নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

করুণাধারা

করুণাধারা

জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো

করুণাধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই আন্দোলন

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৮

 হঠাৎ দেখি এলোমেলো ভাবে চলা সব গাড়িগুলো এক লাইনে চলছে, ডানদিকে একটা লেন খালি রেখে। ইউনিফর্ম পরা একটা ছেলে আমার গাড়ির সামনে আসলো, ড‍্যাসবোর্ডে রাখা লাইসেন্স দেখে ড্রাইভারকে বললো, "আঙ্কেল ডানদিকের লেনটা ইমারজেন্সি লেন, ওটা খালি রাখেন।" আজ সকাল সাড়ে দশটায় মানিক মিয়া এভিনিউ মুখী আড়ং এর সামনে আমার গাড়ি সিগনালে আটকা থাকলেও সেই ইমার্জেন্সি লেন দিয়ে তিন-চারটা অ্যাম্বুলেন্স সাঁ সাঁ করে ছুটে গেল, ছেলেগুলো হাত দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স গুলোকে সিগন্যাল দিচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে আমার কয়েক মাস আগের কথা মনে পড়ল। সেদিনও এভাবে রাস্তায়, এক গলির ভেতর আটকে ছিলাম। কারণ রাজপথ দিয়ে ভিভিআইপি যাবেন বলে গাড়ি তো দূরের কথা, মানুষকে রাজপথে হাটতেও দিচ্ছিল না। তখন দেখেছিলাম কয়েকটা এম্বুলেন্স থেমে আছে, থেমেই থাকল- প্রায় আধঘণ্টা পর  ভিভিআইপি চলে যাওয়া পর্যন্ত! যেইনা ভিভিআইপি চলে গেলেন, অমনি সমস্ত গলির ভিতর আটকে রাখা গাড়িগুলো একযোগে রাজপথে এল আর প্রচন্ড জ্যাম বাঁধিয়ে দিল, আটকা পড়লো অ্যাম্বুলেন্স। 

জানিনা ঢাকা শহরে, গাড়িকে লাইন করে, এভাবে ইমার্জেন্সি লেন তৈরি করে অ্যাম্বুলেন্স পার করাটা এই ছেলেগুলোকে কে শিখিয়েছে। এরা কাজটা এত নিপুণভাবে করল যে মনে হল দীর্ঘদিন ধরে ওরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে অভ্যস্ত!!এই ছেলে মেয়ে গুলোর বয়স কত? গড়ে সতের বা আঠারো, কিন্তু আমি স্কুল ইউনিফর্ম পরা ১২/১৩ বছরের শিশুকে পর্যন্ত দেখেছি গাড়িগুলোকে লেন ঠিক রাখার নির্দেশ দিতে ! বৃষ্টি শুরু হল, এই শিশু কিশোররা বৃষ্টির মধ্যেই তাদের কাজ করে যেতে লাগলো। আমার খুব আফসোস হলো। যদি সাথে কিছু চকলেট বিস্কুট রাখতাম! শাহবাগের আন্দোলনকারীদের তুলনায়  এরা নিতান্তই শিশু-সেই আন্দোলনকারীরা বিরানী, পিঠা, রকমারি খাবার পেতেন। অথচ এই বাচ্চাগুলোর না খেয়ে কাজ করছে- আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য।

সাড়ে ১১ টায় ফার্মগেটে দেখি একটা গাড়ি কে অনেক শিক্ষার্থী ঘিরে ধরে আছে, একসময় গাড়ির ড্রাইভার নেমে এসে এক শিক্ষার্থীর কলার ধরে তাকে মারতে যেতেই কয়েকজন এসে ড্রাইভার এর হাত ছাড়িয়ে নিল, কিন্তু কোন মারামারি করলো না, বরং তারা সমস্বরে হাততালি দিয়ে বলতে লাগলো "ভুয়া, ভুয়া।" ড্রাইভারকে তারা বাধ্য করলো গাড়ি ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে নিয়ে যেতে। সাধারণত যা হয়, মজা দেখতে সবাই সেখানে ভিড় করে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখলাম কয়েকজন ওই গাড়ির দায়িত্ব থাকলো, বাকিরা রাস্তায় গাড়িকে নির্দেশনা দিতে থাকলো। একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম ওই গাড়ি কেন আটকাল। "লাইসেন্স কাগজ কিছুই নাই গাড়িতে"। গাড়ি তে দেখলাম জাতীয় পতাকার দণ্ড লাগানো !! ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি পড়?" "তেজগা বিজ্ঞান কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ।"

এই ছেলেটা প্রশ্ন ফাঁস জেনারেশনের, যাদের সম্পর্কে আমার ধারণা ভালো কিছু ছিল না। কিন্তু আজ আমার ধারণা পুরোপুরি বদলে গেছে। এই ছেলেগুলোর নির্লোভ, পরিশ্রমী, প্রত্যয়ী মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করবে না, করতেই পারে না। এরা পারবে- আমার প্রাণ ভরা শুভকামনা রইল এদের প্রতি। যদি কোন অশুভ শক্তি এদের আঘাত হানে- প্রতিজ্ঞা করলাম আমিও চলে যাব তাদের পাশে। জানি দেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সকল মানুষ এই বাচ্চাগুলো পাশে এসে দাঁড়াবে।

অশ্লীল কথা লিখেছে বলে যারা হায় হায় করছেন, তারা কেবলই ছিদ্রান্বেষী।

যারা বলছেন ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত, তারা ভয় পেয়েছেন। আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবহন ব্যবস্থা যদি এই শিক্ষার্থীরা এভাবে ঠিক করে ফেলে, তবে বিভিন্ন ব‍্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান  এখন যেভাবে হাজার কোটি টাকা থেকে তুলছিল এই পরিবহন ব্যবস্থা থেকে, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।

রাস্তায় শৃঙ্খলা আনার জন্য কত কিছুই না করা দেখলাম!! একবার কয়েক শ কোটি টাকার cctv কেনা হল, উদ্দেশ্য যে গাড়ি lane ভাঙবে তাকে ফুটেজ দেখে ধরা হবে। আরেকবার দড়ি দিয়ে দিয়ে লেন ভাগ করা হলো- বাস, কার, ও সি এন জি- টেম্পুর জন‍্য আলাদা তিন লেন। কিন্তু সবকিছুই ব্যর্থ। মাঝখান থেকে কয়েকশো কোটি টাকা গেল। আমাদেরই করের টাকা। এই ছেলেগুলো কিন্তু রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনছে- একেবারে বিনা খরচে!

এই কদিনে গণপরিবহন না থাকায় চলাচলে খুবই কষ্ট হচ্ছে। খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এটুকু আমাদের মেনে নিতেই হবে কারণ ভালো কিছু পেতে গেলে কিছু ত‍্যাগ তো করতেই হবে। এর আগে কি পরিবহন মালিকেরা কথায় কথায় পরিবহন বন্ধ করেননি? আমরা কি মেনে নেই নি? এই তো কিছুদিন আগে, এক খুনি ড্রাইভারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় পরিবহন মালিকরা পরিবহন বন্ধ করে রাখলেন কয়দিন। তারপর সেই চালকের মৃত্যুদণ্ড তুলে নিতে বাধ‍্য করার পর তারা আবার রাস্তায় গাড়ি নামালেন!!! এভাবেই চিরকাল তারা আমাদের চাপে ফেলে রেখেছেন, এখন আমাদের সময় এসেছে তাদের ঋণ শোধ করার।





 

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ভালো লিখেছেন। আপনার রোগী নিয়ে অ্যাম্নোলেন্স ভ্রমণকাহিনি পড়ে অন্তর জুড়িয়ে গেলো। আহা, এমন বাংলাদেশ কি আমরা পাব কোনোদিন।

এক কথায় সুন্দর একটা কথা বলেছেন- ছিন্দ্রান্বেষী। এ ধরনের প্ল্যাকার্ডের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। অনেকগুলোকেই আবার মনে হচ্ছে ফটোশপের কাজ।

/তবে, আমি এখন ছাত্রদের ঘরে ফিরে যাবার পক্ষে। তাদের দ্বারা যেটি হয়েছে, কিছু হওয়ার থাকলে এটুকুতেই হবে। ইতিমধ্যে এই আন্দোলনে ৩য়/৪র্থ পক্ষ ঢুকে গেছে। স্বার্থান্বেষী মহল নিজ স্বার্থে কাজ শুরু করবে। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য থেকে তারা দূরে সরে যাবে। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় জন-দুর্ভোগ বাড়বে, জনগণ এ আন্দোলনের বিপক্ষে চলে যাবে। সবচেয়ে বড়ো বিপদ হলো, ছাত্ররা (১) স্কুল থেকে জোরপূর্বক টিসি দিয়ে বিদায়ের শিকার হতে পারে (২) অনেকের অকালে প্রাণ ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকেব (৩) আন্দোলনের গতি শ্লথ হবে।

শুভেচ্ছা রইল।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪৩

করুণাধারা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই। আজ সকালে, আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম বাচ্চাগুলোর শৃঙ্খলা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ দেখে। এক লাইসেন্সবিহীন driver মারমুখি হয়ে উঠলে, এরা খুব সহজেই তাকে থামাতে পেরেছিল। আমি ভেবেছিলাম, এদের উপর আক্রমণ করা সম্ভব না, কেউ আক্রমণ করলেও জনসাধারণ এদের পাশে দাঁড়াবে, এদের রক্ষা করবে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল! কয়েকজন মায়ের বুক খালি হয়ে গেল, অথচ কাউকে তারা সেটা জানাতেও পারছেন না!! একেবারেই অকারণে।এখন মনে হচ্ছে, আরো আগেই ঘরে ফেরা উচিত ছিল.....

আপনার জন্যও অনেক শুভকামনা রইল।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৯

অপ্‌সরা বলেছেন: আমিও এমনই ভাবছিলাম কে তাদের শেখালো?

এমারজেন্সী লেইন?

কে শিখালো পুলিশের লাইসেন্সও চেক করা যায়!

কে তাদের শেখালো আইনের উর্ধে বিচারপতি বা মেয়র কেউই নয়?

আবার একই ভাবে সোনাবীজ ভাইয়ার কথার সাথেও আমি একমত। যা দেখাবার তারা দেখিয়ে দিয়েছে। এতেও শিক্ষা না হলে আর কখনই হবে না এ দেশের। তাদের যা কাজ না তারাই সেটা শিখিয়ে দিলো যারা যে কাজে অপারগ ছিলো তাদেরকেই।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৮

করুণাধারা বলেছেন: বলেছেন: ধন্যবাদ অপ্‌সরা, আসলেই এদের ফিরে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বয়সটাই এমন, এরা তো কোন শাসন বারণের ধার ধারে না। তাই বলে এভাবে এদের দমন করতে হবে.........

বিষন্নতা আমাকে গ্রাস করছে। তাই এমন এলোমেলো জবাব। ভালো থেকো, শুভকামনা রইল।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

মলাসইলমুইনা বলেছেন: লেখায় অনেক ভালোলাগা ...এভাবেই ইতিহাস সৃষ্টি হয় বোধ হয় I একটা সরকার যখন ভেতর থেকে ক্ষয়ে যায়, বাইর ভেঙে পড়তে থাকে তখন গায়ে মাটি কাঁদা লেগে থাকা মানুষগুলোই ইতিহাস সৃষ্টির লেখক হয়ে যায় I এবারও তাই হচ্ছে মনে হয় --রাত দিন অর্থহীন ইন্ডিয়ান সিনেমা সিরিয়ালের নেশায় বুদ্ একটা জেনারেশন তৈরির যে চেষ্টা চলছিল তার থেকেই রুখে দাঁড়িয়েছে অদম্য আঠারোর সাহসী ছেলে মেয়েরা ....সাবাস বাংলাদেশ, বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুরে ছারখার তবু মাথা নওআবার নয় " I

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৬

করুণাধারা বলেছেন: বলেছেন: বলেছেন: বহুদিন পর আপনাকে ব্লগে পেয়ে খুব ভালো লাগলো, মলাসইলমুইনা। আশাকরি, এখন থেকে আপনাকে ব্লগে পাওয়া যাবে।

আমি আজ বেশ কিছু সময়ে রাস্তায় আটকে ছিলাম, এই সময়টা আমি এই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করেছি। কেউ ছিল ঢাকার নামজাদা স্কুলের ছাত্র আবার কেউ সাধারণ স্কুলের ছাত্র। কিন্তু তারা এক হয়ে খুব শৃংখলার সাথে কাজ করছিল। তার পুরস্কার যে এতটা খারাপ হবে ভাবি নি।

কিছু রক্তাক্ত ছবি দেখেছি, তাই ভাবনাটা কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

চমৎকার মন্তব্যের জন্য এবং আমার ব্লগে পদার্পণের জন্য ধন্যবাদ, মলাসইলমুইনা। ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা।

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



এই কিশোর-কিশোরীরা এখনো শিখছে; এরা জাতির "রো ম্যাটেরিয়াল"। ওদের প্রতিবাদের ভাষায়, আচরণে এখনো পরিপক্বতা আসেনি এজন্য এরা জানে না কঠিন সত্য কথাটি বলতে হয় বড়দের মত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে, সুন্দর ভাষায়। এজন্য বড়রা ভদ্র পোষাক পরে মনে মনে যে খারাপ গালিগুলো দেয় তাই তারা অনভিজ্ঞতার কারণে প্লেকার্ডে লেখছে।

তাদের এমন নোংরামি প্লেকার্ড প্রদর্শনী বড়দের জন্য লজ্জা ও ঘৃণার হতে পারে; তবে তাদেরকে রাস্তায় নামানোর দায়ভার বড়দের, এটি অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। এরা ডিজিটাল জামানার কিশোর-কিশোরী।

এর দায়ভার ১৯৭১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত যারা এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন বা আছেন। যারা দেশের গণ পরিবহন ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলাবিধির আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ আন্দোলন কোন দল বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি দেশের ঘুমিয়ে পড়া আইন ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে; এদেশে একজন পরিবহন চাঁদাবাজ, পরিবহন মাফিয়াও মিনিস্টার হয়!!

দেশের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিআরটিসি, বিআরটিএ হলো সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ ডিপার্টমেন্ট। এজন্য লাইসেন্স ছাড়া চালক হয়, ফিটনেস ছাড়া বাস হয়, টাকা দিলেই লাইসেন্স মেলে। ভিআইপি ও সরকারে উচ্চ পর্যায়ের লোকদের লাইসেন্স লাগে না। এরা উল্টো পথে গাড়ি চালাতে পারে।

আমাদের দেশে আইনের কোন অভাব নেই; হাতির আকৃতির পরিবহণ আইনও আছে; তবে এগুলো কাগজ সর্বস্ব। এ আইন শুধু নিরীহ পাবলিককে ঘায়েল করতে ব্যবহার করা হয়, তবে যাদের ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা, টাকার কুমির আইন তাদের বেলায় ভোঁতা।

আর এসবের ফলাফল হলো কিশোর-কিশোরীদের এ আন্দোলন। এদের অশ্লীল গালি ও প্লেকার্ড লেখার দায়ভারও বড়দের। বড়রা নিজেদের দায়িত্বটি ঠিকমত পালন করলে এদেরকে রাস্তায় নামতে হতো না; এ আন্দোলন দেশকে সঠিক পথে আনার একটি শুরু মাত্র।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২৬

করুণাধারা বলেছেন: দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, কাওসার চৌধুরী।

গতকাল প্রথম আমি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দেখলাম এবং মুগ্ধ হলাম তাদের শৃঙ্খলাবোধ দেখে। তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে যে কাজ করছিল, সেই কাজটি যাদের করার কথা তারা এর 10% কখনও করতে পারেনি। শিক্ষার্থীরা এই কাজ করছিল একটা মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য, দেশের পরিবহন সেক্টরে বিদ‍্যমান অনিয়ম দূর করার জন্য। আপনি দেশে থাকেন না, তাই হয়তো গণপরিবহন নিয়ে মানুষের ভোগান্তি বুঝতে পারবেন না। এরা যখন তখন যেমন খুশি ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, প্রতিবাদ করলেই পরিবহন ধর্মঘট! রাস্তায় চলাচলের কোন নিয়ম মানে না, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারে, কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট করে সবকিছু হালাল করে নেয়। এই অবস্থার অবসানের খুব দরকার ছিল, তাই এই আন্দোলনকে আমি সমর্থন করি। তারা প্ল‍্যাকার্ডে কি লিখল তাতে আমি কিছু মনে করি না।

তবে আজ মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। কি অপরাধে এই কিশোর ছেলেগুলোকে হত্যা করা হলো তাই ভাবছি। আর গভীর দুঃখ বোধ করছি তাদের বাবা-মায়ের জন্য।

ভালো থাকুন, কাওসার চৌধুরী, সব সময়।

৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: কেমনে ঘুমাবো ! অন্তত কোন ভরসায়? আমরা কী সকালের জন্য অপেক্ষা করবো?

০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৩

করুণাধারা বলেছেন: ভরসা করার কোন জায়গা নেই রাজীব নুর, অবস্থা এখন এমনই দাঁড়িয়ে গেছে।

কিন্তু আমি মনে করি পরিবহন ব্যবস্থা, আমাদের রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা, একটা শৃংখলার মধ্যে আসা উচিত। গণপরিবহনের খুবই বেহাল অবস্থা এই পরিবহন মাফিয়াদের কারণে। আজ যদি সরকারি বিআরটিসি বাস চলাচল করত তবে মানুষের এতটা ভোগান্তি হতো না। এরা যখন খুশি ভাড়া বাড়াবে, নতুন বাস নামাতে দেবেনা, accident করাবে- কিন্তু প্রতিকার চাইতে গেলেই ধর্মঘট করে বসবে। কোথাও হেঁটে যাবার উপায় নেই, হাটতে গেলে দেখবেন পুরোটা ফুটপাত জুড়ে দোকান বানিয়ে রাখা, হাঁটা যায় না কারণ দোকান থেকে পুলিশ নিয়মিত টাকা তোলে। ছাত্ররা না হয় কদিন আন্দোলন করে আমাদের চলাচলে অসুবিধা করছে, কিন্তু বাকী সময় কি আমরা খুব সুবিধাজনক অবস্থায় থাকি!!

৬| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৪৪

প্রামানিক বলেছেন: কোমল মতি শিশুরা যা দেখালো তা যদি বুড়োদের মাথায় ঢুকতো তাহলে মানুষের আর এত কষ্ট হতো না।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৯

করুণাধারা বলেছেন: কোমল মতি শিশুরা যা দেখালো তা যদি বুড়োদের মাথায় ঢুকতো তাহলে মানুষের আর এত কষ্ট হতো না।

এই শিশুদের মনে কোন লোভ ছিল না, কিন্তু বুড়োদের মনে নানা রকম লোভ আছে। অন্যের এক টাকা ক্ষতি করেও যদি নিজের দু'পয়সা লাভ করা যায় এরা তাহলে তাই করবে। তাই দেশের মানুষের কষ্ট দূর হবে- এ আশা পূরণ হবার সম্ভাবনা দেখি না।

৭| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: এ লেখাটি প্রথম দিনেই পড়েছিলাম। ভাল লেগেছিল বলে প্রথম প্লাসটা আমিই দিয়ে গিয়েছিলাম। মন্তব্য করতে ইচ্ছে করেই কিছুদিন সময় নিলাম।
মনে হচ্ছে, এসব এখন শুধুই স্বর্ণালী ইতিহাস!
আমরা বেশীরভাগই দুর্নীতির এবং অপশাসনের প্রশ্রয়দাতা। ভীতু এবং আপোষকামী শিক্ষিত জনতা। চরিত্র বদল না হলে কিছুই হবেনা।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫

করুণাধারা বলেছেন: মন্তব্য ও প্লাসের জন্য ধন্যবাদ। আমি প্রথমেই আপনার প্লাস দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, কারণ এই লেখায় আমি প্লাস আশা করি নাই। তাত্ক্ষণিকভাবে যা মনে হয়েছিল তাই লিখেছিলাম। আসলে এই জেনারেশন কে নিয়ে আমি খুব হতাশ ছিলাম, কারণ স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময় রাইফেলস স্কয়ারে গেলেই আমি দেখতে পেতাম স্কুল বা কলেজের পোশাক পরে (অর্থাৎ ক্লাস বাদ দিয়ে) এদের অনেকেই খাবারের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। আমি ভাবতাম এরা লেখাপড়া করে না এবং প্রশ্ন- ফাঁসের অপেক্ষা করে থাকে।

ধারনাটা পুরোপুরি বদলে গেছিল এদেরকে রাস্তায় দেখে। রাস্তায় শিক্ষার্থীদের কেউ ছিল নামি কলেজের কেউ একেবারে অনামী কলেজের, কারো ইউনিফর্ম ছিল ঝকঝকে কারো অতি মলিন, একটা ছেলে দেখি গাড়ির লাইন ঠিক করছে তার এক হাত নেই!!
কিন্তু এরা সুশৃংখলভাবে মিলেমিশে কাজ করছিল। এদের প্রত্যেকেই ছিল কর্মঠ, প্রত্যয়ী ও বিনয়ী। সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে এরা দেশের সম্পদ আর জাতির দিশারী হতে পারবে- কিন্তু আজ আর আশাবাদী হতে পারি না কেন!

আমরা সত্যিই আপোষকামী। দুরন্ত আশা কবিতাটি পড়ছিলাম:

  ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো,
   পোষ- মানা এ প্রাণ
   বোতাম-আঁটা জামার নীচে
   শান্তিতে শয়ান। 

৮| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৪

ভুয়া মফিজ বলেছেন: পুরো জাতীর জন্য, সরকারের জন্য এটা একটা উদাহরন হয়ে থাকবে। প্রশাসনের যদি বিন্দু মাত্র লজ্জা-শরম থাকে তাহলে তারা এখান থেকে সাবধান হবে, সংশোধিত হবে।
এটা অন্যান্য সেক্টরগুলোর জন্যও একটা সাবধান বাণী।
আশা করছি দেশে একটা পজিটিভ পরিবর্তন সামনে দেখতে পাবো।
পাবো কি? সময়ই বলে দেবে।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫

করুণাধারা বলেছেন: পুরো জাতীর জন্য, সরকারের জন্য এটা একটা উদাহরন হয়ে থাকবে।

নিঃসন্দেহে। বহুদিন পর্যন্ত আমাদের মনে থাকবে এই শান্তিপূর্ণ অথচ শক্ত আন্দোলন এর কথা।

আশা করছি দেশে একটা পজিটিভ পরিবর্তন সামনে দেখতে পাবো।
পাবো কি? সময়ই বলে দেবে।


দেশে পজিটিভ কোনো পরিবর্তন আসবে বলে আমি অবশ্য খুবই সন্দিহান, তবু আপনার ভাষায় বলি, 'সময়ই সব বলে দিবে।" দেখা যাক কি হয়।

মন্তব্য ও প্লাসের জন্য ধন্যবাদ, ভুয়া মফিজ।

৯| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৪৬

আখেনাটেন বলেছেন: ভুয়া মফিজ বলেছেন: পুরো জাতীর জন্য, সরকারের জন্য এটা একটা উদাহরন হয়ে থাকবে। প্রশাসনের যদি বিন্দু মাত্র লজ্জা-শরম থাকে তাহলে তারা এখান থেকে সাবধান হবে, সংশোধিত হবে।
এটা অন্যান্য সেক্টরগুলোর জন্যও একটা সাবধান বাণী।
-- সহমত।

অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ না হওয়া দেখে ক্ষমতাসীনেরা দানবে পরিণত হয়েছে। আর মাজাভাঙা বিরোধীদল আছে কীভাবে গদি আবার ফিরে পাওয়া যায়? জনগণ গোল্লায় যাক, দেশ অরাজকতায় ছেঁয়ে যাক। এই দুই দলের কাছে কোনো মূল্য নেই। গদি আগে।

এ দেশের জনগণের কপালে ভালো কিছু নেই। একজন ন্যায়পরায়ণ ও সুপ্রশাসকের তীব্র অভাবে ভুগছে জাতি যুগ যুগ ধরে।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০০

করুণাধারা বলেছেন: পুরো জাতীর জন্য, সরকারের জন্য এটা একটা উদাহরন হয়ে থাকবে। প্রশাসনের যদি বিন্দু মাত্র লজ্জা-শরম থাকে তাহলে তারা এখান থেকে সাবধান হবে, সংশোধিত হবে।

দুটো বাক‍্যেই সহমত, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের প্রশাসনের বিন্দুমাত্র লজ্জা শরম নেই, তারা সমানে মিথ্যা বলে রাতকে দিন করতে পারে, সংশোধিত হওয়া তো দূরের কথা। সাবধান বা সংশোধিত হতে গেলে শাজাহান খানকে সরানো দরকার। শাজাহান খান কে বহাল রেখে পরিবহন সেক্টরে জনগণের জন্য কল্যাণমূলক কোন পদক্ষেপ নেয়া কখনোই সম্ভব হবে না। সব সেক্টরেই চলছে লুটপাট, করে এগুলো বন্ধ করা খুব সহজ হবে না।

অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ না হওয়া দেখে ক্ষমতাসীনেরা দানবে পরিণত হয়েছে। দানবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া উচিত সম্মিলিতভাবে, আমাদের সেই একতা কই! তাহলে বিজয় আসবে কি করে?

এ দেশের জনগণের কপালে ভালো কিছু নেই। জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে এদেশের নানা পরিস্থিতি দেখে দেখে আমিও আজ একথাই ভাবি।

ভালো থাকুন, আখেনাটেন।

১০| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আমাদের পরিবর্তন দরকার। সততা, ন্যায়পরায়নতা, দেশপ্রেম , কর্তব্য নিষ্ঠা , কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকতে হবে।
আসুন, সবাই দেশকে ভালো বাসি।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩

করুণাধারা বলেছেন: আসুন, সবাই দেশকে ভালো বাসি।

সহমত। দেশের ভালো করতে গেলে সবচেয়ে আগে দেশকে ভালোবাসতে হবে।

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। ভালো থাকুন।

১১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৫৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: "ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো,
পোষ- মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নীচে
শান্তিতে শয়ান
।" - চমৎকার একটা উদ্ধৃতি দিলেন! :)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:২৬

করুণাধারা বলেছেন: হ্যাঁ, আজকাল অবস্থা দেখে এই কবিতার লাইনগুলো খুব মনে হয়।

আবার ফিরে আসা অসংখ্য ধন্যবাদ।

১২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তারা ফিরে গেছে!

সড়ক আবারো আগের চেহারায়! X((
আবারো এম্বুলেন্স আটকে জ্যামে কাঁদে তারস্বরে সাইরেনে!
রোগী তড়পায় ভেতরে! বাহিরে প্রতিক্রিয়াহীন পাষান নগর!

ভিআইপিরা নেয় আবার নেয় রাজপথের দখল! শ্রমজীবি ৫ মিনিট লেটে সারাদিন এবসেন্ট!
কাটা যায় একদিনের বেতন!
রাতের সার্জেন, কৃত্রিম যানজট করে ধরে গাড়ী! পকেট ফুলে ওঠে টাকায়!
অফিস ফেরতা মানুষ ব্যার্থতায় চিৎকারে নিজেকেই নিজে প্রবোধ দেয়!
একসময় চুপ হয়ে যায় ভাগ্য বিড়ম্বনায়!

দেরীতে হলেও পোষ্টে ++++

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪২

করুণাধারা বলেছেন: নিরাপদ সড়ক চাই- একটা অতি যৌক্তিক দাবি, যার সাথে একাত্ম ছিল কোটি মানুষ। সড়কে নিরাপত্তা আনা খুব কঠিন কিছু যে না, সেটা ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কয়েকদিনে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তারপরও সড়কে বিশৃঙ্খলা বজায় রাখা হচ্ছে, এই ছোট্ট দাবিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, শুধু কিছু খাদকের পেট ভরাবার জন্য!! কিছু আর বলার নেই। আমি এতটাই উদ্বিগ্ন ও হতাশ হয়েছি যে, দীর্ঘ দিন কোন পোষ্ট দিতে পারছি না। আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে খুব ভাল লাগলো তাই।

মন্তব্য ও প্লাসের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন ঘর থেকে বেরোনোর পর নিরাপদে ফিরে আসুন- এই শুভকামনা রইল।

ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি ছিল দিয়া ও করিমের হত্যাকারী ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে, কি হলো দেখুন
Click This Link

১৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: চিন্তা করা যায়?
পুরা ইউ টার্ন নিয়া নিচ্ছে মনে হয়!!!
এটাকি জেদের বশে করছে? আন্দোলন করলি ক্যান টাইপ?
কি জানি তাদের কাছে কোন কিছু আশা বা দূরাশা কোনটাই অসম্ভব নয়!

তবে পরিণতি ভাল হবেনা এটা সাদা চোখেই বলা যায়। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি, করবে না।
জাতীয় রাজনীতির কঠিন চক্রবুহ্যে জাতি!
দেখা যাক সমাধান কোন দিকে আসে। তার উপর নির্ভর করবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের গতি।

শুভ ও সুন্দরের কামনা রইল। আপনার, আমার, দেশের সবার জন্য।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৬

করুণাধারা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু, আপনার শুভ কামনার আপ্লুত হলাম।

আমিও অপেক্ষায় আছি কোন সুন্দর সমাধানের জন্য, এবং তারই জন্যে সব সময় প্রার্থনা করছি।

ভালো থাকুন, সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.