নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

করুণাধারা

করুণাধারা

জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো

করুণাধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায় বুয়েট- ২

০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:২৮

Rag কথাটা প্রথম শুনি যখন আমি বুয়েটের প্রথম বর্ষে, আশির দশকে। অবশ্য এটা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছিল না, শুধু স্থাপত্যের চতুর্থ বর্ষের ছাত্ররা নবাগত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের rag দিত। Rag এর দিন বিকালে স্থাপত্য ভবন আর লাইব্রেরীর মাঝের মাঠে স্থাপত্যের সব শিক্ষার্থীরা জড়ো হতো rag দেখার জন্য আর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নানা রকম কাজ করতে বলতো যেমন কাউকে বেসুরো গলায় গান গাইতে হবে, কেউ একপা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে এতক্ষণ না অনুমতি দেয়া হয় ইত্যাদি। শুরুতে বলা হতো নিজের নাম আর জেলার নাম বলতে হবে, কিন্তু নোয়াখালী বললেই প্রবল আপত্তি শুরু হতো সিনিয়রদের, নোয়াখালী বলা চলবে না... পুরো জিনিসটাই ছিল হাসি আর আনন্দের।

আমি বুয়েটের ছাত্র রাজনীতিও দেখেছি, ইউকসু নির্বাচন দেখেছি। ছাত্র ইউনিয়ন আর (নাম মনে নেই) কোন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হত। প্রধানত ক্লাসে যারা ভালো ছাত্র কিংবা টেলিভিশনে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় কৃতী বিতার্কিক কিংবা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত তাদের এই নির্বাচনে দাঁড় করানো হতো যেন তাদের পরিচিতির কারণে ভোট বেশি পায়! নির্বাচনের আগে সকল প্রার্থীরাই শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে ভোট চাইতেন, শুনেছি প্রতিদ্বন্দ্বীরা একসাথে ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আড্ডাও দিতেন। দুই দলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন সহপাঠী, একজন ইলেকট্রিকালের ফার্স্ট বয়। তিনি হেরে গেলেন। রায় ঘোষণার পর দুই দলের পদ প্রার্থীরা একসাথে হলে হলে গিয়ে ছাত্রদের ধন্যবাদ জানালেন ভোট দেবার জন্য। যদিও হেরে যাওয়ার দলকে সবাই হারু পার্টি বলছিল, কিন্তু নির্বাচন প্রত্যাখ্যান বা মারামারি দূরে থাক, সামান্য মনোমালিন্যও হতো না। যারা নির্বাচিত হতেন, তাদের কাজ ছিল প্রধানত ছাত্রদের জন্য নানা সুবিধা আদায় করা, হলের নানা সমস্যার সমাধান করা এবং প্রধান কাজ ছিল পরীক্ষা আসলে পরীক্ষা পেছানোর জন্য আন্দোলন করা। চাঁদাবাজি খুনখারাবি এগুলো বুয়েটে তখন ছিল না। ‌

বুয়েটে Ragging শব্দটা নতুন করে শুনলাম এই শতাব্দীতে, ২০১২ তে। সেসময় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর এক নবাগত ছাত্র, যার নাম ছিল সম্রাট, সে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে বাস চাপা পড়ে মারা যায়। তারপর শোনা গেল আগের রাতে তাকে rag এর নামে হলে প্রচন্ড অত্যাচার করা হয় এবং সকালে সে এতটাই বিপর্যস্ত ছিল যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বাস চাপা পড়ে। এভাবেই আমার জানা হল এই যুগে র্যাগ কাকে বলে।

আমার ছেলে যখন বুয়েটে ভর্তি হলো, তখন সে যেহেতু হলে থাকতো না তাই তার rag কতটা কঠিন হয়েছিল জানিনা, কিন্তু সে কয়েকদিন কিছুটা বিপর্যস্ত ছিল। তারপর সে বুঝে গেল নিজেকে কীভাবে আক্রমণ থেকে বাঁচাতে হবে... সে ছাত্রলীগের কর্মী দু তিনজন ছেলের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলল, তাঁদের পড়াশোনায় সাহায্য করে।

কিন্তু তবু সমস্যা হল। ছেলের ক্লাসের সময় আমাদের গাড়ি পার্ক করে রাখা থাকতো। একদিন ড্রাইভার ফোনে জানালো, একটা ছেলে হেলমেট দিয়ে গাড়ির উইন্ডশিল্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। সিকিউরিটি গার্ডের সাথে ফোনে কথা বলে জানলাম, সে অকারণে এটা ভেঙেছে এবং সিসি ক্যামেরায় তার ভাঙচুরের ছবি আছে। আমি ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের সাথে গিয়ে দেখা করলাম, যিনি আমারও শিক্ষক ছিলেন। তিনি ফোন করে সিকিউরিটি গার্ডের থেকে ছাত্রের নাম জানলেন, চিনতে পারলেন ছাত্রলীগের এক পাতি নেতা বলে। আমার খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছিল, আমাদের বুয়েটে যেখানে কেবলই জ্ঞানের চর্চা হতো তার আজ এই অবস্থা হল কেন!! সেটা না জিজ্ঞেস করে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ছেলেটা আমার গাড়ি ভাঙল কেন? তিনি দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে বসে থাকলেন, তারপর বললেন,
- শক্তি প্রদর্শন করার জন্য...

সাধারণ ছাত্রদের উপর ছাত্রলীগের শক্তি প্রদর্শন চলতেই থাকলো, কিন্তু সেই খবর বাইরে আসতো না। আবরারের মৃত্যুর পর যখন বুয়েটের ছাত্রলীগ শক্তিহীন, তখন অনেক ঘটনা প্রকাশিত হতে লাগলো। তখন জানা গেল, অনেক ছাত্র অত্যাচারিত হয়ে বুয়েটে ছেড়ে গিয়েছে।

আবরারকে ঠান্ডা মাথায় কয়েক ঘন্টা ধরে ২৫/ ৩০ জন ছাত্রলীগ পিটিয়েছে, উল্লাস করেছে। কেন মেরেছে? আবরার ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিল, যেখানে বলেছিল ভারতকে নিঃস্বার্থভাবে বাংলাদেশ সাহায্য করছে অনেকভাবে, অথচ ভারত তিস্তার পানি আটকে রেখেছে। এই পোস্ট পড়ার পর ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত নিল এমন পোস্ট দাতা শিবির না হয়েই যায় না, অতএব তাকে মারতে হবে। আবরারকে মেরে ফেলে লাশ শেরে বাংলা হলের সিঁড়ির কাছে রেখে তারা বিরিয়ানি খেতে গিয়েছে, ফিরে এসে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখে মদ খেয়ে উল্লাস করেছে।

যখন তারা টিভি দেখছে, সেই সময় সাধারণ ছাত্ররা সিঁড়ির পাশের সিসিটিভির ফুটেজ খুলে নেয়, যেখানে দেখা যায় হেলমেট বাহিনী লাশ ধরাধরি করে এনে শুইয়ে রাখছে। এরপর সকালে বাহিনী বুয়েট মেডিকেল সেন্টারের এম্বুলেন্স নিয়ে আসে, আবরার অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই তাকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাবে বলে‌। সেই সময় সাধারণ ছাত্রদের কেউ সাংবাদিকদের খবর দেয় এবং সিসিটিভির ফুটেজ তাদের হাতে তুলে দেয়। এই সাধারণ ছাত্রদের শিবির জঙ্গি ইত্যাদি বলে হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেয়া গেল না, কারণ এই ফুটেজে সত্যি ঘটনা প্রকাশ পাবার পর কেবল বুয়েটের সাধারণ ছাত্ররা নয়, বুয়েটের অ্যালামনাইরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সে সময় বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, যিনি একজন সুপরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এবং অন্য এলামনাইরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করতে লাগলেন। একজন এলামনাই ছিলেন অভিনেতা আবুল হায়াত। সাধারণ ছাত্রদের যেমন দেয়া যায়, এই এলামনাইদের কাউকে শিবির বা জঙ্গি তকমা দেয়া গেল না, কারণ অনেকেই জানে তাঁরা তা নন। এদের প্রতিবাদের মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়, যাতে আর কোন ছাত্র এভাবে খুন না হয়। ফলে বন্ধ হয়ে গেল বুয়েটে ছাত্রলীগের কার্যক্রম।

তারপর চার বছর ধরে দেখা গেল ছাত্রলীগবিহীন বুয়েট ঝামেলাবিহীন ভাবে চলছে। অনেকবার ছাত্রলীগ ফেরার চেষ্টা করে ফিরতে পারেনি বুয়েটে। তাই শেষ পর্যন্ত মোক্ষম উপায় বেছে নিল, বলল বুয়েট শিবির জঙ্গি হিজবুত তাহরীরে ভরে গেছে, এদেরকে প্রতিহত করার জন্য ছাত্রলীগের প্রয়োজন!! শয়তানের ছলের অভাব হয় না কার্যোদ্ধারের জন্য। একটা ছল হচ্ছে গোয়েবলীয় মিথ্যা প্রচারণা, সাধারণ ছাত্রদের ট্যাগায়িত করা।

বুয়েট নাকি হিজবুত তাহরীরের আস্তানা, বুয়েট নাকি ছাত্রলীগের অভাবে মাদ্রাসা হয়ে গেছে!! অথচ এরা বোমা ফাটায়নি, কারোর রগ কাটেনি, অমুসলিম ভিসিকে চার বছরেও সরিয়ে দেয় নি!!...

আবরারের হত্যাকান্ডকে পাশবিক বলা যায় না, কারণ পশুও কখনো স্বজাতির একজনকে মেরে ফেলে না। একে বলা যায় নারকীয়।‌ এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে জায়েজ করার জন্য যারা নানা মিথ্যা ফাঁদছেন, তাদের জন্য অনিঃশেষ ঘৃণা!!



দুমড়ে মুচড়ে স্বপ্নের মালা আকাশ ছোঁয়ার সাধ
প্রিয় বাবা তুমি প্রস্তুত করো তোমার চওড়া কাঁধ।
আগে চড়েছিল ছোট্ট আমিটা, এবারে আমার লাশ
মুখোশে মুখোশ মানুষের সাথে শুয়োরের বসবাস।

সূত্রঃ আবরারের ছবি অন্তর্জাল থেকে, ছড়ার লেখক রোমেন রায়হান।

আবরারের মৃত্যুর পর লিখেছিলাম: হায় বুয়েট!

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৩৬

পুরানমানব বলেছেন: হায়েনা দুর্বৃত্তের দল এই সনামধন্য প্রতিষ্ঠান কে শেষ করে ছাড়বে। ইহারা কোন কালেই রাজনীতির প্রত্যক্ষ উপাদান ছিলো না।

০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:১৮

করুণাধারা বলেছেন: বুয়েটে সব রকম রাজনীতি নিষিদ্ধ, ছাত্র এবং শিক্ষকদের। আমি আবরার হত্যাকান্ডের পর "হায় বুয়েট!" নামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, সেখানে উদাহরণ দিয়ে লিখেছিলাম যে বুয়েটের শিক্ষকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে ঠিকই, কিন্তু বুয়েটের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে তারা কখনোই বুয়েটে রাজনীতির চর্চা করেননি। বুয়েটে ছাত্র সংসদের কাজ ছিল কেবল সাধারণ ছাত্রদের নানা অসুবিধার সমাধান করা। আজ অথচ যখন ছাত্রলীগ এলো তখন শুরু হল সাধারণ ছাত্রদের উপর নানা অত্যাচার। ভেবেছিলাম আবরারের প্রাণের বিনিময়ে বুয়েট মুক্ত হলো! কিন্তু তা হলো না... :(

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:২৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: পরিশীলিত, সুন্দর একটা লেখা। বিদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ জাতীয় কোন বন্য প্রাণীদলের কথা কল্পনাও করা যায় না।

যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুয়েট উত্তরোত্তর আরো বেশি প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠার কথা, সেটা রাজনৈতিক দস্যুরা তার হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনী দিয়ে ধ্বংসের পায়তারা করছে।

০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৭

করুণাধারা বলেছেন: আপনার মন্তব্য বরাবরের মতোই অনুপ্রেরণাদায়ক! অনেক ধন্যবাদ।

বুয়েটে এখন কোনো গবেষণা হয়না, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তার মান ক্রমেই নিম্নগামী। তবুও লেখাপড়ার একটা ভালো মান ছিল কারণ বুয়েটেই দেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কোন কোটা নেই। বুয়েটে প্রথম আন্দোলন শুরু হয় ২০১২ সালে যখন তভিসি মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। সে সময় শিক্ষকেরা এতে বাধা দেন কারণ তাতে ছাত্রদের মান ধরে রাখা যাবে না বলে। সেটা শিক্ষকেরা করতেই পারেন, কারণ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষকদের সন্তানদের জন্য কোটা আছে বুয়েটে সেটা নেই। শিক্ষকেরা কখনো সেটা চাননি । তাদের সন্তানেরা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ না পেলে প্রাইভেটে পড়ে। এই যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ছাত্র ভর্তি বিরোধিতা, এর থেকেই বুয়েটের নামে শিবিরের ট্যাব লেগে যায়, তা এখনো চলছে।

আমার খুব খারাপ লাগছে সাধারণ ছাত্রদের জন্য।

৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৫:৫০

বেনামী_০১ বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতাটি কি বুয়েট এলাম্নাই গ্রুপে শেয়ার করতে পারেন? বুয়েটের এই ক্লান্তিলগ্নে আপনাদের সহযোগিতা ও সাপোর্ট কামনা করছি।

০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪২

করুণাধারা বলেছেন: আমি ফেসবুকে এ্যাকটিভ না, তাই শেয়ার করতে পারছি না। আর জানি করে কোন লাভ নেই। যেখানে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলতে থাকে, কোন সিদ্ধান্ত আসে না, সেখানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আদালতে রিটের সিদ্ধান্ত হয়, সেই সিদ্ধান্ত বুয়েটের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো... যে সিদ্ধান্তের পর আবারও নিরীহ ছাত্ররা নির্যাতিত হবে, কেউ কেউ মারাও যাবে!:(( :(( :(( :((

৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৫

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: পোস্টটি পড়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কি একটা অবস্থা চলছে। বাবা মা তাদের সন্তানদেরকে লেখা পড়া করানোর জন্য সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ভর্তি করে, কিন্তু এখানে র‌্যাগিংএর নামে চলে ভয়ংকর অত্যাচার। এটা কি করে মানা যায় ??

০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৯

করুণাধারা বলেছেন: আমার গতকাল খুব মন খারাপ হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত এই পোস্টটা লিখলাম!

র‌্যাগিংএর নামে যে নির্যাতন করা হতো তাতে অনেক ছাত্রই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। আবরারের ঘটনার পর ছাত্রলীগের করা অনেক নির্যাতন এর ঘটনা বের হয়ে আসে। একজন প্রথম বর্ষের ছেলে লিখেছিল, সে ছাত্রলীগের অমিত সাহাকে সালাম দেয় নাই দেখে অমিত সাহা এবং তার দলবল তাকে এত মেরেছিল যে তার হাত ভেঙে গিয়েছিল। পরবর্তীতে অপারেশন করে প্লেট লাগাতে হয় এবং সে দুই মাস এই যন্ত্রণায় ছিল। অমিত গং তাকে বলেছিল, সে যেন সবাইকে জানায় যে সিঁড়ি থেকে পড়ে হাত ভেঙেছে, অন্যথায় তার প্রাণ যাবে। আমার মনে হচ্ছে আবারো এইসব ঘটনা ঘটতে থাকবে... :(

৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১১

রানার ব্লগ বলেছেন: ছাত্র রাজনীতিকে কে কলুষিত করার জন্য বুড়া রাজনৈতিক ব্যক্তবর্গ দায়ী । তাদের লোভের কাছে তারুন্য পরাজিত।

০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫২

করুণাধারা বলেছেন: ছাত্র রাজনীতিকে কে কলুষিত করার জন্য বুড়া রাজনৈতিক ব্যক্তবর্গ দায়ী । তাদের লোভের কাছে তারুন্য পরাজিত।

শুধু বুড়া না, কমবয়সীরাও তাদের সাথে আছে। ক্ষমতার লোভ, অর্থের লোভ মানুষের মানবিক গুণাবলী কেড়ে নিয়েছে। এখন তো দেখছি পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাং হচ্ছে। বড়দের দেখেই এরা শিখছে।

৬| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯

ধুলো মেঘ বলেছেন: আমি ক্ষমতায় গেলে বুয়েটের ভিসিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। করাবই করাবো। এই বুইড়া শয়তানের জন্যই ছাত্রদের এত কষ্ট, আত ত্যাগ, এত ঝুঁকি - সব নষ্ট হয়ে যাবে।

০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৫

করুণাধারা বলেছেন: আমি ক্ষমতায় গেলে বুয়েটের ভিসিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব।

আমিও। মানুষ কতটা নতজানু হতে পারে, কতটা চটিচাটা হতে পারে তার নমুনা এই ভিসি। নির্মোহ বিচার বুদ্ধি, মানবিকতা সবকিছু যেন এই ভিসির থেকে বহুদূর সরে গেছে।

৭| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫

ঢাবিয়ান বলেছেন: শিক্ষা ব্যবস্থা ধংশ করে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। স্কুলের কুদরত ই খুদার তৈরী শক্ত কারিকুলাম ধংশ করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ ঢুকিয়ে উচ্চ শিক্ষাও ধংশের পরিকল্পনা চলছে। একটা নতজানু জনগোষ্ঠী তৈরীর প্রচেষ্টা সর্বত্র প্রতিয়মান। যারা এসব অরাজকতা দেখেও অন্ধ, বধির সেজে আছে , তাদের জানাই চরম ধিক্কার।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৫

করুণাধারা বলেছেন: শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবকেরা নানা অসুবিধার কথা জানিয়েছিলেন এবং সেই অসুবিধা গুলো দূর করার জন্য সোচ্চার হয়েছিলেন। দেখা গেল হঠাৎ করে সবকিছু চুপ! শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোন কথা কেউ বলতে পারছে না।

একজন মা হিসেবে আমি আবরারের কথা ভেবে খুবই দুঃখভারাক্রান্ত হই। ২৫ টা ছেলের মধ্যে এক বিন্দুর মানবিকতা ছিল না। এরা কয়েক ঘন্টা ধরে ওকে মেরেছে, ওই যন্ত্রনা দেখে উল্লাস করেছে!! তারপর পুরান ঢাকায় গিয়ে বিরিয়ানি খেয়েছে, মদ খেতে খেতে বার্সেলোনার খেলা দেখতে বসেছে। এই মৃত্যুকে তারা তুলনা করছে গাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু কিংবা হঠাৎ গুলি লেগে মৃত্যুর সাথে। ব্লগে আসলেই যখন দেখি খুনিদের পুনর্বাসন করার জন্য নানা মিথ্যা নিয়ে পোস্ট দেয়া হয়েছে, তখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।

৮| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩

শায়মা বলেছেন: আবরারের কথা লিখলে আপুনি। আমি যখনই ভাবি একজন মা তার ছেলেকে দুপুরবেলা গরুর মাংস রুটি রান্না করে দিয়েছে ছেলেটা রাতে খাবে বলে। সেই খাওয়া তো দুরের কথা। টেবিলে পড়ে ছিলো ততক্ষনে ছেলে তার লাশ হয়ে গেছে। কি করে সহ্য করেছে ঐ মা আমি আজও ভেবে পাই না।

আর তার খুনিরা। তারা যেন ঐ কষ্টের হাজার গুন কষ্ট পায় আর ইহজীবনে দুনিয়ার আলো না দেখতে পারে এটাই আমার চাওয়া।
আবরারের মত করে আর কোনো মৃত্যু চাইনা। সহপাঠিরা হয়ে গেলো অমানুষ। ভাবাই যায় না। :(

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৪২

করুণাধারা বলেছেন: আবরার কে পিটিয়ে মারার মাসখানেক পরে আমি বুয়েটে গিয়েছিলাম দেখি গেটের সাথে কেউ আবরারের মায়ের যন্ত্রনাবিদ্ধ মুখের ছবি ঝুলিয়ে রেখেছে। আমার প্রচন্ড কষ্ট হয়েছিল ছবিটা দেখে। এখনো যখন আবরারের মৃতদেহে সারা গায়ে রক্ত জমাট বাধা দাগ, যন্ত্রণামাখা মুখের ছবি মনে পড়ে তখন আমার কেমন লাগে বলতে পারছি না।

আর তার খুনিরা। তারা যেন ঐ কষ্টের হাজার গুন কষ্ট পায় আর ইহজীবনে দুনিয়ার আলো না দেখতে পারে এটাই আমার চাওয়া।

সেটা কখনোই হবে না। ওরা চার বছরের বেশি জেল খেটেছে, এটাই অনেক!! কিছুদিনের মধ্যেই ওরা মুক্তি পাবে, ফুলের মালা দিয়ে তাদের বরণ করবে তাদের অনুসারীরা। তারপর একসময় তারা বড় নেতা হবে। :(( :(( :(( :((

৯| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: হায় হায় করলে হবে না।
সব সমস্যার সমাধান আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সব সমস্যার সমাধান আছে।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৪৪

করুণাধারা বলেছেন: সব সমস্যার সমাধান আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সব সমস্যার সমাধান আছে।

একেবারে ঠিক বলেছেন রাজীব নুর। সোনার ছেলেদের জন্য সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।

১০| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এম ডি মুসা বলেছেন: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বড় দুঃখজনক, মানুষ বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেয়। নামধারী প্রতিষ্ঠান চাকরি বাকরি বেলায় সোনার হরিণ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৪৬

করুণাধারা বলেছেন: এই দেশে শিক্ষার মান ক্রমে কমে যাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষালয়, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠছে খুনি আর ধর্ষকদের বিচরণ ক্ষেত্র।

১১| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৩৭

শেরজা তপন বলেছেন: ফের রাজনীতির ছোবল- অসহায় সাধারণ ছাত্ররা!
আপনার লেখায় বুয়েটের রাজনীতির সেকাল একালের কথা সহ অনেক তথ্য জানলাম।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৫০

করুণাধারা বলেছেন: বুয়েটের শতকরা ৭০ ভাগ ছাত্র নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসে। ‌ এরা রাজনীতি চায়না, সময় মত লেখাপড়া শেষ করতে চায়। জানিনা এখন কি হবে! আবারও ক্ষমতাদর্পী ছাত্ররা আগের মতো নিরীহ ছাত্রদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাবে...

১২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০

এমজেডএফ বলেছেন: বুয়েটের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানলাম। আমাদের দেশে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির অপকারিতা অনেক বেশি।

২০২১ এর ৭ ডিসেম্বর বুধবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। বিচারের রায়ে ২০ জনের ফাঁসি আর ৫ জনের যাবজ্জীবন দণ্ড হয়। তিনজন আসামী পলাতক রয়েছে।
সূত্র: আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড

যদি এই ২০ জনের ফাঁসি কার্যকর হয় তবে এরাও হবে ছাত্ররাজনীতির বলি। সুতরাং আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি অপরাধী, ভিকটিম এবং নিরীহ ছাত্র সবার জন্যই ক্ষতিকর। ছাত্রদেরকে রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। তাই দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৯

করুণাধারা বলেছেন: ছাত্রদেরকে রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।

আমার ভাবনা আপনার সাথে পুরোপুরি মিলে যায়, আর এটা ভেবে আমার খুব মনখারাপ লাগে। সদ্য তরুণ কিছু ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিলেই প্রচুর ক্ষমতা আর অর্থের অধিকারী হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। এই অর্থ আর ক্ষমতার নেশা মাদকের মতোই এদের মস্তিষ্ক আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফলে এরা শক্তি প্রদর্শনের সময় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তার ফলে হয় অন্যকে বিপদে ফেলে নাহয় নিজে বিপদে পড়ে। প্রায়শই দেখি নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কেউ মারা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নেতারা গভীর দুঃখপ্রকাশ করে দায়িত্ব পালন শেষ করেন, শূন্যস্থান পূরণের জন্য নতুন আরেকজনকে খুঁজে বের করেন...

অপূরণীয় ক্ষতি হয় কেবল কাছের মানুষদের।

আবরার হত্যার পর হত্যাকারীদের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছিল, আমার মনে আছে কয়েকজন অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলে ছিল। তাদের বাবারা কেউ ভ্যানচালক, কেউ মুদি দোকানী এইধরনের কাজ করতেন। এই পরিবারগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে তার এক কণাও তাদের কোন নেতার হয়নি।

তবে এদের বিচারের রায় হয়েছে, কিন্তু রায় কার্যকর হয়নি। আমি যেকোনো মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে। ‌তাই আমি চাই মৃত্যুদণ্ড নয়, বরং অন্তত দশবছর কারাদণ্ড হোক কারণ যে নির্মমভাবে তারা আবরার কে হত্যা করেছে তাতে এটুকু শাস্তি তারা পেতেই পারে। তবে এখন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এদের সবার শাস্তি একেবারে মওকুফ হয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে অতীতে অনেক ফাঁসির আসামি মুক্ত হয়ে গেছে, এমন অনেক নজির আছে, এদেরও তাই হবে। এই লিংকে এমন অনেক ফাঁসির আসামির মুক্তির খবর আছে ‌। view this linkআবরারের মৃত্যুর নৃশংসতার কথা আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি, তবু বুয়েটে ছাত্রলীগ আবার ফিরে আসবে, কিছুদিনের মধ্যেই।‌ এখন বুয়েটের বর্তমান এবং প্রাক্তন সকল শিক্ষার্থীরাই এর বিপক্ষে, তাদের অবস্থান তারা #No_ Student_ Politics_ In BUET বলে ব্যক্ত করেছে, কিন্তু সকল আপত্তি অগ্রাহ্য করে ছাত্রলীগ বুয়েটে ফিরবে, ফিরবেই। আমি উৎকণ্ঠিত হচ্ছি এটা ভেবে, মুক্তির পর আবরারের খুনীরা আবার বুয়েটে ক্লাস করতে আসবে, ফুলের তোড়া দিয়ে ছাত্রলীগ তাদের বরণ করে নেবে... কথাটা আপনার এখন বিশ্বাস না-ই হতে পারে, তবে আমি নিশ্চিত আগামী দুয়েক বছরের মধ্যেই এটা ঘটবে।

সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ এমজেডএফ।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

করুণাধারা বলেছেন: লিংক টা কাজ করছে না। পরে দেবো।

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭

করুণাধারা বলেছেন: একদিনে ২০ ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করেছেন রাষ্ট্রপতি

১৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২২

খায়রুল আহসান বলেছেন: তখন বুয়েটে মানুষের নেতৃত্বে মানুষই বসবাস করতো। এখন হবে, ছড়াতে যেমনটি বলা হয়েছে, শুয়োরের নেতৃত্বে মানুষের বসবাস, যা অকল্পনীয়, অসহনীয় এবং সুতরাং, যে কোন মূল্যে বর্জনীয়।
রোমেন রায়হান এর লাইন চারটে বুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ বিষয়ে আর কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
হায় বুয়েট- ১ এর লিঙ্কটা পোস্টে জুড়ে দিন।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৫২

করুণাধারা বলেছেন: তখন বুয়েটে মানুষের নেতৃত্বে মানুষই বসবাস করতো।

এই কথাটা আমারও মনে হয়। এখন বুয়েটে বিচরণ করে মনুষ্য দেহধারী পদলোভী, অর্থলোভী, মেরুদন্ডহীন কিছু স্বার্থপর প্রাণী।

ছড়াতে যেমনটি বলা হয়েছে, শুয়োরের নেতৃত্বে মানুষের বসবাস, যা অকল্পনীয়, অসহনীয় এবং সুতরাং, যে কোন মূল্যে বর্জনীয়। সঠিক শব্দচয়ন করে আপনি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। উদ্বেগ এবং হতাশাই যেন আমাদের নিত্য সঙ্গি হয়ে গেছে।

ভালো লাগে, যখন পবিত্র কুরআনে দেখি আল্লাহ বলছেন, ইন্নাল আবরারা লাফি নাঈম... নিশ্চয়ই পুণ্যবাণেরা থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে। নারকীয় নির্যাতনে মৃত্যুর পর আল্লাহ আবরার কে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে রাখবেন আশা করি।

আবরারের মৃত্যুর পর লেখা "হায় বুয়েট!" এর লিঙ্ক জুড়ে দিয়েছি। ধন্যবাদ পরামর্শ দেবার জন্য, মন্তব্য এবং প্লাস দিয়ে অনুপ্রেরণা দেবার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.