নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

করুণাধারা

করুণাধারা

জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো

করুণাধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুলখানি

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:২০



জুলাই মাসের আঠার তারিখ, বৃহস্পতিবার। বেলা এগারোটা বা বারোটা। ঝলমলে রোদের উজ্জ্বল দিন। আমার চোখ ঝলসে যাচ্ছে আর মন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে... আমার চারপাশে অনেক মানুষ, তাদের দেখছি, কারো সাথে কথা বলছি কিন্তু মন একেবারে অনুভূতিশূন্য... বড়মামার কথায় বাস্তবে ফিরলাম।

- কুলখানি কবে করবে ঠিক করলে?

কুলখানি কাকে বলে সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। তারপর মনে পড়লো মৃত্যু উপলক্ষে দোয়ার নাম করে খাওয়ার আয়োজনকে বলা হয় কুলখানি। আজ ভোর সাড়ে চারটায় আমার মা মারা গেছেন, এখনও কবর দেয়া হয়নি, অথচ আমাদের এখনই কুলখানির কথা ভাবতে হবে!! কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। দেখলাম পাশে বসা আমার বড়বোন বলল,

- ভাইরা তো রওয়ানা দিয়েছে, ওরা আসুক, তারপর না হয় বলি...

বড়মামা খুব বিরক্ত হয়ে বললেন,

- এখন বললে জানাজার সময় এ্যানাউন্স করে দিতাম, সবাই জেনে যেত। এরপর কিন্তু জনে জনে ফোন করে জানাতে হবে। সেটা করতে পারবে তো?

দুজনেই মাথা নেড়ে জানালাম পারবো, কী পারতে হবে সেটা না বুঝেই! মায়ের মৃত্যুর অভিজ্ঞতা জীবনে শুধু একবারই আসে, এই অনন্যসাধারণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবার সময় বাইরে থেকে যতই স্বাভাবিক দেখাই না কেন, আসলে মাথা ঠিকমত কাজ করে না। এইসময় কবে, কোথায়, কিভাবে কুলখানি করবো তা ঠিক করা খুব সহজ কাজ নয়!! এইতো, দুদিন আগেই মঙ্গলবার সকালে মায়ের সাথে ফোনে অনেকক্ষণ কথা বললাম, মা পুরোপুরি সুস্থ, অথচ বুধবার ভোরে স্ট্রোক করলেন, আগেই বলে রেখেছিলেন ওনাকে যেন কখনো ভেন্টিলেটরে না দেয়া হয়, তাই দেয়া হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আইসিইউ তে মারা গেলেন...

মায়ের কুলখানি করার কথা ভুলে গিয়েছিলাম, রোববার সকালে বড়ভাই বলল আত্মীয় স্বজনরা কুলখানি করতে বলেছেন, এটা নাহলে মায়ের প্রতি সন্তানের শেষ কর্তব্য পালন করা বাকি থাকে! তাই ভাইয়েরা মায়ের কুলখানির আয়োজন করবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা জানে না কুলখানি কীভাবে করতে হয় !!

তাদের দোষ কি!! যখন তারা দেশে ছিল সেসময়ের থেকে আজকের কুলখানি অনেক বদলে গেছে। আমার ছোটবেলায় দেখেছি মৃত্যুর চারদিন পর মসজিদে একটা মিলাদ হতো, তাতে উপস্থিত থাকতেন কেবল পুরুষেরা, মসজিদের হুজুরের দোয়া শেষ হবার পর জিলাপি বিতরণ হতো মৃতের আত্মার শান্তি কামনায়, সেটাই কুলখানি। তারপর চল্লিশ দিন পর চল্লিশা নামক অনুষ্ঠানে পাড়াপড়শি, আত্মীয়-স্বজনদের সপরিবারে ভূরিভোজের আয়োজন হতো, সেখানে দোয়ার চাইতে খাওয়া দাওয়াই মুখ্য ছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু হলো কুলখানির নতুন ধরণ; এসময় চল্লিশা অনুষ্ঠান বাদ হয়ে কুলখানির অনুষ্ঠানের পরিসর বাড়লো। শুরু হলো সপরিবারে কুলখানিতে যাওয়া। সেসময় মৃত ব্যক্তির বাড়িতেই কুলখানির আয়োজন হতো, পুরুষেরা হুজুরের সাথে একঘরে বসতেন, মহিলারা পাশের ঘরে। হুজুর দীর্ঘ সময় বিভিন্ন রকম বয়ান করতেন, তারপর হিসাব দিতেন কতবার কুরআন খতম করা হয়েছে, সোয়া লক্ষবার কলেমার খতম পড়া হয়েছে। এই সোয়া লাখ বার কলেমা পাঠ নাকি মৃতকে কবর আজাব থেকে রক্ষা করে, আর কুরআন খতম, সুরা ইয়াসিনের খতমের সওয়াব হুজুর মৃতের উপর বখশে দিলে মৃতের জান্নাত নিশ্চিত হয়। হুজুরের মুনাজাত এমন," এই বান্দার কবরকে জান্নাতের বাগাআআন বানিয়ে দিন।" জান্নাত অর্থই বাগান, বাগানের বাগান আবার কী জিনিস!

সেসময়, কেবল নিকটজনেরাই কুলখানিতে আসতেন। দুপুর হতেই বাড়িতে আয়োজন শুরু হতো। প্রধান উপকরণ মিষ্টির প্যাকেট, ছিটানোর জন্য গোলাপজল ইত্যাদি চলে আসত, আর আসতো পলিথিন ব্যাগের প্যাকেট আর দোয়া লেখা ছাপা কাগজ। তুলে রাখা বিছানার চাদর বের করা হতো, ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে মেঝেতে চাদর বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা হতো। মরা বাড়িতে বেশ একটা উৎসব ভাব চলে আসতো। বাড়িতে ঢোকার মুখে হাতে পলিথিন ব্যাগ আর দোয়ার কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতো কমবয়সী কজন ছেলেমেয়ে, তাদের কাজ অতিথিদের সবার হাতে একটা করে পলিথিন ব্যাগ আর কাগজ ধরিয়ে দেয়া। পায়ের জুতা খুলে ব্যাগে ভরে হাতে রাখতে হবে জুতা চুরি ঠেকাতে, আর কাগজ দেখে ইস্তেগফার, কিছু সুরা আর দরুদ পড়তে হবে পরবর্তীতে তা বখশে দেবার জন্য। এই সওয়াব বখশানো জিনিসটা খুব অদ্ভুত, যতই করিবে দান ততো যাবে বেড়ে ধরণের। একবার আমার প্রতিবেশী খালাম্মা আমাকে বললেন তার হয়ে দুই পারা কুরআন পড়ে দিতে, তার এক প্রয়াত আত্মীয়ের জন্য তাকে পাঁচ পারা পড়তে বলা হয়েছে কুলখানিতে, কিন্তু এতো পড়ার তাঁর সময় নেই। আমি বললাম আমারও সময় নেই। তখন উনি বললেন, "তোমার আম্মাকে বলো আমার হয়ে পড়ে দিতে।" আমি আম্মাকে বললাম ঠিকই, কিন্তু সাথে সাথে আম্মাকে পরামর্শ দিলাম, নিজে কষ্ট করে পড়ে তার সওয়াব অচেনা মানুষকে দেবার দরকার নেই। আমার মা বললেন, মৃতের জন্য সওয়াব বখশে দিলে আল্লাহ তা ডাবল করে দেন, এক ভাগ আম্মার আরেক ভাগ মৃত মানুষটি পাবেন... জানিনা আমার মা এ তথ্য কোথায় পেয়েছিলেন!!

সেইসব কুলখানি অনুষ্ঠানে এক ঘরে হুজুরের কথা চলতে থাকে, অন্য ঘরে মহিলাদের গল্পও চলতে থাকে, মাঝে মাঝে ঝাঁঝরি থেকে গোলাপজল ছিটানো হতে থাকে। আমি আগে ভাবতাম খালি মহিলারাই বোধহয় কুলখানি অনুষ্ঠানে গল্প করেন, কিন্তু একবার এক কুলখানিতে মহিলাদের সমাবেশের জায়গায় একটা বড় পর্দায় হুজুরের বয়ান দেখাচ্ছিল, দেখি হুজুরের আশেপাশে বসা পুরুষেরা হাসি- গল্প করছেন, মোবাইল দেখছেন!! অর্থাৎ কুলখানিতে আগত অতিথিদের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মনেই থাকে প্রীতি সম্মেলনে আসার আনন্দ। আগে একটা জিনিস করা হতো কুলখানির অনুষ্ঠানে, সমবেত ভাবে "ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা---" পড়ার সময় একবার হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়াতে হতো, কারণ নাকি রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রূহ এসে গেছেন বৈঠকে, তাই বসে থাকলে তাঁর প্রতি বেয়াদবি হয়... এই আচার অবশ্য এখন বাদ হয়েছে। এখন আবার কুলখানি না বলে এই অনুষ্ঠানকে দোয়া মাহফিল বলা হয়।

প্রয়াতের স্বজনদের জন্য কুলখানির আয়োজন করা খুব সহজ কাজ নয়। স্বজন হারানোর গভীর শোক চাপা দিয়ে, কখনো কখনো অর্থ ঋণ করেও কুলখানি করা লাগে। আমি একবার আট বছরের এক শিশুর কুলখানিতে আমন্ত্রণ পেলাম। ফুলের মত সুন্দর শিশুটির ক্যানসার হয়েছিল কিন্তু চিকিৎসা করার অর্থ ছিল না। চিকিৎসার জন্য আমিও অর্থ সংগ্রহে নেমেছিলাম কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ হবার আগেই শিশুটি মারা গেছিল। ওর মা-বাবা ঋণগ্রস্ত, তাই আত্মীয় স্বজনরা মিলে কুলখানির আয়োজন করেছেন, নাহলে নাকি শিশুটির রুহের মাগফিরাত হবে না!! কুলখানি শেষে হাতে মিষ্টির বাক্স নিয়ে শিশুটির মায়ের সাথে দেখা করতে গেলাম। একমাত্র সন্তান হারানো মা হাতে মিষ্টির বাক্স নিয়ে বসে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন...

আরেকবার, আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বিয়ের একমাস পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, কুলখানির দিন নববিবাহিতা থেকে সদ্য বিধবায় পরিনত হওয়া বউটি আপাদমস্তক কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানার একপ্রান্তে শুয়েছিল, দেখা গেল মহিলারা সব সেই ঘরে গাদাগাদি করে বসে নানারকম আলোচনা করছেন, কখনো কোন গল্পে হাসির হুল্লোড় উঠছে।

ফিরে আসি আমার মায়ের কুলখানিতে। সময়ের সাথে সাথে কুলখানিও অনেক বিবর্তিত হয়েছে, এখন সাধারণত ঝামেলা কমাবার জন্য কোনো মসজিদ বা কমিউনিটি সেন্টারে কুলখানির আয়োজন হয়। কিন্তু তার ঝামেলাও কম নয়, প্রথমে নানা জায়গা দেখে সুবিধাজনক একটা ভেন্যু নির্বাচন, তারপর হুজুর ঠিক করা, তারপর খাবার কি হবে, কতটুকু লাগবে, কত খরচ হবে সেসব হিসাব করে খাবার আনাবার ব্যবস্থা করতে হয়। আত্মীয়- স্বজন পরিচিতদের আমন্ত্রণ জানাতে হয়, অনেকের ফোন নাম্বার না জানায় সেটাও খুঁজে বের করতে হয়, তারপরও কেউ বাদ পড়ে গেলে সেজন্য পরে মনোমালিন্যও হয়!!

ভাইরা খুব ছুটাছুটি করে দুই দিনে সব আয়োজন শেষ করলো। এতদিন পর সব ভাইবোন একসাথে হয়েছি, কিন্তু একসাথে বসে মাকে নিয়ে কথা বলবার বা দোয়া করবার কোন সুযোগই পেলাম না।

আমার মায়ের কুলখানির আয়োজন হলো একটা কমিউনিটি সেন্টারে, মঙ্গলবার বাদ আসর। দুপুরে ক্লান্ত- বিধ্বস্ত আমার ছোট ভাই হয়তো মনে মনে হিসাব মিলাচ্ছিল সব ঠিকমতো হয়েছে কিনা, হঠাৎ মনে পড়ল তার পাঞ্জাবি নেই। আমাকে জিজ্ঞেস করল পাঞ্জাবির দোকান কাছাকাছি কোথায় আছে। শুনে আমার মনে পড়লো,কুলখানিরও একটা ড্রেস কোড হয়েছে, পুরুষের জন্য পাঞ্জাবি, আর ইদানিং শুরু হয়েছে মহিলাদের জন্য পুরো সাদা বা সাদাটে পোশাক।। আমি ভাবতে শুরু করলাম, সাদাটে পোশাক না পরে গেলে লোকজন আমাকে কী ভাববে!!

নির্দিষ্ট সময়ে দেখা গেল অতিথিরা এসে গেছেন, সাজগোজ করে, সবাই হাসিখুশি। আমার পাশে বসে অনেকেই নানা রকম গল্প করতে লাগলেন। আমি ধৈর্য্য ধরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম অনুষ্ঠান শেষ হবার; শুধু মনে হচ্ছিল গত মঙ্গলবারে এ সময় আমার মা "দিদি নাম্বার ওয়ান" দেখছিলেন, এই মঙ্গলবারে তার কুলখানি হচ্ছে!! এরই মাঝে আমার একজন খালা আমাকে ডেকে বললেন, "দ্যাখো, আমার মেয়ে তোমার মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়েই শেষ দেখা দেখবার জন্য পাঁচ ঘন্টা জার্নি করে ছুটে এসেছে, অথচ তাকে কেউ দুপুরে খেয়ে যেতে বলেনি..." কেউ বলতে কি আমাকেও বোঝালেন!! কী বলবো বুঝতে পারলাম না!

মাগরিবের কিছু আগে অনুষ্ঠান শেষ হলো, কিন্তু অতিথিদের গল্প গাছা চলতেই লাগলো, তাই আমরাও বসে রইলাম। অবশেষে রাত নটার দিকে ফিরতে পারলাম মায়ের বাড়িতে, প্রথমবারের মতো অবকাশ পেলাম মা হারানোর শূন্যতা অনুভবের।

মায়ের কুলখানির অভিজ্ঞতার পর থেকে আমি নিজের মৃত্যু নিয়ে যখনই ভাবি তখনই আমার কুলখানির ভাবনা এসে যায়। আমার কুলখানির আয়োজন করতে গিয়ে আমার শোকার্ত দুই ছেলেমেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছে, এই দৃশ্য ভাবলেই আমি বিপন্ন বোধ করতে থাকি! আমি আমার ছেলেমেয়েদের পালন করেছি ফার্মের মুরগী পালনের ধরণে (জানি এটা ভালো প্যারেন্টিং নয়)! যদিও এখন তারা আমার সাহায্য ছাড়াই চলছে, তবু এখনও তাদের কষ্ট পেতে দেখলে আমি কষ্ট পাই। তাই একবার ভেবেছিলাম আমি বেঁচে থেকেই একটা ভোজের আয়োজন করে সবাইকে জানিয়ে দেই এটা আমার অগ্রিম কুলখানি, দয়া করে আমি মরে গেলে আমার ছেলে মেয়েদের রেহাই দিও! কিন্তু এটা সম্ভব নয়, প্রথমত আমি হুমায়ূন আহমেদ নই যে সবাই এটা ভালোভাবে গ্রহণ করবে, দ্বিতীয়ত এটা করলেও মৃত্যুর পরের কুলখানি করতে হবে না এমন কোন গ্যারান্টি কেউ আমাকে দেবে না।

অনেক ভেবেও বুঝতে পারছি না কী করবো!

ছবি: অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত।

মন্তব্য ৪৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৪৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:২৬

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: কুলখানি ফরজ কাজ নয়। আপনার ছেলে-মেয়েকে বলবেন যেন আপনার কুলখানি না করে।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৯

করুণাধারা বলেছেন: কুলখানি যে ফরজ নয় তা আমি জানি। কিন্তু এটা এমন এক সামাজিক প্রথা যা পালন না করলে মৃতের ছেলেমেয়েদের মানুষ দোষারোপ করে। ‌ তাই ইচ্ছা না থাকলেও, সামর্থ্য না থাকলেও, শোকাবিভূত সন্তানরা এটা পালন করে। আমি এটাই বলতে চেয়েছি।

মন্তব্যে প্রথম স্থান অর্জনের জন্য অভিনন্দন ও ধন্যবাদ মহাজাগতিক চিন্তা।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:৫৬

মোগল সম্রাট বলেছেন:



ইসলামে কুলখানি দিবসের কোন মূল্য নেই। যদি মূল্য থাকতো তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তা পালন করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলেগণ নবীজী সাঃ এর জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু নবীজী তার কোন সন্তানের বেলায়ই উক্ত অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করেন নি। খোলাফায়ে রাশেদীন সহ কোন সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্য উপরোক্ত আয়োজন করেন নি। কুরআন ও হাদিসেও এরকম অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ নেই।

ইসলামের বিধান হল, কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য অন্য মুসলিমেরা খাবার তৈরি করবে। আবদুল্লাহ ইবনে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন রাসূল (সাঃ) এর কাছে জাফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ) এর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছল, তিনি বললেনঃ “জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি কর, কেননা তারা কঠিন বিপদগ্রস্থ, খাবার তৈরি করার মানসিকতা তাদের নেই”। [সুনান আবু দাউদ]

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২১

করুণাধারা বলেছেন: জানিনা কিভাবে এই প্রথা আমাদের জীবনে দিন দিন জাঁকিয়ে বসছে!

ইসলামের কুলখানি দিবসের কোন মূল্য নেই। যে সমস্ত তসবি পাঠ ও দোয়ার বিনিময়ে মুর্দার কবর আযাব মাফ হবে, তার জন্য জান্নাতে প্রাসাদ বানানো হবে বলা হয়, সেই সবের কোনো দলিল নেই। আমরা তা জানি, কিন্তু তবুও কুলখানির আয়োজন করি কারণ খাওয়া দাওয়ার এই সামাজিক প্রথাকে ধর্মীয় প্রথা বলে গণ্য করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে কেউ ভালো চোখে দেখেন না।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মুঘল সম্রাট।

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:৫৮

অপু তানভীর বলেছেন: কুলখানী নিয়ে এই কাজ কর্ম গুলো কোন ধর্ম থেকে আমাদের দেশে এল কে জানে ! এটা মৃতের প্রতি শেষ সম্মান প্রদর্শনই বা কিভাবে হল কে জানে ! এই সব কেবল ধর্ম ব্যবসায়ীদের আবিস্কার !

কাছের মানুষের জন্য নিজেরা উপরওয়ালার কাছে দোয়াই যথেষ্ঠ । কাউকে খাওয়ানোর কোন দরকার নেই ।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৬

করুণাধারা বলেছেন: কুলখানি নিয়ে এই কাজকর্মগুলো কোন ধর্ম থেকে আমাদের দেশে এল কে জানে!

পুরোপুরিভাবে এটা আমাদের দেশের অনুষ্ঠান। আমি আরব দেশে থাকাকালীন এটা কখনো দেখিনি। উপমহাদেশের ছাড়া বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু তারা কেউ এই প্রথার কথা জানেনা।

সম্ভবত হিন্দুদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের খাওয়া-দাওয়া, পুরোহিত কে সম্মান সহকারে অর্থ উপহার দেওয়া, এই সমস্ত দেখে আমাদের দেশে হুজুরেরা কুলখানি অনুষ্ঠানের সূচনা করেন, যাতে তারা বয়ান দেন এবং পারিশ্রমিক হিসাবে অর্থ উপার্জন করেন। তারা ভালো করেই জানেন, এই পুরো জিনিসটাই অর্থহীন, মৃতের কোন উপকার হয় না, কেবল মৃতের স্বজনদের উপর অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়।

সমস্যা হচ্ছে, সব জেনেও আমরা এই প্রথার বিরুদ্ধে যাবার সাহস অর্জন করতে পারিনা!

৪| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮

ডার্ক ম্যান বলেছেন: আগে চট্টগ্রামে মৃত্যুর ৩য় দিন হত মাছ ফাতেহা , ৪র্থ দিন হত মেজবান , চল্লিশা আর ফি বছর মেজবান ।
এগুলো একধরনের গেট টুগেদার ছাড়া আর কিছুই না।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৮

করুণাধারা বলেছেন: এগুলো এক ধরনের গেট টুগেদার ছাড়া আর কিছু নয়।

আমিও এই কথাটি বলতে চেয়েছি। যারা অতিথি হয়ে আসেন তারা গেট টুগেদারের মেজাজে আসেন কিন্তু এটা শোকাহত স্বজনদের উপর কতখানি চাপ সৃষ্টি করে সেটা কেউ ভাবেনা।

৫| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:০৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ইসলামে মানুষ মৃত্যুর পর চার দিন, চল্লিশা, কুলখানি করার বিধান কোথাও নেই। হ্যা আপনি সওয়ারে জন্য করতে পারেন। কিন্তু এত ঝামেলা না করে যখন সময় সুযোগ হয় দোয়া পড়িয়ে দিন, ব্যস শেষ। যদি গরীব কাঙালকে খাওয়াতে মন চায় তাও নিজের সাধ্যের মধ্যে করতে পারেন।

কিন্তু এই যে চার দিন, চল্লিশা, কুলখানি করতেই হবে না করলে শেষ কর্তব্য পালন হবেনা এই ধারনা জন্মেছে যেটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যেখানে মৃতর পরিবারের জন্য পরশীরা খাবার পাঠাবে( যেহেতু তাদের অবস্থা রান্না বান্না করার মত থাকেনা) সেখানে আবার কুলখানি আয়োজনের চিন্তা করে শোক প্রকাশের অবকাশ পাওয়া যাবেনা ইসলাম এটা কখনো সমর্থন করেনা।

সমবেদনা জানবেন। আপনার মায়ের জন্য জান্নাত কামনা করছি। আপনি এত অগ্রিম চিন্তা করবেননা। আপনার মৃত্যুর পর ছেলে মেয়েরা কিছু দান খয়তার করবে, কোরান পাঠ করবে, দোয়া করবে এটাই যথেস্ট। আপনার যে অভিজ্ঞতা হলো, ওদের কে ওসব(চার দিন, চল্লিশা, কুলখানি) করতে না করবেন। ভাল থাকবেন।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩২

করুণাধারা বলেছেন: সারা দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম কুলখানির ব্যাপারে এগিয়ে আছে । মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের কুলখানিতে কতজন কতজন পদদলিত হয়ে মারা গেল। এই কুলখানি করে ধরেই নিলাম মৃত মেয়রের মাগফিরাত হল কিন্তু এতগুলো মানুষের মৃত্যুর দায় কার উপর চাপবে?

ইসলামে এতিম মিসকিনদের খাওয়াতে বলা হয়েছে। এটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু কুলখানি অনুষ্ঠান করা হয় মূলত আত্মীয় স্বজন এবং চেনা পরিচিতদের জন্য, যাদের ঘরে খাবারের অভাব নেই। তাহলে কেন ৩/৪ দিন আগে মারা যাওয়া মানুষের স্বজনদের উপর এই চাপ সৃষ্টি করা!! আমি দেখেছি অনেক সময় দীর্ঘদিন রোগে ভুগে মৃত ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির পরিজনরাও কুরখানি আয়োজন করতে বাধ্য হন, অথচ তাদের নিজেদের এক মাস চলার মত অর্থ নেই।

এই টাকাটা দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে দান করে দিলে মৃত ব্যক্তি দানের সোয়াব পাবেন কিন্তু এই সহজটা কাজটা কেন করা হয় না জানি না।

আপনার মায়ের জন্য জান্নাত কামনা করছি। ধন্যবাদ।

না, আমি কুলখানি নিয়ে খুব ভাবছি না। কিন্তু অনেকের ঘটনা দেখে আমার মনে এই ভাবনা এসেছে...

৬| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:২১

শেরজা তপন বলেছেন: আজব দেশের আজব মানুষদের আজব সব ধর্মীয় কালচার !!
আমার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর পরে কুলখানি করতে গিয়ে যে বেকায়দায় পড়েছিলাম এরপরে নাকে খত দিয়েছি; আমার আব্বার মৃত্যুর পরে আর কোন কুলখানির আয়োজন করিনি। অনেকে অনেক কথা বলেছে কিন্তু সেসবে পাত্তা দেইনি। মেনে নিয়েছি আমরা তার কুলাঙ্গার সন্তান।
আপনার আম্মা কবে মারা গিয়েছেন? তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২২

করুণাধারা বলেছেন: আমার আব্বার মৃত্যুর পরে আর কোন কুলখানির আয়োজন করিনি।

এটা একটা অর্থহীন আয়োজন, অথচ সবাই এটা করে কারণ আত্মীয়- বন্ধুদের বিরাগভাজন হবার সাহস সবার থাকে না, আপনার আছে দেখছি! আমি এ পর্যন্ত এমন হতে দেখি নি। আমার একজন মামা কুলখানির ঘোর বিরোধী ছিলেন। ক্যান্সার আক্রান্ত হবার পরে তিনি স্ত্রী- ছেলে- মেয়ে, ভাই-বোন, এমনকি আমাদের মতো ভাগ্না - ভাগ্নিদের পর্যন্ত বারবার করে বলে গিয়েছিলেন যেন তার কুলখানি না করা হয়। কিন্তু আমরা ছাড়াও আরো মানুষ আছে, যারা শেষ পর্যন্ত বাধ্য করেছিল তার ছেলেমেয়েকে কুলখানি করতে।

আমার মা মারা গিয়েছিলেন ২০১৯ এ, পরিণত বয়সে। তিনি নিজেও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলেন আমরাও তাই। তাই মায়ের মৃত্যু উপলক্ষে খাবার আয়োজন করতে আমাদের কষ্ট হলেও ঠিক বুকে পাথর চেপে করতে হয়নি। কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগে যখন দেখি কোন ছোট শিশুর জন্য তার শোকাতুর মা বাবা কুলখানির আয়োজন করেন।

সহৃদয় মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ শেরজা তপন। তবে এ পোস্টে আপনার মন্তব্য আশা করিনি, বরং আমি চাই কিছুদিন মন্তব্য করা কমিয়ে দিন। সেটা আপনার জন্য ভালো হবে মনে হয়। শারীরিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ‌

শুভকামনা রইল।

৭| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:৩১

মিরোরডডল বলেছেন:




ধারাপু ভালো বিষয় নিয়ে লিখেছো।
শুধু মুসলিম ধর্মেই না, হিন্দু ধর্মেও নানা আচার প্রথা আছে পরিবারে কেউ মারা গেলে যা করে থাকে, এসবই ম্যান'স মেইড।

Rather than religious, these are more likely geographical cultural rituals in south-Asian sub-continent.
অন্য কোথাও এরকম আছে বলে শুনিনি।

জানার অপশন এখন অনেক বেশি, মানুষ চাইলেই তথ্য উপাত্ত থেকে সঠিক ইনফো পেতে পারে।
অনেক কিছুরই সংস্কারের প্রয়োজন এবং পজিটিভ পরিবর্তন আসছে আস্তে আস্তে।

জীবন খুব সহজ, নানা রকমের নিয়মের মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেরাই সেটাকে কমপ্লিকেটেড করি।
তোমার, আমার এবং আমাদের সকলের পরিবার থেকে যারা চলে গেছে, তাদের সবার জন্য শ্রদ্ধা!



২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩০

করুণাধারা বলেছেন: অনেকদিন পর মিরোরডডলকে আমার ব্লগে দেখে খুব ভালো লাগছে। :)

আসলে এই অনুষ্ঠানের সাথে ইসলাম ধর্মের কোন সংযোগ নেই। আমি আরব দেশেও এমন অনুষ্ঠান হতে দেখিনি। ‌ এই প্রথা একেবারে এই উপমহাদেশীয়। সম্ভবত হিন্দুদের শ্রাদ্ধ প্রথার অনুকরণে এই প্রথা চালু হয়েছে কিন্তু একে কোনভাবেই ধর্মীয় প্রথা বলা যাবে না।

এমনও দেখেছি, দুরারোগ্য রোগে পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী মারা গেছেন অনেক ঋণ রেখে। তার কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে সকলে কুলখানি করার জন্য চাপ দিচ্ছে, শুকনো মুখে ছেলেটা ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ একবারও ভাবছে না পিতৃহীন ছেলেটার পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে, সে সেই দুশ্চিন্তা ভুলে কিভাবে এখন খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করবে!

এই প্রথা আমার একেবারেই ভালো লাগেনা। তাই নিজের জন্য লেখাটা অনেক আগে লিখে রেখেছিলাম। আজকে হঠাৎ মনে হল পোস্ট করি। পোস্ট করার পর দেখি মাথা ব্যথা করছে আর ৯৯ জ্বর এসেছে। এইসময় এমন জ্বর দেখলে ভয় লাগে।এখন অবশ্য কমেছে প্যারাসিটামল খেয়ে, তাই উত্তর দিতে বসলাম।

৮| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:১৩

ঢাবিয়ান বলেছেন: আমাদের দেশে কুলখানি, চল্লিশার প্রচলন এসেছে মুলত হিন্দুদের শ্রাদ্ধ আয়োজন থেকে। আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগে কুলখানি,চল্লিশা ছিল অবস্য করনীয় কর্তব্য । আপনার বর্ননা মনে পড়ল আমার ছেলেবেলায় দাদুর মৃত্যর পর তিন দিন ব্যপী কুলখানি আয়োজনের কথা। কারন যে মফস্বল শহড়ে দাদাবাড়ি , সেই সারা শহড়ের মানুষকে খাওয়াতে হবে!! নাহলে নাকি মান ইজ্জত থাকবে না। মনে আছে দাদাবাড়ির উঠানে বড় ডেকচিতে ভাত , গরুর মাংশ রান্না হচ্ছে। মানুষ আসছে আর খেয়ে যাচ্ছে!! বাড়ীর মানুষদের অসহনীয় পরিশ্রম ও টাকা অপচয়ের কথা মনে হলে এখন কেপে উঠি। আর চিটাগাং এর অবস্থাতো ভয়াবহ। বহু বছর আগের এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আমার এক খালু ছোট ছোট তিন ছেলে রেখে আকস্মিক মৃতূবরন করেছেন। সবচেয়ে বড় ছেলে ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ত। আমরা ঢাকার আত্মীয় স্বজনেরা ঢাকা থেকে চিটাগাং গিয়েছি। আমার মা খালারা ব্য্যস্ত সদ্য বিধবা শোকে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া ছোট বোনকে সামলাতে। কিন্ত আত্মীয় স্বজনেরা এসে জানালো যে মেজবানের আয়োজন করতে হবে!! মনে আছে কয়েকটা গরু জবাই দিয়ে বাসার কাছের এক স্কুলের মাঠে মেজবান আয়োজন করা হয়েছিল। দিন রাত ব্যপী চলছিল খাবারের আয়োজন। এর মাঝেই এক আত্মীয় এসে জানালেন যে মাংশে অতিরিক্ত ঝাল দেয়া নিয়ে নাকি ভয়ঙ্কর মারামারি লেগে গেছে!!! সদ্য পিতা হারানো ক্লাস সেভেনে পড়া খালাতো ভাই তার পাড়ার বন্ধু ও বড় ভাইদের নিয়ে পরে ঘটনা সামাল দিয়েছিল। এখনো সেই ঘটনা মনে পড়লে গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।

যাই হোক এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে, এখন মানুষ জানে যে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে রুহের মাগফেরাত হয় না। মিলাদ, কুলখানি, চল্লিশাকে অনেক হুজুর বিদাত ঘোষনা করেছে। মৃৃতের জন্য দোয়া তার নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনকেই করতে হয়। এখন বেশিরভাগ মানুষ যেটা করে সেটা হচ্ছে মসজিদে একটা মিলাদ পড়ায় ও এতিম খানায় খাবারের ব্যবস্থা করে। বিগত কয়েক বছরে আমার পরিবারে যে সব আত্মীয় স্বজনের মৃত্যূ হয়েছে , তাদের সবার ক্ষেত্রেই এই নিয়মই পালন করতে দেখছি।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪১

করুণাধারা বলেছেন: আমাদের দেশে কুলখানি, চল্লিশার প্রচলন এসেছে মূলত হিন্দুদের শ্রাদ্ধ আয়োজন থেকে।

ঠিক এই কথাটাই আমিও বলতে চাই। আমাদের ধর্মগুরুরা যখন দেখলেন এমন অনুষ্ঠান করার ফলে তাদের কিছু অর্থাগম হয়, অনুষ্ঠানে বয়ান করার ফলে মানুষের মনে নানারকম সংস্কার ঢুকিয়ে দেয়া যায়, তখন তারা এর প্রচলন করেন। কিন্তু এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।

আপনার দাদুর মৃত্যুর পর তিনদিনব্যাপী কুলখানি আয়োজন শুনে কি খুব অবাক হলাম। একদিনের আয়োজন করতেই যে শারীরিক-মানসিক এবং আর্থিক চাপ পড়ে, তিন দিনের আয়োজন করতে গেলে সেই চাপটা অনেক গুনে বেড়ে যায়!! এটা আয়োজনকারী স্বজনদের জন্য কতটা কষ্টকর, কেউ ভাবে না। আমি অবশ্য এমন অনুষ্ঠান কখনো দেখিনি।

কিছুদিন আগে আমার একজন আত্মীয় দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পর ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা গেছিলেন। কিন্তু সারা গ্রামের মানুষদের খাওয়াতে হবে অতএব তার ছেলেমেয়েরা ঋণ করে খাওয়াতে বাধ্য হয়েছে। আপনার মৃত খালুর কুলখানির অনুষ্ঠানে মাংসে ঝাল বেশি হবার অভিযোগে অতিথিদের গোলযোগ! ঘটনাটি খুব দুঃখজনক।

মিলাদ, কুলখানি, চল্লিশাকে অনেক হুজুর বিদআত ঘোষণা করেছে।

কিন্তু এই অনুষ্ঠানগুলোর সংখ্যা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, দোয়া মাহফিল নাম দিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান এখনো চলে।

দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ঢাবিয়ান।

৯| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:২২

রানার ব্লগ বলেছেন: কূলখানি চল্লিশা এইগুলা ঢধদর্ম ব্যবসায়ীদের পেট পূজার একটা উছিলা মাত্র । মানুষ কে মৃত ব্যক্তির ইমশন কাজে লাগিয়ে দূর্বল করে টাকা আদায়ের পন্থ্যা ।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫

করুণাধারা বলেছেন: কূলখানি চল্লিশা এইগুলা ঢধদর্ম ব্যবসায়ীদের পেট পূজার একটা উছিলা মাত্র । মানুষ কে মৃত ব্যক্তির ইমশন কাজে লাগিয়ে দূর্বল করে টাকা আদায়ের পন্থ্যা ।

এই দুই বাক্যের ভাব সম্প্রসারণ আমার আজকের পোস্ট। ধর্মব্যবসায়ীরা কুলখানি করতে উৎসাহিত করেন, কারণটা আপনি বলে দিয়েছেন। ধন্যবাদ রানার ব্লগ।

১০| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:৪৪

আখেনাটেন বলেছেন: আমি একবার এ জিনিস নিয়ে বিরোধিতা করাই নিজের পরিবারের লোকজনই এখন সন্দেহের চোখে দেখে--ধর্মহীন হয়ে গেলাম নাকি?....

তবে যাইহোক...এগুলো না থাকলে হাদিয়া হুজুরদের জীবন চলবে কীভাবে?

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯

করুণাধারা বলেছেন: প্রিয়জনের মৃত্যুর পর মানুষ শোকাহত থাকে, এসময় যদি অনেকেই বলতে থাকে যে, কুলখানি না করলে মৃত মানুষটি অবশ্যই জাহান্নামী হবে, তবে এসব শোনার পর কুলখানি না করে এড়িয়ে যাওয়া মোটেও সহজ নয়।

কেউ কেন তলিয়ে দেখে না, এর মধ্যে ধর্মের কিছু নেই। আপনি কেন কুলখানির বিরোধিতা করলেন সেটা নিয়ে না ভেবে আপনাকে ধর্মহীন বলে ফেলল!!

এগুলো না থাকলে হাদিয়া হুজুরদের জীবন চলবে কীভাবে?


এটাই মূল কথা। আমার এক প্রতিবেশী মারা যাবার পর তার কুলখানির আয়োজন হয় মসজিদে, প্রতিবেশীর বিধবা স্ত্রী সেখানেই মিলাদ পড়ানো হুজুরের জন্য টাকা পাঠান। কুলখানির শেষে হুজুর রাগে গনগন করতে করতে বাড়ি এসে বিধবা স্ত্রীর উপর চোটপাট করতে থাকেন, তাকে এত কম টাকা কেন দেওয়া হয়েছে, এই বলে!! হুজুরের সুবিধার্থেই এই ব্যবস্থার প্রবর্তন।

১১| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: যতোদূর জানি, ইসলামে নতুন কিছু সংযোজন করা নিষেধ আছে। এই সংযোজন আমাদের পটকা হুজুরদের টাকা-পয়সার ধান্ধা করা থেকে উদ্ভুত। সামাজিক চাপে পড়ে এগুলো না মানাটাই সঠিক কাজ। আমার আম্মার চির-বিদায়ের পর আমাদের উপরও খানিকটা চাপ ছিল। আমি সেরকম কিছু করতে নিষেধ করেছি, আমার ভাই-বোনরাও আমার সাথে একমত ছিল। ফলে, অনেক আত্মীয়-স্বজন মনক্ষুন্ন হলেও আমরা গুরুত্ব দেই নাই।

মহান আল্লাহ খালাম্মাকে বেহেশতে নসীব করুন। এই দোয়া করছি।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:১৯

করুণাধারা বলেছেন: এই সংযোজন আমাদের পটকা হুজুরদের টাকা-পয়সার ধান্ধা করা থেকে উদ্ভুত। একমত।

এটা জেনেও আমরা এই আয়োজন করে চলেছি। আপনারা ভাইবোনেরা একমত হয়ে ছিলেন দেখে এই অর্থহীন অনুষ্ঠান না করে থাকতে পেরেছিলেন। কিন্তু আমরা ভাইবোনেরা এ বিষয়ে একমত না হতে পারায় ভাইরা আয়োজন করে। অথচ ভালো হতো যদি কুলখানি না করে এই অর্থ কোন দরিদ্র মানুষকে দেয়া হতো, আল্লাহ কোরআন শরীফে দরিদ্রকে দানের জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, বিত্তবান আত্মীয়দের খাওয়াবার নির্দেশ দেননি।

কিছু মানুষ যদি এই প্রথা না পালন করার সাহস দেখান, যেমন আপনি করতে পেরেছিলেন, তাহলে হয়তো এই প্রথা একসময় বিলুপ্ত হবে। তার অপেক্ষায় রইলাম।

মহান আল্লাহ খালাম্মাকে বেহেশতে নসীব করুন। এই দোয়া করছি। অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার আম্মাকেও যেন আল্লাহ বেহেশত বাসী করেন, দোয়া রইল।

১২| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৫৬

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: একজন মানুষ মারা গেলে তার এক দুই দিন পরেই হই হুল্লোর করে মানুষকে খাওয়াতে হবে কেন? আমি এই অমানবিক প্রথার বিলুপ্তি চাই।

আপনার মাতৃবিয়োগের কথা শুনে মর্মাহত হলাম। :(

২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২২

করুণাধারা বলেছেন: একজন মানুষ মারা গেলে তার দু একদিন পরেই হই হুল্লোড় করে মানুষকে খাওয়াতে হবে কেন? আমি এই অমানবিক প্রথার বিলুপ্তি চাই

আপনার চাওয়াকে ১০০% সমর্থন করি জ্যাক স্মিথ। এটা খুবই অমানবিক প্রথা, অথচ এই প্রথা আমরা জিইয়ে রেখেছি।

আমার মা মারা গেছেন চার বছর আগে। এখন এই পোস্ট দেবার কারণ, আমি মনে করি সবার সচেতন হওয়ার এবং এই অমানবিক প্রথা থেকে বের হয়ে আসা দরকার।

১৩| ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৫২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ১৯৭৩ সালে আমার দাদা মারা যান। গ্রামবাসীরা আমার বাবাকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করছিল চল্লিশা করার জন্য। আমার দাদা মোটামুটি জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি ছিলেন গ্রামে। কিন্তু আমার আব্বা বুঝতে পারেন যে গ্রামবাসীর উদ্দেশ্য ভালো না। আমার বাবার পকেট খালি করা গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্য। পুরো গ্রাম সুদ্ধ সবাইকে ভুরিভোজ করাতে গেলে সমস্যায় পড়ে যাবেন। আর উনি এই সব অপ্রয়োজনীয় জিনিস মানতেন না।

আমার বোনের সাথেও চল্লিশা নিয়ে বিবাদ হয়েছে আমার মায়ের মৃত্যুর পরে। আমি তাদের কিছুতেই বুঝাতে সক্ষম হই নাই যে ইসলামে চল্লিশা বলে কিছু নাই। এটা হয়তো হিন্দুদের শ্রাদ্ধ থেকে আসতে পারে। আমাদের ধর্মে তিন দিনের বেশী শোক না করতে বলেছে। অর্থাৎ তিন দিন পরে মানুষ যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়। কেউ মারা গেলে প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনের দায়িত্ব সেই পরিবারের খোঁজ রাখা, অন্তত কয়েকদিন। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টা মানুষকে ডেকে ডেকে দাওয়াত দিতে হয়। আরব দেশে ইসলাম নিয়ে এই ধরণের বাড়াবাড়ি নেই। ওদের অন্য সমস্যা থাকলেও এগুলি নেই।

২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৩

করুণাধারা বলেছেন: অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর!

আপনার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রইল, আবেগতাড়িত না হয়ে তিনি যুক্তি দিয়ে গ্রামের মানুষের অনুরোধ কে বিবেচনা করেছেন। গ্রামের মানুষেরা এই রীতি পালন অবশ্য পালনীয় বলে মনে করেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বাবা তাদের অযৌক্তিক অনুরোধ রক্ষা না করে, নিজে যা যুক্তিযুক্ত মনে করেছেন সেটাই করেছেন। সকলেই যদি এভাবে ভাবতে পারতেন... কিছুদিন আগে আমার এক সম্পর্কিত ভগ্নিপতি মারা যাওয়ার পর এভাবে পুরো গ্রামকে খাওয়াবার জন্য তার দুই পুত্রকে তাদের সমস্ত সঞ্চয় শেষ করার পর ঋণ করতে হয়েছে।

মায়ের জন্য চল্লিশার আয়োজন না করে আপনি ঠিক কাজটি করেছেন বলে মনে হয়। মায়ের মৃত্যু- শোক গভীরই হয়, তাই আপনার বোন সেসময় ভাবতে পারেননি যে মৃত্যু উপলক্ষে মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো একটা অপ্রয়োজনীয় কাজ। আপনার বোন আশাকরি একসময় এটা বুঝতে পারবেন।

আল্লাহ আপনার মাকে জান্নাতবাসী করুন, দোয়া করি।

১৪| ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ২:৪৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: 'রিয়াদুল জান্নাত' অর্থ বেহেশতের বাগানগুলির একটা। মদিনায় রসূলের (সা) গৃহ এবং মদিনার মসজিদের মিম্বরের মাঝখানের জায়গাকে বলা হয় 'রিয়াদুল জান্নাত' বা বেহেশতের একটা বাগান। রিয়াদ অর্থ বাগান আবার জান্নাত অর্থ বেহেশত (যদিও জান্নাত মানেও বাগান)। তবে ইসলামের পরিভাষায় বা কোরআনে 'জান্নাহ' বলতে বেহেশত (প্যারাডাইস) বুঝানো হয়েছে। বেহেশতে শুধু বাগান না অনেক কিছুই আছে। ইসলামের পরিভাষায় জান্নাত মানে পৃথিবীর কোন ফুল, ফলের বাগানকে বুঝানো হয়নি। বরং বেহেশতকে বুঝানো হয়েছে। জান্নাতের শাব্দিক অর্থ বাগান হলেও ইসলামের পরিভাষায় 'জান্নাত' মানে বেহেশত বা প্যারাডাইস। তাই কেউ যদি দোয়া করে যে অমুকের কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দেয়া হউক তাহলে সেটা কোন ভুল না। কারণ মদিনাতেই জান্নাতের বাগান আছে (রিয়াদুল জান্নাত)। হাদিস থেকে জানা যায় যে জান্নাতের ভিতরে অনেক বাগান আছে। তাই রসূল (সা) বলেছেন যে আমার গৃহ এবং মসজিদের মিম্বরের মাঝখানের জায়গাটা জান্নাতের বাগানগুলির একটা। ইসলামের পরিভাষায় জান্নাত মানে এমন একটা শান্তির জায়গা যেখানে বাগান আছে, নদী আছে এবং আরও অনেক কিছু আছে যেগুলি কোন মানব চক্ষু অবলোকন করে নি।

হাদিসে এসেছে যে পরহেজগার মানুষের কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে এবং বেহেশতের একটা দরজা কবরের জন্য খুলে দেয়া হবে যেখান থেকে বেহেশতের কিছু স্বাদ সে পাবে। এছাড়া 'জান্নাহ' বলতে শুধু বাগান বুঝায় না। আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত সমাবেশকেও 'জান্নাত' বলা হয়েছে হাদিসে।

“When you pass by the meadows of Jannah indulge freely in them!” The Sahabah asked: “O Messenger of Allah! What are the meadows of Paradise?” He replied: “The circles/gatherings of dhikr [gatherings where Allah Ta’ala is remembered].”

(Sunan Tirmidhi, Hadith: 3510. Graded sound –hasan– by Imam Tirmidhi)

২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৫

করুণাধারা বলেছেন: দীর্ঘ সময় নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা সাড়ে চুয়াত্তর। জান্নাত সম্পর্কে এত বিস্তারিত জানতাম না। মন্তব্যের ফলে জানা হলো।

তবে কাউকে রাত জাগতে দেখলে নিজের প্রেসার বাড়তে থাকে!!

১৫| ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ ভোর ৫:৫০

সোহানী বলেছেন: আপনার এতো বড় দু:সংবাদ পড়ে খুব খারাপ লাগছে। আল্লাহ খালাম্মাকে জান্নাতুল ফেরদৈাস দান করুক। আমি বুঝতে পারছি কি ধরনের মানসিক কষ্টের মাঝে যাচ্ছেন আপনি। কারন আমি ঠিক একই কষ্টের মাঝে গেছি ৭ বছর আগে।

কুলখানি নিয়ে আমাদের পরিবারের প্রথা সম্পূর্ন ভিন্ন। আমার বাবা বা চাচারা বিভিন্ন কোরআন হাদিসের আলোকে এ প্রথার বিরোধী। আমরা কারো মৃত্যুর পর এ ধরনের আনন্দময় গেটটুগেদার করি না। এমন কি আমার মায়ের সময়েও কিছু করা হয়নি।তবে পারিবারিকভাবে এতিমখানায়, মাদ্রাসায় খাওয়ানো হয় বা দান করা হয় যার যার সামর্থ অনুযায়ী। যারা এ কুপ্রথা ধরে রেখেছে তারা সুবিধাভোগী অথবা কম জানে।

অনেক ভালো থাকুন আপু।

২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

করুণাধারা বলেছেন: আন্তরিক মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ সোহানী। আসলে আমার মা মারা গেছেন ২০১৯ এর জুলাইতে। এখন এই পোস্ট দিলাম, কারণ এটা অনেক দিন আগে লিখে রেখেছিলাম, পোস্ট করিনি কারণ ভয় পাচ্ছিলাম পোস্টে ধর্ম নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যাবে ভেবে!! সময়ের সাথে সাথে শোক প্রশমিত হয়ে এলেও আমার স্মৃতিতে পুরোপুরি রয়ে গেছে সেই কুলখানিতে গেট টুগেদারের মেজাজে আগত মেহমানদের স্মৃতি!!

এই পোস্ট দিয়ে একটা লাভ হয়েছে, আমি জানতে পারলাম আপনার পরিবার আর আরো কয়েকজন ব্লগারের পরিবার এই রীতি পালন না করে থাকতে পেরেছেন। একজন হুজুর অর্থের বিনিময়ে জন্য মোনাজাত পরিচালনা করবেন, এবং তার মুনাজাতের সাথে সাথে 'আমিন' বলার জন্য কিছু লোককে দাওয়াত করে নিয়ে আসলেই আল্লাহ মৃতকে জান্নাতে দাখিল করবেন, এমন যদি হয় তাহলে অর্থ লুটপাটকারী পাপী লোকজনও মাফ পেয়ে যাবে!!! এমন কখনো হতে পারে না অথচ আমরা এটা ভেবেও দেখি না।

আল্লাহ যেন আপনার আম্মাকেও, খালাম্মাকে জান্নাতবাসী করেন। আমার মনে আছে উনার চিকিৎসা বিভ্রাট নিয়ে লেখা আপনার হৃদয় নিংড়ানো পোস্টের কথা, যা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল।

১৬| ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৯:৪৯

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: কুলখানি একটা ফালতু জিনিস। একেবারেই ফালতু। এটা করলে কোন উপকার নেই বরঞ্চ প্রতি পদেপদে দূর্ণাম কামাতে হবে।





আপনার আম্মার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি।

২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩

করুণাধারা বলেছেন: আমার ব্লগে আপনাকে পেয়ে ভালো লাগছে সৈয়দ মশিউর রহমান। আন্তরিক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

কুলখানি একটা ফালতু জিনিস। একেবারেই ফালতু। এটা করলে কোন উপকার নেই বরঞ্চ প্রতি পদে পদে দুর্নাম কামাতে হবে।

একমত। আমন্ত্রিত অতিথিরা খাপ ধরে থাকেন অনুষ্ঠানের খুঁত ধরার জন্য। এই রীতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসা প্রয়োজন।

১৭| ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:২৪

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: পিতা-মাতা বিয়োগের বেদনা ভীষণরকম পীড়াদায়ক। আমার বাবাও গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর হলো, তবুও এখনো মাঝে মাঝে বাবার কতা মনে করে কান্না পায়। বড় হয়েছি, নিজের বয়সও চল্লিশের কোঠায়, সন্তান আছে বুঝতে বেগ পেতে হয় না। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ বংশ-পরম্পরায় নানা রকম রীতি-নীতি ধরে রেখেছে যার সাথে ইসলাম ধর্মের কোন সর্ম্পক নেই। আমাদের সামাজিক অনেক আচার-আচরণে সনাতন ধর্মীয় রীতি-নীতির প্রভাব বিদ্যমান। এগুলোর অনেক বিষয়-ই ইসলামিক ব্যবস্থার পরিপন্থী।

কারো নামে স্মৃতিস্তম্ভ বানানো বা সেখানে গিয়ে ফুল নিবেদন করা, ছবি বা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা, বর্ষবরণে নাচ-গান করা, আনন্দ-মিছিল বের করা, সেখানে নানা রকমের প্রাণী বা কোন কিছুর প্রতিকৃতি নিয়ে আনন্দ করা, পায়ে ধরে সালাম করা ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা জরুরী।

আপনার মা'র আত্মার শান্তি কামনা করছি, মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবার জানা-অজানা ভুলগুলো ক্ষমা করুন এটাই চাওয়া থাকছে। ধন্যবাদ।

২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

করুণাধারা বলেছেন: বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ বংশ পরম্পরায় নানা রকম রীতিনীতি ধরে রেখেছে যার সাথে ইসলাম ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।

ঠিক বলেছেন। এই তথ্য প্রবাহের যুগে আমরা কেন খতিয়ে দেখি না, আমরা যা করছি তার উৎস কোথায়! এই রীতিনীতির সাথে ইসলাম ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। আমি একজন হুজুরকে অনুষ্ঠানে মুনাজাত করার জন্য অর্থের বিনিময়ে ডেকে আনতেই পারি, আর কিছু মানুষকে মোনাজাত শেষে 'আমিন' বলার জন্য দাওয়াত করে এনে তাদেরকে খাওয়াতে পারি, কিন্তু এতেই যদি মৃতের জান্নাত নিশ্চিত হয় তাহলে যত দুষ্কৃতিকারী, অর্থ লুটপাটকারীর স্বজনেরা এই পদ্ধতিতে জান্নাত নিশ্চিত করে ফেলত!! এই সহজ ব্যাপারটা কেন আমরা বুঝি না।

কারো নামে স্মৃতিস্তম্ভ বানানো বা সেখানে গিয়ে ফুল নিবেদন করা, ছবি বা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা, বর্ষবরণে নাচ গান করা, আনন্দ- মিছিল বের করা, সেখানে নানা রকমের প্রাণী বা কোন কিছুর প্রতিকৃতি নিয়ে আনন্দ করা, পায়ে ধরে সালাম করা ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা জরুরী।

মন্তব্যের এই অংশে+++++। তবে এই কথাগুলো দেশে বললে বিপদে পড়তে পারেন। :(

আপনার বাবার জন্য দোয়া রইল। ‌মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ইফতেখার ভুঁইয়া। প্রথমবারের মতো আপনাকে আমার ব্লগে পেয়ে ভালো লাগছে।

১৮| ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট এবং মন্তব্য পড়ে অনেক কিছু জানা গেলো।

২২ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

করুণাধারা বলেছেন: অবশেষে এলেন রাজীব নুর! দীর্ঘ সময় আপনার অপেক্ষায় ছিলাম।

১৯| ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৩৭

কাছের-মানুষ বলেছেন: এই রেওয়াজটি ধর্মের সম্পৃক্ততা না থাকলে সামাজিকভাবে বেশ প্রতিষ্ঠিত আমাদের দেশে। এটা সত্যিই অমানবিক, এটা কেবল ভুরি-ভোজ ছাড়া কিছুই না। আমাদের এলাকায় ৪ দিনের দিন একবার করে ছোট খাট করে (নরমালি যারা কবর দিয়েছে এবং সাথে ছিল তারা) এবং বেশ বড় করে ৪০ দিনের দিন যাকে চল্লিশা বলে।

আপনার মাতৃবিয়োগের জন্য সমবেদনা রইল।

২৩ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:৪৭

করুণাধারা বলেছেন: এই রেওয়াজটি ধর্মের সম্পৃক্ততা না থাকলেও সামাজিকভাবে বেশ প্রতিষ্ঠিত আমাদের দেশে।

দিন দিন এই রেওয়াজের পরিধি বাড়ছে, ফলে এ বাদে মানুষের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এই অপ্রয়োজনীয় কাজটি বন্ধ করা দরকার। সে বিষয়ে আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে।

আপনার আন্তরিক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ কাছের মানুষ।

২০| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৬

জুন বলেছেন: মায়ের চলে যাওয়ার বেদনা সন্তানদের কাছে চিরজীবনব্যাপী হারানোর একটি শোক। ভীষণ কষ্টকর। আমি যখন এস,এসসি পাশ কলেজে মাত্র ভর্তি হই তখন আমার মা মারা যান। এটা আমার জীবনে এক বড় বেদনাময় অধ্যায়।
আমার মায়ের দাদী নিজে বেচে থাকতে নিজের কুলখানি করে গিয়েছিলেন। বোঝেন কত আগের কাহিনী। ছেলেমেয়েদের ভরষায় থাকেন নি। আপনি তো ভাবছেন তাদের মানসিক অবস্থার কথা। আর উনি ভেবেছেন এত বড় একটা পুন্যের কাজে অনেক দূরে বসবাস করা ছেলেদের সময়াভাবের কথা করুনাধারা।

২৪ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১২

করুণাধারা বলেছেন: বলেছেন: সহজ এবং আন্তরিক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জুন।

আমার বাবাকে হারিয়েছি খুব শৈশবে, কিন্তু মাকে পেয়েছিলাম দীর্ঘদিন। তবু এখনো তাকে হারানোর ব্যথা ভুলতে পারিনি।

আপনার দাদীর কথা জেনে ভালো লাগলো। তিনি খুবই দূরদর্শী ছিলেন মনে হয়। এভাবে অগ্রিম কুলখানি করা সহজ নয়।

আমাদের সব প্রিয়জনেরা যারা চলে গেছেন, তাদের যেন আল্লাহ জান্নাতবাসী করেন।

২১| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:০২

জুন বলেছেন: করুনাধারা আপনি মন্তব্যর জবাবের বক্সে আমার মন্তব্যের জবাব দেন নাই। কি মনে করে এসে দেখি এই অবস্থা #:-S
আমার দাদী না, আমার আম্মার দাদী বোঝেন সেই কত বছর আগের কাহিনী। আমার দাদীর বেলায় তো সাত গ্রামের মানুষ দাওয়াত করে জিয়াফত খাওয়ানো হয়েছিল। নাহলে আমাদের বড় বাড়ির সন্মান থাকবে না :(

২৪ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৯

করুণাধারা বলেছেন: এত রাতে লিখতে বসে গোলমাল করে ফেলেছিলাম! ঠিক করে দিয়েছি। :) কিন্তু আপনাকেও তো এতো রাতে কখনও দেখি না!!

আপনার আম্মার দাদির সম্পর্কে আগ্রহ বেড়ে গেল। সেই যুগের একজন মহিলার ইচ্ছা- অনিচ্ছা, আদেশ-নির্দেশের শক্তি ছিল!! ওনার সম্পর্কে আর কিছু জানা থাকলে লিখুন। উনার নাম এবং জীবনের অন্যান্য ঘটনা। আমি ইদানিং খুব ভাবি আমার আগের প্রজন্মের মহিলাদের কথা, একটা সিরিজ লেখা শুরু করেছিলাম কিন্তু তারপর উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে থাকা সে যুগের নারীদের জীবন কেমন ছিল।

আশাপূর্ণা দেবীর সুবর্ণলতা নিয়ে জি বাংলায় চমৎকার একটা সিরিয়াল হয়েছিল দুবছরের বেশি সময় ধরে। এখন ইউটিউবে সেটা দেখা যায়। আমি দেখি আর ভাবি, কী ভয়ানক দুর্বিষহ ছিল সেকালের মহিলাদের জীবন!

২২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৪

জুন বলেছেন: ঘুম আসছিল না তাই মোবাইল ঘাটছিলাম । তখন নজরে এলো আপনার পোস্ট যাতে আমি মন্তব্য করেছি । এসে দেখি এই কান্ড। না দেখলে নোটিফিকেশন পেতামই না করুনাধারা ।
আশাপুর্না দেবীর সুবর্নলতা হচ্ছে তার তিন খন্ডের উপন্যাসের একটি । প্রথমটি হচ্ছে প্রথম প্রতিশ্রুতি , তারপর সুবর্নলতা, একেবারে শেষে বকুল কথা । সিনেমা বা সিরিয়াল বানালে অনেক সময় অনেক অনুভুতির স্পর্শ পাওয়া যায় না । আপনি চেষ্টা করুন বই তিনটি পড়তে । এটা আমার মৃত খালার মাথার কাছেই থাকতো আর নারীদের জীবন নিয়ে ভাবতো । উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ষাটের দশকে অনার্স সহ মাস্টার্স করা বোটানিতে। তারপর ও স্বামীর কঠোর আইন কানুন আর হুকুমে তার দিন যাপন ছিল ।
আরেকটা পড়তে পারেন গজেন্দ্র কুমার মিত্রের তিন পর্ব কলকাতার কাছেই, উপকন্ঠে, পৌষ ফাগুনের পালা। এই গুলো আমাদের পরিবারের সবার মুখস্থ ছিল :`>
ভালো থাকুন অনেক অনেক :)

২৫ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:১৩

করুণাধারা বলেছেন: আপনার মন্তব্যের উত্তরে লেখা আমার প্রতি মন্তব্য কিছুটা খাপছাড়া হয়ে গেছে, যা বলতে চেয়েছিলাম তা বোঝাতে পারিনি, জুন। এখন পারবো কিনা জানিনা, তবু চেষ্টা করে দেখি...

আসলে আপনার আম্মার দাদির কথা শুনে মনে হলো, আপনি হয়তো উনার সম্পর্কে আরও কিছু জানেন, জানাটা শেয়ার করতে আপনাকে ওনার সম্পর্কে লিখতে বলেছিলাম। বিগত সময়ের, আমাদের আগের প্রজন্মের সাধারণ পরিবারের মুসলিম নারীদের জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু লেখা পাইনি। আমার এ বিষয়ে জানার প্রবল আগ্রহ। সুবর্ণলতার প্রসঙ্গ এনেছিলাম, এই সিরিয়ালে বিংশ শতাব্দীর হিন্দু নারীদের জীবনের বাঁধা নিষেধ, অশিক্ষা, কুসংস্কার সমস্ত কিছু খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আশাপূর্ণা দেবীর এই ট্রিলজি আমি অনেক আগেই পড়েছি, কিন্তু প্রথম প্রতিশ্রুতি যেমন সত্যবতীর গল্প, বকুল কথা তেমনি শুধু বকুলেরই গল্প। সুবর্ণলতা অনেক নারীর গল্প... আপনার আম্মার দাদির গল্প যেন তেমন হয় তাই সুবর্ণরতার উল্লেখ করেছিলাম। আমি কিন্তু আপনাকে সুবর্ণলতা পড়তে বলিনি, আমি জানি এগুলো আপনার পড়া আছে।

গজেন্দ্র কুমার মিত্রর বই তিনটা অনেক আগে পড়েছি, যখন বই জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী ছিল। আজকাল আর বইপত্র তেমন পড়া হয় না।

আপনার প্রয়াত খালার জীবনও আপনার লেখার অংশ হতে পারে, ষাটের দশকের ঢাবি থেকে অনার্স মাস্টার্স করে, তারপর ও স্বামীর কঠোর আইন কানুন আর হুকুমে তার দিন যাপন ছিল । :(

অর্ধ শতাব্দী পার হয়েছে, এদেশের মেয়েদের জীবন কতটুকু বদলেছে!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.