নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“হারাম রিলেশনশিপ”

০২ রা মে, ২০২১ দুপুর ১২:৫৪


– ‘আচ্ছা হুজুর, বিয়ে তো হালাল। তাই বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করলে সমস্যা কোথায়? আজ না হয় কাল সে তো আমারই স্ত্রী হবে।’
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তামিম ভাইয়ের মুখে এমন উদ্ভট প্রশ্ন শুনে কিয়ৎ স্তম্ভিত হলাম। যেন মুহূর্তমধ্যে চড়কগাছ ওঠে গোলকধাঁধায় অকর্ষিত হলাম। এহেন পরিস্থিতিতে ক্রুব্ধ না হয়ে লগবগে পাল্টা কৈফিয়ত তলব করলাম,– ‘তাহলে কুরবানীর উদ্দেশ্য গরু চুরি করাও হালাল, তাই না? হারাম উপায়ে উপার্জন করে দান-সদকা করাও অনেক সাওয়াবের কাজ!’
সে মৃদু হেসে তৎক্ষণাৎ প্রত্যুত্তর করলো,– ‘তা কেন হতে যাবে, হুজুর? চুরি করা অন্যায়। হারাম উপার্জন‌ও ইসলামে নিষিদ্ধ।’
– ‘বাহ, ভালোই জ্ঞান রাখো দেখি! কিন্তু বিয়ের আগে প্রেম করা যে ইসলামে নিষিদ্ধ, এটা জানো না?’
– ‘জানি। কিন্তু সেটা তো কথিত জঘন্যতম প্রেম। যেটার মধ্যে যৌনতা বা প্রেমজনিত আবেগীয় উদ্দীপনা থাকে। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য যদি খারাপ কিছু না থাকে। তাকে নিয়ে সংসার করার দৃঢ় সংকল্প থাকে। তাহলে সেটা নিষিদ্ধ হবে কেন?’
– ‘ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন! বিয়ে করার দৃঢ় সংকল্প থাকলেও কোনো বেগানা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। কারণ, বেশির ভাগ প্রেমের শেষ পরিণতিই হয় বিচ্ছেদ ও ধোঁকার মধ্য দিয়ে। এটি স্রেফ শয়তানের মরীচিকা বা পাতানো জাল। আচ্ছা, যদি কিছু মনে না করো তবে একটা প্রশ্ন করি?’
– ‘জি, সিউর।
– ‘তুমি কি প্রেম করো?’
– ‘না, মানে হ্যাঁ...’
– ‘ক্লিয়ার বলো।’
– ‘মানে আমাদের ভালোবাসা পবিত্র। আমরা ইটিশ-পিটিশের মধ্যে নাই। আমরা যাস্ট মোবাইল কথা বলি। সে খুব ভালো ও পরহেজগার মেয়ে। নামাজ-কালাম ঠিকমতো পড়ে। এবং আমাকেও পড়তে বলে।’
– ‘পরহেজগার মানে? তোমরা দুজন প্রথমেই তো হিজাব ভঙ্গ করেছ। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রেম তৈরি হবে তখনই যখন তারা দুজনই হিজাব ভঙ্গ করবে। কোন একজন যদি হিজাব কোনোমতেই ভঙ্গ না করে তবে কোনো মতেই প্রেম দাঁড়াবে না। এ সম্পর্কে সূরা নূরের ৩০-৩১ নং আয়াত পড়লেই ক্লিয়ার বুঝতে পারবে।
– ‘ইসলামে নন-মাহরাম মেইনটেইন করে চলতে হবে, এটা জানি। কিন্তু তবুও প্রশ্ন, অনেকের ক্ষেত্রে তা হয়তো শারীরিক সম্পর্কে না-ও গড়াতে পারে, সে ক্ষেত্রেও কেন হারাম হবে?’
– ‘একটা হাদিস স্মরণ করিয়ে দেই, সহিহ বুখারির ৬২৪৩ নং হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা; জিভের ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)।’ সো, তোমাকে নন-মাহরাম মেইনটেইন করে চলতেই হবে। দ্বিতীয়ত, বিয়ের আগে কথিত প্রেম-ভালোবাসা শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত যাবে না। এটা তুমি নিশ্চিত? এর কোনো নিশ্চয়তা আছে তোমার কাছে?’
– ‘না, নেই‌। এটা কেবলমাত্র নিজের ইচ্ছেশক্তি ও আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে বলা।’
– ‘ভেরি লেইম লজিক। অনেক দলিল ও যুক্তি-প্রমাণ পেয়েও যখন বুঝতে চাচ্ছো না। তাই এখন আমি ছোটখাটো একটা লেকচার দিব। আশা করছি, তুমি চুপ করে শুনবে। এবং তোমার ভুল ধারণা গুলো ভেঙ্গে যাবে।’
– ‘জি হুজুর। বলুন।’
.
সে হয়তো গভীর ভাবে ভাবছে, শেষমেষ কি তবে সখিনার সাথে আর প্রেম হবে না! তাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে। সে চুপ করে বসে আছে। আমি বলতে লাগলাম,–
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত Yale University-এর মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মনোবিজ্ঞানী রবার্ট স্টার্নবার্গ স্টার্নবার্গ ১৯৮৫ সালে আন্ত-সম্পর্কিত একটি তত্ত্ব প্রচার করেন। যেটা ‘ভালোবাসার ত্রিভুজ তত্ত্ব’ (Triangular Theory of Love) প্রাচার করা হয়। তার দেওয়া ত্রিভুজ তত্ত্ব অনুসারে ভালোবাসায় তিনটি অংশ হচ্ছে,–
১। আগ্রহ বা আবেগ (Passion) :
‘আগ্রহ দৈহিক উত্তেজনা এবং আবেগীয় উদ্দীপনার সাথে সম্পর্কিত। কোনো কিছুর জন্য বা কোন কিছু করার জন্য উদ্যম এবং উত্তেজনার একটি শক্তিশালী অনুভূতি। যার ফলে মানুষ বিপজ্জনকুপায়ে কাজ করে। আবার, কারো জন্য শক্তিশালী যৌন বা প্রেমজনিত অনুভূতি‌ হিসেবে কাজ করে।’

২। অন্তরঙ্গতা (Intimacy) :
অন্তরঙ্গতা হচ্ছে– ‘একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং সংযুক্তির অনুভূতি। এটি দুজনের মাঝে বন্ধনকে শক্তিশালী করতে চায়। একই সাথে, অন্তরঙ্গতার অনুভূতি একে অপরের সাথে স্বাচ্ছন্দে থাকার অনুভূতি তৈরি করতে সাহায্য করে, যেখানে দুইজনই তাদের অনুভূতিতে একাত্ম হয়।’

৩। দায়বদ্ধতা (Commitment) :
এটি হচ্ছে– ‘কোনো কিছু করার বা দেবার প্রতিশ্রুতি। কোনো ব্যক্তি বা কোন কিছুর প্রতি অনুগত থাকার প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতি অন্য দুটো অংশের মত নয়, এক্ষেত্রে একে অপরের সাথে লেগে থাকার সচেতন সিদ্ধান্ত জড়িত থাকে।’

আলোচ্য থিওরি অনুযায়ী আন্তরব্যক্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই তিন অংশের সমন্বয়ে ভালবাসার অবয়ব গড়ে ওঠে। তন্মধ্যে প্রথম অংশটি হচ্ছে– যৌন বা প্রেমজনিত আকর্ষণ। যেই আকর্ষণ মানুষকে ব্যভিচারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। গবেষণার তথ্য ও থিওরি বলছে– ‘প্রেমের সম্পর্ক ব্যভিচারের দিকে যাবে। সম্ভাবনা অনেক বেশি।’ উপরন্তু, শয়তানের প্ররোচনা তো আছেই। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। (সুরা : ইসরা, আয়াত : ৩২)

অন্য আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘…তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তোমরা তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে। তোমরা অবাধ যৌনচারে লিপ্ত হতে পারবে না অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না।’ (সূরা মায়েদা, ৫)

“উক্ত আয়াতে প্রথমে বলা হচ্ছে, ‘তোমরা তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে।’ এখানে যৌনতার লাইসেন্স হিসেবে আল্লাহ তায়ালা শর্তসাপেক্ষে বিয়েকে হালাল করে দিয়েছেন। যাতে আমারা বিধিবহির্ভূত বা অবাধ যৌনচারের ধারেকাছেও না যাই। এজন্য পরের অংশে সতর্ক করে সেটাও বলা হচ্ছে যে, ‘তোমরা অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হতে পারবে না‌ অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না।’ অর্থাৎ বিয়ের আগে কোনো ধরনের প্রেম-প্রীত চলবে না। হারাম বা নিষিদ্ধ। আশা করি বুঝতে পেরেছো।”

সে এতক্ষণে নিমগ্ন হয়ে শুনছিল আমার কথাগুলো। একটুও কথা বলেননি। হয়তো উপলব্ধি ক্ষমতা জাগ্রত হয়েছে। আমি প্রশ্ন করলাম,– ‘এসব আলোচনা থেকে কি বুঝলে?’
– ‘বিয়ের আগে প্রেম-ভালোবাসা নিষিদ্ধ। হারাম রিলেশানশিপের অপর নাম যিনা।’
– ‘আর যিনার শাস্তি কিন্তু খুবই ভয়াবহ। জানি, এই হারাম সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাটা খুব সহজ নয়। সহজ নয় তাদের জন্য যারা দ্বীনটাকে মন থেকে মেনে নিতে পারে না। এখন সিদ্ধান্ত তোমার।’
– ‘আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। তাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হবে। কিন্তু আল্লাহর জন্য এই সামান্য ত্যাগ স্বীকার কিছুই নয়। এখন আমি কি করব, বলুন হুজুর।’
– ‘তুমি এখন যেটা করতে পারো, তার ফ্যামিলিতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও। অথবা তাকে এটা বুঝিয়ে বলতে পারো যে, তুমি এসট্যাবিলশ হলে তাকে বিয়ে করে নিবে; সে-ই অবধি সমস্ত ধরনের যোগাযোগ ও কথাবার্তা বন্ধ। অথবা তোমাকে এতক্ষণে যা-কিছু বোঝালাম, সেসব কথাও বলতে পারো। এছাড়াও বিয়ে ও হারাম রিলেশনশিপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, এমন কিছু ব‌ই তাকে উপহার দিতে পারো।’
– ‘ইন-শা-আল্লাহ। কি রকম ব‌ই হুজুর? কয়েকটার নাম বললে ভালো হত।’
– ‘যেমন,
১। ‘মনের ওপর লাগাম’ – আল্লামা ইবনে জাওযী (রহ)।
২। ‘বেলা ফুরাবার আগে’ – আরি আজাদ।
৩। ‘বিয়ে নিয়ে কিছু কথা’ – শাইখ ড. আলী তানতাবী।
৪। ‘দুজন দুজনার’ – শায়েখ আতিকুল্লাহ।
৫। ‘অবৈধ প্রেম থেকে দূরে থাকুন’ – মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ।
– ‘এগুলো দিতে পারো। বহুল আলোচিত, সমাদৃত ও নির্বাচিত কিছু ব‌ই। ইন-শা-আল্লাহ, সে বুঝতে পারবে। আর হেদায়েতের মালিক তো আল্লাহ। তিনি চাইলেই তার অন্তরে সঠিক বুঝ দান করবেন।’
– ’জি হুজুর, তাই যেন হয়।’
– ‘শুভকামনা। আল্লাহ চাহেত খুব শিগগিরই বিয়ের দাওয়াত পাবো।’
তামিম ভাই চমৎকার ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে দিলেন। তার এই অমায়িক ধ্রুপদী হাসির ধ্বনিতে আশপাশের পরিবেশটা যেন মুখরিত ও বিমোহিত করেছে। কোত্থেকে যেন শিরশির করে মৃদু-ঠাণ্ঠা বাতাস এসে আমাদের গায়ে লাগছে। মুহুর্তের মধ্যে হারিয়ে গেলাম অন্য এক জগতে।
.

– “কাওছার হাবীব” (আজাদ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.