নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বিশ্বাসঘাতক" কে? সাবেক উপদেষ্টার \'রহস্য ফাঁস\' আর অসমাপ্ত গল্পের সাসপেন্স

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:১২


সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো একটি রাজনৈতিক থ্রিলারের চিত্রনাট্যের চেয়ে কম কিছু নয়। তাঁর মুখে "বিশ্বাস করাটা আমাদের ভুল ছিল," "আমরা প্রতারিত হয়েছি," এবং "অনেকেই নিজেদের আখের গুছিয়েছেন": এই বাক্যগুলো যখন শোনা যায়, তখন প্রথম প্রতিক্রিয়ায় মনে হতেই পারে, এ যেন এক বিপ্লবী বীরের আপসহীন ঘোষণা। কিন্তু গল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মোড়টি আসে ঠিক এইখানেই: যিনি এই বিপ্লবী বক্তব্য দিচ্ছেন, তিনি নিজেই ছিলেন সেই বিতর্কিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য!

ব্যাপারটা অনেকটা এমন: আপনি একটি চুরির তদন্ত দলের সদস্য, এবং তদন্তের একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, চোরদের তালিকায় আপনিও কোনো না কোনোভাবে নাম লেখাতে যাচ্ছিলেন। নাহিদ ইসলাম যখন বলছেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে: যখন এই তথাকথিত 'বিশ্বাসঘাতকতা' চলছিল, তখন সাবেক তথ্য উপদেষ্টা মশাই কী করছিলেন? তথ্য পাচার করছিলেন? নাকি অন্য উপদেষ্টাদের মতো তিনিও 'সেফ এক্সিট'-এর জন্য ই-মেইল ড্রাফ্ট করছিলেন?

যদি উপদেষ্টাদের প্রতি আস্থা রেখে ভুল হয়েই থাকে, তবে সেই ভুলটা শুরুতেই ধরিয়ে না দিয়ে এখন কেন এত আফসোস? আর সবচেয়ে বড় কথা, সেই 'গাদ্দার' উপদেষ্টাদের নাম কেন তিনি প্রকাশ করছেন না? তিনি যেন একটা সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো সাসপেন্স রেখে দিলেন ! যেন বলছেন, "সময় এলে নাম বলব... টিকিট কেটে পরের পর্ব দেখবেন কিন্তু।"এই চিরাচরিত রাজনৈতিক ট্রাম্প কার্ড—নাম বলবো, তবে এখন নয়—জনগণের কাছে এখন আর নতুন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি করে না, বরং সংশয় বাড়ায়।

নাহিদ ইসলামের আরেকটি বিস্ফোরক দাবি: ছাত্ররা উপদেষ্টা না হলে সরকার তিন মাসও টিকতো না। বাহ! নিজেকে বাঁচিয়ে দলের বা সংগঠনের (এনসিপি) প্রশংসা করার এর চেয়ে ভালো কৌশল আর কী হতে পারে? কিন্তু মজার বিষয় হলো, এখনও সেই উপদেষ্টা পরিষদের দুই জন সদস্য কিন্তু তারই দলের (এনসিপি) ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? নাহিদ যখন বলছেন, "অনেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন," তখন সেই 'অনেকেই'-এর মধ্যে তার নিজের দলের ঘনিষ্ঠ লোকগুলো কি পড়েন? নাকি তারা 'গুড গাই' হিসেবে শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরছেন ? এই দ্বৈত অবস্থানই পুরো বক্তব্যটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যদি তাঁর উদ্দেশ্য সততা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা হয়, তবে কেন তিনি শুধুমাত্র বাকিদের দিকে আঙুল তুলবেন এবং নিজের ঘনিষ্ঠদের 'গুড গাই' তকমা দেবেন?

নাহিদ ইসলাম আরও বলছেন, নাগরিক সমাজকে বিশ্বাস করে ভুল হয়েছে, আস্থার জায়গায় আমরা প্রতারিত হয়েছি। আচ্ছা, এই 'বিশ্বাস' আর 'আস্থা'র বিনিময়ে ঠিক কী কমিটমেন্ট ছিল, যেটা ভাঙা হয়েছে? সেটা তো জনগণ জানতে পারল না! নাকি 'প্রতারণা' মানে হলো: আপনার চাওয়া অনুযায়ী সবার কাজ না করা? তারা নিজেরাই তো জেনে শুনেই যারা এনজিওর সাথে জড়িত তাদেরকে উপদেষ্টা পদে বসিয়েছিলেন। এখন কেন মনে হলো তারা কেবল এনজিও চালাতেই পটু, দেশ চালাতে নয় ? তিনি 'প্রতিবিপ্লব' বা 'বিশ্বাসঘাতকতা'র কথা বলছেন, অথচ প্রমাণ বা নাম দিচ্ছেন না? এটি কি জনগণের প্রতি বিশ্বাস, নাকি জনগণকে নিয়ে খেলা?

সারজিস আলম সাহেব যখন বলছেন, কয়েকজন উপদেষ্টা নাকি সম্মানের সঙ্গে "সেফ এক্সিট" খোঁজার ফন্দি আঁটছেন, আর নাহিদ সাহেব যখন হুমকি দিচ্ছেন: সময় এলে তিনি 'বিশ্বাসঘাতক' উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশ করবেন: তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এটি আসন্ন নির্বাচনের আগে জনসমর্থন ধরে রাখতে একটা রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল। নাহিদ ভাই, যদি সত্যিই কেউ 'গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা' করে থাকে, যদি তারা 'আখের গুছিয়ে' থাকে, বা যদি কোনো 'প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্র' এখনও চলমান থাকে, তাহলে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এখনই, এই মুহূর্তেই নামগুলো প্রকাশ করা উচিত।

নাম প্রকাশ না করে শুধু 'গাদ্দার' আর 'বিশ্বাসঘাতক' বলে বাজারে গুজব ছড়ানো প্রকারান্তরে সেই গাদ্দারদেরই সুরক্ষা দিচ্ছে না কি? নাকি এটি শুধুমাত্র: "নাম বলবো, কিন্তু তার আগে তোমরা আমার কথা শোনো"—গোছের এক রাজনৈতিক হুমকি ? এসব বক্তব্যের মাঝেই আরেক নেতা, রাশেদ খাঁন, আবার নাহিদ ভাইয়ের কাছে দাবি করেছেন: 'গাদ্দার উপদেষ্টাদের' নাম প্রকাশ করতেই হবে ! এই চাপান-উতোর প্রমাণ করে যে, এই ইস্যুটি এখন আর কোনো নীতিগত লড়াই নয়, বরং ক্ষমতার দাবার চাল।

মনে রাখা ভালো, কিছুদিন আগে বিএনপির এক নেতা যখন আটজন উপদেষ্টার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন, তখন এনসিপি কেন মুখে কুলুপ এঁটেছিল? তখন 'জাতীয় স্বার্থ' বা 'বিশ্বাসঘাতকতা'র প্রশ্ন আসেনি কেন? হয়তো তখন নাহিদ ভাই ঘুমে ছিলেন, আর এখন নির্বাচনের হাওয়ায় জনসমর্থন ধরে রাখতে একটি 'বিস্ফোরক' মন্তব্যের প্রয়োজন পড়েছে । কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, কেবল গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে, দিন শেষে সেই অসমাপ্ত গল্পের সাসপেন্স জনগণের কাছে কেবলই অর্থহীন হয়ে যায়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৫৮

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:




উপদেষ্টাদের মাঝে দলা-দলি আছে?

কোথায় যেন পড়লাম, উপদেষ্টারা কয়েক ভাগ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:০০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: গুজবে কান দিবেন না ।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:০৬

কামাল১৮ বলেছেন: আপনি ছিলের তাদের একনিষ্ঠ সমর্থক।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:১১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমি কারো সাপোরটার না । তবে শেখ হাসিনাকে দেখতে পারি না ।

৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৫৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



শিবিরের এসব জল্লাদেরা " সাধারণ ছাত্রদের বিপ্লবী হত্যাকান্ডে" জড়িত; সময়ের সাথে সবকিছু বের হবে।

৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:০৫

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



এনসিপি'র জল্লাদেরা ইউনুসকে কি করে দেখেন।

৫| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৬:২৯

ক্লোন রাফা বলেছেন: কি এক্টা অবস্থা :#) পুরো আন্দোলন ছিলো একটি মিথ্যাচার। জনসাধারণের সাথে প্রতারণা ‼️এই আন্দোলন কখনো সরকার ফেলে দেওয়ার লক্ষ নিয়ে শুরু হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শ্লোগান দিয়ে প্রতারণার শুরু করেছিলো এরা। ব‍্যপক সমর্থন পেয়ে পুরো আন্দোলনের মোটিভ পরিবর্তন করে রাজাকার ও জঙ্গিরা।তাদের সাথে তাল মিলিয়ে একাত্মতা ঘোষণা ছিলো সবচেয়ে বড় প্রতারণা। আমার মত লক্ষ , কোটি মানুষ একেবারে অসহায় হয়ে গেছে!
দুর্ণিতীর কারনে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই সমর্থন করে গেছে এই আন্দোলন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে গোগ্রাসে গিলে খেতে চায় পুরো দেশ।
ওদের চাইতে বড় প্রতারক আর কেউ নাই বর্তমানে।

৬| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৭:৩৫

হাইজেনবার্গ ০৬ বলেছেন: পোস্ট পড়ে ভাবছিলাম বিশ্বাসঘাতকতের নাম জানবো,হতাশ হইলাম। এন সি পি রাজনী্তি কম বুজে, পোলাপাইন এখনো, তার উপ্রে আবার অসততা যুক্ত হইছে। বিপ্লবটা ওয়েস্টেড।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.