![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
বাঙালি সমাজে এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক দ্বৈতবোধ বিদ্যমান: যখন নিজস্ব দুর্দশা আসে, তা আল্লাহর “ইবতেল্লা” বা পরীক্ষার অংশ হিসেবে ধরা হয়—একটি আত্মশুদ্ধির সুযোগ, যা ধর্মীয় গ্রন্থ এবং আলেমদের ভাষ্যেও প্রতিধ্বনি পায় । কিন্তু অন্য কারো দুর্ঘটনায় চোখ গেলে, অজুহাত খুঁজে বের হয়—“এই তো ওর পাপের ফল” । এধরণের প্রতিক্রিয়া সামাজিক মনস্তত্ত্বে দায় নির্ধারণের এক স্পষ্ট অনুপস্থিতি নির্দেশ করে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে ‘just‑world belief’ বলা হয়—রহস্যময় বিশ্বকে ন্যায়সঙ্গত, যেখানে প্রত্যেকে তার গুনাহ বা কল্যাণের ফল ভোগ করে ।
বাঙালি সামাজিক আচরণে একদিকে ‘নিজের বিপদে ধৈর্য—ধর্মীয় আত্মতৃপ্তি’, অন্যদিকে ‘অন্যের বিপদে অজুহাত—মৌলিক ন্যায়-বিসম্বন্ধ’ স্পষ্টভাবে ধরা যায়। এতে সমাজের গভীরে অজুহাত লুকানো থাকে—ভিতরে একধরনের ‘আম-বাছুর-সংবেদনশীলতা’ (empathy gap) বিদ্যমান, যার ফলে আমরা পারি না ‘যে কারো বিপদ’ কে প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হিসেবে দেখে বুঝবার; বরং তাড়িত হই ব্যক্তিগত আচার-আচরণ খুঁজতে কেন এই বিপদের আগমন হলো ! নিজের বিপদে ‘ধৈর্য্য ও আত্মশুদ্ধি’ খুঁজে পাই, তখনই মনের পর্দা ডেকে দেই এই ভেবে —“সৃষ্টিকর্তা ভালো মানুষের উপর বিপদ আপদ পরীক্ষা হিসাবে পাঠান ”।
আর অন্যের বিপদে নীরবতা ভেঙে বলার চেষ্টা করা হয় ইহা খারাপ কর্মের প্রতিফল। এটা শুধুমাত্র এক ব্যক্তিগত ধর্মীয় অনুভূতির সংকট নয়—এটি একইসাথে সাংস্কৃতিক ব্রাহ্মণ্যবাদের এক বিশাল প্রতিবিম্ব , যেখানে ন্যায় বিচার ও সহানুভূতির মৌলিক অবকাঠামোই ভেঙে যায়। যখন আমরা একই বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করি , তা শুধুমাত্র ধর্মীয় বা সাংকৃতিক বৈকল্যতা নয়; বরং এক ব্যক্তিগত ও সামাজিক নৈতিক সংকট , যা গভীর বোধ ও বিমূর্ত চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
বাঙালি সমাজে ‘নিজের বিপদে ঈমানের মূল্যায়ন’, ‘অন্যের বিপদে দোষ দানা’—এগুলো সংস্কৃতিগত, ধর্মীয় ও মনস্তাত্ত্বিক এক অদ্ভুত ক্রসওভার। জ্ঞানীর দৃষ্টিতে এই ব্যাপার শুধু এক ব্যক্তির সমস্যা নয়—এটা আমাদের মৌলিক নৈতিক কাঠামোর অসংগতি।
©somewhere in net ltd.