![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক উদাসী পাখি নিঝুম রাতে নদীর তীরে করি ডাকাডাকি। আমি এক মুকুল সবুজ লালের বুকে আছি জুড়ে মায়ের দু'কূল। আমি এক স্বপ্নদেখা ছবি ভাল লাগে আকাশ বাতাস ভাল লাগে সবি।
নৃপেশ রঞ্জন আচার্য : এক আলোকিত কারিগরের প্রতিকৃতি
লুৎফুর রহমান
সকল সৃষ্টিশীল মহামানবের মতো আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন নৃপেশ দা। নৃপেশদার মতো একজন কবি, ছড়াকার, গীতিকার ও আদর্শ শিক্ষকের চলে যাওয়াতে সমাজ ব্যথিত হয়ে ওঠে। আর এই ব্যথিত হয়ে ওঠা থেকে আজকের এই লেখা। উনার সাথে আমার শেষ দেখা ২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল। বিয়ানীবাজারের মেসার্স ফরিদ পেপার এজেন্সিতে। আর প্রথম দেখা ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে বিয়ানীবাজার পোস্টঅফিস রোডস্থ ইকরা লাইব্রেরী। এককালের আমার সম্পাদিত সাহিত্যপত্রিকা মুকুল অফিসে। দাদার এই হাসিমাখা মুখ আর পান খেয়ে প্রাণখোলা হাসি এখনো চোখে লেগে আছে। ২৭ ডিসেম্বর ২০১০ রাত ১টায় বিয়ানীবাজারস্থ বাসস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী এই আলোকিত মহানায়ক। দুবাই সময় ভোর ৫ টায় আমার কাছে একটা মোবাইল এসএমএস এলো সাপ্তাহিক সম্ভাবনা সম্পাদক মাছুম ভাইয়ের 'নৃপেশ দা আর নেই' বলে। পরে অফিসে এসে ফেসবুকের কল্যাণে আবার একি খবর জানালেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার লোকমান আহম্মদ আপন ভাই। খুবই ব্যথিত হলাম। আপনজন হারানোর ব্যথা যে কতো কষ্টের তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। নিরুপায় হয়ে কবিপুত্র প্রভাষক জনাব সঞ্জয় আচার্য এর মোবাইলে একটি শোকবার্তা পাঠালাম। সারাদিন আকাশে রোদ ছিল। কিন্তু আমার মনের আকাশে যেন শোকের মেঘ জমে ছিল পুরোদিনই। আমার সুখের নদের সাম্পানওয়ালা যেন নাও রেখে পরপারে পাড়ি জমালেন। এমন বোধ হলো।
ক্ষণজন্মা মানুষেরা কাজের মধ্য দিয়ে অমর থাকে। তেমনই একজন আমাদের নৃপেশদা। ১৯৫২ সালের ৫ আগস্ট জন্মেছেন হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ লোগাঁও গ্রামে। ১৯৭২ এর ১৮ আগস্ট মানুষ গড়ার ব্রতকে পেশা নিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন আর ২০১০ সালের ৪ আগস্ট বিয়ানীবাজারের মাটিজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এর আগে নিদনপুর-সুপাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দাযিথ্ব পালন করেন। আমার বাড়ির পাশেই। প্রতিদিনই দাদার অফিসে যেতাম। অবসরে চলতো আমাদের ছড়া চর্চা। দাদার কাছে আমি চিরঋণী। দাদা-ই আমাকে শিখেয়েছেন ছড়ার তালটা। তাও নিজের হাত দিয়ে টেবিলে তবলা বাজিয়ে ধরিয়ে দিলেন মাত্রা। আর আজ দাদা নেই কিন্তু আমি ঠিকই প্রতি ছড়া লেখে নিজে পাঠ করি দাদার মতো করেই টেবিলে তবলা বাজিয়ে। দাদা শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করলেও মানুষ গড়ার কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করতে পারেননি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। কবিতা, ছড়া, গান ও নিবন্ধ লিখেছেন স্থানীয় থেকে জাতীয় পত্র-পত্রিকায়। গান নিয়ে দাদার যে আফসোস তা আজো মনে পড়ে। অনেক গান লিখেছেন কিন্তু অনেক সুরকার ক্যাসেট বের করবে বলে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছে এই মাটির মানুষটিকে। জাতীয় যর্পায়ের অনেক সিলেটী কন্ঠশিল্পীদের প্রতি দাদার ক্ষোভ ছিল। সহজ কথায় আমার কাছে ওইসব দুঃখ বলেছেন কোনো এক সময়ে। আজ সবই স্মৃতি। দাদার অপ্রকাশিত সব কবিতা ও গান এবং ছড়া প্রকাশ করে দাদার প্রতি কিছুটা হলেও ঋণ শোধ করা যাবে বলে মনে করি। যা করেছেন শাবুল ভাই, অভি ভায়েরা। দাদার লেখায় ফুঠে ওঠতো বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের কথা। একটা অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নের কথা। ২০০৫ সালের বিজয় দিবসে রাজাকার বিরোধী একটি লেখায় ফুটে ওঠেছিল দাদার পিতৃভিটের একাত্তুরের হালচিত্র। তাই রাজাকারদের কথা শুনলেই দাদা কেমন জানি একটা প্রতিবাদে জ্বলে ওঠতেন।
দাদা আমাকে খুবই ভালবাসতেন। নিরন্তর আমাকে বলতেন টাকা রোজগার করতে। দাদার হাতে থাকতো একটা খাকি ঝোলা। একজন বাউল কবির যেমন থাকে। আর ছুটে চলতেন টিপু ভাইয়ের পেপার এজেন্সিতে। একদিন দাদা খরচের ব্যাগ থেকে একটি ছড়া দিয়ে বললেন সাপ্তাহিক নবদ্বীপের 'বাড়ই' পাতায় ছাপাতে। আমি এ পাতাটির সম্পাদক ছিলাম। আমি হেসে উঠলাম। বল্লাম কবির বাজারের ব্যাগেও কবিতা থাকে। দাদার যা প্রাণখেলা হাসি। তখন আমার সাথে ছুটে গেলেন সাপ্তাহিক নবদ্বীপ অফিসে। ছুটিয়ে আড্ডা দিলাম। দাদা বুঝতে পারলেন আমি ছড়ার পাগল। তাই একদিন আমার একটি ছড়া টেবিলে তবলার সাথে সাথে বাজিয়ে বললেন বাহ্ লিখে যাও একদিন নামকরা ছড়াকার হবে। একুশে বইমেলায় আমার প্রথম ছড়াগ্রন্থ স্বপ্নবালিকা এসেছে। আমার বড়ই স্বপ্ন ছিলো দেশে ফেরে একটা প্রকাশনা অনুষ্ঠান করবো আর দাদাও থাকবেন তাতে। এখন ৫টি ছড়ার বই প্রকাশিত হলো আমার। কিন্তু দাদাকে পড়াতে পারলাম না! ভাবতেই বুকে যেন একটা কষ্টের অনুভূতি কাজ করে যায়। দাদা চলে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন হাজার সৃষ্টিকর্ম এবং বাউলের ঘরে অন্যসব বাউল। দাদার পুত্র প্রভাষক সঞ্জয় আচার্য বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং কন্যা পূরবী আচার্য ও একজন শিক্ষিকা। বাউল জন্ম দেয় বাউল। এই কথাটি দাদার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
'আমি কান্নার মিছিল দেখেছি/
দেখিনি বিজয় মিছিল/
বৃষ্টি ঝরা দিনগুলো শেষ হবে কবে/
ভুলে কী যাবো রক্ত ঋণ?
এ রকম মনে দাগ কাটা হাজারো কবিতা, ছড়া ও গানের রচয়িতা নৃপেশ দা। তাঁর অপ্রকাশিত গ্রন্থ প্রকাশ করতে উদ্যোগি হন বিয়ানীবাজারের শেকড়সন্ধানী সাংবাদিক শাবুল আহমেদ। এগিয়ে আসেন বিলেত প্রবাসি কবি আনোয়ারুল আসলাম অভি। তাঁর মা বাবার নামের সমছুল-করিমা ফাউন্ডেশন থেকে 'মৃত্তিকার কাছে যাবো' নামে কবি নৃপেশ রঞ্জন আচার্য এর একটি কবিতার বই ও ঝাকঝমক অনুষ্ঠান করেছেন প্রিয় বিয়ানীবাজারে। এর পেছনে যাঁরা জড়িত ছিলেন সবাইকে সাধুবাদ।
কবি নৃপেশ রঞ্জন আচার্য ততোদিন থাকবেন যতোদিন বাংলা বর্ণমালা আমাদের চোখের সামনে দোলা দেবে।
লেখক : সম্পাদক, মাসিক মুকুল, দুবাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪০
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো