![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম যুবক যখন নিউইয়র্ক শহরের মতো এক পুঁজিবাদী শহরে মেয়র হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকেন, তখন সেটা নিছক নির্বাচনী হিসাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা হয়ে ওঠে এক সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও আদর্শিক টানাপোড়েনের প্রতীক। জোহরান মামদানি এখন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে একেবারে সামনের সারিতে। এবং এই ঘটনা মার্কিন ডানপন্থীদের ভীত ও ক্ষিপ্ত করেছে, আবার একই সঙ্গে কিছু মুসলিম তরুণের মধ্যে একধরনের ধর্মীয় উচ্ছ্বাসও সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এই দুই প্রতিক্রিয়াই যতটা আবেগতাড়িত, তার চেয়ে বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ।
মজার ব্যাপার হলো, মামদানির নাম উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মুসলিম তরুণকে দেখা যায় “আলহামদুলিল্লাহ! মুসলিম মেয়র আসতেছে!” ধরণের উক্তিতে আবেগ প্রকাশ করতে। এই উচ্ছ্বাস, যদিও ধর্মীয় আত্মপরিচয়ের জায়গা থেকে আসে, কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে অনেকটাই বিভ্রান্তিকর। কারণ, জোহরান মামদানি যে ইসলামিক চিন্তাধারাকে ধারণ করেন, তা মূলধারার সুন্নি ইসলামি বিশ্বাসের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। তিনি ইসনা আশারিয়া শিয়া—একটি মতবাদ, যাকে ঐতিহাসিকভাবে বহু সুন্নি আলেম ইসলামি আকিদা থেকে বিচ্যুত বলে চিহ্নিত করেছেন। কাজেই মামদানিকে কেবল “মুসলিম” পরিচয়ে দেখে ইসলামী নীতিবোধের প্রতিনিধি ভাবা আদতে একধরনের আইডেন্টিটি-ইলিউশন ছাড়া কিছু নয়।
কিন্তু শুধু তার শিয়া পরিচয় নয়, আরও গভীর ও জটিল হচ্ছে তার রাজনৈতিক অবস্থান। মামদানি একজন ঘোষিত প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রী। তার নির্বাচনী ইশতেহার পড়লেই বোঝা যায়, তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধের চেয়ে সামাজিক বৈষম্য, শ্রেণি-ভিত্তিক নিপীড়ন ও গৃহহীনতা-দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বেশি আগ্রহী। তিনি ট্রান্স অধিকারকে শুধুই আইনি অধিকার নয়, বরং নৈতিক কর্তব্য হিসেবে দেখেন। নিউইয়র্ক সিটিতে তিনি জেন্ডার-অ্যাফার্মিং চিকিৎসার জন্য ৬৫ মিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ দিয়েছেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী, যেসব হাসপাতাল বা ক্লিনিক এই চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি নিউইয়র্ককে “LGBTQIA+ Sanctuary City” হিসেবে গড়ে তুলতে চান, যেখানে ধর্মীয় অনুশাসন নয় বরং যৌন পরিচয়ের ভিত্তিতে সামাজিক সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। এর বাইরে তিনি সমলিঙ্গ বিবাহের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য চিকিৎসা সহজ করার কথা বলেছেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সময় নেয়া LGBTQ-বিদ্বেষী পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই সকল অবস্থান সরাসরি ইসলামি শরিয়াহর মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বিশেষ করে যারা ইসলামী মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ভাবনা গড়ে তুলেন তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে।
তবু, মামদানির পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক তরুণ মুসলিম সমাজ তার এই আদর্শিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। বরং তারা তাকে 'আমাদের লোক' মনে করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। এই মনোভাব মূলত আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে জন্ম নেয়। জাতিসত্তা বা নামের সঙ্গে ধর্মীয় গর্ব জুড়ে দিয়ে আমরা অনেকসময় মূল প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাই—তিনি আদৌ ইসলামি নীতির ধারক কিনা, নাকি কেবল মুসলিম পরিচয়ে জন্মেছেন? জোহরান মামদানি আসলে বিশ্বাস করেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো তার প্রতিটি নাগরিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ধর্ম বা লিঙ্গনির্বিশেষে। এই ধারণা মার্কিন প্রগতিশীল রাজনীতির মুলমন্ত্র, কিন্তু এটি ইসলামী রাজনৈতিক ভাবনার সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এই রাজনীতি শুধু আমেরিকান ইসলামপন্থীদের নয়, রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ডানপন্থী রাজনীতিকদের জন্যও। মামদানিকে ট্রাম্প ‘১০০ শতাংশ কমিউনিস্ট উন্মাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মামদানি দেখতে ভয়ানক, তার কণ্ঠস্বর কর্কশ, এবং সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান নয়। এই বক্তব্যের পেছনে থাকা ভয়টা হলো আদর্শগত—যে কেউ ধনী-গরিব বৈষম্য নিয়ে কথা বলে, করপোরেট কর বাড়ানোর কথা বলে, গৃহহীনদের জন্য ঘর বানানোর কথা বলে, এবং রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে ট্রান্স অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে, সে পুঁজিবাদী শ্রেণির জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
জোহরান মামদানির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো এই ভয়কে জাস্টিফাই করে। তিনি বলেছেন, দুই লাখ নতুন সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করবেন, চার বছর বাসাভাড়া বাড়ানো নিষিদ্ধ করবেন, সরকারি শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র ও গণপরিবহন সবার জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত করবেন। এইসব বাস্তবায়নের জন্য ধনী ব্যক্তি ও করপোরেশনের ওপর বাড়তি কর বসিয়ে ৮ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে চান তিনি। এগুলো নিছক জনদরদ নয়, বরং একপ্রকার শ্রেণিসচেতন রাষ্ট্র কাঠামো গড়ার ডাক।
মামদানি আজকের দিনে একটি বড় প্রশ্নের উত্তর হয়ে দাঁড়িয়েছেন—ধর্মীয় পরিচয়ই কি রাজনৈতিক চেতনার নির্দেশক? মুসলমান হওয়া এক জিনিস, কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তার ধারক হওয়া আরেক জিনিস। তিনি নিজে একজন বিশ্বাসী হতে পারেন, কিন্তু তার রাজনীতি একটি সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে—যেখানে নারী, ট্রান্স, শরণার্থী, কৃষ্ণাঙ্গ ও নিম্নআয়ের লোকদের সুরক্ষাই হচ্ছে রাষ্ট্রের মূল কাজ।
এই লেখার মূল উদ্দেশ্য কাউকে ধর্মবিশ্বাস থেকে সরিয়ে আনা নয়। বরং আমাদের সমাজে রাজনৈতিক প্রতীক ও ধর্মীয় আবেগকে কিভাবে গুলিয়ে ফেলা হয়, তার একটি বাস্তবচিত্র তুলে ধরা। জোহরান মামদানি ইতিহাসে স্থান পাবেন, কিন্তু তিনি ধর্মনির্ভর রাজনীতির নয়—বরং শ্রেণি, জাতি ও মানবাধিকারের পক্ষে গড়ে ওঠা এক নতুন নৈতিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিনিধি। মুসলিম তরুণদের এখন দরকার আবেগের বদলে বিশ্লেষণ, যাতে তারা জানতে পারে—কে শুধু ‘আমাদের নামধারী’, আর কে সত্যিকার অর্থে আমাদের আদর্শের সঙ্গী।
২৬ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:২৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আসলে মামদানির দোষ নাই , সে তো নিজের মত করে একটা মূল্যবোধ ধরে লড়ে যাচ্ছে—আপনাদের দোষ, আপনারা মুসলিম বললেই ভাবেন সেই ব্যক্তি হাদিস শরিফ মুখস্থ রেখে ঘরে খিলাফত চায়। অথচ সে আপনাদের দাড়ি গোঁফে ভোট চায়, তারপর যায় প্রাইড প্যারেডে শোভা বাড়াতে।
তাই দোষ দিলে মামদানিকে না দিয়ে নিজেকে দেন। আপনি ভোট দেন ‘মুসলিম’ দেখে, আর পাবেন ‘মার্ক্সিস্ট’ ঝাঁঝ!
২| ২৬ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:৩৩
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: লেখক বলেছেন: তাই দোষ দিলে মামদানিকে না দিয়ে নিজেকে দেন। আপনি ভোট দেন ‘মুসলিম’ দেখে, আর পাবেন ‘মার্ক্সিস্ট’ ঝাঁঝ!
আমি কাকে ভোট দেই সেটা আপনার জানার কথা নয়। মতাদর্শের দিক থেকে আমি কখনোই লিবারেল কিংবা প্রগ্রেসিভ নই, বলতে পারেন কনজারভেটিভ। তদুপরি আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভোটার, আমার কোন সুনির্দিষ্ট দল নেই। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
৩| ২৭ শে জুন, ২০২৫ রাত ১২:২৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যে বিবরণ দিলেন কনজারভেটিভ মুসলিমরা তো ভোট দেওয়ার কথা না। তাহলে কেমনে কী? এই লোক বাংলাদেশি হলে তো জান নিয়ে পালাতে হতো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:০৯
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: জাস্ট এনাদার লিবারেল ইডিয়ট হু ইজ এ্যাবিউজিং কনজারভেটিভ মুসলিমস এ্যাস হিজ ভোট ব্যাঙ্ক। দে ইলেক্ট শিট পিপল এন্ড দ্যান কমপ্লেইনস হোয়াই এভরিথিং ইজ গোয়িং ডাউন দ্যা ড্রেইন টার্মস আফটার টার্মস?! দেন এ্যাগেইন, ইটস্ নিউ ইয়র্ক, ইউ ক্যান্ট এক্সপেক্ট এ্যানিথিং বেটার দ্যান দ্যাট।