![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের রক্তের গ্রুপ ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয় এর পদ্ধতি
-
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই ফ্রান্সে এবং পরে ইংল্যান্ডে মানুষ থেকে মানুষে রক্তদান প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দাতা (donor) ও গ্রহীতার (recepient) রক্তের মধ্যে কোনরুপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া না হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে মারাত্মক বিরুপ প্রতিক্রিয়ার
ফলে গ্রহীতা অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যুমুখে পতিত হত। মানব দেহের বাইরে দাতা ও গ্রহীতার রক্ত মিশ্রিত
করে দেখা গেছে যে কোন কোন ক্ষেত্রে উভয়ের রক্ত সম্পূর্ণভাবে না মিশে কণিকাগুলো পরস্পর জড়িয়ে যায়। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের রক্ত সম্পূর্ণ ভাবে মিশে যায়। ড. কার্ল
ল্যান্ডস্টেইনারের (Dr. Karl Landsteiner)
(১৯০১) গবেষনার পূর্ব পর্যন্ত এর কোন সঠিক কারণ না ছিল না।
ABO রক্ত গ্রুপঃ
ড. কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের গবেষনায় প্রমাণিত হয় যে, মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় (লোহিত রক্ত কনিকার প্লাজমামেমব্রেনের বাহিরের দিকে বা RBC এর গায়ে লেগে থাকে) A ও B নামক দুই ধরনের এন্টিজেন বা এগলুটিনোজেন (Antigen or agglutinogen) পাওয়া যায় এবং রক্তের
তরল অংশ প্লাজমা বা সেরামে a
(এন্টি A ) ও b(Gw›U B ) নামক দুই প্রকার এন্টিবডি বা এগলুটিনিন (Antibody বা Agglutinin) পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো একই ধরনের Antigen এবং Antibody ( যেমন Antigen A ও Antibody a) পরস্পরকে
আকর্ষন করে এবং জমাটবদ্ধ হয়। তাইতো মানুষের শরীরে একই প্রকৃতির Antigen /Antibody উপস্থিত নেই। এক ধরনের এন্টিজেন থাকলে সেটা ব্যতীত
অন্যান্য এন্টিবডি গুলো থাকে। আর এতে করে রক্ত জমাটবদ্ধ হয় না। রক্ত সারা দেহে সঞ্চালিত হতে পারে। প্রতিটি এন্টিবডি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এন্টিজেনের সাথে বিক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম। অর্থাৎ এন্টিবডি a শুধুমাত্র এন্টিজেন B সাথে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম। রক্তে এই এন্টিজেন ও এন্টিবডির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে মানুষের রক্তকে ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। এই ধরনের রক্ত গ্রুপকে ABO রক্তগ্রুপ বলে।
১৯০০ ও ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এন্টিজেন AGes B এর ভিত্তিতে ল্যান্ডস্টেইনার A, B এবং O এই তিন ধরনের রক্তগ্রুপ সনাক্ত করেছিলেন। ল্যান্ডস্টেইনার এর ছাত্র ভ্যান ডেকাসটেলো এবং স্টার্লি ১৯০২ সালে ৪র্থ ধরনের i³MÖ“ÖcAB আবিষ্কার করেছিলেন। এ কারনে ল্যান্ডস্টেইনার ১৯৩০ সালে নোবেল পুরষ্কার পান।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য রয়েছে নানান পদ্ধতি। তবে ল্যান্ডস্টেইনার আবিষ্কৃত গ্রুপ নির্ণয়ের ABO পদ্ধতিটি শতকরা ৯৯.৫ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
লাল রক্ত কণিকায় এন্টিজেন A„ থাকলে রক্তকে A গ্রুপ , এন্টিজেন B
থাকলে রক্তকে B গ্রুপ, এন্টিজেন A ও
B থাকলে রক্তকে AB গ্রুপ এবং উভয়
এন্টিজেনই অনুপস্থিত থাকলে রক্তকে O
গ্রুপ বলা হয়।
রক্তের গ্রুপঃ
A+, A-, B+ ,B-, AB+, AB-, O+, O-
রেসাস রক্ত গ্রুপঃ
কোন কোন মানুষের রক্ত কণিকায় রেসাস বানরের অনুরুপ এন্টিজেন বা রেসাস এন্টিজেন বর্তমান। Rh এন্টিজেন এর উপর ভিত্তি করে মানুষের রক্তকেও দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা- Rh + বা রেসাস পজিটিভ এবং Rh - বা রেসাস নেগেটিভ।
আমরা সহজে বলতে পারি এভাবে- প্রতিটি গ্রুপ আবার পজিটিভ / নেগেটিভ এই দুইভাগে বিভক্ত। পজিটিভ/ নেগেটিভ নির্ধারক এই Rh factor টি প্রথম Rhesus প্রজাতির বানরে পাওয়া যায় বলে এর নামকরণ হয় Rh । যাই হোক Rh factor এর উপস্থিতি পজিটিভ এবং অনুপস্থিতি নেগেটিভ বুঝায়। এক গ্রুপের রক্ত অন্য গ্রুপধারী রোগীর শরীরে প্রবেশ করালে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে।
রক্তের এই ব্যতিক্রমী আচরণের উপর
ভিত্তি করে আবিষ্কৃত হয়েছে . Blood
Grouping Reagent| এগুলো তৈরী করা হয় মানুষের শরীরের প্লাজমাতে উপস্থিত
এন্টিবডি হতে।
এন্টিজেন Aঃ
Anti-Aঃ
এটি সাধারণত নীল রঙের হয়। স্লাইডে গ্রুপ জানতে আগ্রহী ব্যক্তির রক্ত নেয়া থাকে যেখানে এন্টিজেন রয়েছে। যেহেতু Anti-A„ উপস্থিতি নির্ণয় করে Blood Group `A` র। তাই নীল রঙের এই Anti-A সংগ্রহ করা হয় Blood Group `B` ধারী কোন ব্যক্তির প্লাজমা হতে যেখানে Antibody a আছে। যদি ঐ ব্যক্তির রক্তে এন্টিজেন A থাকে তাহলে তা নীল রঙের তরল বা Antibody a র সাথে যুক্ত হয়ে জমাট বদ্ধ হবে। Antigen A না থাকলে জমাটবদ্ধতা দেখা যাবে না।
Anti-B ঃ
এটি সাধারণত হলুদ রঙের হয়।
স্লাইডে গ্রুপ জানতে আগ্রহী ব্যক্তির রক্ত নেয়া থাকে যেখানে এন্টিজেন রয়েছে। যেহেতু Anti-B উপস্থিতি নির্ণয় করে Blood Group `B` র। তাই নীল রঙের
এই Anti-B সংগ্রহ করা হয় Blood Group `A` ধারী কোন ব্যক্তির প্লাজমা হতে যেখানে Antibody b আছে। যদি ঐ
ব্যক্তির রক্তে এন্টিজেন Antigen B থাকে তাহলে তা নীল রঙের তরল বা Antibody b র সাথে যুক্ত হয়ে জমাট বদ্ধ
হবে। Antigen A থাকলে জমাটবদ্ধতা
দেখা যাবে না।
Anti-Dঃ
বর্ণহীন এ তরলটি আধুনিক প্রযুক্তির
মাধ্যমে প্রস্তুত করা। রক্তে অনেক Rh
রয়েছে। তার মধ্যে Anti-D ই মুখ্য। রক্তে
Rh উপস্থিতি আছে কিনা তা নির্ণয়
করাই Anti-D এর কাজ। Anti-D উপস্থিত
থাকলে জমাটবদ্ধতা দেখা যাবে। আর
না থাকলে দেখা যাবে না।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ঃ
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ
1. কাচের স্লাইড
2. কটন বা তুলা
3. সিপরিট
4. ল্যান্সেট ( Optional)
5. সাদা কাপড় বা সাদা কাগজ
6. গ্লাস মার্কাস ( Optional)
7. নরমাল স্যালাইন ( Optional)
8. মাইক্রোস্কোপ ( Optional) ও
9. নিডিল
10. ঝুড়ি ( ব্যবহৃত নিডিল, কটন সহ অপ্রয়োজনীয় ময়লা রাখার জন্য) প্রয়োজনীয় সংখ্যক।
11. পানি সহ গামলা বা পাত্র ( ব্লাড গ্রুপিং এর ব্যবহৃত স্লাইড রাখার জন্য) প্রয়োজনীয় সংখ্যক।
12. স্যাভলন
13. গ্লাভস
14. লাল ও কালো কালির কলম
রাসায়নিক দ্রব্যাদিঃ সেরাম Anti-A,
সেরাম Anti-B, সেরাম Anti-D
পদ্ধতিঃ
রক্ত গ্রুপ র্নিণয় টেবিলঃ রক্তগ্রুপ নির্ণয় টেবিল এর উপরে সাদা কাপড় বা সাদা কাগজ দিতে হবে যেন গ্রুপিং নির্ণয়ে সুবিধা হয়। প্রয়োজনীয় উপকরন সঠিক ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। কয়জন পিকার এবং কয়জন টেকনিশিয়ান তা অনুসারে টেবিল সাজাতে হবে।
স্লাাইডে রক্ত গ্রহনঃ রক্ত গ্রুপ জানতে আগ্রহীর কাছ থেকে গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য যিনি রক্ত সংগ্রহ করেন তাকে আমরা পিকার বলি। পিকার সর্বপ্রথম নিজ দুই হাত সম্পূর্ণ ভাবে স্পিরিট দ্বারা জীবানু মুক্ত করে নিবে এবং প্রয়োজনে হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করবে। পিকার পরিস্কার জীবানু মুক্ত একটি স্লাইড নিবেন। প্রথমে রক্তগ্রুপ নির্ধারণযোগ্য ব্যক্তির হাতের আঙুলের ডগা (তুলাতে স্পিরিট লাগিয়ে) স্পিরিট দ্বারা জীবানুমুক্ত করতে হবে। যে আঙুল থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হবে সেটি খুব সুন্দর ভাবে ধরতে হবে। তার পর নতুন জীবানুমুক্ত একটি নিডিল দিয়ে আঙুলের ডগায় পিক করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পিক করা যেন খুব সাবধানে হয় । খুব জোরে বা ব্যাথা লাগতে পারে এমন ভাবে পিক
করা যাবে না । কথা বলে তাকে ব্যস্ত
রাখতে হবে যেন ব্যাথা খুব বেশী অনুভব করতে না পারে।
এরপর স্লাইডটিকে সমান তিনটি
অংশে কল্পনা করে প্রতিটি ভাগের মধ্য বরাবর প্রয়োজন মতো তিন ফোটা রক্ত নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোন ভাবেই যেন আঙুল স্লাইডে স্পর্শ না করে। খেয়াল রাখতে হবে যেন খুব বেশী পরিমান রক্ত প্রতি ফোটায় না পড়ে। এ ব্যাপারে টেকনিশিয়ান এর পরামর্শ নিতে হবে।
রক্ত স্লাইডে সংগ্রহের পরে উক্ত ব্যক্তির টোকেন সহ স্লাইডটি টেকনিশিয়ান এর দিকে সাবধানে এগিয়ে দিতে হবে।
গ্রুপিংঃ
যিনি রক্তের ফোটার সঙ্গে রি- এজেন্ট মিশ্রিত করে রেজাল্ট প্রদান করেন তিনি টেকনিশিয়ান।
স্লাইডের তিন ফোটা রক্তের
সর্ববামে প্রথম ফোঁটা রক্তের সাথে Anti-A (নীল রঙের), মাঝের ফোঁটার সাথে Anti-B ( হলুদ রঙের) এবং সর্বডানে তৃতীয় ফোঁটা রক্তের সাথে Anti-D(বর্নহীন) যোগ করি । রি-এজেন্ট এর ফোঁটাগুলো খুব সাবধানে নিতে হবে যেন রি-এজেন্ট এর ড্রপার রক্তের ফোঁটার সাথে কোন ভাবেই না লাগে, যদি লেগে যায় তাহলে এটি বোতলে রি-এজেন্টকে নষ্ট করে দিবে। এরপর রি-এজেন্ট এর সহিত রক্ত মিশানোর জন্য পূর্বে ব্যবহৃত নিডিল খাপ সহ সাবধানে ব্যবহার করতে পারি। ব্যবহারের সময় নিডিল এর তিন অংশ দিয়ে তিন ফোঁটা রক্তের সাথে রি-এজেন্ট মিশ্রিত করতে হবে। এর পর স্লাইডটিকে
সাবধানে ধীরে ধীরে নাড়তে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে নাড়ানোর ফলে যেন কোন ফোঁটা অন্য ফোঁটার সাথে না মিশে।
কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে রক্তের
সাথে সেরামের বা রি-এজেন্ট এর বিক্রিয়ায় অ্যাগ্লুটিনেসন (agglutination, জট পাকানো ) হয়েছে কিনা এবং তা দেখে এর ফলাফল র্নিণয় করতে হবে।
= অ্যাগ্লুটিনেসন হয়েছে
( জট পাকানো ); =অ্যাগ্লুটিনেসন হয়নি( জট পাকায় নাই )।
সতর্কতাঃ
1. পিকারকে সতর্ক থাকতে হবে পিক
করতে গিয়ে নিজের হাতে নিডিল এর
আঘাত না লাগে।
2. টেকনিশিয়ান অবশ্যই মনোযোগী হবে
কারন তার অমনোযোগীতায় ভূল ফলাফল আসতে পারে।
3. চীপকে মান্য করতে বাধ্য থাকবে।
4. যে কোন প্রয়োজনে শুধু মাত্র চীপের
সাথে কথা বলবে।
5. পাশাপাশি গল্প বা মোবাইলে কথা
বলা নিষিদ্ধ।
ক্লোজিং টেকনিশিয়াল টেবিলঃ
1. গ্রুপিং শেষে টেবিলের প্রয়োজনীয়
উপকরন প্যাকিং ও গুছিয়ে রাখা, দ্রুত
রি-এজেন্ট ফ্রিজে রাখার ব্যবস্থা করা।
2. চীপের সাথে টেকনিশিয়ান টেবিলের ইভিউলিশন করা ও প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করা।
3. শিক্ষানবীশ থাকলে তার কাজের
মূল্যায়ন নিয়ে কথা বলা।
4. পাত্রে রাখা স্লাইড গুলো জীবানুমুক্ত ও পরিস্কারের ব্যবস্থা করা , অন্যের জন্য ফেলে না রেখে নিজেই করা।
5. ইভিউলিশনে প্রোগ্রামের ভাল দিকগুলো ও প্রয়োজনীয় কথা গুলো উপস্থাপন করা।
স্লাইড পরিষ্কারঃ
স্লাইড গুলো পূনরায় ব্যবহারের জন্য উত্তম রুপে পরিস্কারের প্রয়োজন। এ জন্য প্রথমে কয়েকবার পানি পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। এর পর গরম পানি সহ স্পিরিট বা স্যাভলনে তিন দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে যেন জীবানু মুক্ত হয়। তারপর পানি পরিবর্তন করে স্পিরিট সহ তুলা দ্বারা স্লাইড উভয় দিক ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। পানি থেকে তুলে শুকাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন স্লাইডে পানির দাগ না থাকে।
সর্তকতাঃ
1. অবশ্যই সাবধানে করতে হবে যেন হাত থেকে পড়ে স্লাইড ভেঙে না যায়।
2. হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
3. হাত স্লাইডের আচড়ে যেন কেটে না যায়।
নিডিল পুড়িয়ে ফেলাঃ
ব্যবহৃত নিডিল ও টেকনিশিয়ান টেবিলের ময়লা একটি গর্ত করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং মাটি চাপা দিতে হবে। সতর্কতার সাথে করতে হবে যেন ব্যবহৃত নিডিল একটিও বাইরে না থাকে।
পরামর্শঃ
টেকনিশীয়ান ও পিকাদের জন্য অবশ্যই
নিম্নোক্ত ভ্যাকসিন নেয়া অতীব জরুরী
হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি, প্রভৃত।
©somewhere in net ltd.