নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

কুশন

আমার জন্ম ফরিদপুরের সালতা গ্রামে। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আমার বাবা একজন কৃষক। বাবার সাথে বহুদিন অন্যের জমিতে কাজ করেছি।

কুশন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের গ্রাম

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৩



আমাদের গ্রামে বেশ কয়েকটা ধনী পরিবার ছিলো। ধনী বলতে যাদের অনেক জমি ছিলো। নিজেদের বড় পুকুর বা দীঘি আছে। এবং পাকা বাড়ি আছে। দরিদ্রদের বাড়ি ছিলো বাঁশের বেড়া দিয়ে, উপরে টিন। সেই টিনের চালে বড় বড় ফুটো থাকতো। বৃষ্টির সময় ঘর পানি দিয়ে ভেসে যেত। পাটাতন ছিলো মাটির। কিছু দিন পরপর পুরো ঘর মাটি দিয়ে লেপটে দিতে হতো। আমাদের গ্রামে পুরুষ মানুষরা গোছল করতো নদীতে। আর নারীরা গোছল করতো স্কুলের পুকুরে। স্কুলের পুকুর সবার জন্য উন্মুক্ত ছিলো।

আমরা ভয়াবহ রকমের দরিদ্র ছিলাম। নিজেদের কোনো জমি ছিলো না। পুকুর ছিলো না। আমি বাবার সাথে নদীতে গোছল করতাম। মা গোছল করতো স্কুলের পুকুরে। বাবা আমাকে সাঁতার শিখিয়েছে বারাশিয়া নদীতে। একদিন বাবার হাত ধরে নদীতে গিয়েছি। বুক পর্যন্ত পানিতে নেমেছি। বাবা আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলো। আমি ডুবে যাচ্ছিলাম। মরে যাচ্ছিলাম। শেষ মুহুর্তে বাবা আমাকে টেনে তুললো। তারপর বাবা আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে পানিতে ভেসে থাকতে হয়।

বাবা বাজার থেকে খুব কমই মাছ কিনে এনেছে। বছরের বেশির ভাগ সময়ই বাবার কাছে টাকা থাকতো না। এমন কি ঈদের সময়ও বাবার কাছে টাকা থাকতো না। আমাকে নতুন জামা কিনে দিতে পারতো না। কোনো ঈদেই নতুন জামা পড়তে পারি নাই। আমার বয়সী অনেকেই ঈদের দিন নতুন জামা পরতো। তাদের বাড়িতে নানা রকম মজাদার খাবার রান্না হতো। আমাদের বাড়িতে সারা বছর আউশ ধানের ভাত, সাথে আলু ভর্তা। সেই আলু ভর্তাতে বেশির ভাগ সময় শরিষার তেল থাকতো না।

আমরা মাংস খেতাম বছরে একবার। কোরবানীর ঈদের সময়। গ্রামের ধনী বাড়ি গুলোতে মস্ত বড় গরু জবাই হতো। তাঁরা আমাদের মাংস দিতো। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই, তিন কেজির মতো মাংস হতো। মা একসাথে সব মাংস রান্না করতো। আমাদের তিন জনের সংসার। ঈদের দিন ইচ্ছা মতো বাবা আর আমি মাংস খেতাম। মা মাংস খুব একটা পছন্দ করতো না। রতন কাকা প্রতি বছর ঈদে পোলাউ আর সেমাই রান্না করে আমাদের বাসায় পাঠাতেন। শুনেছি রতন কাকা করোনায় মারা গেছেন গত বছর।

আমার বাবা দরিদ্র ছিলেন। কিন্তু একজন হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। আমার দাদার সম্পদ ভালোই ছিলো। কিন্তু নদী সব খেয়ে নিয়েছে। শুনেছি আমাদের একটা পাটকল ছিলো। সেটাও নদী খেয়ে নিয়েছে। একদিন বাবাকে বলেছিলাম, বাবা বড় মাছ দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছা করে। বাবা করিম চাচার নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে গিয়ে আমার জন্য একটা বড় বোয়াল মাছ ধরে এনেছিলেন। সেই মাছের স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে। আমার মা ভালো রান্না জানতেন। সামান্য পেঁয়াজ মরিচ ঢলে ভর্তা বানাতেন। দারুন স্বাদ লাগতো খেতে।

প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম। আমার কোনো স্কুলের ড্রেস ছিলো না। ছিলো না এক জোড়া জুতো। খালি পায়ে স্কুলে যেতাম। যে জামাটা পরে স্কুলে যেতাম সেটার আবার দুটা বোতাম ছিলো না। বই খাতা নিতাম হাতে করে। কারন স্কুল ব্যাগ ছিলো না। বৃষ্টির দিনে বই খাতা গুলো শার্টের ভেতরে নিয়ে দিতাম এক দৌড়। আমার শিক্ষকেরা আমাকে ভালোবনাসতেন। কারন তারাও আমাদের মতো দরিদ্র ছিলেন। লেখাপড়ায় আমি বেশ ভালো ছিলাম। আসলে আমি সব কিছুতেই ভালো ছিলাম।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:



নদীতে এখনো বোয়াল পাওয়া যায়?

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:০৬

কুশন বলেছেন: কালে ভাদ্রে পাওয়া যায়।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:৩১

ঝুমুর জারোফা বলেছেন: দরিদ্রতা আল্লাহর দেওয়া এক উপহার যা আপনাকে আপনার জীবন গড়তে সহায়তা করবে।দরিদ্রতা মানুষকে খাপ-খাওয়াতে শিখায়।মানুষকে ভালো রাস্তায় চলার তাগিদ দেয়।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:০৮

কুশন বলেছেন: আমি এখন দরিদ্র নই। কিন্তু আমি এখনও ভালো রাস্তায় আছি। সঠিক পথে আছি।

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫২

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: লেখাটি পড়ে মন আর্দ্র হয়ে এলো।
এখন নিশ্চয়ই আপনদের গ্রামের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১০

কুশন বলেছেন: হ্যাঁ গ্রামের পরিবর্তন হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে আমার।

৪| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:০৮

আল ইফরান বলেছেন: রাজীব ভাই, রুপকথার গল্পটা ভালোই ফেদেছেন। এমেরিকা কিভাবে গেলেন এই দারিদ্র‍্যকে জয় করে সেইটা নিয়েও আরেকটা গল্প লিখে ফেলেন। হ্যাপি ব্লগিং

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১০

কুশন বলেছেন: আমি রাজীব নই।

৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:৩৬

ইসিয়াক বলেছেন: আজকাল খুব টম এন্ড জেরি দেখছেন বুঝি? প্রোফাইল পিকে জেরির ছবি দিয়েছেন B:-) । যাহোক আপনাদের গ্রামের বাড়িতে একদিন বেড়াতে যাবো ভাবছি। আপনার পরিচয় দিলে ওরা চিনতে পারবে তো?

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১১

কুশন বলেছেন: ইসিয়াক আমাকে রাগাবেন না।
অতি চালাক সাজবেন না।

৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৪০

অধীতি বলেছেন: দারিদ্র্যকে জয় করতে পারা যায় টাকা দিয়ে অথবা তাকে পাত্তা না দিয়ে তৃপ্তিময় থাকলে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১২

কুশন বলেছেন: আমি পরিশ্রম দিয়ে দারিদ্রকে জয় করেছি।

৭| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৫

*আলবার্ট আইনস্টাইন* বলেছেন: পোস্টের ছবিখানা দেখে বাচ্চাদের স্কুলের বাংলা বইয়ের আঁকানো ছবির মত মনে হয়।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৩

কুশন বলেছেন: সঠিক ধরেছেন। ছবিটা নেট থেকে নিয়েছি।

৮| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৫৩

কামাল১৮ বলেছেন: লক্ষ লক্ষ পরিবারের মাঝে এক পরিবারের গল্প।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৪

কুশন বলেছেন: আমি যে জীবন পার হয়েছি এসেছি, সে জীবনের গল্প বলতে আমার ভালো লাগে ।

৯| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৫৭

কামাল১৮ বলেছেন: ঝুমুর,উপহারটা আল্লাহকে ফিরিয়ে দিলে কেমন হয়?বুঝুক এই উপহারের স্বাদ কতো।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৬

কুশন বলেছেন: এভাবে বলতে হয় না ।

১০| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২৮

জগতারন বলেছেন:
জানিয়াছি কুশন আইডি'টি ফেইক বা ভন্ডামিরই বহিপ্রকাশ।
আরও জানিয়াছি সে এই "সামু"-এর একজন পরিচিত ব্লগার।
ফেইক বা ভন্ডামি যাই হোক, 'কুশন' নামের মালিকের বিবেক-এর
উপরেই এর সত্য বা মিথ্যা রাখিয়া গেলাম।
এখন আর এই পোষ্টে মন্তব্য করিবার ইচ্ছা রহিল না।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৯

কুশন বলেছেন: ভুল জানিয়াছেন।
চিলের পেছনে ছোটা মানুষ আমার পছন্দ না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.