নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিতাব-বই বিষয়ক তথ্য আদান প্রদান। আর বিভিন্ন সময় নিজের কিছু লেখা লিখব ইনশাআল্লাহ।

কিতাব ভুবন

কিতাব ভুবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাইবেল সংশোধন : কিছু কথা (দ্বিতীয় কিস্তি)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩৫

এক. প্রক্ষিপ্ত পদ

হার্টজেল স্পেন্সের উল্লেখিত ভুল তিনটি ছিল, যোহন সুসমাচারের ৭ : ৫৩ থেকে ৮ : ১১ পদ, মার্ক সুসমাচারের ১৬ : ৮-২০ পদ এবং ১ যোহন ৫ : ৭-৮ পদদুটি। অর্থাৎ এ পদগুলো বাইবেলে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে। বাইবেলের পুরাতন পাণ্ডুলিপিতে এগুলো নেই। আর প্রবন্ধকারের দাবি অনুযায়ী বাইবেলের আধুনিক অনুবাদগুলোতেও এগুলোকে সংশোধন করা হয়েছে। অন্য ভাষায়, বাইবেল থেকে পদগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।
অথচ পাঠক বাংলা বাইবেলের কোনো একটি কপি হাতে নিয়ে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো দেখুন, উপরোক্ত পদগুলো আজও বাইবেলে বিদ্যমান। এমনকি মঙ্গলসমাচারে পাদটীকায় সেগুলোর প্রক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে স্বীকার করেও পদগুলো আপন জায়গায় বহাল রাখা হয়েছে। একি এ জন্য যে, এগুলো বাদ দিলে খ্রিস্টানদের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসই প্রমাণহীন হয়ে পড়বে?

প্রথম ভুলটি যোহন সুসমাচারের ৭ : ৫৩- ৮ : ১১ পদ সম্পর্কিত। বাংলা বাইবেল থেকে তা উদ্ধৃত করছি।


“এর পরে লোকেরা প্রত্যেকে যে যার বাড়ীতে চলে গেল, কিন্তু ঈসা জৈতুন পাহাড়ে গেলেন। ...

‘হুযুর, এই স্ত্রীলোকটি জেনায় ধরা পড়েছে। তৌরাত শরীফে মূসা এই রকম স্ত্রীলোকদের পাথর ছুঁড়ে হত্যা করতে আমাদের হুকুম দিয়েছেন। কিন্তু আপনি কী বলেন?’...

‘আপনাদের মধ্যে যিনি কোনো গুনাহ্ করেননি তিনিই প্রথমে ওকে পাথর মারুন।’ এর পরে তিনি নীচু হয়ে আবার মাটিতে লিখতে লাগলেন।...

স্ত্রীলোকটি জবাব দিল, ‘জ্বী না হুযুর, কেউই করেননি।’

তখন ঈসা বললেন, ‘আমিও করি না। আচ্ছা যাও; গুনাহে জীবন আর কাটায়ো না।’”
(যোহন ৭ : ৫৩-৮ : ১১, ধর্ম্মপুস্তক, ১৮৬৬ ইং; যোহন ৮ : ১-১১, ধর্ম্মপুস্তক, ১৮৭৭ ইং; যোহন ৮ : ১-১১, ধর্ম্মপুস্তক, ১৯০৯ ইং; যোহন ৭ : ৫৩-৮ : ১১, মঙ্গলবার্তা, ১৯৮৫ ইং; যোহন ৮ : ১-১১, পবিত্র বাইবেল, বি.সি.বি ২০০০ ইং; যোহন ৮ : ১-১১, নতুন নিয়ম, বি.বি.সি ২০০১ ইং; ইউহোন্না ৮ : ১-১১, ইঞ্জিল শরীফ, বি.সি.বি ১৯৮০ ইং; ইউহোন্না ৮ : ১-১১, কিতাবুল মোকাদ্দস, বি.সি.বি ২০০৬ ইং; যোহন ৭ : ৫৩-৮ : ১১, জুবিলী বাইবেল, ২০০৬ ইং বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)


ব্যভিচারের শাস্তি রহিতকরণ সম্পর্কিত বাইবেলের এ বর্ণনা সম্পর্কে "50,000 Errors in the Bible?" প্রবন্ধের লেখক বলেন, “‘সিনেইটিক ম্যানুস্ক্রিপ্ট’, ‘১২০৯ নং ভ্যাটিক্যান ম্যানুস্ক্রিপ্ট’ এবং ‘সিনেইটিক সিরিয়াক কোডেক্সে’ (বাইবেলের প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে) এই কথাগুলো (উল্লেখিত পদগুলো) নেই।

জেনে রাখা ভালো যে, ‘সিনেইটিক’ এবং ‘১২০৯ নং ভ্যাটিক্যান ম্যানুস্ক্রিপ্ট’ হচ্ছে চতুর্থ শতাব্দিতে বিদ্যমান সবচে প্রাচীণ দু’টি পাণ্ডুলিপি। এই শ্লোকগুলো পাওয়া যায় ষষ্ঠ শতাব্দীর ‘কোডেক্স বিজায়’ চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীর ‘ল্যাটিন ভালগেত’ এবং ষষ্ঠ শতাব্দীর ‘জেরুজালেম সিরিয়াক ভার্সনে’। কিন্তু যেহেতু সর্বপ্রাচীন গ্রীক পাণ্ডুলিপিগুলোতে এই পদগুলো নেই সেহেতু এগুলোর উৎপত্তি সন্দেহজনক।”

পদগুলো সম্পর্কে মঙ্গলবার্তার টীকাকার লেখেন, “(৭ : ৫৩-৮ : ১১) যেসব গ্রীক পাণ্ডুলিপি সবচেয়ে প্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য বলে গৃহীত, সেগুলির শুধুমাত্র একটিতেই এই কাহিনীর উল্লেখ আছে।... গ্রীক মণ্ডলীর প্রাচীন মহাচার্যদের কোনো রচনায় এর উল্লেখ নেই,... আজকাল প্রায় সকলেই মনে করেন যে, এই অংশটি সাধু যোহনের (যোহন সুসমাচারের লেখকের) লেখা নয়। এটি কার লেখা, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।” (মঙ্গলবার্তা, পৃষ্ঠা ২৬৭, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৯৮৫, জেভিয়ার প্রকাশনী ৩০, পার্ক স্ট্রীট, কলিকাতা)
যোহন সুসমাচারের ৭ : ৫৩-৮ : ১১ পদগুলোর প্রক্ষিপ্ত হওয়ার এত স্বীকারোক্তির পরও খ্রিস্টান পণ্ডিতগণ বাইবেলের এ ভুলটি সংশোধন করেননি। আগেকার বাইবেলের বাংলা অনুবাদকগণ পদগুলোকে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে লিখতেন এবং টীকায় প্রক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করতেন- যাতে পাঠক বুঝতে পারেন যে, বিষয়টি সন্দেহজনক। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলা বাইবেলে না আছে তৃতীয় বন্ধনী, না আছে কোনো টীকা। তবে তারা বাড়তি আরেকটি কাজ করেছেন, যোহন সুসমাচারের ৭ : ৫৩ পদটিকে ৮ : ১ পদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে ৭ অধ্যায়কে ৫২ পদেই শেষ করেছেন।

চলবে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.