নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুসংস্কারের শেকল ভাঙার আহ্বান: নজরুলের চেতনায় আজকের বাংলাদেশ

২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০২


আজ, ১২ই ভাদ্র, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস। যিনি এক হাতে বাঁশের বাঁশরী আর অন্য হাতে রণতূর্য নিয়ে এসেছিলেন, সেই বিদ্রোহী কবির জীবন ও সৃষ্টির দিকে নতুন করে তাকানোর দিন আজ। তিনি কেবল বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেননি, বরং আমাদের সমাজ ও মননের গভীরে যে বিভাজন ও কুসংস্কারের শেকড় ছিল, তার বিরুদ্ধে এক নিরন্তর যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর সেই রণতূর্য ছিল মানবিকতার জয়গান, যা আজও আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।

নজরুল যখন তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতা লিখছেন, সেই ১৯২২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমরা কতটা বদলেছি? আজও কি আমরা সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই? আজও ধর্মগ্রন্থের ভুল ব্যাখ্যা করে তালাকের ফতোয়া দেওয়া হয়, রংপুরের মতো জায়গায় ধর্ম অবমাননার নামে সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বলে ওঠে এবং যাকে-তাকে 'শাতেমে রসুল' ঘোষণা দেওয়া হয়। নজরুল এর মর্ম উপলব্ধি করে লিখেছিলেন, "পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডেরা সব, মূর্খরা সব শোন, মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।" যারা ধর্মের নামে এই অন্যায় কাজ করে, তারা সত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের কবি, সাহিত্যিকদের ওপর আঘাত, নির্বাসন বা হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে যে আমরা আজও কতটা পেছনে পড়ে আছি।

নজরুলের মতে , ধর্ম কখনো মানুষের প্রকৃত পরিচয় দেয়নি। তিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আলোচনার সময় বলেছিলেন, “দেখ যে ন্যাজ বাইরের, তাকে কাটা যায়, কিন্তু ভিতরের ন্যাজকে কাটবে কে?” আজও আমরা মানুষের বাহ্যিক চিহ্ন যেমন ক্রস, টিকি, দাড়ি দিয়ে বিচার করতে চাই। কিন্তু নজরুল মানুষের সত্যিকারের পরিচয় খুঁজেছেন মানুষেরই মধ্য থেকে। তিনি লিখেছেন, "গাহি সাম্যের গান, যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-খ্রীষ্টান।" তিনি আমাদের বলেছেন, "তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার/তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার/কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি-কঙ্কালে?"

নজরুল শুধু ধর্মের সমন্বয় নয়, সামাজিক অত্যাচার ও মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধের আহ্বানও জানিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, "মৌলানা মৌলবী সাহেবকে সওয়া যায়... কিন্তু কাঠমোল্লার অত্যাচার অসহ্য। ইহাদের ফতুয়া-ভরা ফতোয়া। এই ফতুয়াধারী ফতোয়াবাজদের হাত হইতে গরীবদের বাঁচাইতে যদি কেহ পারে তো সে তরুণ।" তিনি আরো বলেছেন, "যত বড় আত্মীয়ই হোক, তাহার যক্ষ্মা বা কুষ্ঠ হইলে তাহাকে অন্যত্র না সরাইয়া উপায় নাই। যে হাত বাঘে চিবাইয়া খাহিয়াছে তাহাকে কাটিয়া ফেলিয়া দেওয়া ছাড়া প্রাণ রক্ষার উপায় নাই।” আজও আমাদের সমাজে এমন মূর্খ শক্তি বিরাজ করছে যারা নারী, শিক্ষা এবং ধর্মের নামে সহিংসতা চালায়। নজরুলের বেদনা আজও সমসাময়িক: “পশু সাজবার মানুষের একি ‘আদিম’ দুরন্ত ইচ্ছা ! … টিকিত্ব হিন্দুত্ব নয়, ওটা হয়ত পন্ডিত্ব। তেমনি দাড়িও ইসলামত্ব নয়, ওটা মোল্লাত্ব। এই দুই “ত্ব” মার্কা চুলের গোছা নিয়েই আজ যত চুলাচুলি! ”

নজরুল তাঁর লেখায় নারীদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। তিনি দেখেছিলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কীভাবে মোল্লাতন্ত্রের মাধ্যমে নারীদের গৃহবন্দী করে রেখেছে। নারী-অবরোধের প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, “আমাদের বাংলাদেশের স্বল্পশিক্ষিত মুসলমানদের যে অবরোধ, তাহাকে অবরোধ বলিলে অন্যায় হইবে, তাহাকে একেবারে শ্বাসরোধ বলা যাইতে পারে। … আমাদের শত শত বর্ষের এই অত্যাচারে ইহাদের দেহ-মন এমনি পঙ্গু হইয়া গিয়াছে।” এই অবরোধ প্রথার ফলস্বরূপ নারীরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নজরুল ক্ষোভের সাথে বলেছেন, "ফাঁসির কয়েদিরও এইসব হতভাগিনীদের অপেক্ষা অধিক স্বাধীনতা আছে ।" দুঃখের বিষয়, সময়ের সাথে সাথে অনেক নারী নিজেই এই প্রথার সমর্থক হয়ে উঠেছেন। এই অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের ভূত তাড়ানোর জন্য তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।

নজরুলের প্রয়াণ দিবসে আমরা তাঁর জীবনীর পুনরাবৃত্তি না করে, বরং তাঁর চিন্তা ও দর্শনকে নতুন করে উপলব্ধি করি। এই ফতোয়াবাজ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজকে বদলাতে হলে আমাদেরকেই নজরুলের মতো রণতূর্য হাতে তুলে নিতে হবে। নিজের স্বার্থ ভুলে সমাজের ভালোর জন্য লড়াই করতে হবে। কুসংস্কার আর ধর্মান্ধতা নামের এই ব্যাধিকে আমাদের সমাজ থেকে দূর করতে না পারলে আমাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। আমরা নজরুলের উত্তরসূরী, তাই আমাদের পথ চলতে হবে তাঁর দেখানো পথে : এক হাতে বাঁশের বাঁশরী আর অন্য হাতে রণ-তূর্য নিয়ে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০০

কামাল১৮ বলেছেন: নজরুল এক সময় ভারতিয় কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতিষ্ঠিতাদের একজন মোজাফর আহমদের সাথে একই মেছে থাকতেন।সেই সময় তিনি কমিউনিষ্ট ভাবাদর্শে প্রভাবিত হন।এবং নাস্তিকদের মতোই জীবন ধারন করেন।স্ত্রিকে কখনো বলেন নাই মুসলমান হও।তার বহু লেখায় এর ছাপ আছে।
আবার তার ইসলামী কিছু গান যখন ব্যবসা সফল হয় তখন রেকর্ড কোন্পানির ফরমাসে প্রচুর ইসলামী গজল রেকর্ড করেন।শেষ সময়ে বাংলাদেশ সরকার তাকে ঢাকায় এনে একটা ভালো কাজ করেছে।তবে ছেলে মেয়েদের কেউ কেউ ঢাকায় থাকে নি।এখানকার জীবন যাত্রা তাদের ভালো লাগেনি।

২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তিনি একজন কমিউনিষ্ট মুসলিম ছিলেন । :-B

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪

বিজন রয় বলেছেন: নজরুলের চেতনায় আজকের বাংলাদেশ?

তাই নাকি?

২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:০২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: হলে কি আপনার কাছে খারাপ লাগবে?

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:১৪

বিজন রয় বলেছেন: না, নজরুলের চেতনার মতো বাংলাদেশ হলে আমার খুব ভাল লাগবে।
কিন্তু সেটা আর কখনো সম্ভব নয়।

২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৫২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সবই হবে। সবরকা ফল মিঠা হতা হায়।

৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৩২

নাহল তরকারি বলেছেন: কেমন আছেন? ভাই আপনাকে মিস করি। অনেক লোক কে তো চিঠি লিখি। আপনাকেও চিঠি লিখতে চাই।

২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৫৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: প্রাইমারি সারকুলার আসতেসে আগামী সেপ্টেম্বরে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.