![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক উদাসী পাখি নিঝুম রাতে নদীর তীরে করি ডাকাডাকি। আমি এক মুকুল সবুজ লালের বুকে আছি জুড়ে মায়ের দু'কূল। আমি এক স্বপ্নদেখা ছবি ভাল লাগে আকাশ বাতাস ভাল লাগে সবি।
সইফ-উদ-দীন
বাংলাদেশের সিলেট জেলা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের অধিকারী। প্রকৃতির মায়াবি হাতছানি আর নানা খনিজ সম্পদে সিলেট যেমন ভরপুর ঠিক তেমনি সিলেটের মনিষীরা এপার-ওপার বাংলায় সমভাবে সমাদৃত। বাংলা ভাষার মধ্যে অনেক আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। যে ভাষা গুলোর কোনো বর্ণরূপ নেই। সিলেটের রয়েছে আঞ্চলিক ভাষার বর্ণরূপ। 'নাগরী' ভাষায় রয়েছে স্বতন্ত্র লিপি। কালের গহবরে এ লিপি গুলো আজকাল তেমন ব্যবহার হয়না বললেই চলে। তবে ঠিকই ইতিহাস সন্ধানীরা সোডিয়াম লাইটের আলোয় বা হারিকেন জ্বালিয়ে নিরন্তর খোঁজে বেড়ান আপন সম্পদ। এই সিলেটী মৌখিক ভাষা নিয়ে অনেকের বই আছে। আমরা এ বাংলার আসাম বসেও বইগুলো পেয়েছি। সিলেটী ভাষা ও আসামী ভাষার মৌখিক রূপ অবিকল সমান। একজন আসামী আর একজন সিলেটী কথা বললেই বুঝা যাবেনা কোনজন সিলেটী আর কোনজন আসামী। তবে লেখার বেলায় আসামের আলাদা লিপি আছে বটে। সিলেটী ভাষার অনেক পুরণো পূঁথিও আছে। হালাতুন নবী থেকে শুরু করে অনেক। ইদানীং এইসব পূঁথি নিয়ে কাজ করছেন উৎস প্রকাশনের কর্ণধার মোস্তফা সেলিম। তাঁকে সাধুবাদ জানাই। তবে সবচে' আশার কথা এই যে, একজন সিলেটী তরুণ আবার জীবনের তাগিদে পরবাসী। নাম তার লুৎফুর। বাড়ি জলঢুপের কাছেই নিদনপুর। তিনি বাংলাদেশের একুশে বইমেলা ২০১৩ তে বের করেছেন একটি বিয়ানীবাজারের গণহত্যা নিয়ে 'লাল-সবুজের ছড়া, বিয়ানীবাজারে গড়া' আরেকটি 'সুরমা ফারর ছড়া।' দুটি বই খুব ভাল লেগেছে আমার কাছে।আপন জনপদের প্রদি পরবাসী একজন তরুণের মমত্ববোধ দেখে আমি আশান্বিত হয়েছি। বিবেকর তাড়নায় সিলেট বিষয়ক ছড়ার বইটি নিয়ে আলোচনা লিখছি এখানে।
আকারে ছোট অথচ বেশ মজাদার আর নষ্টালজিমায় তুলে ফেলা ১৬টি ছড়া দিয়ে মুকুল সম্পাদক লুৎফুর রহমান সাজিয়েছেন তার সুরমা ফারর ছড়ার জমিন। নামটি খুবই চমৎকার। ক্বীনব্রীজ আর আলী আমজাদের ঘড়ি চোখের সামনে ভাসিয়ে তুলেছেন নাম দিয়ে। প্রচ্ছদটিও বেশ দারুণ। শীতলপাটির আবেশ দিয়ে একটি মাটির টান এঁকে দিয়েছেন শিল্পী বিমান তালুকদার। সব মিলিয়ে একটি রসালো বই। সেই সাথে শেকড় খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন ছড়াকার। আবার সিলেটের কিছু অপসংস্কৃতিও তুলে ধরেছেন নিখুঁতভাবে। তিনি তার বইয়ের প্রথম ছড়া "ইস্তারী'তে সিলেটের অঢেল টাকার কারণে যে রেওয়াজ গড়ে ওঠেছে তার সাথে গরীব একজন গৃহবধূর আর্ত চিৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন 'ইস্তারী ছড়ায়। একজন শাশুড়ি তার গৃহবধূকে রমজানে ইফতারী না দেওয়ার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবেই-খতো রোজা গেলো গিয়া/ইস্তারী আর খানো/ হাইর গর খরতে গো মাই/ ঝলদি খরি আনো। শেষের দিকে বউটার আর্তচিৎকার এভাবে তুলেছেন-হড়ির কুটা ফাইয়া বউয়ে/ উন্দা্খালো খান্দের/ চকুর ফানি বাইয়া পড়ের/ খান্দি খান্দি রান্দের। এছাড়া পাশের ছড়ায় 'বুলুয়া' তে তিনি ষাড়ের লড়াই নিয়ে জীবন্ত ছবি টেনে এনেছেন। একইভাবে ধারাবাহিকভাবে এনেছেন-বান্নিমেলা ছড়ায় বারুনী মেলায় উৎসব, জামাই ছড়ায় একজন অসহায় স্বামীর আকুতি, হুরুখালোর খেলায় হারানো বাল্যকালের খেলা, ঢাখর খতায় সিলেটী হারানো শ্লোক তুলে ধররেছেন তাও অন্তের সুন্দর মিল রেখে। এছাড়া আগর বিয়া ছড়ায় সিলেট তথা বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের বিয়ার চিত্র যেন ছড়া ক্যামেরায় বন্দি করেছেন, খরতাম মজা ছড়ায় গ্রামের শিরনী থেকে বিয়া শাদী হিন্দুদের পার্বন ও যাত্রাপালার কথা তুলেছেন যা আমাদের নষ্টালজিয়ায় ঘিরে বসে। নানকার লাড়াই ছড়াতে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নানকার তথা কৃষক আন্দোলনের চিত্র ও শহীদদের নাম তুলে এনেছেন সুনাই নদীর তীর থেকে। আইও আমার বাড়িত্ ছড়াতে ছড়াকার তার আপন এলাকা ক্ষুদে নবদ্বীপখ্যাত বিয়ানীবাজারের ইতিহাস ঐতিহ্য দর্শনীয় স্থান দেখার আমন্ত্রণ করেছেন এবং সইগো ছড়ায় হারানো বন্দুদের খেলার মাঠে খোঁজবেন আর সুরমার ফারর ছড়া নামক নাম ভূমিকায় বলেছেন-ছিলট আমার বাড়ি/ শাহজলারে সুরমা দিছলা/ মুছল্লা দি' ফাড়ি। শেষের দিকে বলছেন-ছিলট অলা রউক/দেশর হখল বড় নেতার/ ছিলট দেকি চউক।
বইটা বেজ মজার। টক জাল মিষ্টি। একি কাভারের ভেতরে সব। সব বয়সের সব শ্রেণীর মানুষের আনন্দের সঙ্গি হবে নি:সন্দেহে বলা যায়। প্রতি ছড়াই শিক্ষাশূলক আর বিনোদনেও ভরপুর। তবে দু একটি জায়গায় বানান ভুল হয়েছে। যা দৃষ্টিকটু। তবে আগামীতে সংশোধন করে আনলে আরো খুশি হবো। আর ছড়াকারের সাথে একটি জায়গায় আমিও একমত। তিনি বলেছেন- আমি মুখে যা কই, তাই ই অবিকল লেখার চেষ্টা করেছি। কোনো ব্যাকরণ মানি নাই। নানামুণির নানামত থাকতে পারে কিন্তু এই জায়গায় আমি উনার সাথে সহমত। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ছড়াকারের দাদা মরহুম শাহাদত আলী ও নানা মরহুম তয়াহির আলীকে। স্বত্ব দেওয়া হয়েছে সহোদর সাইফুর মাহমুদ ও সাইদুর মাহমুদকে। প্রকাশ করেছেন দুবাইস্থ মুকুল প্রকাশেনের পক্ষে আব্দুল আজিজ সেলিম। বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
সুরমা ফারর ছড়া
(সিলেটী ভাষার ছড়া)
প্রকাশক: আব্দুল আজিজ সেলিম, মুকুল প্রকাশন, দুবাই
প্রকাশকাল: একুশে বইমেলা ২০১৩
অলংকরণ: পিন্টু গুপ্ত
প্রচ্ছদ: বিমান তালুকদার
লেখক; সাহিত্যকর্মী ও শিক্ষক, আসাম, ভারত।
©somewhere in net ltd.