নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাসিক মুকুল

সম্পাদনা করি আমিরাত-বাংলা মাসিক মুকুল। ভালবাসি মা, মাটি ও মানুষকে..

লুৎফুরমুকুল

আমি এক উদাসী পাখি নিঝুম রাতে নদীর তীরে করি ডাকাডাকি। আমি এক মুকুল সবুজ লালের বুকে আছি জুড়ে মায়ের দু'কূল। আমি এক স্বপ্নদেখা ছবি ভাল লাগে আকাশ বাতাস ভাল লাগে সবি।

লুৎফুরমুকুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমণ কাহিনী

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৭

মীরাক্কেল গার্ডেন দুবাই: ফুলের সমুদ্র থেকে

লুৎফুর রহমান



মধ্যপ্রাচ্যের মাঝে সংযুক্ত আরব আমিরাত এগিয়ে রয়েছে পর্যটনের ক্ষেত্রে। আরবীরা শৌখিন জাতি। এদের এক সময় শিক্ষা-দীক্ষা না থাকলেও তারা ঘুরতে যেতো, ফুলের বাগান লাগিয়ে মন ভরতো সে সাথে সুগন্ধী দিয়ে সুরভিত করতো অন্যের মনকে। এখন শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক এগিয়েছে। সেই সাথে বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজের অবস্থানকে বিশ্বের শীর্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ আকর্ষণীয় সব রেকর্ড ভেঙে চমকে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। বুর্জ আল আরব নামের বিল্ডিং করে বিশ্বের সর্বোচ্চ দালানের রেকর্ড লিখিয়েছে গিনেজ বুকে। এবার রেকর্ড করলো ফুলের বাগান নিয়ে। বাগানটির নাম 'মীরাক্কেল গার্ডেন দুবাই''। ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে যাত্রা করে এ বাগানটি। এ যেন বাগান নয় একটি ফুলের সমুদ্র।



ফুলের সুমুদ্রে পিয়াসী মনের অবগাহন

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। দুবাই এর সোনাপুর থেকে যাত্রা শুরু করলাম মীরাক্কেল গার্ডেন এর উদ্দেশ্যে। গত বছরের এই দিনে যাত্রা শুরু করেছিলো বাগানটি। এক বছরের মাথায় গিনেজ বুকে রেকর্ড করলো বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ও প্রাচীরওয়ালা ফুলের বাগান হিসেবে। আমরা দুবাইয়ের সোনাপুর থেকে যাত্রা শুরু করলাম 'পরবাসাী পর্যটক' এর ব্যানারে। মাকসুদ ভাইয়ের গাড়িতে ভ্রমণসঙ্গী হলাম আসাদ ভাই, জাবেদ ভাই, বাবু ও আমি। আমিরাত রোড হয়ে মোবাইলের দেয়া লোকেশন ম্যাপে আমরা চলতে থাকলাম জাবেল আরীর উদ্দেশ্যে। ঠিক গার্ডেনটির পাশে গিয়েও বিধি বাম হলো। ভুলে রোড এক্সিট করলাম নীচের দিকে। অন্তত আরো ৩০ মিনিট ভুল পথে ঘুরলাম। দুবাইতে শুধু রাস্তার নাম আছে। আমাদের দেশের মতো রাস্তার পাশের কোনো বড় মার্কেট বা গলির নাম নাই তা হুচট খেতে হবে ভিনদেশী পর্যটকদের। এখানকার একটি রোড মিস করলে পুরা রোডে উঠতে আপনাকে অনেক ঘুরতে হবে। ঠিক তেমনটি ঘটলো আমাদের। না জানাতে হাঁটু পানিতে সাঁতার কাটার মতো অবস্থা হলো আমাদের। অবশেষে পেলাম স্বপ্নের ঠিকানা। দুবাই ল্যান্ডের পাশেই মীরাক্কেল গার্ডেন। দুবাই থেকে জাবেল আলী রোডের আল বারসা দক্ষিণে এর অবস্থান। মীরাক্কেল গার্ডেন এর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ বাগান। প্রবেশ ফি ২০ দেরহাম। বাচ্চাদের জন্যে ফ্রি। আমরা গিয়েও দেখলাম ঠিক তাই।

আমরা ৫টি টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। মূল ফটকের বাম পাশে দেখে চোখ আটকে গেলো আমাদের। ভেতরে এতো লোক! আরবীরা পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসে এখানে। সে সাথে ইউরোপীয় পর্যটকদেরও ভীড়। মূল ফটকের বাম পাশে রয়েছে ৩টি ফুলের ময়ূর পাখি। সমস্ত কিছু ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে এখানে। কোনটা রেখে কোনটায় ছবি তুলবো এ নিয়ে দিশেহারা আমি আর জাবেদ ভাই। প্রত্যেকটি ফুলের আয়োজনের কাছে রয়েছে সিকিউরিটি কর্মী। নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করলে বাশি বাজিয়ে পর্যটকদের সাবধান করা হয়। দিক-বেদিক ছুটে ছবি তুলা শুরু করলাম। ওয়েবসাইটে যেমন দেখছিলাম তার চেয়েও বেশী আকর্ষণীয় ফুলের কারুকাজ আমাদের চোখে পড়লো। মনে হয় দুনিয়ার বেহেস্তে প্রবেশ করেছি। চারদিকে নানা মুখি ও নানা রঙা ফুল আপনাকে অবগাহনের আহবান করে। সেই সাথে রয়েছে পর্যটকদের জন্যে টয়লেট ও হালকা খাবারের আয়োজন। এ বাগানে রয়েছে একটি ফটো স্টুডিও।অবশ্য টয়লেট ফ্রি হলেও খাবারের জন্য ও স্টুডিওতে আপনাকে চার্জ প্রদান করতে হবে। কোথাও উঁচু- আবার কোথাও নীচু আবার কোথায় ফুলের নদী করে সাজানো হয়েছে বাগানটি।



ফুলের সমুদ্রের সাতকাহন

৪৫ বিলিয়ন ফুলের সমাহার দিয়ে যাত্রা শুরু মীরাক্কেল গার্ডেন দুবাই এর। নানা রঙের নানা প্রজাতির ফুল দিয়ে আবার তৈরী করা হয়েছে নানা ধরণের আকৃতি। রয়েছে ফুল দিয়ে তৈরী ময়ূর পাখি, ফুলের তৈরী পুরনো নানা মডেলের গাড়ি, ফুলের জাহাজ, ফুলের বিছানা, ফুলের পাহাড়, ফুলের ঘোড়ার গাড়ি, ফুলের বাড়ি, ফুলের ঘর, ফুলের সাগর, ফুলের দোলনা। ফুলের বাগানে পাখি না থাকলে বাগান থেকে যায় নিরামিশ। সে চিন্তা থেকে এ বাগানে কৃত্রিম বাক্সে রাখা হয়েছে নানা ধরণের পাখিও। এসব পাখির কিচির মিচির মনের আনন্দ যোগায়। বাগানের এক পাশে রাখা হয়েছে নানা প্রাণীও। করা হয়েছে নানা রঙা ছাতা দিয়ে একটি তোরণ। তবে বাগানের মাঝে আরবীদের দেশপ্রেম ফুটে ওঠেছে। এদেশের জাতীয় পাখির ছবি দিয়ে বিশাল আকৃতির শিল্পকর্ম পর্যটকদের নজর কাড়ে। রয়েছে ফুলের ঝর্ণধারাও। কলস দিয়ে ফুলের পানি পড়ছে এমনটি চোখে পড়বে সবার। ফুলের বিশাল প্রাচীর থাকায় গিনেজ বুকে এ বাগানটি স্থান করে নিয়েছে জন্মের এক বছরের মাথায়। রয়েছে 'লাভ' আকৃতির একাধিক তোরণ। কেউ দেখলে বুঝবে এটা বিয়ে বাড়ি বা কোনো প্রেমিকার জন্যে প্রেমিকের উপহার বলে মন্তব্য করেছেন ভিনদেশী অনেক পর্যটকই। আরব আমিরাতের রাজধানী অন্তর্গত আল আইনের একটি কৃষি কোম্পানী পুরো বাগানের নকশার কাজ করেছে। আবদেল নাসের আল হামাদ নামের গার্ডেনিং কোম্পানী এ বাগানাটিকে অলৌকিক রূপ দিয়েছে। বাগানটির রাস্তা ৪ কিলোমিটার। ৭২০০০ স্কোয়ার মিটারের এ বাগানে ৪৫ মিলিয়ন প্রজাতির ফুল রয়েছে। গরমের সময় বাগানটি মে থেকে সেপ্টেম্বরে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। দিনের বেলায় বাগানটি মনের যেমন খোরাক যোগায় রাতেও সব ফুলে নানা মিউজিক ও লাইটিং আরো সুন্দর করে তুলে।



যাতায়াত:

দুবাই শহরের নাভি দেরা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে যেতে পারেন জাবেল আলী রোডে। আমিরাত রোড হয়ে ১ ঘণ্টা পথ চললেই রাস্তার পাশে চোখে পড়বে দুবাই ল্যান্ড। দুবাই ল্যান্ডের ঠিক ফিছনে রয়েছে এ বাগানটি বাগানের পাশে রয়েছে ফ্রি গাড়ি পার্কিং এবং সিকিউরিটির সাথে রয়েছে প্রতি ঘণ্টায় ১০ দেরহােমে গাড়ি পাকিং।



সম্পাদক: মাসিক মুকুল, দুবাই। ইমেইল: [email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.