নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি যখন মাথায় না থেকে হাঁটুর নিচে থাকে...\'

১৫ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:২৭

'শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি যখন মাথায় না থেকে হাঁটুর নিচে থাকে...'
.
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কি বলব?— যেখানে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই! সরকার মনে করে, তারা দেশ ভালো চালাচ্ছে৷ মানুষ সুখে-শান্তিতে আছে। পদ্মা সেতু হয়েছে। তিস্তার পানি ইস্যুর সমাধানে প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আকাশে স্যাটালাইট উড়ছে। সবমিলিয়ে দেশে উন্নয়নের জোয়ার ওঠেছে। সেই উন্নতির জোয়ারেই ভেসে যাচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।
শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্ভট পরিবর্তন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছাড়া কিছুই নয়৷ যেটা করলে তাঁদের সুবিধা হয়৷ তাদের কী সুবিধা হয়, কী ধরনের ফায়দা হাসিল করতে পারে, এটা কেবল তারাই ভালো জানে! কিন্তু শিক্ষার্থীদের খুব সুবিধা হচ্ছে বলে আমি মনে করি না৷ গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির নীতিমালা যুগ-উপযোগী ও ন্যায়সঙ্গত নয়। এই পদ্ধতির অসাড়তা নিয়ে আজকের আলোচনা,—
.
১। গুচ্ছ পরীক্ষার জন্য প্রাথমিক আবেদনে মেধাক্রম অনুযায়ী সিলেকশন করা হবে। অর্থাৎ সার্কুলারে উল্লেখিত সর্বোচ্চ ৬ সর্টিং ক্রাইটেরিয়া ক্রমানুসারে (১ হতে ৬) ব্যবহার করে প্রাথমিক আবেদনকারীদের মেধাক্রম প্রস্তুত করা হবে।
[প্রাথমিক আবেদনেই ছিটকে পড়বে অনেক শিক্ষার্থী। সার্কুলারে উল্লেখিত A/B/C তিনটি ইউনিটে যথাক্রমে সর্বনিম্ন GPA–7.00/7.50/8.00 পয়েন্ট থেকেও অনেকেই চূড়ান্ত আবেদন করতে পারবে না। পরীক্ষা দেওয়া তো অনেক পরের কথা, মেধাক্রমেই তারা টিকতেই পারবে না। কারণ, এবার অটোপাসে GPA-5 এর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশের হার‌ও শতভাগ! সেক্ষেত্রে যারা সেকেন্ড টাইমার— হতভাগা শুধু এরাই! আমার কিছুতেই মাথায় ধরে না। অটোপাসের রেজাল্ট দিয়ে তারা কিসের বালের মেধাক্রম যাচাই করবে? অথচ পূর্বে (সেকেন্ড টাইমার) যারা মেধা-শ্রম-কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়ে যে রেজাল্ট অর্জন করেছিল, তাদের রেজাল্টের কোনো মূল্য‌ই নাই? কি আশ্চর্য বালের সিস্টেম!]

২। বিজ্ঞান বিভাগ হতে, SSC ও HSC—তে মোট সর্বনিম্ন জিপিএ ৮.০০ থাকতে হবে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে, SSC ও HSC—তে মোট সর্বনিম্ন জিপিএ ৭.৫ থাকতে হবে। মানবিক বিভাগ হতে, SSC ও HSC—তে মোট সর্বনিম্ন জিপিএ ৭.০০ থাকতে হবে।
[এখানেও এক ধরনের বাঁশ! সার্কুলার প্রকাশের আগে ইউসিজি কর্তৃক আশ্বাস ছিল যে, সর্বনিম্ন জিপিএ ৬.৫০ থাকবে। কিন্তু তা না করে ৭.০০ করলো। এখানেও আমার আপত্তি রয়েছে— এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলো না। কোনো প্রকার যোগ্যতা ছাড়াই অটোপাস কিংবা GPA-5 দেওয়া হলো। সেক্ষেত্রে গুচ্ছ পরীক্ষায় কেন আবেদন যােগ্যতা বৃদ্ধি করা হলাে? যেখানে আগের বছরও শা-বি-প্র-বিতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ মোট ৬.৫০ পয়েন্ট দিয়ে পরীক্ষা দেওয়া যেত, সেখানে অটো পাসের বছরে কোন যুক্তিতে তারা গুচ্ছ পরীক্ষায় জিপিএ বৃদ্ধি করল? তবে হ্যাঁ, একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্ত নিলে ভিন্ন কথা ছিল, কিন্তু সমন্বয় পরীক্ষায় (২০টা বিশ্ববিদ্যালয়) এরকম সিদ্ধান্ত মোটেও লজিকের মধ্যে পড়ে না। এটাকে আবার‌ও আমি বালের সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করলাম।]

৩। SSC ও HSC—এই দু'টোর কোনোটিতে জিপিএ ৩.৫০ এর কম হলে হবে না।
[তৃতীয় বারের মতো আবারও বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটাও বালমার্কা সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত কোনো সংগত সিদ্ধান্ত হতে পারে না। দেখা যায় অনেকেই SSC-তে খুব বেশি ভালো রেজাল্ট (জিপিএ-৩.৪৭ পেয়েছে) করতে পারে নাই, কিন্তু আশাহত না হয়ে HSC-তে ভালো রেজাল্ট করেছে। অথচ এই কথিত বালের গুচ্ছ সিস্টেমে তাদের কোনো সুযোগ থাকছে না। এখানে শুধু সেকেন্ড টাইমার নয়, এই সাড়িতে থাকা এ বছরে অটোপাস করা শিক্ষার্থীরাও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।]

৪। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় গ্রুপ বা বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ নেই। নিজনিজ বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিতে হবে।
[ধরুন, 'X' একজন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষা মিলে তার জিপিএ-৭.৯৭ ছিল। কিন্তু গুচ্ছতে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিতে হলে তার জিপিএ-৮.০০ লাগবে। তাহলে সে এখন কি করবে? না পারছে অন্য ইউনিটে পরীক্ষা দিতে, না পারছে স্ব-ইউনিটে পরীক্ষা দিতে। কোনো দিকেই তাদের রাস্তা নাই! এরা তাহলে কী করবে? টোটাল স্কোর জিপিএ-৭.৯৭ পয়েন্ট থেকেও যখন সে পাবলিক ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে পারবে না— শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার কারণে, তাহলে এদেশে জন্মগ্রহণ করাটাই মহা অন্যায়! এদেশে এবার‌ই প্রথমবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে পাবলিক ভার্সিটির পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং প্রথম বারের মতো বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকা উচিত ছিল। কারণ, বছর জুড়ে অনেক শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তনীয় ইউনিটে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রিপারেশন নেয়। কিংবা বাবা-মা ও বড় ভাই-বোনের জোরে এবং এলাকার বুদ্ধিজীবী নামক বড় ভাইয়া-আপুদের পরামর্শে বাধ্য হয়ে SSC & HSC-তে সাইন্স নিয়ে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু পড়তে যেয়ে বোঝে কেমন ঠেলা! তখনই তাদের চিন্তার পরিবর্তন ঘটে। বুঝতে শেখে যে, তাদের জন্য বিজ্ঞান বিভাগ ভালো নাকি ব্যবসা বা মানবিক! এই পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়ে বরণ না করে হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা! শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে! অত‌এব, জঘন্যতম শিক্ষা ব্যবস্থার এই বালের সিদ্ধান্তের উপর এক-দলা থুথু নিক্ষেপ করলাম। উ-য়্যা-ক থু...!!]

৫। তবে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে টেকার পর ভর্তির সময় বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবে।
[এই সিদ্ধান্তকে চুল-মার্কা সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করলাম। কারণ, যেখানে সেই শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগের সাবজেক্ট নিয়ে পড়ব‌‌েই না, সেখানে তাকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে কেন মানবিক বিভাগে আসতে হবে? মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে মানবিক বিভাগে আসা বেশি যৌক্তিক?— নাকি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়ে মানবিক বিভাগে আসা বেশি যৌক্তিক? আমি এক ধরনের নিশ্চিত হয়েই বলছি— যারা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছে ঠিক‌ই, কিন্তু তারা বিজ্ঞান বিভাগে মেন্টাল এন্ড ফিজিক্যালি ভর্তির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রিপারেটড না। মানুষ যে চিন্তা-চেতনা একবার মাথায় ঢুকায়, তা খুব সহজে বের করে ফেলা মুশকিল! ]

৬। প্রতিটি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১.৫ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। মানে সব ইউনিট মিলে (১.৫x৩=৪.৫) লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে।
[তাহলে বাকীদের কী উচ্চশিক্ষার অধিকার নেই? এরা কি দেশের নাগরিক নয়? শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে কথিত কিছু বুদ্ধিজীবীরা। উদ্ভট কচ্ছপের পিঠে চলেছে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে এ জাতির অদূর ভবিষ্যত অন্ধকার।]

আমরা সরকারের নিকট জোরদাবি জানাচ্ছি— 'গুচ্ছ পরীক্ষা বাতিল করা হােক, তা না হলে পূর্বের নিয়মে সব শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হােক! শিক্ষার অধিকার সবার‌ই আছে।'
.
প্রিয় শিক্ষার্থী ভাইয়েরা! এভাবে বসে থাকলে চলবে না। রুখে দাঁড়াতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে। চোখের সামনে এক ঝাঁক তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে তারা ছিন্নভিন্ন করে দিবে— এ হতে পারে না। তাদের এসব উদ্ভট শিক্ষা নীতিকে ঝাঁটিয়ে বিদায় করতে হবে।
"জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।"
.
—'কাওছার আজাদ' (কচুস্টাইন)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.