![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক উদাসী পাখি নিঝুম রাতে নদীর তীরে করি ডাকাডাকি। আমি এক মুকুল সবুজ লালের বুকে আছি জুড়ে মায়ের দু'কূল। আমি এক স্বপ্নদেখা ছবি ভাল লাগে আকাশ বাতাস ভাল লাগে সবি।
বই আলোচনা:
'তারার ফুল' : একটি তারার ঝলকানি
সাইফুল্লাহ সাইফ
বিয়ে নিয়ে এপার -ওপার বাংলায় প্রাচীনকাল থেকে প্রকাশনা বের হচ্ছে। আগেকার দিনে এসব প্রকাশনায় শুধু রম্য রচনা বা বর-কনের পরিচয় আর আত্মীয়-স্বজনের কথামালা দিয়ে সাজানো হতো এসব প্রকাশনা। এখন দিন বদলে গেছে। এসেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আর এই ছোঁয়াকে কাজে লাগিয়ে নেহাত চুটকিপত্র নয় একেকটি স্মারক যেন একেটি আকরগ্রন্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কলকাতার চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। এমনটি ঘটেছে বাংলাদেশের সিলেটের তরুণ ছড়াকার-লেখক ও মুকুল পত্রিকার সম্পাদক লুৎফুর রহমানের বিয়ে স্মারক 'তারার ফুল'-এ। নামকরণটা চমৎকার। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর বিখ্যাত চরণ -'মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল'। এ লাইন থেকে 'তারার ফুল' শব্দটি বেচে নিয়ে স্বার্থক করেছেন নামকরক। লুৎফুর রহমানকে চিনি ২০০৬ সাল থেকে। তখন তিনি কলকাতায় এসেছিলেন ঢাকার ছায়ানট থেকে তথা বাংলাদেশ ব্রতচারী সমতির বাংলাদেশ দলনেতা হয়ে। চটপটে চাহনী আর মগজে মাটির ঘ্রাণ তার তখনই আপন করে নিতে বাধ্য হই। সেই থেকে যোগাযোগ আজ অব্দি। এখন তিনি ২০০৯ থেকে দুবাই প্রবাসি। তাতেও থেমে যায়নি তার সাহিত্য সাধনা বা বাংলা চর্চা। বরং বেগবান হয়েছে রংধনুর মতো। নিয়মিত যোগাযোগ হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। আমাকেও তার বিয়ের স্মারকে লিখতে বলেছিলেন কিন্তু সময় আর সাধ এক হয়নি বলে এমন ভাল কাজ থেকে আমি বাদ পড়লাম। তাই এর আলোচনা লিখে নিজের মনের শান্তনাটুকু নিচ্ছি।
তারার ফুল। ছড়াকার-সাংবাদিক লুৎফুর রহমানের বিয়ে স্মারক। তথাকথিত স্মারক বলতে যা বুঝায় তার উর্ধ্বে রয়েছে এর মান। ঝকঝকে ছাপা আর বাংলা সাহিত্যের প্রথমসারির লেখক-কবিদের লুৎফুরকে নিবেদন করে লেখা প্রত্যেকটি লেখাই এর মান বাড়িয়েছে। এটি একটি রুচিশীল সাহিত্য প্রয়াস। একজন লেখকের বিয়েতে তার সৃজনশীল জীবনের বন্ধন। ১৩০ পৃষ্ঠার এ বইটিতে লেখক সংখ্যা ১০০। তাই এ ক্ষেত্রে লুৎফুর একজন সফল তরুণ। একজন প্রতিষ্ঠিত স্বপ্নবাজ। বয়েস তার ২৭ হলেও মেধা মনন আর আন্তরিকতায় সে ৫০ বছরের মানুষের অর্জন নিয়েছে তার স্বাক্ষর এ বইটি। ৪ রঙের শৈল্পিক প্রচ্ছদ মনের খোরাক যোগাবে বোদ্ধাদের। একি সাথে মন জোগাবে সুধীদের আর মন জাগাবে নবীনদের। শেষের প্রচ্ছদে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হেলাল হাফিজের নিজের হাতে লিখা লুৎফুরকে নিবেদন করে-'বাসনা (লুৎফুর রহমানকে) আগামি, তোমার হাতে/ আমার কবিতা যেন/ থাকে দুধে ভাতে!' হেলাল হাফিজ তার চোখে তার আগামি দেখেছেন লুৎফুরের মাঝে। সম্বভত বাংলাদেশে এই প্রথম কোন তরুণ কবির বিয়েতে প্রধান কবির কবিতা এটি। সেই সাথে শেষ প্রচ্ছদে রয়েছে লুৎফুরের ৭ বছর করে ২৮ বছর জীবনের নানা সময়ের একেকটি ছবি। লুৎফুর যে প্রতিষ্ঠিত লুৎফুর হয়ে ওঠার ছাপ এখানে স্পষ্ট। এ ক্ষেত্রে সুন্দর নামকরণ আর নামলিপির জন্যে ধন্যবাদ দিচ্ছি শিশুসাহিত্যিক ছড়াকার লোকমান আহম্মদ আপনকে। তার আপন ছোঁয়ায় এ গ্রন্থটি পরম আপন করে তুলেছে লেখকদের কাছেও।
ঢাকার তরুণ চলচিত্র নির্মাতা দিগন্ত সৌরভের সম্পাদনায় বইটি বের করেছে মুকুল প্রকাশ। প্রচ্ছদ করেছেন জয়ন্ত আহসান। আর্থিক সহযোগিতা করেছে মাহমুদ-নাজমা ফাউন্ডেশন। প্রকাশিত হয়েছে লুৎফুরের বিয়ের দিন অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর ২০১৪। গদ্য-ছড়া-কবিতা আর শুভেচ্ছা কথন এই ৩টি বিভাগে বিন্যাস করা হয়েছে সূচি। গদ্যের প্রত্যেক লেখায় আবার রয়েছে লেখা বিষয়ক বা লুৎফুরের সৃজনশীল আর সামাজিক কর্মকাণ্ডের ছবি। আরো রয়েছে তার প্রকাশিত বইয়ের আলোচনাও। এসব দিয়ে একটি দলিল করেছেন সম্পাদক আর এর সাথে থাকা সবাই। তাই তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। গদ্য লিখেছেন যথাক্রমে- বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি আল-মাহমুদ, মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান, সাইদুর রহমান সাঈদ, মো. নিয়াজ উদ্দীন, লোকমান আহম্মদ আপন, আজিজ ইবনে গণি, আব্দুল মুকিত অপি, বশির আহমদ জুয়েল, এনায়েত হোসেন সুহেল, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, ফয়সল আহমদ, জালাল আহমদ, ফুজেল আহমদ, মামুনুর রশীদ, জাহাঙ্গীর কবীর বাপ্পি, আবদুস সোবহান বাচ্চু, দেওয়ান আব্দুল বাসেত, খলিলুর রহমান ফাযসাল, কামরুল হাসান জনি, রশীদ জামিল, তাসলিমা বীথি, এস এম মানসুর নাদিম, মোক্তার আহমেদ, মুনজের আহমদ চৌধুরী, জাহেদ আহমদ স্বপন, রাখি নাহিদ, শামীম আহমদ ও দিগন্ত সৌরভ। ছড়া কবিতা লিখেছেন- হেলাল হাফিজ, তমিজ উদদীন লোদী, লুৎফর রহমান রিটন, শাকুর মজিদ, সৈয়দ সায়েম, সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী, হাসনাত আমজাদ, আব্দুল হামিদ মাহবুব, ফকির ইলিয়াস, জসীম মেহবুব, চন্দন কৃষ্ণ পাল, জগলুল হায়দার, জুলফিকার শাহাদাৎ, আতাউর রহমান আফতাব, সৌমিত্র দেব, শামীম আজাদ, তারীকুল ইসলাম, সুবীর বসাক, নিজামুল হক হামিদী, রেবেকা ইসলাম, শুয়েব আহমদ শওকতি, সিরাজ উদ্দিন শিরুল, এখলাছুর রহমান, জালাল খান ইউছুফি, ধ্রুব গৌতম, দিলু নাসের, খালেদ রাজ্জাক, অমিতাভ প্রামাণিক, সুজন সাজু, আব্দুল হাসিব, আদিত্য অনিক, শাহ মিজান ইবনে আজিজ, ফাযসাল আইয়ূব, মঈন মুরছালিন, আলী হোসাইন, ব্রত রায়, এম এ আজম, লুৎফুর হাসান, আবুল কাশেম, এম মোসাইদ খান, মাহমুদ পারভেজ, নাজমুল ইসলাম মকবুল, আহমদ হোসেন খান, মোফাচ্ছেল হক শাহেদ, সোহানুর রহমান, মো. নুরুল ইসলাম ও লুৎফুর রহমান।
এঁদের সবাই-ই প্রতিষ্ঠিত। আর সবাই লুৎফুরকে চিনেন জানেন আর ভালবাসেন। তার প্রমাণ মেলবো বইয়ের প্রত্যেকটা লেখা লুৎফুর বিষয়ক আর তারে নিবেদন করে লেখা পড়ে দেখলেই। এঁরা কেউ থাকেন বাংলাদেশে, কেউ ভারতে আবার কেউ পৃথিবীর নানা দেশে। তবে সবার একি ঠিকানা-বাংলা সাহিত্য। কেউ কবি, লেখক, সাংবাদিক, সম্পাদক, কণ্ঠশিল্পী আবার কেউ নামকরা শিক্ষক মানুষও। তবে কথা হচ্ছে মাঝখানে কয়েকটি জায়গায় বানান বিভ্রাট হুচট খেতে হয়েছে এ ক্ষেত্রে সম্পাদকের বয়ান পড়ে বুঝেছি সময় কম আর লেখা বেশি হওয়াতে এ যন্ত্রণায় ভুগেছেন তারা। তবে লুৎফুরের বিয়ের স্মারকটি শুধু বিয়ের স্মারকে থাকেনি। এটি লুৎফুরের চলমান জীবনের এটি প্রতিফলনও। লুৎফুর রহমান আর তার বউ খালেদা রহমানের সুখের সংসার কামনা করি। আর বিয়ের স্মারকটি এপার-ওপার বাংলায় একটি দৃষ্টান্ত হোক এই আশা।
তারার ফুল
ছড়াকার-সাংবাদিক লুৎফুর রহমানের বিয়ে স্মারক
সম্পাদক; দিগন্ত সৌরভ
প্রকাশক: মুকুল প্রকাশন
নামকরণ ও নামলিপি: লোকমান আহম্মদ আপন
প্রকাশকাল: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪
লেখক: সম্পাদক, বাঙলা ভূমি, কলকাতা। নায়েক, ব্রতচারী আন্দোলন, ভারত।
©somewhere in net ltd.