![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।
[ক]
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়াআলা বলেছেন,–
‘নবী, মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্টতর...’ [সূরা আহজাব, ৩৩/৬]
এই আয়াতের প্রাম্ভিক অংশে নবী (সাঃ)-কে মু'মিনদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়, তার ভালোবাসাকে অন্য সকলের ভালোবাসা অপেক্ষা উচ্চতর এবং নবী (স.)-এর আদেশকে তাদের সকল ইচ্ছা ও এখতিয়ার অপেক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছেন।
প্রাণীর জন্য প্রাণ বা জীবনই সবকিছু। দেহে যদি প্রাণই না থাকে, তবে সেই দেহের কোনোই দাম নাই। এজন্য বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটা প্রণীই সংগ্রাম করে। কারণ, নিজের জীবনের মূল্য নিজের কাছে অনেক বেশি দামি। অনেক বেশি প্রিয়। কিন্তু মু’মিনদের নিকট নিজের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয় মুহাম্মদ (স.)। নিজের জীবনকে অথবা অন্য কাউকে আমরা যতটা ভালোবাসি, এরচেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে মুহাম্মদ (স.)-কে। শুধু তাই নয়, অল ইন এভরিথিং– জান, মাল, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত লোক অপেক্ষাও অধিক প্রিয় হতে হবে। নচেৎ কেউ মুমিন হতে পারবে না।
আমার স্বার্থে কেউ যদি আঘাত হানে, আমার বিরুদ্ধে কেউ যদি কথা বলে, তখন কিন্তু আমি চুপ থাকি না। আমাকে কেউ যদি কটুক্তি করে কথা বলে, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, আমার চরিত্রে আঘাত হানে, আমি চুপ থাকতে পারি না। আমাকে কেউ যদি প্রাণনাশের হুমকি দেয়, আমি তখন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। আমার সন্তান, আমার স্ত্রী, আমার ভাই-বোন অথবা রক্তের সম্পর্কের কারো শরীরে কেউ যদি আঘাত করে, আমি তখন কাপুরুষের মতো বসে থাকতে পারি না। শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করি। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ক্রোধাদ্দীপ্ত হয়ে পড়ি।
সুতরাং, ফর ইভেন গ্রেটার রিজ্যনস– আমাদের রাসূলুল্লাহ (স.) যদি সর্বাপেক্ষা অধিক প্রিয়-ই হয়, তবে তার বিরুদ্ধে সামান্য কিঞ্চিত কটু-কথাও আমরা সহ্য করতে পারি না। যে নবী মুহাম্মদ (স.)-এর বিরুদ্ধে কটু কথা বলবে, তাকে গালমন্দ করবে, তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করবে, সেই ব্যক্তির জিভ ছিঁড়ে ফেলা হবে। যে নবী (স.)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার তার কোনো অধিকার নেই। মান সাব্বা নাবিয়্যান ফাক্বতুলু-হু! মান সাব্বা নাবিয়্যান ফাক্বতুলু-হু!
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,–
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আর ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি (ফিতনা) সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে। অথবা একদিকের হাত ও অপরদিকের পা কেটে ফেলা হবে, অথবা নির্বাসনে পাঠানো হবে। এটা তো ইহলোকে তাদের জন্য ভীষণ অপমান, আর পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তি রয়েছে’ [সূরা আল-মায়েদা ৫/৩৩]
[খ]
'...এবং তার স্ত্রীরা মুমিনদের মা স্বরূপ।’ [সূরা আহজাব, ৩৩/৬]
এখানে নবীপত্নীদেরকে ‘বিশ্বাসীদের মাতা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা শ্রদ্ধা ও সম্মানে এবং তাঁদেরকে বিবাহ না করার ব্যাপারে তাঁরা 'উম্মুল মু'মিনীন' বা মু'মিন নারী-পুরুষদের মাতা।
পবিত্র কুরআনে নবী (স)-এর স্ত্রীদেরকে ‘মুমিনদের মা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
নরমালাইজিং– একজন মায়ের সম্পর্কে কেউ যদি কটু কথা বলে কিংবা চরিত্রে অপবাদ দেয়, তবে সকল সন্তানেরই মাথা গরম হওয়া স্বাভাবিক। মুখে যা আসে তাই বলা স্বাভাবিক– ’তুই আমার মায়ের বিরুদ্ধে কেন বললি, তোকে আমি দেখে নেবো। তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো। ইত্যাদি...।’ এরকম প্রতিবাদ করা স্বাভাবিক ব্যাপার।
হযরত মুহাম্মদ (স.) আমাদের কাছে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি। এবং তার স্ত্রী উম্মুল মুমিনিন আইশাহ (রা.) মুমিনদের মাতা স্বরূপ। সুতরাং তাঁর অপমানে আমরা চুপ থাকতে পারি না। হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। আমাদের মায়ের নামে যে এতবড় জঘন্য অপবাদ দিবে এবং আমাদের প্রিয় ব্যক্তিকে নিয়ে যে কটু কথা বলবে, তাকে যে কোনোভাবেই হোক ক্বতল করবোই, এতে যদি আমাদের কিছু যুবকদেরকে টেরোরিস্ট উপাধি দিয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়, ঝুলবো।
কিয়ামতের মাঠে রাসূল (স) যদি আমাদের জিজ্ঞেস করেন যে, "তোমরা পৃথিবীতে ২০০ কোটি মুসলমান বসবাস করতে। তোমাদের দলের মধ্য থেকে কিছু লোক আমার সম্মানের উপর আঘাত হানার দুঃসাহস দেখিয়েছিল। সেই সময়ে তোমরা কী ভূমিকা পালন করেছিলে?"
সেদিন হয়তো আমরা কোন জবাব দিতে পারব না। যদি জবার দিই, হয়তো কাঁচুমাচু হয়ে এরকম বলবো যে, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমারা তেমন কিছুই করতে পারিনি। আমরা দূর্বল ঈমানদারের মতো কাজ করেছি। আমরা জ্বালাময়ি বক্তব্য দিয়ে প্রতিবাদ করেছি। আমরা কাপুরুষের মতো বদ্ধঘরে বসে থেকে তাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছি অথবা ‘পণ্য বয়কট’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার ফেসবুকের পাতা গরম করে ফেলেছি।’
ওয়াল্লাহি– সেদিন যদি রাসূল (স) আমাদের দিকে ঘুরেও না তাকান, অথবা আমাদের উপর অভিমান করে থাকেন।
ঠিক সেই মুহূর্তে গাজী ইলুমুদ্দিনের মতো উম্মাহর সিংহরা সেদিন হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে বলতে পারবে, "ইয়া রাসূলুল্লাহি! আপনার সম্মানের উপর যখন আঘাত হানা হচ্ছিল, আপনাকে নিয়ে যখন উপহাস করা হচ্ছিল, তখন পৃথিবীর কিছু মুসলমান ঘুমিয়ে ছিল। কিছু মুসলমান রাজপথে প্রতিবাদ করেছিল। এবং নামধারী কিছু আলেমরাও তখন ফতোয়া দিয়েছিল– 'না, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। বিচার সরকার করবে।' এই বলে তারা আমাদেরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু না, আমারা থেমে থাকিনি। আমরা আপনার পাগল প্রেমিক! আমরা আপনার জন্য আমাদের হাতে যা ছিল তাই নিয়ে বের হয়ে গিয়েছি এবং আপনার শত্রুদের উচিত দিয়েছি। আপনার বিরুদ্ধে চরম অবমাননাকর বই ‘রঙ্গিলা রসূল’ নামক একটি বইয়ের প্রকাশক রাজপালকে ক্বতল করেছি। এবং হাসিমুখে ফাঁসির দড়িতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি।
ইয়া রাসূলুল্লাহি! ভারতীয় এক নারী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আপনাকে এবং আইশাহ (রা.)-কে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিল। কটু মন্তব্য করেছিল। প্রতিবাদের উত্তাল ঢেউয়ে সারা পৃথিবী তখন উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভারতীয় আদালত তাদের কোনো শাস্তি দেইনি। তাই আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকিনি। নুপুর শর্মা ও নবিন জিন্দলকে যথাপুযুক্ত শিক্ষা দিয়েছি।
সেদিন বাংলার কিছু সিংহ-যুবকরাও হাসিমুখে বলবে, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহি! আমরা আপনার অপমান সহ্য করতে পারিনি। বাংলার জমিনে কিছু নাস্তিক মুরতাদরা ফেসবুক-ব্লগে আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করতো, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে লেখালেখি করতো, আপনাকে গালমন্দ করতো, আপনার নামে কটু কথা বলতো, আপনার এবং আপনার স্ত্রীদের চরিত্রে আঘাত হেনে চরম মিথ্যাচার করতো, আমরা তাদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়েছি। জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়েছি– 'অভিজিৎ রায়, রাজিব হায়দার ওরফে থাবা বাবা, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ, জুলহাজ মান্নান, মাহবুব রাব্বি তনয়, নাজিম উদ্দিন সামাদ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে। এরা সবাই ছিল আপনার দুশমন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে এরা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিল।'
তখন হয়তো বাংলার কতিপয় কিছু রাসূল প্রেমিক সমস্বরে বলে ওঠবে– “তারা সঠিক বলেছে। হ্যাঁ, কতিপয় সিংহ-যুবকদের ভয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে জার্মানে ভিক্ষা করতে চলে গিয়েছিল আসিফ মহিউদ্দীন এবং ভারতে ভিক্ষা করতে গিয়েছিল তসলিমা নাসরিন। আর তাদের সহযোগী ভিক্ষুক ছিলেন আসাদ নূর ও মুর্তাদ আব্দুল্লাহ মাসুদ-সহ প্রমুখ নাস্তিকরা।”
সে-সময় ফরাসি কিছু সিংহ-যুবক হয়তো বলতে পারবে, ইয়া রাসূলুল্লাহি! ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক সাময়িকী ‘শার্লি হেবদোর’ আপনাকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কুরুচিকর চিত্র অঙ্কন করতো। শার্লি হেবদো ম্যাগাজিনে আপনাকে নিয়ে ছাপা সেসব কার্টুনে দেখে আমরা অনেক ক্ষুব্ধ হয়েছি। অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমাদের কলিজায় আঘাত লেগেছে। হৃদয় ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে। আমরা সহ্য করতে পারিনি। আমরা তাদের মধ্য হতে ১১জনকে উচিত শিক্ষা দিয়ে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়তো তখন অনেক আনন্দিত হবেন। খুব খুশি হবেন। আর হয়তো বলবেন– ‘সাব্বাস, আমার সিংহরা! সাব্বাস, আমার সিংহরা!’
হে বাংলার তরুণ সম্প্রদায়! তোমরা সেই যুবকদের সন্ত্রাসী মনে করো? না না, এরা সন্ত্রাসী নয়। এরা হচ্ছে নবীজি (স)-এর ইজ্জতের অতন্দ্র প্রহরী। এরা হচ্ছে– খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরী, আব্দুল্লাহ বিন আতিক ও মুহাম্মদ বিন মাসলামার মুক্ত পথিক। এরা রাসুলুল্লাহ (স.) আদর্শে গড়ে ওঠা যুবক। এবং এরাই তরুণদের আদর্শ। যারা রাসূলুল্লাহর সম্মানের জন্য জীবন দিতে পারে তাদের চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কে হতে পারে? এজন্যই তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, 'কুল ইন কুনতুম তুহিব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবিয়ুনি ইহব্বিকুমুল্লাহ।' [আল-কুরআন, ৩/৩১]
.
“নবীজি (স)-এর ইজ্জতের অতন্দ্র প্রহরী”
–‘কাওছার হাবীব’
©somewhere in net ltd.