নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হাসে হাহা হিহি করে। আর শয়তান হাসে উঁহুই হুইহুই রেএএ এভাবে। তো বুড়ো বটগাছের ডালে ডালে আজ উঁহুই হুইহুই রেএএ হাসির হুল্লোড় বয়ে যাচ্ছে। আজ শনিবার । প্রতি শনিবার রাতে এই গাছে শয়তানদের সভা বসে। বড় শয়তানের অধীনে আছে মেজো, সেজো আর ছোট শয়তান আর তাদের প্রত্যেকের অধীনে আছে আরো একপাল ছানা শয়তান । ছানাদের কাজ হচ্ছে মানুষের মনে হিংসা বিদ্বেষ অহংকার ছড়িয়ে দেয়া যাতে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের কষ্টের কারণ হয়। মানুষের যন্ত্রণা, কান্না আর কষ্ট দেখতে পেলে শয়তানদের মহা উল্লাস হয়। তারা সারাদিন ঘুরে ঘুরে মানুষের দুর্দশার খবর জোগাড় করে, নিজের নিজের ফাইলে খবরগুলো সাজায় আর সারা সপ্তাহের রিপোর্ট তাদের বসের কাছে দেয় আর বস সেগুলো বড় শয়তানের কাছে পেশ করে প্রতি শনিবারে। আজ সেই শনিবার। আজ শয়তানগুলোর এত উল্লাসের কারন আজ সবাই ভারী ভারী ফাইল নিয়ে এসেছে। সারা মাসধরে দুর্দশার যতগুলো রিপোর্ট করতে পারে আজ মাত্র একদিনেই ততগুলো রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। তাই কিছুক্ষণ পর পর শোনা যাচ্ছে - উঁহুই হুইহুই রেএএ....
বড় শয়তান হাততালি দিয়ে সভার কাজ শুরু করল। প্রথমে মেজো শয়তানের রিপোর্ট দেবার পালা। মেজো শয়তানের কাজ ছাত্রদের নিয়ে। ছাত্রদের লেখাপড়া থেকে দূরে রাখা, পড়াশোনা ছাড়া অন্য কাজে জড়ান, এমন অবস্থা তৈরি করা যে একজন ভাল ছাত্র পরীক্ষাই দিতে পারে না এসব করা মেজোর দায়িত্ব । "বল মেজো, আজ কয়টা ছাত্রর দুর্দশা হল? "
"উঁহুই হুইহুই রেএএ... অগুনতি ছাত্রের, বস। মজা যা হল আজ বুয়েটে। আজ ছিল ভরতি পরীক্ষা। বুয়েট থেকে কাল সারাদিন টিভিতে, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, এমনকি ছাত্রদের এস এম এস করে বলেছে যানজট থাকতে পারে, ছাত্ররা যেন অনেক আগেই পরীক্ষা দিতে আসে। মজাটা কি হল - সব ছাত্রই আগে রওয়ানা দিয়েছে কিন্তু অনেকেই দেরি করে পৌঁছানোয় আর পরীক্ষাই দিতে পারে নি। পরীক্ষা দিতে পারলে এরা নিশ্চিত চান্স পেত, একজন তো কোচিং সেন্টারের পরীক্ষায় সবসময় প্রথম পাঁচজন এর মধ্যে থাকত। উঁহুই হুইহুই রেএএ বুয়েটের বন্ধ গেটের শিক ধরে কি শূন্য চোখে তারা সিভিল বিল্ডিং এর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল! "
"দেরী হল কেন, যানজট? "
"আরে না! যানবাহনের অভাবে। আজ সকালে শহরে পাব্লিক পরিবহন ছিল না বললেই চলে। তাই অনেক পরীক্ষার্থী দীর্ঘ পথ হেটে পাড়ি দেয়। তাতে কেউ সময়মত এসে পৌঁছালেও ক্লান্তিতে ঠিকমত লিখতেও পারেনি। দেখোনা, শনিবার ছুটির দিন বলে যাত্রাবাড়ী থেকে বুয়েটে পৌঁছাতে অন্যসময় লাগে আধা ঘণ্টা, আর আজ এক পরীক্ষার্থী তিনঘণ্টা আগে রওয়ানা দিয়েও সময়মত পৌঁছাতে পারেনি যানের অভাবে। আরো মজা, এই ছেলেটা খুব ভাল ছাত্র হলেও খুব গরীব। মায়ের দুল বেচে কোচিং এ ভরতি হয়েছিল। খুব স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়বে। এখন পুরো পরিবার হতাশায় ডুবে গেছে। উঁহুই হুইহুই রেএএ...."
"গুড জব, মেজো! আর কোন ছাত্রের বারোটা বাজাস নি "
" বাজিয়েছি। বিশেষ করে যাদের এস এস সির টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। যানবাহনের অভাবে অনেকেই পরীক্ষা দিতে যেতে।পারে নি। যেসব স্কুল-কলেজ আজ খোলা ছিল তাদের বেশির ভাগই গানের আওয়াজে ঠিকমত পড়াতে পারে নি। "
"তোমার কি রিপোর্ট সেজো? তোমার কাজ তো রোগীদের ভোগান্তি বাড়ান আর কারো পটল তোলার ব্যবস্থা করা যেন পুরো পরিবার পথে বসে। তা কদ্দুর কি করলে? "
"ভেরি সাকসেসফুল । আমার ছানারা বিভিন্ন হাসপাতালে পোস্টেড ছিল। রিপোর্ট বলছে, অন্ততপক্ষে ছয়জন মারা গেছে যানবাহনের অভাবে ঠিক সময়ে হাসপাতালে না পৌঁছানোয়। অনেক ডাক্তার, নারস হাসপাতালে আসতে পারে নি তাই অনেক রুগী যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। উঁহুই হুইহুই রেএএ....."
"ছোট, তোমার ছানাদের রিপোর্ট কি? "
"আজ অনেক চাকুরীজীবীর বেতন কাটা যাবে অফিস কামাই করার জন্য। এরাও যানবাহনের অভাবে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারে নি। তাই সারাদিন এদের মনখারাপ ছিল - উঁহুই হুইহুই রেএএ...এছাড়া সারাদিন ধরে একই গান একটানা শুনে অনেকের মাথা ব্যথা হয়েছে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় যখন কেউ কেউ নামাজ পড়ছিল তখনি গান শুরু হওয়ায় তারা ঠিকমত নামাজও পড়তে পারেনি! উঁহুই হুইহুই রেএএ..."
"ওরে, আজ তোরা আমাকে কত ভাল খবর দিলি রে। তোদেরকেও আমি একটা ভাল খবর দেই। আজ কিন্তু আমাদের অনেক ভাই এর জন্ম হয়েছে। "
"কই, কোথায় আমাদের সেই ভাই? "
"আরে এরা হল অপচয়কারী ভাই। দেখিস নি আজ কত অপচয় হয়েছে! কোরআন শরীফে তো আছে অপচয়কারী শয়তানের ভাই। এই ভাইএরা অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে। যা যা, ভাইদের খুঁজে নে।"
বটগাছের ডালে ডালে ঝুলে শয়তানেরা তাদের সাফল্য উদযাপন করছে। আর নীচে তখন অনেক দুখী তরুণ স্বপ্নভংগের বেদনায় দীর্ণ হচ্ছে। আজকের মত এত আলোজ্বলা রাত তারা জীবনেও দেখেনি -তবু তাদের মনে হচ্ছে যেন তাদের জীবনের আধারতম রাত আজ শনিবার রাত।
(ছোটবেলায় পড়া গল্প অবলম্বনে)
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:০২
করুণাধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, পরিবেশবাদী ঈগলপাখি। এই অনুপ্রেরণাটুকুর বড় দরকার ছিল। ঠিকই বলেছেন, আমি নাহয় আমার মত লিখেই যাই।
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৭
মানবী বলেছেন: শুরু থেকে বটগাছকে বাংলাদেশ হিসেবে ভেবে নিয়েছিলাম আর সেই ভেবে নেয়া যেম পরবর্তী প্রটিটি লাইনের সাথে এমন ভাবে মিলে ধারনা ছিলোনা!
শনি আর রবি, দুঃখজনক হলেও বট গাছে শয়তানের ইদানীং " উঁহুই হুইহুই রেএএ " কোলাহল প্রতিদিন!
সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ করুণাধারা।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৩
করুণাধারা বলেছেন: সেদিন রাস্তায় যে দুর্ভোগ হয়েছিল তার দুঃখ থেকে এই পোস্ট রচনা। অজস্র ধন্যবাদ পড়ার এবং সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকুন সবসময় ।
৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: রূপক গল্প, সুন্দর।
শয়তানদের শয়তানি নিয়ে লেখা হলেও, ভাল লেগেছে। + +
২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৬
করুণাধারা বলেছেন:
ধন্যবাদ, বরাবরের মত মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।
এই লেখাটা খুব মন খারাপ করে লিখেছিলাম। সেদিন কোন ঘোষনা ছাড়াই পাব্লিক ট্র্যান্সপোর্ট বন্ধ করে দেয়ায় অনেক মানুষ অচিন্তনীয় দুর্দশায় পড়েন। তাদের কথা লিখতে গিয়ে এই রূপক গল্প।
প্লাসের জন্য আবারো ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩
পরিবেশবাদী ঈগলপাখি বলেছেন: লিখতে থাকুন। ব্লগে মৌলিক লেখার চর্চা একেবারে কমে গেছে, মানসম্মত ব্লগ পোস্ট তো আরো কম রিডার এর অভাবে। কিন্তু লিখে যান।