নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

করুণাধারা

করুণাধারা

জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো

করুণাধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? সিস্টেম, শিক্ষক, নাকি ব্যাড প্যারেন্টিং!

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৭

ভিকারুন্নেসা স্কুলে বছরের শুরুতে প্রত‍্যেক ছাত্রীকে এক পৃষ্ঠার একটা ছাপা কাগজ  দেয়া হয়, যেখানে স্কুলে থাকাকালীন অবশ‍্য পালনীয় সব নিয়মকানুন লেখা থাকে। কোন ক্লাসে পড়ুয়া ছাত্রীরা কিভাবে চুল বেঁধে আসবে সেটা পর্যন্ত নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। মাথার উপরিভাগের চুল যদি হাল ফ্যাশনে কাটা হয়, তবে স্কুলে থাকাকালীন সেই চুল ক্লিপ দিয়ে এমনভাবে আটকে রাখতে হবে যেন কাটা বোঝা না যায়; ক্লিপ হতে হবে মান্ধাতার আমলের কাল চিকন ক্লিপ। এরপর রয়েছে আরো নানা নিয়ম, যেমন স্কুলে নেলপালিশ দিয়ে আসা যাবে না, ভ্রু প্লাক করা যাবে না  ইত্যাদি। এই নিয়মগুলো না মানার অপরাধে জন্য শাস্তি পেতে হবে, সেটার উল্লেখও ঐ কাগজে থাকে। এই নিয়মগুলো না মানা ছোটখাটো অপরাধ, গুরুতর অপরাধ হল স্কুলে ঢোকার পর অনুমতি ছাড়া বাইরে গিয়ে সময় কাটানো, পরীক্ষায় নকল করা, মোবাইল নিয়ে আসা ইত্যাদি। ছাত্রীদের জন্য স্কুলে মোবাইল পুরোপুরি নিষিদ্ধ,  অভিভাবকদের কেও জানিয়ে দেয়া হয়, যেন তারা মেয়েকে স্কুলে মোবাইল না দেন। নিষেধ সত্বেও ছাত্রীরা মোবাইল আনে, কখনো পোশাকের ভেতর লুকিয়ে, কখনো সালওয়ার দিয়ে ঢাকা মোজার ভেতরে করে। ধরা পড়লে প্রথমবার ছাত্রীকে বকাঝকা করে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়, তারপর ছাত্রীর অভিভাবককে ডেকে সেটা ফেরত দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় যে, এরপর আবার মোবাইল পাওয়া গেলে টিসি দিয়ে দেওয়া হবে, স্কুলের ডিসিপ্লিন রক্ষার স্বার্থে।

আমার মেয়ে দশ বছর ভিকারুন্নেসা স্কুলে পড়েছে, এই স্কুলের নিয়মের সাথে আমি ভালভাবেই পরিচিত। আমি মেয়েকে সবগুলো নিয়ম কড়াকড়িভাবে মানা শিখিয়েছিলাম। কারণ আমি ভাবতাম, প্রত্যেকেরই নিজ প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন মান্য করা উচিত; সেটা নিজ বাড়ি হোক বা স্কুল হোক। ডিসিপ্লিন মানার এই অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা দরকার। মোবাইল ফোন স্কুলে নেবার দরকার হয়না, কারণ জরুরী প্রয়োজনে শিক্ষিকারা তাদের ফোন ব্যবহার করতে দিতেন।  আমার মেয়ের অন্তত তিনজন সহপাঠীকে টিসি দিতে দেখেছি; একজন নকল করার অপরাধে আর আরেকজন স্কুলের সময় বাইরে যাওয়ার অপরাধে। একবার ক্লাস নাইনে পড়া এক মেয়েকে তার মা স্কুলে দিয়ে চলে যাবার পর মেয়েটি ক্লাসে ব্যাগ রেখে, গেটের দারোয়ানকে কলম কেনার কথা বলে বাইরে আসে। তারপর কয়েক ঘন্টা পর, ডে শিফটের ছাত্রীদের সাথে আবার স্কুলে ঢোকে এবং কিছুক্ষণ পর মর্নিং শিফটের ছুটি হলে তার ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু তার শ্রেণী শিক্ষিকা লক্ষ্য করছিলেন যে, ক্লাসে সে নেই কিন্তু তার ব্যাগ আছে। পরদিন মেয়েটি স্কুলে আসার পর শ্রেণি শিক্ষিকা ও হেডমিস্ট্রেস প্রথমে জেরা করে জানেন, মেয়েটি গতদিন স্কুলের সময় বয় ফ্রেন্ডের সাথে কাটিয়েছে। স্বীকারোক্তির পরপর মেয়েটির  মা-বাবাকে ফোন করে ডেকে আনা হয়। মেয়ে এবং মা- বাবার বারংবার অনুরোধ এবং ক্ষমা প্রার্থনা সত্বেও মেয়েটিকে সেই মুহুর্তেই টিসি দেওয়া হয়, এটা বলে যে, স্কুলের ডিসিপ্লিন রক্ষার জন্য এই শাস্তি দিতেই হবে।  মেয়ে এবং তার মা চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে যাচ্ছে, এ দৃশ্য এখনো আমি দেখতে পাই। আরেকদিন দশম শ্রেণীর একটি মেয়েকে টেস্ট পরীক্ষার কয়েকদিন আগে হেডমিস্ট্রেস ছোটদের সামনে চড় মারেন, ভ্রু প্লাক করার অপরাধে! আমাদের, অভিভাবকদের, কখনোই মনে হয়নি যে লঘু পাপে গুরু দণ্ড দেয়া হচ্ছে।

আমার ছেলের স্কুলেও ছিল নিয়মের কড়াকড়ি। সেখানে বছরের নির্দিষ্ট তারিখে শীতকালীন এবং নির্দিষ্ট তারিখে গ্রীষ্মকালীন পোশাক পরা শুরু করতে হত। এর ব্যত্যয় হলেই শাস্তি। সেই স্কুলেও মোবাইল নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল, পাওয়া গেলেই শাস্তি। স্কুলের অধ্যক্ষ সামরিক বাহিনীর ছিলেন তাই সব সময় ছাত্রদের চুল সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মতো ছোট করে কাটতে হতো। শিক্ষক যদি কারো চুল মুঠি করে ধরতে পারতেন, তাহলে সেই চুল গরু চোরের মতন করে কেটে দিতেন। এই স্কুলেও টিসি দেওয়া হতো অনেককে, হরদম।

টিসি দেবার সিস্টেম শুধু ভিকারুন্নেসা স্কুলে নয়, যেসব স্কুলে তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভর্তি হতে হয়, সেই সব স্কুলেই টিসি দেবার এই সিস্টেম আছে। এটা তৈরি করেন স্কুলের গভর্নিং বডির মেম্বাররা। (পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, অরিত্রির বাবা-মাকে যখন অপমান করা হয়, তখন অধ্যক্ষের রুমে গভর্নিং বডির মেম্বারও বসে ছিলেন)। এর কারণ যতটা না ডিসিপ্লিন রক্ষার্থে তার চাইতে বেশি অর্থ লোভে; একজনকে টিসি দিলে আরেকজনকে ভর্তি করা যাবে বিশাল অর্থের বিনিময়ে। ভিকারুন্নেসা স্কুলে মাঝে মাঝে যেসব ছাত্রী ভর্তি করা হয়, শোনা গেছে তাদের কেউ কেউ পনের লক্ষ টাকার বিনিময়েও ভর্তি হয়েছে। সুতরাং টিসি দেবার এই সিস্টেম পাল্টানো যাবে না, তাই ছাত্রীদের চেষ্টা করতে হবে এমন কিছু না করার যাতে টিসি দেয়া হতে পারে। মা-বাবার উচিত মেয়েকে সতর্ক করা, যাতে সে স্কুলের নিয়ম না ভাঙ্গে, ভাঙলেই বিপদ!

 ভিকারুন্নেসায় পরীক্ষার হলের নিয়ম হল, একটা ট্রান্সপারেন্ট ব্যাগে শুধু কলম, পেন্সিল, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি নেয়া যাবে; এ ছাড়া আর কিছু নেয়া নিষিদ্ধ। অরিত্রি সেটা জেনেও মোবাইল নিয়ে গিয়েছে। স্পষ্টতই লুকিয়ে নিয়েছে। কেন সেটা সহজেই অনুমেয়।

যখন তার মা-বাবাকে স্কুলে পরদিন দেখা করতে বলা হয়, তখন তাদের এটা না বোঝার কোন কারণ ছিল না যে, অরিত্রির টিসি দেবার জন্যই তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। এটা বোঝার পর অরিত্রির সাথে তাদের আচরণ কেমন ছিল জানার কোন উপায় নেই।  হয় তারা আদর করে মেয়েকে বলেছেন, "কোন ব্যাপার না", অথবা তারা পরিচিতের লোকজনের কাছে ছোট হয়ে যাবার ভয়ে, নিজের মনের জ্বালা মেটাতে সারারাত মেয়েকে বকাঝকা করেছেন, তারপর সকালে স্কুলে নিয়ে গিয়েছেন।

ভালো হতো যদি তারা অরিত্রিকে শেখাতেন মাথা উঁচু করে চলতে; অন্যায় আচরণ না করতে, এবং জীবনে যদি আঘাত- অপমান আসে, তবে তার মোকাবেলা করতে। কোন মা-বাবার কি উচিত,  সন্তানকে কারো পা ধরতে দেয়া!

অরিত্রির বাবা বলেছেন স্কুলে তাদের এত অপমান করা হয়েছে দেখে অরিত্রি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তারা কেন মেয়েকে একা ছেড়ে দিলেন? পত্রিকার খবরের দেখা যাচ্ছে, অরিত্রি মা বাবার আগেই বাড়ি ফিরে এলো এবং মা বাবা পৌঁছে দেখলেন  অরিত্রি গলায় ফাঁস দিয়েছে। অরিত্রি তো মা বাবার সাথে ছিল, সে যখন একা বাড়ি ফিরলো, সে সময় মা বাবা কোথায় গেলেন? অরিত্রি  একা বাড়ি ফিরল কেন এবং কি করে?  তার কাছে কি বাড়ির চাবি ছিল যে ঘরে ঢুকলো, নাকি অন্য লোকজন বাসায় ছিল যারা দরজা খুলে দিয়েছিল? অরিত্রি যখন ঘরে ঢুকে ফাঁস দিচ্ছিল তখন সেই লোকজন কি করছিলেন? যদি ঘরে অন্য কেউ দরজা না খুলে দিয়ে থাকে, সে নিজে চাবি দিয়ে খুলে থাকে তাহলে মা-বাবা তাকে চাবি দিলেন কেন, একা একা ঘরে ফেরার জন্য? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরও জানা দরকার। তাহলেই জানা যাবে দুর্ভাগ্যজনক এই মৃত্যুর দায় কি শুধুই স্কুলের সিস্টেমের আর শিক্ষকের, নাকি বাবা মায়েরও কিছু আছে! !


 

 

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আপু আপনার পোস্টটির হেড লাইন দেখে মন্তব্য করছি। এ্যাট এ গ্ল্যান্স অরিত্রি। গতকাল থেকে অনেকগুলি পোস্টে যে কথা বলছি, আর কত বাচ্চা এভাবে অকালে ঝরে পড়বে,আর কত মায়ের কোল এভাবে শূন্য হবে - তার হিসাব কে রাখে।

আর দোষীদের শাস্তি! এসব দুদিন পরে সব মিলিয়ে যাবে। ক্ষয়িষ্ঞুতার চোরা স্রোত ঠিক বয়ে যাবে সমাজে। জানিনা এর শেষ কোথায়??

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৭

করুণাধারা বলেছেন: মন্তব্য ও  প্লাসের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ পদাতিক চৌধুরী।  আপনি শুধু শিরোনাম পড়ে মন্তব্য করেছেন, তাই আমি তাই পোষ্টের বক্তব্য বস্তু এক কথায় বলে দেই- আমি শুধু শিক্ষকদের দায়ী করিনি। অরিত্রি একটা সিস্টেমের শিকার। যে সিস্টেম এমন যে, তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই স্কুলে নকল করে ধরা পড়লে স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে হবে, কেন সে নকল করল, তাকে সংশোধিত হবার সুযোগ দেবার দরকার- এইসব কথা এখানে অবান্তর, কারন একটা ছাত্রকে টিসি দেয়া হলে আরেকজনকে ঢুকানো যাবে এবং তাতে গভর্নিং বডির সকলেরই লাভ।  গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়া কোন ছাত্রকে টিসি দেয়ার ক্ষমতা অধ্যক্ষের নেই এবং আলোচ্য ক্ষেত্রেও গভর্নিং বডির মেম্বার অধ্যক্ষের রুমে বসে ছিলেন।

অভিভাবকদের দায়িত্ব সন্তানদের স্কুলের নিয়ম মেনে চলা শেখানো, সন্তান যেন পরীক্ষায় নকল না করে সেটা দেখা। অরিত্রির ক্ষেত্রে স্কুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়াটা ইস্যু নয়, ইস্যু হচ্ছে নকল করা! নকল করার বিরুদ্ধে শিক্ষিকা কথা বললেই আত্মহত্যা করতে হবে? 

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: সবার সামনে চড় মারা, চুলের মুঠি ধরা - এসব শাস্তি কি আপনার কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হচ্ছে? যতদিন আমরা এসব লঘুভাবে দেখব ততদিন বাংলাদেশে গৃহ কর্মী নির্যাতন, স্ত্রী প্রহার, স্কুলে ফেল করা এইসব খুব কমন হয়ে থাকবে।


নিয়ম কানুন কড়া হলেও তার শাস্তির একটা ব্যালেন্স থাকে। বাচ্চাদের জন্য স্কুল, স্কুলের জন্য বাচ্চারা নয়। স্কুল কোন জেলখানা নয়। মোবাইল নেয়াটা নিয়মের বিরোধী হতে পারে, কিন্তু টিসি তার জন্য শাস্তি হতে পারে না।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১

করুণাধারা বলেছেন: সবার সামনে চড় মারা, চুলের মুঠি ধরা - এসব শাস্তি কি আপনার কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হচ্ছে? যতদিন আমরা এসব লঘুভাবে দেখব ততদিন বাংলাদেশে গৃহ কর্মী নির্যাতন, স্ত্রী প্রহার, স্কুলে ফেল করা এইসব খুব কমন হয়ে থাকবে।

একটা প্রতিষ্ঠানের আচরণবিধি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা জেনে এবং মেনে একজন প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলো, তারপর ক্রমাগত আচরণবিধি লংঘন করে চলল, তখন কি করা উচিত বলে মনে হয় আপনার? যদি তাকে এভাবেই চলতে দেয়া হয় তাহলে অন্যরাও তাকে দেখে উৎসাহিত হবে, তাই হয় তাকে আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে, অথবা তাকে প্রতিষঠান ছেড়ে চলে যেতে হবে। যে মেয়েটির কথা আমি উল্লেখ করেছি, তাকে কয়েকবার মৌখিকভাবে বলার পরও সে নিয়ম মানার তোয়াক্কা করছিল না, এটাকে উদ্ধত্য বলা যায়। আমি জানিনা আর কিভাবে মেয়েটিকে বোঝানো যেত! চড় মারাই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।

যে স্কুলের ব্যবস্থাপনা সামরিক বাহিনীর সেখানে চুল ছোট রাখা নিয়ম; নিয়ম মেনে চলা কারো চুল মুঠি করে ধরা যায়না, মুঠি করে ধরা যায় শুধু তাদের চুলই যারা এই নিয়ম মানে না। এই নিয়ম না মানতে চাইলে তারা অন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারে, যেখানে চুল ছোট রাখার নিয়ম নেই। ডিসিপ্লিন ভাঙ্গার শাস্তি হিসেবে চুলের মুঠি ধরাও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য।

যেকোনো পরীক্ষার হলে মোবাইল নিষিদ্ধ, কারণ নকল করার উদ্দেশ্যেই মোবাইল নেয়া হয়। একজন ছাত্র নকল করছে, এটা দেখেও কি শিক্ষকের উচিত ছিল তাকে নকল করতে দেয়া? শাসন করাটা কি ভুল হয়েছে?

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৭

সুব্রত দত্ত বলেছেন: আপনার কিছু কিছু কথা অনেকের ভালো লাগবে না সত্য তবে আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে কে কে সেটাই দেখার। ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ।
তবে শাস্তি দেখুন এতসব জানার পরও এই সব স্কুলগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। কারণ আমরা মেরুদণ্ডহীন জাতি।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

করুণাধারা বলেছেন: আমার প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবে না, কারণ আমাদের আবেগ। একজন মানুষ যখন মারা যায়, তখন আমরা সহানুভূতিশীল হই তার প্রতি, এক্ষেত্রে অরিত্রির বাবার প্রতি। কেউ যাচাই করে দেখছে না কি ঘটেছিল! এমনটাও তো হতে পারে, অধ্যক্ষের কাছে তিনি অরিত্রিকে ক্ষমা করার অনুরোধ করেছিলেন, অধ্যক্ষ তাতে রাজি হননি এবং এ কারণে মা বাবা অরিত্রি কে খুব বকাঝকা করেছেন। তাই সে মা-বাবার থেকে চলে গিয়ে আত্মহত্যা করেছে! অরিত্রি মা-বাবার থেকে আলাদা হয়ে কেন বাসায় গেল! সে কি কোনো সুইসাইড নোট লিখে রেখে গিয়েছিল শিক্ষকদের দায়ী করে!!!

এই স্কুলগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হয়, কারণ এইসব স্কুলে মেয়েরা স্কুলে ব্যাগ রেখে বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে গেলে শাস্তি অবধারিত। স্মার্ট ফোন লুকিয়ে এনে নীল ছবি দেখলেও শাস্তি পেতে হবে। যেসব অভিভাবক মেয়েদের সুন্দর জীবন চান, সুন্দর জীবনের শিক্ষা দিতে চান, তারা এসব স্কুলে মেয়েদের ভর্তি করবেন, সবসময়ই।

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: নতুন করে কিছু বলার নেই। সহমত...

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬

করুণাধারা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ বিচার মানি তালগাছ আমার। আপনার পোস্ট পড়ে এই পোস্ট লিখতে আগ্রহী হলাম। আমরা এতটাই আবেগপ্রবণ যে, বিচার বিবেচনা বোধ হারিয়ে ফেলি।

৫| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
আপা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যা বলেছেন তা পড়ে রীতিমতো শিউরে উঠলাম। কোন দেশে বাস করছি আমরা? এসব স্কুল এমপিও হয় কেমনে? গার্ডিয়ানরা এসব স্কুলে ভর্তি করার জন্য এত উথলা কেন? এসব স্কুলে পড়াশুনা করলে কী পৃথিবীর সেরা-টেরা কিছু হওয়ার গেরান্টি মিলে? ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব স্কুলের ছাত্ররা এতো পড়ালেখা করেও পৃথিবীর সেরাদের সাথে পাল্লা দিতে পারে না কেন? এ+ পাওয়াই কি মেধার মানদন্ড?

আমি একটি অজপাড়াগায়ের প্রাইমারি, সেকেন্ডারী স্কুলে পড়েছি। কোনদিন প্রাইভেট পড়িনি। সাজেশন ফলো করিনি। দামী খাবার খাইনি। দামী স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে যাইনি। প্রয়োজনীয় বই-খাতা পাইনি। স্কুলে যাওয়ার ছাতা, ব্যাগ, টিফিন, সেন্ডেল অনেক সময় পাইনি। ক্লাস টেনে পড়ার সময় রাস্তায় মাটি কেটেছি পরিবারকে সাপোর্ট করতে। টিউশনি করে নিজের পড়ার খরছ কুলাইছি। ছোট ভাই-বোনকে সাপোর্ট করেছি। কখনো না খেয়ে স্কুলে গেছি।

তবুও আমার টিচার হতে, ভাল ডিগ্রি নিতে, ইংরেজিতে কথা বলতে, লেকচার দিতে, রিসার্চ করতে সমস্যা হয় না। দামী স্কুল, দামী খাবার, দামী বাড়ি, দামী গৃহশিক্ষক না থাকলেও পড়াশুনা করতে সমস্যা হয়নি। আমার উদ্যম ছিল বলে। পড়ালেখাটাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি বলে।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২

করুণাধারা বলেছেন:
 
 
 কাওসার চৌধুরী, আপনার কথা পড়ে মন ভালো হয়ে গেলো। কিছুদিন থেকে আমার বেশ মন খারাপ থাকে এটা দেখে যে, এখন শিক্ষা ক্ষেত্রে মেধার চাইতে অর্থের জোর বেশি। আমাদের সময় এর উল্টোটাই ছিল। তাই আপনার কথা শুনে ভালো লাগলো। শিক্ষা মানে কেবল ডিগ্রী অর্জন নয়, শিক্ষা এমন আলোকবর্তিকা যা মনকে আলোকিত করবে এবং অন‍্যকে আলোকিত করতে সাহায্য করবে। আপনি সেই শিক্ষা অর্জন করেছেন। অনেক শুভকামনা রইল- যেন এই শিক্ষার সুফল অনেকেই ভোগ করে।

এবার বলি, কেন এমন স্কুলে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করাই, রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে। আমি নিজে খুব সাধারন স্কুল কলেজ থেকে পাস করে একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, অবশ্য সে যুগে কেউই প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং এর নাম জানতো না। তাই ভেবেছিলাম ছেলেমেয়েদেরও ঘরের কাছে স্কুলে পড়াবো, পড়াশোনা সব জায়গাতেই নিজের কাছে। সেই মতো একটা স্কুলে ভর্তি করেছিলাম, কিন্তু দেখলাম এই সব স্কুলে যেহেতু কোন ডিসিপ্লিন নেই, আমার ছেলে মেয়ে উভয়ই অন্যদের দ্বারা শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন (বুলিংয়ের) শিকার হয়, স্কুলে এসে অনেকেই স্কুল পালায়, নিষিদ্ধ ছবি ভরা মোবাইল নিয়ে স্কুলে আসে। সেই সব স্কুলে এর কোন প্রতিকার চেয়ে পাওয়া যায় না। তাই বেছে নিলাম এমন স্কুল যেখানে ডিসিপ্লিন আছে; এই ডিসিপ্লিন গুলো এমন কোন খারাপ নয়, স্কুলে পড়া একটা ছেলের নিয়মিত চুল কাটতে হলে অসুবিধা কোথায়? মেয়ে যদি নখে নেল পলিশ না লাগিয়ে কিংবা মোবাইল না নিয়ে স্কুলে যায়, (যেখানে টিচার চাইলে জরুরী প্রয়োজনে মোবাইলে কথা বলতে দেন) আমার কোন অসুবিধা নেই।

মূল কথা এই যে, স্কুলে যে ডিসিপ্লিন মেনে চলতে বলা হয় তা মানলে ছাত্রদের ভালোই হয়। ডিসিপ্লিন রাখার প্রয়োজনে শিক্ষকরা ছাত্রদের শাসন করতেই পারেন।

৬| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: অ‌রিত্রী মা...
ক্ষমা করা যায় না?
আমরা ‌যে কথার গন্ডার!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫

করুণাধারা বলেছেন: আপনার মিষ্টি পরীকে সময় দিন, তাকে জীবনের সুন্দর দিকগুলো চেনান এবং তাকে অন্যায়ের পথে না যেতে শেখান। বাবা-মায়ের আদরের সাথে শাসনই পারে সন্তানের সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে।

৭| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৩

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: আপনার কথার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করার অবকাশ নেই। স্কুলের ডিসিপ্লিন মানতে না পারলে কেউ স্কুলে থাকার যোগ্য নয়। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের আচরণটা কেমন ছিল সেটা নিজ চোখে না দেখে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা কঠিন। আত্মহত্যার মূল কারণটাও খতিয়ে দেখে তারপর দোষী সাব্যস্ত করা দরকার।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮

করুণাধারা বলেছেন: ঠিক, সম্রাট ইজ বেস্ট। আমি মনে করি, নিয়ম না মানতে চাইলে যেখানে নিয়মের কড়াকড়ি নেই, সেখানে চলে যাওয়াই ভালো। কিন্তু একজন যদি নিয়ম ভেঙে রয়ে যায়, তাহলে সেটাই একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষকদের কাজ হচ্ছে এটা তদারক করা, নিয়ম ভঙ্গ কারীর বিরুদ্ধে তারা পদক্ষেপ নিতেই পারেন। প্রশ্ন উঠতে পারে নকল করলে কাউকে একেবারে বহিষ্কার করা যায় কিনা? যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বা দু'বছরের জন্য বহিষ্কার করার নিয়ম আছে। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন কে বহিস্কার করে আরেকজনকে ঢুকানোর নিয়ম সুযোগ নেই, কিন্তু স্কুলে একজন কে বহিস্কার করলেই অনেক লক্ষ টাকার বিনিময়ে আরেকজনকে ঢোকানো যায়। এই বাণিজ্যিক কারণেই বহিষ্কার বা টিসি দেবার এই নিয়মের সূত্রপাত। নিয়ম তো শিক্ষিকা তৈরি করেননি, কেন তাকে এখন ভূক্তভোগী হতে হচ্ছে?

৮| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অনেক কিছুই জানা ছিল না, জানলাম; আপনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে। আপনার প্রশ্নগুলোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের বাইরে বসে যতোটুকু জেনেছি, তাতে মনে হয়েছে এটা শিক্ষকদের বাড়াবাড়ি। তবে টিসি দেয়ার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় ভর্তি বানিজ্য, তাহলে এরও একটা সুরাহা হওয়া দরকার। অরেকবার প্রমানীত হচ্ছে, আমাদের সমাজটা কতোটা পচে গিয়েছে। যেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন অনাচার হয়, সেখানে পচনের আর বাকী থাকে কি?

তবে বিষয়টা যেহেতু হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে, আশাকরি সত্য এবার প্রকাশিত হবে।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৯

করুণাধারা বলেছেন: ভুয়া মফিজ, এই দেশে আমরা বেঁচে থাকি নানা সিস্টেমের সাথে আপোষ করে, গা বাঁচিয়ে। কিছু জায়গা আছে, যেখানে নিয়ম মেনে চললে কোন অসুবিধা হয় না, অসুবিধা হয় যারা নিয়ম ভাঙতে চায় তাদের। টিসি দেবার নিয়ম ভালো না, কিন্তু এটা কি কারণে দেওয়া হয় সেটা সকলেই জানেন। এই স্কুলগুলো এতই লাভজনক ব্যবসা যে, বর্তমান একজন মন্ত্রী পর্যন্ত (আমি নাম বলতে চাই না) ভিকারুন্নেসা স্কুলের গভর্নিং বডিতে ঢুকতে চেয়েছিলেন!! আমার ধারণা এই সিস্টেম পাল্টানো যাবে না। একজন শিক্ষিকাকে শাস্তি দিয়ে এখন পরিস্থিতি সামলানো যাবে, কিন্তু টিসি দেবার এই সিস্টেম চলতেই থাকবে.....

৯| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৪

শ।মসীর বলেছেন: পেপারেই দেখলাম স্কুল থেকে বের হয়ে পরিবারকে বাসায় পাঠিয়ে মেয়ের বাবা নানা দিকে যোগাযোগ করতে ছিলেন এই ব্যাপারে। আমি নিশ্চিত মেয়েটা সুইসাইড না করলে তার বাবা ক্ষমতাধর কাউকে মেনেজ করে ঠিকি মেয়ের টিসি দেয়া ঠেকিয়ে দিতেন । এটাই হচ্ছে আমার দেশের আসল ব্যাপার। সবাই ক্ষমতা দেখিয়ে সব মেনেজ করে । আচরনগত এই কারনেই শিক্ষকরাও সময়মত তাদের ক্ষমতা দেখান, ঘুষ বানিজ্যে জরান । সব কিছুই সিস্টেমের কনসিকোয়েন্স । কোনটা কোনটার থেকে আলাদা না ।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩

করুণাধারা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ,শ।মসীর।

আসলেই সবকিছুই সিস্টেমের কনসিকোয়েন্স। তবে এই ঘটনার কনসিকোয়েন্স কি হয়, আমি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। আমার ধারণা এরপর থেকে মোবাইল নিয়ে যাওয়ায় আর কোন বাধা থাকবে না, নকল করতে দেখলেও শিক্ষিকারা কোন কিছু বলবেন না........

১০| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৪

শায়মা বলেছেন: আমাদের স্কুল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এই স্কুলকে আমি দারুণ ভালোবাসি। আমার ধারণা আমাদের চাইতে বেশি কেউ স্টুডেন্টদেরকে এত কেয়ার করতে পারবেনা। আমাদের স্কুলেও মোবাইল আনা আলাউড না। শুধু ক্লাস ইলেভেন এবং টুয়েল্ভএর স্টুডেন্টরা মোবাইল আনতে পারে। তার আগে না। তবুও অনেকেই এনে ফেলে। এটাই স্বাভাবিক।

আমাদের পূর্বপুরুষ বা আমাদের কথা ভেবে দেখি যদি তো দেখতে পাই স্কুল পালানো অপরাধ ছিলো। সিগারেট খাওয়া বা গল্পের বই আনাও হয়তো। সেসব রুলস থাকার পরেও তারা কিন্তু সেসব অনেকেই করতো। মার খেত, বকা খেতো। প্যারেন্টসদেরও অত্যাচার চলতো। রিতীমত অমানবিক ব্যাপার স্যাপার। যা চাইল্ড সাইকোলজীতে একেবারেই নিষিদ্ধ আজকাল।

গবেষনায় দেখা গেছে এমন অবান্তর অত্যাচারের কোনো মানেই নেই যা মোটেও ফলপ্রসু না বরং বুঝিয়ে বলা ও বুঝাতে পারানো একটি রুলের সুফল কুফল বা নিয়ম মানার অভ্যাসটাই আসল। এর দায়িত্ব প্রথমত পরিবার নামক বিদ্যালয়ের। তারপর স্কুল। কিন্তু প্রায়শই পরিবার যেখানে ব্যার্থ হয়, তখন স্কুল তা শেখায় এরপর সমাজ থেকেও মানুষ অনেক কিছুই শেখে।

এই জন্য প্রয়োজন, প্যারেন্টস এবং টিচারের কো অপারেশন। একটা বাচ্চার ভালোর জন্য, তাকে কিছু শেখানোর জন্য দু'পক্ষের সহযোগীতার প্রয়োজন। মোবাইল না নেওয়া একটা রুল। তা পরিবার শেখাবে এবং বাচ্চা সেটা মানছে কিনা তা লক্ষ্যও রাখবেন। এরপর স্কুল তা পেলে তা বাজেয়াপ্তও করবে তবে বাচ্চা বা প্যারেন্টসকে অপমান বা অভিযোগের সূরে নয়। শুধুই বুঝাতে হবে এটা রুল আর কেনো রুল আর কেনো তা করা যাবেনা সেটাই। মেজাজ গরম করে বা অপমান করে নিজেদেরকে সুপিরিওর ভেবে নয়। এখানে আসল স্বার্থ বাচ্চাটার। বাবা মা এবং টিচার দুপক্ষের মনোবৃত্তিই হবে শিশুর উন্নয়ন! তার মানসিক ও শাররিক সুস্থ্য বিকাশ।

এখানে কিছু গড়বড় হয়ে যায় বলেই কিছু স্কুল ও টিচারদের নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

অরিত্রীর ঘটনায় আমার বার বার মনে হচ্ছিলো এই বাচ্চাটা আর প্যারেন্টসের সাথে আসলে আমার কথা বলাই উচিৎ ছিলো তাহলে এমন ঘটনা হয়তো ঘটত না। আমি জানি এই কথা শুনে আমাকে অনেকেই ওভার কনফিডেন্ট ভাববে। তবে এও সত্যি আমার স্কুল আর আমার শিক্ষার বিষয় আমাকে এটাই শিখিয়েছে হাউ টু কনভিন্স আ চাইল্ড এন্ড প্যারেন্টস ইন পজিটিভ ওয়ে।
আমি আমার স্কুলের কাছে কৃতজ্ঞ এই কারণেই।

আমার স্কুলেও অনেক বাচ্চাই মোবাইল আনে। আমরা বাজেয়াপ্ত করি এবং প্যারেন্টকে ডাকিনা যদি না তারা একদম শিশু শ্রেনীর হয়। তারা বললেই শুধু প্যারেন্টস আসবে এবং তাদেরকে দেওয়া হবে উইদাউট এনি ব্যাড বিহেব। আমরা টিচার আর প্যারেন্ট সমপর্যায়ের রেসপেক্টের অধিকারী। তাই আমাদের বাচ্চারা বেড়ে উঠছে কমফোর্টেবল এনভায়রনমেন্টেই।

সমাজ, শিক্ষার স্থান এবং পরিবার সকলেরই দায়িত্ব আছে । গুরু দায়িত্ব আছে ....

আপু তোমার প্রশ্ন - এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? সিস্টেম, শিক্ষক, নাকি ব্যাড প্যারেন্টিং!

কেউ দায়ী নয়...

আবার দায়ী সবাই.....

দায়ী আমাদের মানসিকতা, শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা এবং আবেগ....

দেখো একটা বাচ্চাকে ভূতের ভয় না দেখালে সে জীবনেও ভূতের ভয় পাবেনা। কারণ সে জানবেই না ভূত বলে আসলেও কিছু আছে। যা নাই তাই দিয়ে ভয় দেখানো মানেই তার মনে ভয় পেতে শিখিয়ে দেওয়া। পরিবার থেকে সমাজ থেকে মানুষ শেখে ভূত আছে।

তেমনই রাগ করে বা কষ্ট পেলে আত্মহত্যা করতে হয় বা করা যায় এটাই সঠিক যারা ভাবে এবং জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার মত কাপুরুষতা শেখে... এখানে প্রথম দায়টা পরিবারের । যেসব পরিবারে এসব ইতিহাস আছে কেসহিস্ট্রী নিলে দেখা যাবে সেসব পরিবার বার বার বাচ্চাদের সাথে সেই সব আত্মহত্যা বা তার কারণগুলো নিয়ে গল্প করেছে। এবং তাকে পরোক্ষভাবে শিখিয়েছে কষ্ট পেলে আত্মহত্যা করে জীবন থেকে কাপুরুষের মত পালাতে হয়।

টিভি, সিনেমাও এখানে আবেগ নিয়ে খেলা করেছে। একটি শিশুকে শিখিয়েছে কষ্ট পেলে আত্মহত্যা করলে পরিবার কাঁদে, শিক্ষক অনুতপ্ত হয় হেন তেন আবেগী ফাঁদ। তাই শিক্ষা দেবার জন্যও অনেকেই এই পথ বেঁছে নেয়। তবে যে যেভাবেই নিক। কিছু মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবনতা একটা বিষয় কাজ করে যা টিইন এইজে শুরু হয়। এটা এক রকম মানসিক বৈকল্য। তারা সব সময় সুযোগ খোঁজে আত্মহত্যা করে জীবন থেকে পালাতে। এরা এসকেপিং টেন্ডেন্সীর মানুষ। যাই হোক আত্মহত্যার কারণের জন্য তাই নিজেও সে দায়ী থাকে।

এসব দেখবার বা বুঝাবার দায়িত্ব প্রথমত পরিবারের। তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। পরিবার ও সমাজের যেমন রুল থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও আছে। নকল করা বা নকলের সরঞ্জাম বহন করা অপরাধ। মোবাইল সেটার মাঝে নকল থাকুক বা না থাকুক পরীক্ষার হলে নেওয়া যাবেনা হেতু সেই রুল ফলো করতে হবেই। এবং যে না করবে তা বাজেয়াপ্ত করার অধিকার শিক্ষকের আছে। তার জন্য সে দায়ী না। দায়ী সিস্টেম। হয় পরীক্ষা বন্ধ করে দাও, নয় মোবাইল নিয়ে যেতে দাও নয়তোবা শিক্ষককে দায়ী করা যাবে না।

এরপর তো আগেই বলেছি.....

এই বিষয়টা নিয়ে আমি স্থম্ভিত! কিভাবেই বা একটা বাচ্চা এতটুকু ঘটনায় আত্মহত্যা করে , কেনোই বা করে আমি খুঁজে পাই না। আমার জীবনেও আত্মহত্যার মত ঘটনা বার বার ঘটেছে। আমি ততবার রুখে দাঁড়িয়েছি। তবে হ্যাঁ আমি সদা ও সর্বদা নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। আমি যাই করেছি জিদ করে বা রাগ করে আমি নিয়ম খুব একটা ভাঙ্গিনি। আর তাই আমার ধারণা আমার মত একটি সফল ও সুখী জীবন আমি পেয়েছি। আমিও আমার বাচ্চাদেরকে এটাই বলি। জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া নয়। লড়াই করাই আসল জীবন....

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪০

করুণাধারা বলেছেন: তোমার মন্তব্যই পুরো একটা পোস্ট! তুমি এত সুন্দর ভাবে এত কিছু আলোচনা করেছে মন্তব্যে! তুমি একজন শিক্ষক, শিশুদের মনস্তত্ত্ব তুমি বোঝো। এই ঘটনাটার সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা তুমিই দিতে পারো; দরকার ছিল তোমার আরো আগে পোস্ট দেওয়ার।

তুমি বলতে চাচ্ছ, শাসনের দরকার কি, যদি বুঝিয়ে বলা যায়! একশবার ঠিক। কিন্তু একটা কথা আছে, তুমি একটা দামি স্কুলের শিক্ষিকা, ভিকারুন্নেসা স্কুলের সাথে তোমার স্কুলের তুলনা আর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের সাথে সরোয়ারদী হাসপাতালের তুলনা একই কথা! ভিকারুন্নেসা স্কুলের শিক্ষিকাদের সবচাইতে বড় সমস্যা ক্লাসে বিপুল পরিমাণে ছাত্রীর সংখ্যা। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি সেকশনে ৪০ জন ছাত্রী থাকার কথা, সেটা কখনো ৮০ জন হয়ে যায়!! আমার তো মনে হয় শিক্ষিকাদের প্রাইজ দেয়া দরকার, এত বিপুল সংখ্যক ছাত্রীদের ম্যানেজ করতে পারার জন্য! তুমি বলতেই পারো, এক ক্লাসে এত ছাত্রী কেন নেয়া হয়!!! এটা ব্যবসা! প্রথমে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে যে মেয়ে গুলোকে নেয়া হয়, এরা খুবই ভালো ছাত্রী, এরা সবসময় ভালো রেজাল্ট করে, ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে চান্স পায় এবং ভিকারুন্নেসার নাম হয়। তারপর নেয়া হয় কিছু ছাত্রী, হয় তাদের পিতা প্রভাবশালী অথবা সম্পদশালী! স্কুলের জন্য ১০/১৫ লক্ষ টাকা অনায়াসে দান করতে পারেন, এবং টাকা দিয়ে মেয়েকে ভর্তি করান। এই যে ক্লাসে ছাত্রীদের বিপুল সংখ্যাধিক্য, এতে শিক্ষিকার কোন লাভ হয় না বরং এদের সামলাতে তাদের খুবই কষ্ট হয়। ক্লাসের ছাত্রীদের সঠিক আচরণ শেখানো, আলোচনার মাধ্যমে দিক নির্দেশনা দেওয়া, এই কাজগুলো এতজন ছাত্রীর এই শিক্ষিকার পক্ষে কি সম্ভব? বলতে পারো, এমন স্কুলে কেন মেয়েকে পড়ালাম! আমি স্কুলের নাম দেখে এখানে ভর্তি করিনি, ভর্তি করিয়ে ছিলাম কারণ বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াতে চাচ্ছিলাম, এবং তার মধ্যে এই স্কুলে অনেক ভালো ভালো নিয়ম আছে, যেগুলো মেনে চললে ছাত্রীদের কেবল লাভই হয়। আমার মেয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই স্কুলে ঢুকে ছিল। দেখেছি এখানে শিক্ষক ঠিকমতো ক্লাসে পড়ান, যে সেটা নিতে পারে তো পারল......

তুমি যেমন তোমার ছাত্রদের ভালোবাসো, এই শিক্ষিকারাও তেমনি ভালবাসেন, বিশ্বাস কর। যে মায়ের দুটি সন্তান, তিনি যেভাবে সন্তানদের খেয়াল রাখতে পারেন, যে মায়ের দশটি সন্তান তিনিও কি একইভাবে রাখতে পারেন?

প্যারেন্টস মিটে আমার অনেক শিক্ষিকার সাথে দেখা হয়েছে, তাদের সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে....... আমার মনে হয় নি তাদের কেউই কোন ছাত্রীর প্রতি কটু কথা বলতে পারেন।

এই ঘটনা আসলেই স্তম্ভিত করার মত। ততোধিক স্তম্ভিত হয়েছি মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে- একতরফাভাবে শিক্ষিকাদের দোষ দিয়ে, তাদের জেলে ভরে দিয়ে দায় শেষ করে দিলে এই ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। দরকার ছিল পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা এবং যে সমস্ত এলিমেন্ট এতে দায়ী সেগুলো বের করা, যাতে আর কখনোই এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে না পারে।

১১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা আপনার এ পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এই ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ।
পরিবার একটা মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানে গলদ থাকলে অন্য যত ভাল প্রতিষ্ঠানেই মানুষ লেখাপড়া করুক না কেন, তার ঘাটতি থেকে যাবে; এ ঘাটতি অপূরণীয়।
আমি আমার কৈশোরে যে প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছি, সেখানেও খুব কঠিন ডিসিপ্লিন ছিল এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম কানুন ছাত্রদের প্রতি কোন বৈষম্য না করে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হতো। সে সময় পূর্ব পাকিস্তান হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস বি এ সিদ্দিকীর ছেলে আমাদের সেই আবাসিক প্রতিষ্ঠানটিতে পড়তো। একবার মাননীয় প্রধান বিচারপতি একটি জেলা শহরের আদালত পরিদর্শন শেষে আমাদের সেই প্রতিষ্ঠানটির সামনের রাস্তা দিয়ে রাজধানীতে ফিরছিলেন। হঠাৎ তার মনে ইচ্ছা জেগেছিল, তার ছেলেকে একটিবার দেখে যাবার। তখন তো কোন মোবাইল ফোন ছিল না, তাই আগে ভাগে অধ্যক্ষের অনুমতি নেয়ারও কোন সুযোগ ছিল না। তিনি সোজা অধ্যক্ষের অফিসে এসে তার পরিচয় দিয়ে বিনয়ের সাথে তার ইচ্ছের কথা জানালেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিয়ম, মাসে কেবলমাত্র একদিন, অর্থাৎ নির্ধারিত "প্যারেন্টস ডে"তেই মাতা-পিতা, ভাইবোন, অভিভাবকেরা ছাত্রদের সাথে দেখা করতে পারবেন। অধ্যক্ষ মহোদয় সেই নিয়মটির কথাই মাননীয় চীফ জাস্টিস মহোদয়কে জানিয়ে অনুরোধ করলেন, ঠিক তার পরের সপ্তাহে এসে নির্ধারিত "প্যারেন্টস ডে"তে তার ছেলের সাথে দেখা করে যাবার জন্য। আইনের সর্বোচ্চ সুরক্ষাকারী চীফ জাস্টিস অধ্যক্ষের এই আইনের প্রতি অনুরাগ দেখে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে চা বিস্কুট খেয়ে রাজধানীতে ফিরে এসেছিলেন, ছেলের সাথে দেখা না করেই। এভাবেই নিয়মের প্রতি অনুরাগ ও আনুগত্য সেই অধ্যক্ষ এবং চীফ জাস্টিস, উভয়কে মহিমান্বিত করেছিল। আজকের দিনে এমনটা হলে কী হতো তা ভাবতে পারেন?
অবশ্য এরকম হতে হলে একটা শক্ত মেরুদন্ডের প্রয়োজন, যা সেই অধ্যক্ষেরও ছিল, চীফ জাস্টিসেরও ছিল। টিক্কা খানের শপথ পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চীফ জাস্টিস মহোদয় তার শক্ত মেরুদন্ডের প্রমাণ আরেকবার জাতির সামনে রেখেছিলেন।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৭

করুণাধারা বলেছেন: আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব ভালো লাগলো, বিশেষ করে চিফ জাস্টিস সাহেবের ঘটনাটা পড়ে তার সম্পর্কে জানতে পেরে। এই মহান মানুষদের সম্পর্কে এই প্রজন্মের মানুষের জানা দরকার....... মাঝে মাঝে মনে হয়, আগে এমন শক্ত মেরুদণ্ডের মানুষ ছিলেন বলেই সমাজে ন্যায় নীতি ছিল। তাকে যথাযথ সম্মান দেখিয়েছেন অধ্যক্ষ, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভাঙ্গে নি;  চিফ জাস্টিস সাহেবও  পদাধিকার বলে অধ্যক্ষকে কোনরকম চাপ দেন নি; এই জিনিস আজকাল একেবারেই দেখা যায় না। আজকাল সমাজে প্রভাবশালী মানুষেরা সন্তানের স্কুলে গিয়েও তাদের প্রভাব খাটান। আমার ছেলের স্কুলে নিয়ম ছিলো স্কুলে ঢুকতে, এবং ছুটি হলে সকলে বাইরে আসবে পায়ে হেঁটে।  কিন্তু এক সময় দেখলাম, তিন/চারজন ছাত্রের গাড়ি একেবারে তাদেরকে স্কুল বিল্ডিং পর্যন্ত নিয়ে যায়, বাইরে নিয়ে আসে, এবং গাড়িগুলা স্কুলের ভিতর পার্ক করা থাকে, গাড়িতে বিশাল স্টিকার লাগানো "সংসদ সদস্য"। আমার ধারণা, কঠোর নিয়মানুবর্তিতার  এই স্কুলে, এই ছাত্ররা কোন অন্যায় করলেও পার পেয়ে যায়, ওই স্টিকারের জন্য।

পরিবার একটা মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানে গলদ থাকলে অন্য যত ভাল প্রতিষ্ঠানেই মানুষ লেখাপড়া করুক না কেন, তার ঘাটতি থেকে যাবে; এ ঘাটতি অপূরণীয়।

নিয়মানুবর্তিতার প্রথম পাঠ পরিবার থেকেই হয়। পরিবারেই প্রথমে শেখানো হয় বড়দের কে শ্রদ্ধা করতে, শিক্ষকদের সম্মান করতে। কোন পরিবার যদি এটা না শেখায়, স্কুলে কখনো এটা শেখানো যায় না। ভালো না লাগলেও, যে কোন প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মানা দরকার সেই প্রতিষ্ঠানে থাকা প্রত্যেকের, কারণ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে সেটা বারবারই ঘটাতে হতে পারে, এতে প্রতিষ্ঠানে ডিসিপ্লিন থাকে না। 

ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক, কিন্তু মানুষের প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক! কোন অভিযোগ পুরোপুরি খতিয়ে না দেখে কাউকে অভিযুক্ত করা উচিত নয়। আমরা আবেগের স্রোতে বিবেক বিসর্জন দিয়ে তাই করছি!!! এর ফল কখনোই ভালো হতে পারে না।

এই পোস্টে আপনার মন্তব্য এবং লাইক, দুটোই আমার জন্য অনেক অনুপ্রেরণা!  অসংখ্য ধন্যবাদ।

১২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৮

নীল আকাশ বলেছেন: আপু, বেশ দেরি করে আসলাম। আগে ব্লগে সবার একই ধরনের বিভিন্ন থীম নিয়ে লেখা গুলি পড়লাম। এবার আমি কিছু কথা বলতে চাই-
১। কোন স্কুলে পড়লে কেন ছেলেমেয়েরা সেই স্কুলের নিয়ম মানবে না? এটা তো গুরতর অপরাধ। আমরা নিয়ম মেনে বড় হয়নি? এদের মানতে অসুবিধা কি? মানতে ইচ্ছে না করলে অন্য স্কুলে চলে যাক? শুধু শুধু অন্য বাচ্চাদের ডির্স্টাব করার দরকার কি? সব বাচ্চারা মানলে আর কোন বাচ্চা না মানলে সেই বাচ্চার সমস্যা, স্কুলের না।
২। আজকালের সমাজে সবার ভদ্রতা আর আচরন কিভাবে দিন দিন নীচু পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। বাবা মা'রা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। আমরা ছোটবেলায় বড়দের সালাম না দিলে কত বকা খেতাম আর আজকাল সালাম না দেয়াটাই স্ট্যাটাস। যে যত বড় বেয়াদপ, সেই তত বেশি আপ-টু-ডেট, আর তত বেশি মর্ডান। আর এই সব গড়ে উঠে সেই সব অপর্দাথ বাবা মার প্রশয়ে......
৩। গ্রাজুয়েশনে পড়ার আগে (নিদেন পক্ষে ইন্টার) ছেলে মেয়েদের হাতে মোবাইল দেয়ার কি দরকার? মোবাইল হাতে পেলে এরা কি করে এটা বাবা মা বুঝে না? স্ট্যাটাস মেনইনটেইন করে ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল দেয় আর এই কোমল মতো বাচ্চারা কিছুদিন পরেই পর্ণ দেখা শুরু করে, ফেসবুকে সারাদিন স্ট্যাটাস আর আপডেট দেয়, রাতভর গার্ল/বয়ফ্রেন্ডের সাথে কি আলাপ করে সবাই জানে। আমার মতে দেশে সকল সামাজিক অধ:পতন শুরুই হয়েছে এই মোবাইল আসার পর থেকে। এত টুক বাচ্চার মোবাইল কি দরকার? এর বাপ মা কে ধরে আগে পানিসমেন্ট দেয়া দরকার।
৪। আমার মনে হয় কিংবা ক্ষীন ধারনা স্কুলের টিচারদের গালির কারনে এই মেয়ে সুইসাইড করে নি। বাবা মা টিসির হুমকি পেয়ে বাসায় যেয়ে মেয়েকে কঠিন শাষন করেছে (মারধরও করতে পারে)। এত দিন পুতু করত, হঠাৎ করে এই শাষন মেয়ে সহ্য করতে পারে নি। আপনার কথা মতো তো এই মেয়ে জানতই মোবাইল নিয়ে ধরা পড়লে টিসি দিয়ে দেয়া হবে। জানা জিনিস খুব বেশি মনে এত বড় ইমপ্যাক্ট ফেলে না। যে কোন সাইকোলজিস্ট কে জিগ্গেস করুন।
৫। জাপানে শিশুদের প্রথম তিন বছর স্কুলে আচার ব্যবহার শিখানো হয় আর তারপর থেকে লেখাপড়া। আর আমরা পারলে কে.জি ক্লাসেই মাস্টার্স শেষ করে দিতে চাই! এতে আউটপুট প্রোডাক্ট কি হচ্ছে সেটা তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি, আপনিও পাচ্ছেন।
৬। নকল করলে/নিয়ম না মানলে টিচাররা পানিশমেন্ট দিতে পারবে না? বাহ, স্বাধীন দেশ, স্বাধীন নাগরিক। পরীক্ষায় গার্ড দেয়া বাদ/বন্ধ দিয়ে দিন। আরও ভালো হবে।
আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না......
শুভ কামনা রইল।





০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮

করুণাধারা বলেছেন: আমিও অনেক দেরি করলাম উত্তর করতে, মাঝে মাঝে পড়ার শক্তি থাকে, লেখার শক্তি আর থাকে না.........

যেভাবে পয়েন্ট করে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিটিই একেবারে সঠিক। আগে এগুলোর উত্তরে আমার মন্তব্য যোগ করি:

১) নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাসটা মা-বাবার  শেখাবার, যেখানকার যে নিয়ম সেটা মানাটাই সঠিক; যদি মানতে ইচ্ছা না করে, তাহলে অন্য কোন খানে চলে যাওয়াই ভালো, কিন্তু সেখানে থেকে গিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করলে অন্যরাও তাকে দেখে নিয়ম ভাঙতে উৎসাহিত হবে।

২) আমাদের ছোটবেলায় প্রায় প্রত্যেকেই এই কবিতাটা মুখস্ত করতাম: 

সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
 সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি......

তারপর চাইতাম এমন আচরন করতে, যেন সকলে ভালো বলে। বড়দেরকে শ্রদ্ধা, ছোটদেরকে স্নেহ, আজকাল এগুলোর চর্চা তেমন দেখি না, ফলে যা হবার তাই হচ্ছে।

৩) সহমত। আমি চার বছরের বাচ্চার মাকে দেখেছি  গর্ব করে বলতে, "আমার...... এখনই নিজে নিজে ভিডিও ডাউনলোড করতে পারে" এই বাচ্চা বড় হলে কি হবে? আর এই যে স্কুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া, এই স্কুলে জরুরী প্রয়োজনে শিক্ষিকাদের ফোন ইউজ করা যায়; তাহলে যারা ফোন নিয়ে যায়, তারা কেন নিয়ে যায়?

৪) আমারও তাই ধারণা। আমি ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখলাম, (শেয়ার দিতে জানি না দেখে দিতে পারলাম না) সেটা সম্ভবত অরিত্রির বাবার প্রথম ইন্টারভিউ। সেখানে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, "প্রিন্সিপাল কে বললাম, এক বছর পর তার এসএসসি পরিক্ষা, এখন আপনি টিসি দিলে সে কোথায় যাবে, আপনি ক্ষমা করুন! কিন্তু বারবার ক্ষমা চাইলেও প্রিন্সিপাল বলছিলেন, 'আগামীকাল এসে টিসি নিয়ে যাবেন' মনে হয় এতেই আমার মেয়ে খুব মন খারাপ করে এই কাজ করেছে"। সন্তানহারা একজন বাবা নিজকে সান্তনা দেবার জন্য অন্যের উপর দোষ চাপাতেই পারেন। কিন্তু কোন যাচাই না করে তার কথা মেনে নেওয়া হল কেন? এই কথার উপর ভিত্তি করে শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করা হলো, যিনি কেবল মেয়েটিকে অধ্যক্ষের ঘরের পৌঁছে দিয়েছিলেন, কারণ সেটাই নিয়ম। শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করার আগে বাবাকে কি একবার ইন্টারভিউ নেওয়া যেত না, ঠিক কি ধরনের অপমানিত তিনি হয়েছিলেন এবং মেয়ে যখন মায়ের সাথে বাসায় ফিরে গেল, দরজা আটকাল, তখন মা কি করছিলেন?

৫) আমাদের দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা সহায়তা আসে শিক্ষার উন্নয়নে, কিন্তু কখনো কি গবেষণা হয়েছে, এই শিক্ষা শিক্ষার্থীরা আনন্দিত মনে কতটুকু গ্রহণ করছে?

৬) ঠিক তাই। এরপর যদি শিক্ষকরা বলে বসেন, তাদের কাজ কেবল পড়ানো, ছাত্রীদের আচরণ শেখানো নয়। তাহলে ছাত্রীরা ইচ্ছামত স্কুল পালিয়ে ঘুরতে যাবে, মোবাইলে নিষিদ্ধ ছবি আনবে, শিক্ষিকা দেখেও মোবাইল ফেরত দেবেন, নকল করা দেখলেও চুপ করে থাকবেন- সেটাই বোধহয় আমরা চাই! যা বলা হচ্ছে, ছাত্রদের বুঝিয়ে বলা উচিত যদি তারা ভুল করে। যে ক্লাসে ৮০ জন ছাত্রী থাকে, সেই ক্লাসের শিক্ষিকার পক্ষে কি তা করা সম্ভব!!! ৮০ জন ছাত্রী কেন, সেটা আমি শায়মার প্রতিমন্তব্যে উল্লেখ করেছি।

যাই হোক, এই পুরো ঘটনা আমার ধারণা বদলে দিয়েছে। আমার ধারণা ছিল, ব্লগে যারা লিখেন, তারা কোন রায় দেবার আগে দু'পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখেন........... ধারণাটা এবার ভুল প্রমাণিত হলো!

আপনার মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অনেক ধন্যবাদ, নীল আকাশ।

১৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫০

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো যদি শিক্ষা দানের চাইতে ব্যাবসাকে গুরুত্ব দেয় তবে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০২

করুণাধারা বলেছেন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো যদি শিক্ষা দানের চাইতে ব্যাবসাকে গুরুত্ব দেয় তবে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।

আমি ঠিক এভাবে দেখি না, মোস্তফা সোহেল। আসলে এইসব স্কুলে এমন না যে শিক্ষক ক্লাসে পড়ান না বা পড়াশোনা হয় না। বরং ভালো ভাবেই হয়, যে গ্রহণ করতে পারে সে তা নেয়। এমনিতে এই স্কুলের বেতন তুলনামূলকভাবে অন্য যেকোনো ভালো স্কুলের অর্ধেকেরও কম। সুতরাং এখানে থেকে তারা তেমন ব্যবসা করে না, ভর্তি পরীক্ষাও ফেয়ার হয়, যার ফলে অনেক প্রকৃত ভালো ছাত্রী ভর্তি হয়, যাদের দ্বারা স্কুলের সুনাম বাড়ে। কিন্তু ব্যবসা হয় যখন গোপনে অর্থের বিনিময়ে কিছু ছাত্রী ভর্তি করা হয়, এইসব ছাত্রী কখনোই ভালো রেজাল্ট করেও না, তাদের থেকে কেউ তা আশাও করে না, দু বার ফেল করলেই এদের টিসি দেওয়া হয়, তখন তাদের বদলে আরেকজন ঢুকানো হয়। আবার টাকা, নতুন ব্যবসা....... কিন্তু এই যে ব্যবসা, এটার দায় শিক্ষিতরা কেন নেবেন?

তবে ওই যে বললাম, যারা ভালোটা গ্রহণ করার তারা ঠিকই এই স্কুল থেকে ভালো শিক্ষা গ্রহণ করে। না হলে ৬০ বছর ধরে কি করে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে?

ভালো থাকুন মোস্তফা সোহেল, শুভকামনা রইল।


১৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২১

নীল আকাশ বলেছেন: আমরা না বুঝে শুধু তিল কে তাল বানাই। যে স্কুলের নামে একগাদা গালি দিচ্ছি এই সামনের মাসে ভর্তি করার জন্য সেখানে লম্বা লাইন লেগে যাবে। আমরা কি বাবা মা হিসেবে ১০০% দায়িত্ব পালন করি, না কিন্তু অন্যের কাছ থেকে ১১০% দাবী করি। নিউজ পেপার, মিডিয়া আর ফেসবুক হচ্ছে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর আসল হাতিয়ার। এরাই উডোর পিন্ডি বুডোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে।
মেয়ে মারা গেছে, অবশ্যই কেন জানা দরকার, তবে এর বাবা মা কে নিয়েও ভাল করে জিগ্গাসা করা দরকার আসলে সেদিন বাসায় কি ঘটেছিল। অনর্থক হাউকা্উ করে কোন লাভ নেই.......

আপু, অল্প কয়েকদিন পড়েই আমরা সবাই এটা ভূলে যাব। কয়েকদিন পরেই নিউজ পেপার, মিডিয়া আর ফেসবুক অন্য কোন নিউজ ভাইরাল করে সেটা নিয়ে মাতামাতি করবে। পেপারের কাটতি বাড়াবে। আর এই মৃত্যু নিউজ আমাদের ব্লগের এই সব পোষ্টের নীচে চাপা পড়ে যাবে.........
আমরা হুজুগে মাতাল জাতী। এই রকম মাতামাতি আগেও অনেক হয়েছে। পরেও অনেক হবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না........
দারুন একটা গল্প দিয়েছি আজকে, নির্ঘাত আপনার পছন্দ হবে। আপনার চিরকালের পছন্দ গল্পের হ্যাপি এন্ডিং দেয়া হয়েছে..
ধন্যবাদ আর শুভ কামনা রইল!

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৪

করুণাধারা বলেছেন: প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি এত দেরি করে উত্তর দেবার জন্য। আসলে এই সুন্দর মন্তব্যটি আমার চোখ এড়িয়ে গেছে, নোটিফিকেশন পাইনি, এবং পরে আরেকটা পোস্ট দেওয়ায় দেখি নি যে আগের পোস্টে মন্তব্য আছে!

আমরা একটা হুজুগে জাতি। অন‍্যের প্রতি সমবেদনা থাকা ভালো, কিন্তু সমবেদনা এমন হওয়া উচিত না যে, আমাদের বিচার-বুদ্ধিকে বিসর্জন দিতে হবে! যে কোনো অভিযোগে অভিযুক্তর কথাও শোনা দরকার, এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এক পক্ষের কথা শুনেই আমরা অভিযুক্তকে ফাঁসি দেবার জন্য আকুল হয়ে উঠলাম, স্কুল বন্ধ করে দেবার দাবি তুললাম, অথচ আগামী মাসেই দেখবেন, ভর্তি করার জন্য অভিভাবকদের লাইন পড়ে যাবে...... তারা ভুলেই যাবে, এই স্কুলের বিরুদ্ধে কত কথা বলেছে।

আপনি একেবারে সঠিক কথা বলেছেন।

আপনি বলার আগেই এই চমৎকার গল্পটা পড়েছি, এবং মুগ্ধ হয়েছি। অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.