করেছে। ম্যাডাম বসা অবস্থা থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে আম্মুর হাতটি ধরেই বলতে লাগলো, "আপা, এটা কী করছেন আপনি? ছাড়ুন! এভাবে কেউ বাচ্চাদের মারে নাকি? ও ছোট মানুষ। ভুল করতেই পারে।"
আম্মু এক মুহুর্তের জন্যও আর সেখানে থাকেনি। হনহন করে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। আমি অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছি। ম্যাডাম চিরচেনা স্নেহমাখা কণ্ঠে বলতে লাগলেন, "এদিকে আসো বাবা। সেদিন তোমার কি হয়েছিল, জানি না। কিন্তু তোমার আম্মু যে এরকম ডেঞ্জারাস, এটা জানা ছিল না।"
— "বিশ্বাস করুন ম্যাডাম, আমি সেরকম খারাপ ছেলে না। আসল সমস্যা আমার রূপে! ছেলেদের এরকম রূপ হওয়া মোটেও উচিত নয়। সেদিন আসলে এই-এই হয়েছিল। প্লিজ ম্যাডাম, ক্ষমা করে দিবেন।"
.
ম্যাডাম মৃদু হাসলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো, "তোমার আম্মু এরকম কেন, বাবা? আহ, গালে পাঁচটা আঙুলের ছাপ পড়ে গেছে!"
— "হ্যাঁ ম্যাডাম, তিনি এরকমই। খুব ডেঞ্জারাস মহিলা! সত্যি বলতে নারী জাতিরাই এরকম।"
— "কি?"
— "কিছু না। এখন আসতে পারি ম্যাডাম?"
.
ম্যাডাম আবার মৃদু হাসলেন। এবং বলতে লাগলেন, "বাসা থেকে কিছু খেয়েও আসোনি মনে হচ্ছে! চলো রেস্টুরেন্টে..."
— "না ম্যাডাম, আমি যাই।"
— "এই! কথা কম! চল..."
ইতোমধ্যে নারী জাতির জন্য অনেক 'বাঁশ' খেলাম। আর খেতে ইচ্ছুক নই। তাই বাধ্য হয়ে গেলাম রেস্টুরেন্টে। ভারাক্রান্ত ব্যথাতুর মন নিয়েই বাধ্য হয়ে কিছু খেতে হয়েছে। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় ম্যাডাম সেদিন বলেছিল, "এখন থেকে 'ফেয়ার এন্ড আগলি' ব্যবহার করবা।"
অনেক বছর গত হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও ম্যাডামের সেই কথা কানে বাজে। 'ফেয়ার এন্ড আগলি' অনেক খুঁজেছি। তবে পাইনি। দুঃখ মূলত এখানেই...
.
— 'কাওছার আজাদ' (কচুস্টাইন)
©somewhere in net ltd.