![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে গার্মেন্টস রপ্তানির সুবিধা ধরে রাখতে গিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথাকথিত "বাণিজ্যিক শর্তাবলি" আদতে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একপ্রকার অর্থনৈতিক পরাধীনতার চুক্তিপত্র।
প্রথম শর্ত, বাংলাদেশকে চীনা সামরিক সরঞ্জাম বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক ইকুইপমেন্ট কিনতে হবে। এটা নিছক ব্যবসা নয়, এটা সরাসরি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কৌশল। একবিংশ শতাব্দীতে যখন প্রতিটি দেশ প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বে বহুমুখিতা চাইছে, তখন বাংলাদেশকে এককভাবে মার্কিন অস্ত্রের উপর নির্ভর করতে বাধ্য করানো কি আত্মঘাতী নয়?
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স 'বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স'—যেটা আজ পর্যন্ত লোকসানের চোরাবালিতে হাবুডুবু খাচ্ছে—তার উপর মার্কিন বাণিজ্যিক চাহিদা চাপিয়ে দেওয়া চরম অন্যায়। মার্কিন বেসামরিক উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ কিনতে বাধ্য করার এই শর্ত বোঝায়, কিভাবে তারা বিমানকে একটি করপোরেট দুধের গরু বানিয়ে রাখতে চায়।
তৃতীয় শর্তটি আরও ভয়াবহ। বাংলাদেশকে মার্কিন জ্বালানি—বিশেষ করে এলএনজি—দীর্ঘমেয়াদে আমদানি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর মানে হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমলেও বাংলাদেশ উচ্চমূল্যে আমেরিকার জ্বালানি কিনতে বাধ্য থাকবে। দেশীয় জ্বালানি খাত, রূপান্তরিত জ্বালানি উদ্যোগ—সব কিছু এই শর্তের কাছে অসহায় হয়ে পড়বে।
চতুর্থ শর্ত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের গম আমদানি করতে হবে। নিজেদের কৃষককে বাদ দিয়ে মার্কিন করপোরেট ফসল আমদানি—এটা কিসের উন্নয়ন? এটা কি ‘ফুড সিকিউরিটি’ নাকি ‘করপোরেট সিকিউরিটি’? এই প্রশ্ন আজ উঠতেই পারে।
সবচেয়ে লজ্জাজনক হলো পঞ্চম শর্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সরকারি সংস্থার জন্য মার্কিন সয়াবিন তেল কিনতে হবে এবং তার সংরক্ষণ অবকাঠামো গড়তে হবে মার্কিন কোম্পানির অংশীদারিত্বে। দেশের সার্বভৌম বাহিনীও যেন করপোরেট চুক্তির বাণিজ্যিক খপ্পরে পড়ে যায়—এটাই যেন তাদের উদ্দেশ্য।
একটি স্বাধীন দেশের জন্য এ ধরনের শর্ত মানা মানে হচ্ছে, নিজের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, খাদ্য এবং সামাজিক কাঠামো সব কিছুই বিদেশি স্বার্থের কাছে বিকিয়ে দেওয়া। প্রশ্ন হলো—কেবল গার্মেন্টস রপ্তানির কয়েকটা সুবিধার জন্য এই আত্মঘাতী চুক্তির দিকে বাংলাদেশ কেন যাবে? আমাদের কি এতটাই অসহায় অবস্থা যে, সামান্য কিছু শুল্ক সুবিধার জন্য সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিতে হবে? এখন সময় এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শর্তের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কূটনৈতিক অবস্থান নেওয়ার। গার্মেন্টস নয়—জাতীয় স্বার্থই হোক আমাদের প্রথম ও শেষ কথা।
©somewhere in net ltd.