![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বোকা একজন মানুষ। খুব সহজেই যে কাউকে বিশ্বাস করে ফেলি। ভালো মানুষ ছিলাম না কোন কালেই, তবে নিষ্ঠুর মানুষ হওয়ার চেষ্টারত........।
আজ সেই ভয়াল ২৯শে এপ্রিল।১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল এর কথা মনে পড়লে মনের অজান্তে অশ্রুসিক্ত হয়।তখন ছোট ছিলাম,মনে নেই অনেক কিছু।এরপর কালের স্রোতে বয়ে গেল অনেকটা সময়।জীবনে ভাল খারাপের মিশেলে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।কিন্তু এতটা বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা আর কখনো হবে বলে আমার মনে হয়না।মৃত্যুকে এত কাছ থেকে সেই প্রথম দেখা।
বৈরী আবহাওয়া,ঘূর্ণি বাতাস।তখনো কি কেউ ভেবেছে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এমন একটা ভয়ংকর রাত।সন্ধ্যার পর পরই দেখলাম বিটিভি তে নিয়মিত অনুষ্ঠানের পরিবর্তে হামদ-নাত চলছে।আর কিছুক্ষণ পর পর ঘোষনা হচ্ছে আবহাওয়া বার্তা।আবহাওয়া বার্তায় ঘোষনা হলো ১০ নং বিপদ সংকেত।রাত বাড়ছে,তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঝড়ো বাতাস।বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ার সাথে ভেসে আসছে মানুষের আর্তচিৎকার।
ঝড়ের এমনই তান্ডব শুরু হল গাছ-গাছালী ভেঙ্গে পড়ছে ঘরের উপর।শুরু হল ঝড়ের নৃত্য।সবাই ভয়ে চিৎকার করে আল্লাকে ডাকছে।আর বাহিরে আকাশ তার সর্বশক্তি দিয়ে বার বার গর্জে উঠছে।ঘরটা এমনই ভাবে কেঁপে উঠছে,মনে হচ্ছে এই বুঝি ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।এক একটা মিনিট মনে হচ্ছে অনন্তকাল।ভাবছি কখন শেষ হবে ঝড়ের তান্ডব।দেখবো তো সকালের সূর্য্যটা ?
এক সময় ভোর হল।ঝড় ও থেমে গেল।লন্ড ভন্ড হয়ে গেল চির সবুজের আমার প্রিয় জন্মভূমি হাতিয়া।হাতিয়া তখন যেন এক মৃত্যুপুরী।শুনেছিলাম ৭১ এর যুদ্ধের পর সারাদেশ নাকি লাশের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল।২৯শে এপ্রিল ঝড়ের পর হাতিয়ার অবস্থাও হয়েছিল তাই।পথে পথে,রাস্তার পাশে,খালে বিলে সর্বত্র পড়েছিলো ক্ষত বিক্ষত লাশ আর লাশ।রাস্তা জুড়ে পড়ে ছিলো উপড়ে পড়া গাছ গাছালী,আর দুমড়ানো মুছড়ানো ঘর বাড়ী।বাতাস ক্রমশঃ ভারী হচ্ছিল লাশের গন্ধে।মানুষ যতটা না মরেছিলো ঝড়ে,তার চেয়ে বেশী মরেছিলো জলোচ্ছ্বাসে।কারণ হাতিয়ার অবস্থান যে মেঘনার তীরে।আপ্রাণ চেষ্টা করেও মানুষগুলো বাঁচতে পারেনি ২০/২২ ফুট জলোচ্ছ্বাস থেকে।
সারাদেশে প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোক প্রাণ হারায় এই জলোচ্ছ্বাসে।সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাতিয় সহ উপকূলীয় চরাঞ্চলগুলো। ২/৩ দিনের মধ্যে যথাসাধ্য সৎকার করা হল মানুষের লাশ।কিন্তু গরু ছাগলের মত অবলা প্রাণীগুলের সৎকারের দায়ভার নেয়নি কেউ।রাস্তার পাশে,খালে বিলে ছড়িয়ে ছিল পশু পাখির ফুলন্ত লাশ।কে করবে ওদের জন্যে,মানুষের বাঁচাটাই ছিল যে দায়ভার।স্বজনহারা,গৃহ হারা,বস্ত্রহীন মানুষগুলো নেমে পড়ে রাস্তায়।দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসে অনেক সাংবাদিক।মানুষ তখন চিৎকার করে বললো ছবি চাইনা,খাদ্য চাই,বস্ত্র চাই,বাঁচতে চাই।
এ দূর্যোগে যাদের কথা না বললেই নয়,বন্যার্তের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলো জাপান সহ বিভিন্ন বিদেশী সংস্থাগুলো।আসলে তখন ওরা এসেছিল আমাদের জন্য দেবদূত হয়ে।বিদেশী সংস্থাগুলো সাহায্যের হাত না বাড়ালে হয়তো এত দ্রুত এ জলোচ্ছাসের মোকাবেলা করা যেতনা।এখনো মানুষ স্মরণ করে সেই সকল দেবদূতদের।
তখন ভাবতাম আমার চির সবুজের হাতিয়া কি আবার পূর্বের রুপ ফিরে পাবে ? একদিন বিস্মিত হয়ে দেখলাম ডাল পালা ভাঙ্গা সেই গাছগুলোতে আবার নতুন করে পাতা গজালো।কিছু দিনের মধ্যে সতেজ হয়ে উঠলো গাছগুলো।বছর ঘুরতেই বুঝার উপায় ছিলনা কি ঘটেছিল ২৯শে এপ্রিল হাতিয়ার উপর।আমরাও স্বজনহারা বেদনা ও দূর্যোগের তান্ডব ভূলে আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলাম।প্রকৃতি এক বিশাল বিষ্ময়,তারচেয়ে বেশী বিষ্ময় আমাদের জীবন।
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
কলমি লতা বলেছেন: ধন্যবাদ মামা।শুভ কামনা রইল...........।
২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৩১
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন: সেই ভয়াল রাতে হাতিয়াতে মৃত্যু বরণ করা মানুষের জন্য শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
পোস্টের জন্য ++++++++++++++++
ভাই আমিও একজন হাতিয়ান।
হাতিয়া দীর্ঘজীবী হউক।
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০৫
কলমি লতা বলেছেন: ধন্যবাদ শোভন ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:০২
ফজলে আজিজ রিয়াদ বলেছেন: হাতিয়া দীর্ঘজীবী হউক।