নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদায় কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড এবং মুসা আমানের স্রষ্টা !

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৫৯


ঢাকার চাচার বাসায় প্রথমবার তিন গোয়েন্দার বইয়ের সংগ্রহ দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। চাচাতো ভাই-বোনদের আলমারি ভর্তি সেই বইগুলো। রকিব হাসান নামে একজন লেখক আছেন, যার লেখা এতটা জনপ্রিয় হতে পারে: এই ধারণাই তখন আমার ছিল না।

আমার বই পড়ার জগতে প্রবেশটা হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের বোতল ভূত দিয়ে। নানিজান আমার জন্মদিনে বই উপহার দিতেন। তিনি নিজেও ছিলেন বইপ্রেমী। এরপর পরিচয় হয় জাফর ইকবালের সাথে। কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময় পরপর দুইবার প্রথম হওয়ায় পুরস্কার পেয়েছিলাম কাবিল কোহকাফী এবং স্কুলের নাম পথচারী। আমার বোনের পছন্দ ছিল চাচা চৌধুরীর কমিক বই। গল্পের বই পড়া তার জন্য কঠিন ছিল ; পাঠ্যবই শেষ করতেই হিমশিম খেত।

চাচাতো বোনদের কাছ থেকে মাকড়সা মানব বইটা চেয়ে এনেছিলাম। তখন ছোটো খালা আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "এই বই কীসের উপর লেখা?" নানার পরিবারে সবার কাছে গোয়েন্দা মানেই ফেলুদা। মামারা অবশ্য মাসুদ রানার বই পড়তেন , কিন্তু নানুর নিষেধাজ্ঞার কারণে সেসব বই আমার পড়া হয়নি। গল্পের বই নিয়ে আম্মা-আব্বা কিংবা বড়ো বোনের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু ছোটো খালার ছিল। তিনি আগে নিজে পড়ে দেখতে চাইলেন। পড়ে বললেন, "ঠিক আছে, পড়তে পারো।" সেই অনুমোদনটাই ছিল তিন গোয়েন্দার জগতে আমার প্রবেশপত্র।

তিন গোয়েন্দার ভক্ত হয়ে যাওয়ার পর আমরা তিন বন্ধু মিলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হলাম। এক বই তিনজনে মিলে পড়তাম। কিন্তু একসময় বুঝলাম যে সেখানে নতুন কালেকশন যুক্ত হয় না। অথচ প্রতি মাসে নতুন ভলিউম বের হচ্ছিল। বইয়ের দামও দিন দিন বেড়ে চলছিল। তখন আশ্রয় নিলাম পুরাতন বইয়ের দোকানে। সেকেন্ড-হ্যান্ড বই কিনে পড়তাম। পড়া শেষ হলে জমা দিয়ে ডিসকাউন্টে নতুন বই নিতাম। এভাবেই চলছিল আমাদের তিন গোয়েন্দার জগৎ।

তিন গোয়েন্দার একশো ছয় ভলিউম পর্যন্ত পড়ার পর আর আগের মতো ভালো লাগত না। সিঙ্গেল গল্পের বইগুলোও তেমন টানত না। তিন গোয়েন্দা বাংলাদেশে এসেও কেস সলভ করেছে, কিন্তু রকিব হাসানের লেখার যে গভীরতা ছিল, শামসুদ্দীন নওয়াবের লেখায় তা কম মনে হতো। সাইমুম সিরিজসহ অন্য সিরিজগুলো ভালো লাগত না। কেবল তিন গোয়েন্দাই ছিল আমার পছন্দ। রকিব হাসানের মৃত্যুর পর তাঁর সৃষ্টি করা চরিত্রগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম—কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড, মুসা আমান, জিনা এবং তার কুকুর, ওমর শরীফ, ফগর‍্যাম্পারকট। এই কয়টি নাম এখনও মনে আছে স্পষ্ট।

সম্ভবত ২০১৪ সালের পর থেকে তিন গোয়েন্দার পাঠকসংখ্যা কমে যায়। ২০১৮ সালে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা হাতে গোনা কয়েকজন তিন গোয়েন্দা পড়েছে কিনা সন্দেহ। সোশ্যাল মিডিয়া আর ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বেড়েছে, বই পড়ার প্রবণতা তত কমেছে। কাগজের দাম বাড়ায় বইয়ের দামও বেড়েছে। বাংলাদেশে আর কখনো বুক লাভার জেনারেশন আসবে না । টিকটক, রিলস, হুজুরদের কমেডি ওয়াজ কিংবা ভাইরাল সেলেব্রিটি এসবই এখনকার কিশোরদের মনের খোরাক মেটাচ্ছে।

তিন গোয়েন্দার পর আরও দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা বই পড়া হয়েছে। কিন্তু তিন গোয়েন্দার জন্য আলাদা একটা আবেগ কাজ করে। মিরপুর দশে পুরাতন বইয়ের দোকানে একদিন এক বইয়ের শিরোনাম দেখে আগ্রহ জাগল : ফিওদর দস্তয়েভস্কির 'ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট'। এলাকার বড়ো ভাইদের কাছে জানতে চাইলাম লেখক সম্পর্কে। সবাই বলল, "রুশ সাহিত্য অনেক কঠিন, এসব বই পড়ার বয়স হয়নি তোমার।" যেহেতু নিয়ে ফেলেছিলাম, তাই পড়া শুরু করলাম। সেই থেকে অনুবাদ সাহিত্যের জগতে প্রবেশ। তিন গোয়েন্দার সাথে বিচ্ছেদ ঘটল সেদিন থেকে ।

রকিব হাসান চলে গেলেন। কিন্তু রেখে গেলেন কিশোর পাশা, রবিন, মুসা আমানদের। রেখে গেলেন আমাদের অসংখ্য রোমাঞ্চকর বিকেল। রেখে গেলেন ভলিউম বের হওয়ার অপেক্ষায় থাকা সেই দিনগুলোর উত্তেজনা। বিদায়, হে শৈশবের নায়ক। বিদায়, তিন গোয়েন্দা। তোমরা থাকবে স্মৃতির পাতায়, আমাদের প্রথম বইপ্রেমের গল্পে, শৈশবের সেই সোনালি দুপুরগুলোতে যখন একটা বই ছিল পুরো দুনিয়া।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪৭

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



ব্লগার অপু লিখেছেন যে, প্রতিদিন ১টা করে এসব বই পড়তেন; টেক্সট বই কি পড়েছিলেন? এখন নিজে বিদেশী গল্পের অনুকরণে গপ লেখেন।

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৫২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ডেইলি একটা করে বই পড়ার সময় নাই । কেবল শুক্রবার সময় পাওয়া যেত । ইনটারে সে সময়ও পাওয়া যায় না ।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



বুয়েটি তাবলীগ ইনরেজী বিখ্যাত গল্প "The Monkey's Paw"এর অনুকরনে ১ গার্বেজ ছেড়েছেন সামুতে। এই হচ্ছে আমাদের প্রশ্নফাঁস সাহিত্যিকরা।

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৫৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি হলেন ব্লগোস্ফিয়ার পুলিশ কমিশনার ।

৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:১৮

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:
কালকে জুলাই সনদের স্বাক্ষরের দিন! এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা, প্রত্যাশা-শংকা বিষয়গুলো নিয়ে লিখতেন।
এই বিষয়ে অনেক শোক প্রকাশ করেছে; ব্লগার শাইয়্যান তো মনে হয় এই শোকে দুপুর থেকে অজ্ঞান।
পোষ্টের পর আর দেখা যাচ্ছে না।

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:২৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: জুলাই সনদ পাশ হবে কি হবে না তা নিয়ে নাওয়া খাওয়া হারাম । এখন থেকেই টিভি খুলে বসে আছি। মনে হয় কেয়ামত দিবসেও এই সনদ পাশ হওয়ার চানস নেই। এনসিপি কে জুলাই সনদ সাইন করতে রাত বিরাতে আসিফ নজরুল সাহেব ঘুম ফেলিয়ে তদবির করছে । :P

৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:৩৪

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: কাজী আনোয়ার হোসেন এবং রকিব হাসান এরা দুজনেই আমার পছন্দের ব্যক্তিত্ব অথচ ১ বছরের ব্যবধানে দুজনেই চলে গেলেন। :(

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:৪২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কাজী আনোয়ার হোসেন কি মাসুদ রানা লিখতেন তাই না? রকিব হাসানের লেখা মৌলিক না হলেও ভালোই হতো।

৫| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:১১

কামাল১৮ বলেছেন: আমি তার কোন লেখাই পড়ি নাই।অথচ তার লেখা বই সব থেকে বেশি কিনেছি আমি।

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কিনতেই পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.