নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাজার জাহাজ আর গুলতেকিনের জবানবন্দির মাঝে হারিয়ে গেল সোনাবান বেগম

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:১৭


সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল সবচেয়ে বেশি শেয়ার হচ্ছে কোন খবরগুলো? গাজায় কতটি ত্রাণবাহী জাহাজ সাহায্য নিয়ে যেতে পারল, গুলতেকিন বেগম তাঁর জবানবন্দিতে কী লিখলেন, আবু তোয়াহা হুজুরের প্রেমলীলার নতুন কোনো তথ্য বেরিয়ে এল কি না। এসব খবর মুহূর্তে লাখ লাখ বার শেয়ার হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে কত যুক্তি-তর্ক তুলে ধরছেন একেকজন সোশ্যাল মিডিয়া বুদ্ধিজীবী। কিন্তু দেশের আসল সমস্যা দারিদ্র্য কিংবা গরিব মানুষের হাহাকার ও চোখের পানি কারও মনে প্রভাব ফেলছে না। এগুলো নিয়ে আলোচনা করার দরকার নেই।

রাজশাহীর চৌদ্দপাইয়ে রাত দুইটায় লাঠিতে ভর করে লাইনে দাঁড়ানো সোনাবান বেগমের কথা কি একবারও ট্রেন্ডিং হয়েছে? রোজেনা বেগম রাত তিনটায় এসে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে পাঁচ কেজি চাল কিনলেন, অথচ তাঁর পরিবারে চার-পাঁচজন মানুষ খায় আর একজনই কামাই করেন। এই বাস্তবতা নিয়ে কোনো ভাইরাল পোস্ট দেখেছেন? চায়না বেগম কান্নাজড়িত গলায় বললেন, "আমরা একা খেতে চাইনি। আমরা কারও হক মারতে চাইনি। বাংলাদেশের সবাই খাব।"- তাঁর এই আকুতি কি সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনদের হৃদয় স্পর্শ করল?

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। দেশের অর্থনীতি স্থবির পরিস্থিতির মুখোমুখি। বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) বাদ দিলাম, দেশের ব্যবসায়ীরাই নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছেন না। চারদিকে অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমছে। কিন্তু এদিকে গরিব মানুষের হাহাকার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া নেটিজেনদের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। সারাদিন তাঁরা ব্যস্ত গাজায় কতটি জাহাজ রিলিফ নিয়ে যেতে পারল, গুলতেকিন বেগম কী লিখলেন কিংবা আবু তোয়াহা হুজুরের মোবাইল ফোন কে চুরি করেছে তার খোঁজ নিয়ে।

অথচ বাস্তবতা হলো, সাধারণ মানুষ গত বছর যদি আন্দোলনে যুক্ত হয়ে থাকে, তবে মূল্যবৃদ্ধি সেটার অন্যতম বড় কারণ ছিল। গত বছর শেখ হাসিনার সময়ে মধ্যবিত্ত লোকজন, এমনকি শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়াত, কিন্তু অনেকেই খালি হাতে বাড়ি ফিরত। শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় ছিলেন, তাই মানুষ তাঁর শাসন থেকে মুক্তি চেয়েছিল। কিন্তু এখন যে সরকার, সেটা আমাদের সবার সরকার হয়ে ওঠার কথা। জুলাই আন্দোলনের পর যে সরকার এল, তার প্রতি মানুষের প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া।

যারা নিম্নশ্রেণির মানুষ, তাদের পাশে এই সরকারের দাঁড়ানোর কথা ছিল। তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারত। একটা বেঞ্চমার্ক তৈরি করে যেতে পারত, যাতে আমরা সামনের সরকারকে বলতে পারি, "দেখুন, অন্তর্বর্তী সরকার তো পেরেছিল, আপনারা পারলেন না।" কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সেই দিকে মনোযোগ কম।

ইন্টেরিম সরকার যে সময়টুকু থাকবে, তাতে কষ্টকর ট্রানজিশন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে, এটা নিয়ে তাদের দোষারোপের কিছু নেই। কিন্তু চাইলেই তারা লাইনে দাঁড়ানো প্রতিটি মানুষকে না ফিরিয়ে সবার প্রয়োজন মেটাতে পারত। রাজশাহীতে যেখানে মানুষ রাত দুইটা-তিনটায় এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে বরাদ্দ বাড়ানো কি খুব কঠিন কাজ? প্রতিটি ওয়ার্ডে এক টন করে চাল-আটা দিয়ে মাত্র দুশো জনকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে, অথচ লাইনে দাঁড়ায় পাঁচশো-ছয়শো মানুষ। এই সমস্যার সমাধান কি অসম্ভব?

টিসিবি কার্ড আগে আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দের লোকজনকে দিত, এখন বিএনপি-জামাত-এনসিপি একই কাজ করছে। অথচ এরা আবার একে অপরকে বলবে, "তোমরা জুলাই চেতনার বিরোধী।" খেতে গেলে সবাই মিলেমিশে খায়। সেদিন দেখলাম নিউমার্কেটে টিসিবির আটা কালোবাজারি হচ্ছে, দোকানদাররা ভর্তুকিযুক্ত পণ্য কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে, সচ্ছল মানুষ গরিব সেজে কার্ড দেখিয়ে পণ্য কিনে দোকানে বিক্রি করছে: এসব বন্ধ করতে কি গোপন অভিযানের দরকার নেই? প্রকৃত দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে, আর একটি চক্র সরকারি ভর্তুকি লুটপাট করে যাচ্ছে। এ যেন নতুন বোতলে পুরনো মদ।

রাজনৈতিক দলগুলো ব্যস্ত কে ক্ষমতায় যাবে, তার হিসাব-নিকাশে। জনগণের কেবল ভোট তাদের দরকার, আর কিছু দরকার নেই। তাদের অভাব-অভিযোগ শোনার সময় তাদের নেই। প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তারেক যেতে না পারায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি তখন বিদেশে থাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই কথা শুনে জামাত আর এনসিপি নেতারা গোস্বা করায়, ড. ইউনূস সাহেব সবাইকে খুশি রাখার জন্য একশত চার জনের বিশাল বাহিনী নিয়ে আমেরিকা গেলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাজকর্ম পুরোটাই মাথা নষ্ট। একদিকে ওএমএসের লাইনে মানুষ দাঁড়াচ্ছে, আর তারা চিফ অ্যাডভাইজারের সাথে কে যাবে, তার হিসাব-কিতাব নিয়ে ব্যস্ত। কীভাবে রাষ্ট্রীয় টাকার শ্রাদ্ধ করা যায় এরাই কেবল সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সুবর্ণ সুযোগ ছিল। তারা ওএমএসের বরাদ্দ বাড়িয়ে, কালোবাজারির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়ে এবং ডিজিটাল মনিটরিং চালু করে প্রমাণ করতে পারত যে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠেও জনগণের শাসন সম্ভব। কিন্তু সেই বেঞ্চমার্ক তৈরি হচ্ছে না। আমরা ভুলছি যে জুলাই আন্দোলনের বড় কারণ ছিল মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, সুশাসনের দাবি ও জবাবদিহিতার প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে এই সময়ের অর্থ হারিয়ে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার হিসাব কষলেও, মনে রাখা দরকার - ক্ষমতার উৎস শেষ পর্যন্ত সেই জনগণই, যারা আজ ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।

অর্ধেক দামে চাল–আটা কিনতে মধ্যরাতে লাইন, কাঁদলেন নারী - prothomalo
প্রফেসর ইউনূস নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন- মানবজমিন ।
রাজশাহীতে ওএমএসের চাল-আটা কিনতে কেউ রাত ১২টা, কেউ ভোররাত থেকে লাইনে- prothomalo

মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:৫৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:


চীনা ক্যু'র ফলে মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো; ফলাফল, আজকের চীন, বিশ্বের ২য় অর্থনীতি।

ইউনুস ও শিবিরের "২য় স্বাধীনতায়" মারা গেছে মাত্র ৬০০/৮০০; ফলাফল হবে বিশ্বের ১০ম অর্থনীতি।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মজা নিলেন নাকি!

২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৩:০১

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:


টাইপো:

চীনা ক্যু' হবে: *চীনা বিপ্লব

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এবার চায়নাতেও ক্যু খুজে পেলেন।

৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৮

কামাল১৮ বলেছেন: আজকে শ্রমিক কৃষক জনতার সাথে কেউ নাই।তারা অসহায়।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তাদের প্রতি ফোকাস না করে ফালতু বিষয় নিয়ে মনোযোগ মানুষের।

৪| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৮

রবিন.হুড বলেছেন: সাধারণ মানুষের দূঃখ বুঝবে এমন সরকার কোথায় পাওয়া যাবে? জনগণ ঠিক হলে সরকার ঠিক হতে বাধ্য।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:০০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: জনগণ যদি গুলকেতিনের জবানবন্দী নিয়ে বিজি থাকে তবে দেশের ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা নাই। গত বছর কতগুলো লোক চোখের সামনে মারা গেল।

৫| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:১৪

নাহল তরকারি বলেছেন: খুব বাস্তবভিত্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। আজকের সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যেন আসল সমস্যাগুলো ভুলে গিয়ে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি। অথচ রাতের আঁধারে লাঠিতে ভর করে লাইনে দাঁড়ানো সোনাবান বেগম বা চায়না বেগমদের কান্না আমাদের দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল এই দুঃসময়ে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ওএমএস ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা। রাজনীতি ও ক্ষমতার হিসাব বাদ দিয়ে এখন মানুষের মৌলিক চাহিদার দিকে মনোযোগ দেওয়াই সময়ের দাবি।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সোশাল মিডিয়া দেখলে মনে হয় বাংলাদেশে কোনো problem নেই । মানুষে ফোকাস ভুল জায়গায় । এতে সরকার গুলো বেচে যায় ।

৬| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫

নতুন বলেছেন: কয়েকদিন আগেই হামা ভাই এমন বিষয় নিয়ে গল্প লিখেছিলেন।

সমাজের সবাই উনার কস্টে কস্টের ইমোজি দিচ্ছে কিন্তু উনার জীবনের সংগ্রামের জন্য সাহাজ্য করবেনা।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সবাই বিজি কে পরিকিয়ায় কট খেলো ,হুমায়ন আহমেদ মানুষ ভালো না এসব নিয়ে । সুখে না থাকলে এসব বিষয় নিয়ে মানুষ কথা বলে ?

৭| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৮

বিজন রয় বলেছেন: এসব কোন ব্যপার না।

ক্ষমতাই আসল।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:২২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমজনতার দোষ আছে। যেখানে ফোকাস করা দরকার সেখানে করে না ।

৮| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৮

বিজন রয় বলেছেন: লেখক বলেছেন: আমজনতার দোষ আছে।

আমি তো বরাবরই এটাই বলি।

তাই আপনার ও দোষ আছে।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমিও আমজনতার একজন , তাই আমারও দোষ আছে।

৯| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৫

বিজন রয় বলেছেন: আমি ভেবেছিলাম আপনি খেপে উঠবেন।
আপনার মাথা বেশ কুল আছে।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ১০ বছর যাবত মেডিটেশন করি । গাজিই রাগাতে পারে না আর আপনি তো সফট মানুষ । :)

১০| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৫

বিজন রয় বলেছেন: আপনি হলেন ঠান্ডা মাথার বুদ্ধিমান।

আর অনেক সচেতন।

তবে।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমি বোকা মানুষ ।

১১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১

কামাল১৮ বলেছেন: @বিজন রায়,তবে,ডালমে কুঁচ কালা হায়!

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তবে শেখ হাসিনাকে দেখতে পারি না । :)

১২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৩১

মাথা পাগলা বলেছেন: সে আম্রিকার অ্যাসাইন্টমেন্ট করতে ব্যস্ত, দেশ নিয়ে ভাবার সময় নেই। তার বয়স হয়েছে, ভাবছি মালটাকে রাতে, ভূতের ভয় দেখিয়ে হার্টফেইল করানো ব্যবস্থা করা যায় কিনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.