![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ বেঞ্চে বসে আছি। ক্লাসে স্যার ঢুকেই আমাকে পড়া জিজ্ঞেস করে বসলো!! আমি উল্টাপাল্টা বলতে থাকলাম কিন্তু স্যার খেয়াল করেনি। কারন ওনি সাদিয়ার কাছ থেকে তার আম্মুর নাম্বার চেয়ে নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই আমার পড়াটা নাম্বারে কনভার্ট হয়ে গেল। বলতে লাগলাম ০১৭১৩.......
_এই ছেলে কি বলো এসব!! মাথা নষ্ট হয়ে গেছে নাকি!! বসো।
.
সাদিয়াকে আমি খুব পছন্দ করতাম, তাই নাম্বারটা মুখস্ত করে রেখে দিয়েছি। কিছুদিন পর ফোন করে যা ফেইস করলাম......
.
-সাদিয়া আমি তোরে খুব ভালবাসি। তোর সাথে প্রেম করতে চাই।
-কুত্তা, বিলাই, ছাগল নিজের চেহারা কখনো আয়নায় দেখেছিস? বান্দর কোথাকার!!!
.
সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম! আসলে কষ্ট পাওয়ারেই কথা, তখনো আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি!! এই বয়সেই বিরহ বিচ্ছেদ!!!
আহ্ কি কষ্ট, কি যন্ত্রণার...(হাস্যকরও বটে)।
.
দুজন অবশ্য একসাথেই পড়তাম। মেয়েটা অহরহ প্রেমপত্র পেয়ে যথেষ্ট চালাক হয়ে-গিয়েছিলো। কিন্তু আমি ছিলাম জগতের সবচাইতে বড় বোকা।
.
তখন পৃথিবীর সেরা বিরহী ভাবতাম নিজেকে, স্ব বিরহের কাছে লাইলী মজনুকেও তুচ্ছ মনেহতো!!! খুব কষ্টেই কাটছিলো দিনকাল। তারপর থেকে মানসিক উন্নতির সাথে-সাথে আবেগের ঘোরটাও কেটে গেলো......
.
৩বছর পর ক্লাস টেন এ উঠে ওসব কিছু আমার একদমই মনে নেই। সাদিয়াকে বোনের মতো দেখি, শুধু ওকে না ক্লাসের সমস্ত মেয়েকেই। সবাই আমাকে খুব পছন্দ করতো। দুইদিন আমাকে স্কুলে কিংবা প্রাইভেটে না পেলে একদম বাড়িতে চলে যেতো। বেশ কয়েকবার গিয়েছেও......
.
হঠাৎ ১দিন প্রাইভেট মিস হয়েছিলো, পরেরদিন গিয়ে দেখি সবাই আমার উপর রাগ! দীপান্বিতা বলতেছে, এই পাগল তুই জানিসনা তোকে দেখা ছাড়া আমরা একটাদিনও থাকতে পারিনা। কিন্তু কষ্টের বিষয় হলো আজ দীর্ঘ তিনবছর ধরে ওদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই!!!
.
একটাবারও কি তোদের ইচ্ছে হয় না আমার খোঁজখবর নিতে?!! জানি হয়, তবুও সম্ভব না। কারন তোরা ত এখন স্বামী, সন্তান নিয়ে সংসারের কাজে ব্যস্ত। যাইহোক সুখে থাকিস।
.
.
আবারো ক্লাস টেন এ......
ইদানিং দেখছি সাদিয়া লেখাপড়ায় খুবই অমনোযোগী! প্রাইভেটে বসে সবসময় আমার দিকে চেয়ে থাকে। যে মেয়েটা একসময় ভালো ছাত্রীদের কাতারে ছিলো সে এখন লেখাপড়ায় একদম গোল্লা!!!
তবুও এভাবেই চলছে......
.
টেস্ট পরীক্ষার ১মাস আগে!!
একদিন রাতে আমি রাস্তা দিয়ে হাটতেছি। হঠাৎকরেই মুঠোফোনে একটা মেসেজের শব্দ হলো, গুরুত্বহীনভাবে দেখতে গিয়ে চমকে গেলাম!!!
__"আর পারছি না আমি বিষয়টা চেপে রাখতে। তুমিও-যে কেমন বুদ্ধু একটাবারোও বুঝার চেষ্টা করোনি! থাক, আর বুঝতে হবেনা, এবার তোমাকে বুঝিয়ে বলছি, শুনো,,,
আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি....."
.
মেসেজটা পড়তেই মাথাটা একটা ঘুরান্টি মারলো!!! এ'কি সাদিয়াকে ত আমি বোনের মতো দেখতাম। এসব উল্টাপাল্টা অনেককিছু ভাবতেছি, এদিকে ও ফোনের উপর ফোন দিয়েই যাচ্ছে। না, এখন রিসিভ করা যাবে না। মেয়েটা ইমোশনালি কি-না কি করে বসে!! পরে আবার ঝামেলা।
.
কিছুদিন পর ওকে খুব ভালো করে বুঝালাম, জানি কাজ হয়নি তবুও সাদিয়া হাসিমুখে সব মেনে নিলো। এরপর থেকে মেয়েটার প্রতিটি ফিলিংস আমি বুঝতে পারি, কিন্তু বুঝলেও লাভ নাই, যা সম্ভব না! তা নিয়ে মাথা ঘামানো বোকামি।
.
আর "সম্ভব না" এজন্য বলছি, কারন আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে। তাও আবার বড় ছেলে! আমার অনেক দায়িত্ব, প্রেমটেম নিয়ে ভাবলে কপালে কষ্ট আছে!!!
.
২মাস পর পরীক্ষা চলে এলো!!! কেন্দ্র দূরে থাকায় ওরা ৮জন মিলে একটা গাড়ি ঠিক করলো যার মধ্যে আমিও একজন। প্রথমে খেয়াল করিনি দুএকদিন যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম, আমার প্রতি সাদিয়ার অস্বাভাবিক দূর্বলতা। প্রতিদিন যেকোনোভাবেই হোক মেয়েটা আমার সাথে বসবে, আমি যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখলেও ও আমার দিকে চেপে বসবে। মনেহয় আমি তার কতোইনা আপন। সত্যিই মেয়েটা পাগল!!!!
.
অবশেষে পরীক্ষা শেষ হলো, কিন্তু আমার প্রতি সাদিয়ার আবেগ এখনো শেষ হয়নি। একটু সুযোগ পেলেই মায়ের ফোন দিয়ে কল করে যত্তোসব পেচাল। এসব ফেইস করে আমি ওকে একদিন দেখা করতে বললাম.....
__দেখ সাদিয়া, তুই যা চাইছিস তা কিন্তু ঠিক না। ওসব আবেগ প্যাকেটিং করে পুকুরে ফেলেদে। তোরা আমাদের চাইতে অনেক ধনী তারচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমরা সমবয়সী! কিছুদিন পরেই তোর বিয়ে হয়ে যাবে! তখন না পারবো বিয়ে করে তোকে খাওয়াতে, না পারবো ভুলে যেতে। মাঝ নদীতে পড়ে অযথাই তিনটা জীবন হবে নষ্ট!!!
.
সাদিয়া নির্বাক হয়ে শুধু শুনছে। তারপর একদিন ওদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছি, লক্ষ্য করলাম অনুষ্ঠান। একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,
__ভাইয়া এই বাড়িতে কিসের এতো আয়োজন?
__আজকে সাদিয়ার বিয়ে!!!
.
কিছুটা থমকে গেলাম! পরে ভাবলাম, নাহ্ ঠিক আছে। আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। আমি ত এটাই চেয়েছিলাম।
.
অতঃপর বাড়িতে গিয়ে আনমনে মোবাইল টিপতেছি হঠাৎ ইনবক্সে ডুকে আঁতকে গেলাম! সাদিয়ার নাম্বার থেকে মেসেজ....
"তুমি ১ঘন্টার মধ্যে না আসলে আমি আত্মহত্যা করবো"
.
কিন্তু ততক্ষণে দুই ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছিলো। আমি পাগলের মতো ওর বাড়ির দিকে ছুটলাম, গিয়ে দেখি সাদিয়া বধুর সাজে নয়, লাশ হয়ে শুয়ে আছে!!!!
.
.
.
.
________স্কুল জীবনের ভুল________
©somewhere in net ltd.