নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ মরে গেলে পঁচে যায় আর বেঁচে থাকলে বদলায়

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ : একাদশে বৃহস্পতি - ফাহ্‌মিদা বারী

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৩


ফাহ্‌মিদা বারীর "একাদশে বৃহস্পতি" শুধুমাত্র একটি গল্পগ্রন্থ নয়, এ যেন আমাদের চেনা জীবনের একটি দর্পণ। এগারোটি গল্পের এই সংকলনে লেখিকা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও গ্রামীণ জীবনের নানা রঙ, নানা বেদনা, নানা সংগ্রাম। প্রতিটি গল্পই যেন আমাদের আশেপাশের কোনো পরিচিত মানুষের কথা বলে যাচ্ছে—তাদের হাসি-কান্না, স্বপ্ন-হতাশা আর নীরব যন্ত্রণার কথা। গল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো :

### সেদিন ছিল অবেলা
মাধবি নামের এক গৃহিণীর জীবনে হঠাৎ করে ফিরে আসে তার হারানো প্রেমিক সজল। সুখী সংসারের মাঝে অতীতের সেই অপূর্ণ ভালোবাসার স্মৃতি কীভাবে নাড়া দেয় একজন নারীর হৃদয়, তা লেখিকা অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।

### প্রতিচ্ছবি
প্রীতি নামের একজন সাধারণ বাঙালি গৃহিণীর দৈনন্দিন জীবন—বাজার করা, তরকারি কাটা, রান্না করার মধ্যে দিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলা নারীজীবনের ধারাবাহিকতা চিত্রিত হয়েছে অসাধারণভাবে।

### একটি ভালোবাসার গল্প
মিঠু নামের এক গ্রাম্য বালকের জীবনযাত্রা অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী। ছোট্ট মিঠু যখন তার বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর একেবারে অসহায় হয়ে পড়ে, তখন গ্রামের মানুষের বাধা সত্ত্বেও মরিয়ম নামের এক সন্তানহারা নারী তাকে নিজের দায়িত্বে নিয়ে নেন। গল্পটি মিঠুর ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে ওঠা এবং ময়না নামের এক মেয়ের প্রতি তার অব্যক্ত ভালোবাসার কাহিনি নিয়ে এগিয়ে যায়। মাতৃস্নেহ আর প্রথম প্রেমের মিশ্রণে গল্পটি পাঠকের মনে গভীর ছাপ ফেলে।

### দিন যায় কথা থাকে
কায়সার নামের এক কলেজ শিক্ষকের জীবনসংগ্রাম আর ভালোবাসার পরাজয় পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হতে কীভাবে একজন মানুষের স্বপ্ন ভেঙে যায়, ভালোবাসা হার মানে—তা এই গল্পে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

### বালিশ: হাস্যরসের মধ্যে সামাজিক বাস্তবতা
সব গল্পের মধ্যে "বালিশ" গল্পটি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। চিরাচরিত শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্কের জটিলতা, সন্তান না হওয়ার যন্ত্রণা আর "বশ করা"-র মতো গ্রামীণ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গল্পটি এগিয়ে গেছে। হানুফা বিবির চরিত্রে লেখিকা যে বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল দেখিয়েছেন, তা গল্পে একটি হাস্যরসাত্মক মোড় এনে দিয়েছে, যা অন্যান্য গল্পের গাম্ভীর্য থেকে স্বতন্ত্র।

### মেঘমেদুর বসন্ত
নিমা নামের এক তরুণীর যাত্রাপথে যে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে, তা লেখিকার শিল্পরুচির পরিচয় বহন করে। মেঘলা দিনে বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে নিমার সাথে ঘটে যায় এক উৎকণ্ঠাপূর্ণ জটিলতা, যা গল্পটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।

### আই হেট মাই ফেস
সীমানার বেড়ে ওঠা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল না পাওয়ার যন্ত্রণা এবং তার অজানা কষ্টের কাহিনি বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সংগ্রামের বাস্তব ছবি তুলে ধরে। সুমনার মতো বন্ধুদের সাথে তার জীবনের অভিজ্ঞতা পাঠকের সহানুভূতি আদায় করে।

### গল্পটা প্রেমের হতে পারত
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লেডি কিলার ছেলে রোমিওর চরিত্র বেশ আকর্ষণীয়। তার প্রতি শিলা নামের মেয়েটির একতরফা আকর্ষণ এবং তাকে পটানোর চেষ্টা, কিন্তু রোমিওর দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে আগ্রহহীনতা—এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে গল্পটি এগিয়ে যায়।

### মৌন মধুর
শাহানা চরিত্রটি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ গৃহিণীর প্রতিনিধি। একাকী হাতে পুরো পরিবার সামলালেও তাঁর কথা শোনার, তাঁর মনের ব্যথা বোঝার কেউ নেই। পরিবারের সকলের কাছে তিনি শুধুই একজন কর্মী, একজন মানুষ নন। ছেলের বিয়ের পর শাহানার জীবনে যে নাটকীয় পরিবর্তন আসে, তা পাঠককে ভাবায়—কতটা অবহেলা সহ্য করে একজন নারী? কখন তাঁর মূল্যায়ন হয়?

ফাহ্‌মিদা বারীর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তিনি সাধারণ মানুষের জীবন অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। মধ্যবিত্ত ও গ্রামীণ জীবনের যে চিত্র তিনি এঁকেছেন, তা একেবারেই বাস্তবসম্মত এবং জীবন্ত। তাঁর ভাষা সহজ-সরল, কোনো জটিলতা নেই, যা পাঠকের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে। মনে হয় লেখিকা নিজের জীবনের গল্পই লিখছেন, এতটাই আন্তরিকতা ও সততা রয়েছে তাঁর লেখায়।

তবে সত্যি কথা বলতে, কিছু গল্পের পরিণতি খানিকটা অনুমানযোগ্য মনে হয়েছে। বেশিরভাগ গল্পেই লেখিকা শেষে একটি নাটকীয় মোড় আনার চেষ্টা করেছেন, যা পাঠক অনেক সময় আগে থেকেই অনুমান করতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো, প্রায় সব গল্পেই ভালোবাসা, বিরহ, পারিবারিক টানাপোড়েন এবং নারীজীবনের সংগ্রাম—এই থিমগুলোই বারবার ফিরে এসেছে। একটু বেশি বৈচিত্র্য থাকলে সংকলনটি আরও সমৃদ্ধ হতো।

"একাদশে বৃহস্পতি" মূলত মানুষের বেদনার গল্প, জীবনের গল্প, অজানা ঘটনার গল্প। প্রতিটি গল্পই একেকটি জানালা, যার ভেতর দিয়ে আমরা উঁকি দিয়ে দেখতে পাই আমাদেরই মতো কোনো মানুষের জীবন। কেউ হয়তো হারিয়েছে ভালোবাসা, কেউ হয়তো সংগ্রাম করছে সংসারে, কেউ হয়তো নিঃশব্দে সহ্য করছে অবহেলা। এই গল্পগুলো পড়ে মনে হয়, আমরা একা নই আমাদের যন্ত্রণায়—আমাদের চারপাশে আরও অসংখ্য মানুষ লড়ে যাচ্ছে জীবনের সাথে, স্বপ্নের সাথে, নিয়তির সাথে।

যারা সাহিত্যে জীবনের প্রতিফলন খোঁজেন, যারা মানুষের আবেগ ও বাস্তবতার গল্প পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য "একাদশে বৃহস্পতি" একটি উপযুক্ত বই। ফাহ্‌মিদা বারীর এই প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। রেটিং: আমার বিচারে ১০-এ ৭। প্রাপ্তিস্থান: বইটি বর্তমানে বইটই (Boitoi) অ্যাপে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪০ টাকায়! যারা সহজ কিন্তু জীবনধর্মী গল্প ভালোবাসেন, তারা মিস করবেন না।

-

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লেখিকার blogpost link : Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.